Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

ওজ়িলের অভিযোগ খারিজ জার্মানির

রবিবার ওজ়িল অভিযোগ করেছিলেন, জার্মানি জিতলে তাঁকে জার্মান মনে করা হয়। অথচ হারলে দেখা হয় অনুপ্রবেশকারী হিসেবে।

নজরে: এই সেই বিতর্কিত ছবি। রাশিয়া বিশ্বকাপের আগে মেসুত ওজ়িল তুরস্কের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে (ডান দিকে)। ফাইল চিত্র

নজরে: এই সেই বিতর্কিত ছবি। রাশিয়া বিশ্বকাপের আগে মেসুত ওজ়িল তুরস্কের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে (ডান দিকে)। ফাইল চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০১৮ ০৪:৪৩
Share: Save:

জার্মানির ফুটবল সংস্থার বিরুদ্ধে বর্ণবৈষম্যের বিস্ফোরক অভিযোগ তুলে মেসুত ওজ়িল অবসরের ঘোষণা করার পর থেকেই উত্তাল ক্রীড়া দুনিয়া। চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই ব্রাজিলে ২০১৪ সালের বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন দলের অন্যতম সদস্যের অভিযোগ খণ্ডন করে বিবৃতি দিল জার্মান ফুটবল ফেডারেশন (ডিএফবি)।

রবিবার ওজ়িল অভিযোগ করেছিলেন, জার্মানি জিতলে তাঁকে জার্মান মনে করা হয়। অথচ হারলে দেখা হয় অনুপ্রবেশকারী হিসেবে। এই পরিস্থিতিতে তাঁর পক্ষে আর জার্মানির হয়ে খেলা সম্ভব নয়। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে তিন পাতার দীর্ঘ খোলা চিঠি পোস্ট করে ওজ়িল বর্ণনা করেছেন, কী ভাবে বার বার তাঁকে অপদস্থ ও অপমানিত করা হয়েছে। ওজ়িল লিখেছেন, ‘‘আমার জন্ম জার্মানিতে। কিন্তু আমার পরিবারের শিকড় রয়েছে তুরস্কে। তাই আমার দু’টো হৃদয়। একটা জার্মানির। অন্যটি তুরস্কের। শৈশবেই মা শিখিয়েছিলেন, কখনও অতীতকে ভুলে যেতে নেই। এই কারণেই ইলখাই গুন্ডোয়ান ও আমি তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেসেপ আর্দোয়ানের সঙ্গে লন্ডনে দেখা করতে গিয়েছিলাম। পুরোটাই ছিল সৌজন্যমূলক। কোনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল না।’’ তিনি আরও যোগ করেছেন, ‘‘তুরস্কের প্রেসিডেন্ট তো ইংল্যান্ডের রানি ও প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে-র সঙ্গেও দেখা করেছেন। তা নিয়ে তো কোনও বিতর্ক হয়নি।’’

জার্মানিতে এই মুহূর্তে বসবাস করছেন প্রায় ৩০ লক্ষ তুরস্কের মানুষ। যা নিয়ে অনেকেরই আপত্তি রয়েছে। বিশ্বকাপের আগে তুরস্কের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ওজ়িলের সাক্ষাৎকার যেন সেই আগুনে ঘৃতাহুতির কাজ করেছিল। পরিস্থিতি এতটাই প্রতিকূল হয়ে পড়েছিল, রাশিয়ায় বিশ্বকাপ চলাকালীন সাংবাদিক বৈঠকও করেননি ওজ়িল। খোলা চিঠিতে তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘জার্মানির সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা বিশ্বকাপের সময় আদৌ ফুটবল নিয়ে আগ্রহী ছিলেন না। ওঁদের প্রধান লক্ষ্য ছিল আমাকে অপদস্থ করা। এই কারণেই, কোনও সাংবাদিক বৈঠক করিনি।’’

রবিবার অবসরের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করার সময় লুকাস পোডলস্কির উদাহরণ দিয়ে ২৯ বছর বয়সি আর্সেনাল তারকা লিখেছেন, ‘‘কখনও তো পোডলস্কিকে বলা হয় পোলিশ-জার্মান। আমার ক্ষেত্রে সব সময়ই বলা হয় তুরস্ক-জার্মান। অথচ আমার জন্ম ও বড় হয়ে ওঠা জার্মানিতেই। ২০০৯ সাল থেকে জার্মানির প্রতিনিধিত্ব করছি। দেশকে বিশ্বকাপ জিততে সাহায্য করেছি। জার্মানির জাতীয় দলের জার্সি পরে মাঠে নামা ছিল আমার কাছে সব চেয়ে গর্বের। কিন্তু এখন আর এই জার্সি পরতে চাই না। নিজেকে জার্মানিতে অবাঞ্ছিত মনে হয়। ভুলে যেতে চাই ২০০৯ সাল থেকে যা যা অর্জন করেছি জার্মানির হয়ে খেলে।’’ ওজ়িলের আরও অভিযোগ, বিশ্বকাপে বিপর্যয়ের জন্য তাঁকেই কাঠগড়া তোলা হচ্ছে। ই-মেলে হুমকিও দেওয়া হয়েছে।

ওজ়িল এই মুহূর্তে আর্সেনালের হয়ে ইন্টারন্যাশনাল কাপ খেলতে সিঙ্গাপুরে। তাঁর সব অভিযোগই ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছে জার্মান ফুটবল সংস্থা। এক বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, ‘‘জাতীয় দল থেকে ওজ়িলের অবসর নেওয়াটা দুঃখজনক। তবে বর্ণবৈষম্যের যে অভিযোগ ওজ়িল করেছেন, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। ডিএফবি কখনওই বর্ণবৈষম্যকে প্রশ্রয় দেয় না। সম্প্রীতি রক্ষা করাই আমাদের মূল লক্ষ্য। বছরের পর বছর ধরে ডিএফবি সেটাই করে চলেছে। তা সত্ত্বেও ওজ়িলের যদি মনে হয়, ওঁকে রক্ষা করা হয়নি বর্ণবিদ্বেষ থেকে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক।’’ বায়ার্ন মিউনিখের প্রেসিডেন্ট উলি হোয়েনেস অবশ্য ওজ়িলের বিরুদ্ধেই তোপ দেগেছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘নিজের ব্যর্থতা ঢাকতেই এখন অজুহাত দিচ্ছে ওজ়িল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE