কাপদেভিয়াকে ছাপিয়ে গার্সিয়ার হেডের গোল।
আটলেটিকো দে কলকাতা-১ (গার্সিয়া)
নর্থইস্ট ইউনাইটেড-০
যুবভারতীতে নব্বই মিনিটের স্প্যানিশ গৃহযুদ্ধ!
কোকে-কাপদেভিয়া বনাম হাবাস-বোরহা-হোফ্রে-গার্সিয়া-আর্নাল।
সেই গৃহযুদ্ধে গার্সিয়ার গোলে মূল্যবান তিন পয়েন্ট ঘরে এল কলকাতার। কালীপুজোর রাতে মাণ্ডবী নদীর তীর থেকে তিন পয়েন্ট তুলে হোটেলে ফিরে আনন্দ করেছিলেন অর্ণব, সঞ্জুরা। মঙ্গলবারের আগে পর্যন্ত আইএসএলে সেই শেষ বারের মতো। তার পর কেটে গিয়েছে ছাব্বিশটা রাত। কিন্তু আর জয়টিকা পড়েনি কলকাতার কপালে। শেষমেশ জয়লক্ষ্মী গার্সিয়াদের শিবিরে ঢুঁ মারল কার্তিক পুজো পেরোনোর পর।
নয় ম্যাচে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে কলকাতার টিমকে সেমিফাইনাল সরণির দিকে এগনোর ছন্দ দিলেন কে? হঠাত্ সংস্কারবশত দাড়ি-গোফ কামিয়ে ফেলা কোচ হাবাস? না কি নিউআলিপুরের বাঙালি জাহাজ ব্যবসায়ীর ডিস্ক জকি পুত্র! যিনি আইপিএল, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি, প্রো-কবাডি লিগে প্লেয়ারদের চেনা মুখ।
আটলেটিকোর সেই ডিজে কুণাল বসুর সৌজন্যে হাফটাইমে গোলহীন যুবভারতীও গমগম করছিল, ‘তুনে মারি এন্ট্রিয়া, দিল মে বাজি ঘণ্টিয়া’। কিন্তু গার্সিয়ারা যখন বিরতির পর মাঠে ঢুকছেন তখনই বাজল স্প্যানিশ গান ‘ডানজা কুদরো’। এতেই কি গার্সিয়া বাড়তি জোশ পেয়ে গেলেন দ্বিতীয়ার্ধে? শুনে হাসছেন বঙ্গসন্তান ডিজে। বললেন, “জানি গার্সিয়া স্প্যানিশ মিউজিক শুনলে বাড়তি প্রেরণা পায়। তাই ওকে নামতে দেখে ওই সময় কিছুক্ষণের জন্য স্প্যানিশ গানটাই বাজিয়ে দিয়েছিলাম। তার পরেই কিন্তু গার্সিয়া গোলটা করল।”
ঠিক যেন তাই! ওই গানের পাঁচ মিনিটের মধ্যেই আইএসএলের পূর্বাঞ্চলীয় ডার্বিতে কলকাতাকে জয়ের গোলটা এনে দিলেন গার্সিয়া। সেটাও আবার বিপক্ষ দলে তাঁর স্প্যানিশ বন্ধু কাপদেভিয়াকেই হেডে পরাস্ত করে। আগের দিনই সাংবাদিকদের আটলেটিকো অধিনায়ক বলেছিলেন, চালাক কাপদেভিয়া ঠিক সময় ঠিক জায়গায় এসে বল কেড়ে নেয়। তাই একটু নীচের থেকে খেলবেন। এ দিন আইএসেএলে তাঁর দ্বিতীয় গোলটার সময় কি সেটাই মাথায় রেখেছিলেন কলকাতার মার্কি ফুটবলার!
ম্যাচ শেষে সৌরভের কাছে পরাজিত জন। মঙ্গলবার।
বোরহার পাস ধরে লেফট উইং থেকে যখন ক্রস তুলছেন হোফ্রে, গার্সিয়া তখনও কাপদেভিয়ার সঙ্গে এক সরলরেখায়। কিন্তু পরের সেকেন্ডেই দেখা গেল গার্সিয়া হঠাত্ যেন ব্রেক কষলেন। তার পরই কাপদেভিয়ার পিছন থেকে ছুটে এসে গোল।
ম্যাচ শেষে গার্সিয়া অবশ্য বলছিলেন, “প্রথমার্ধে আমাদের টিমটা অ্যাটাকিং থার্ডে লোক বাড়াতে পারছিল না। হাফটাইমের পর সেটা হতেই গোলটা চলে এল।”
আসলে আগের চেন্নাই ম্যাচের মতোই এ দিনও ৪-২-৩-১ ছকে শুরু করেছিলেন আটলেটিকো কোচ। কিন্তু আল্ট্রাডিফেন্সিভ ছকেও টুর্নামেন্টের প্রথম দিকে তাঁর টিম টাট্ট্ু ঘোড়ার মতো ছুটত একটাই কারণে। দুই সাইডব্যাক বিশ্বজিত্ আর ডেঞ্জিল পালা করে ওভারল্যাপে যেতেন বলে। দু’জনেই এখন চোট পেয়ে মাঠের বাইরে। তার বদলে রাইট ব্যাক বলজিত্ বা এ দিনই আইএসএলে প্রথম নামা লেফট ব্যাক মোহনরাজ ওভারল্যাপে গিয়ে বল রাখতে পারছিলেন না নর্থইস্টের ডিফেন্সিভ থার্ডে। দুই ডিফেন্সিভ হাফ বোরহা আর নাতো-ও নেমে আসছিলেন অনেকটা। জন আব্রাহামের দলের প্রধান পাসার কোকে যাতে ফাঁকা জায়গা না পেয়ে যান তার জন্য নেমে আসছিলেন গার্সিয়াও। ফলে আটলেটিকোর দুই উইঙ্গার লেস্টার এবং হোফ্রে প্রথমার্ধে ডাউন দ্য মিডল অপারেট করছিলেন। আর মিগুয়েল গার্সিয়া, কাপদেভিয়াদের রক্ষণে বোতলবন্দি হয়ে পড়ছিলেন ফিকরু।
নর্থইস্টের কিউয়ি বিশ্বকাপার কোচ চার ব্যাকের সামনে সেনেগালের মাসাম্বাকে ব্লকার বানিয়ে ৪-১-৩-২ ছকে তাই ফিকরুদের পেয়ে যাচ্ছিলেন নাগালের মধ্যে। কারণ তাঁর দলের পাহাড়ি ছেলেদের ম্যাচ ফিটনেস অনেক বেশি। দ্বিতীয়ার্ধে আটলেটিকো উইং ধরে খেলতেই কেল্লা ফতে।
যুবভারতীতে গার্সিয়া।
জিতলেও কলকাতার উইং প্লে, মিসপাস, মাঝমাঠে বোঝাপড়া এ দিনও ঠিকঠাক হয়নি। গোটা ম্যাচে গার্সিয়া আর এক বঙ্গসন্তান ছাড়া সে ভাবে চোখে পড়লেন না কেউই। সেই বঙ্গসন্তান অর্ণব মণ্ডল বুক চিতিয়ে নেতৃত্ব দিলেন আটলেটিকো রক্ষণে। আগের চেয়ে গতি বেড়েছে। সঙ্গে কভারিং, অনুমানক্ষমতাও ঝলমলে। বিপক্ষকে একটি নির্দিষ্ট জোনে সাময়িক দাঁড় করিয়ে রাখছেন। যে সুযোগে কলকাতার রক্ষণে চলে আসছেন অর্ণবের সতীর্থরা। ডিস্ট্রিবিউশনটা ভাল করতে পারলে উদ্বোধনী আইএসএলের সেরা ডিফেন্ডার হতেই পারেন অর্ণব।
অর্ণবের টিমও নিজেদের ভুলগুলো দ্রুত শোধরাতে পারলে হাবাস হয়তো কোনও এক দিন বলতেই পারেন, “পাস্ট ইজ হিস্ট্রি। ফিউচার ইজ ভিকট্রি।”
আটলেটিকো দে কলকাতা: শুভাশিস, বলজিত্, অর্ণব, হোসেমি, মোহনরাজ, বোরহা, নাতো (রাকেশ), লেস্টার, গার্সিয়া (সঞ্জু), হোফ্রে (আর্নাল), ফিকরু।
ছবি: উত্পল সরকার
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy