Advertisement
E-Paper

কয়লা তোলা হাতেই বিশ্বজয়, সম্রাট বধ

ইংল্যান্ডে আজও তিনি জনপ্রিয় ‘ব্যাঙ্কস অফ ইংল্যান্ড’ নামে। ব্যাঙ্ক-ভল্টের মতোই ব্রিটিশ ফুটবলের মানসম্মান যেন তাঁর গ্লাভসেই সুরক্ষিত থাকত।  

নিজস্ব প্রতিনিধি

শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৩:২৬

ইংল্যান্ডে আজও তিনি জনপ্রিয় ‘ব্যাঙ্কস অফ ইংল্যান্ড’ নামে। ব্যাঙ্ক-ভল্টের মতোই ব্রিটিশ ফুটবলের মানসম্মান যেন তাঁর গ্লাভসেই সুরক্ষিত থাকত।

বিংশ শতাব্দীর সেরা গোলরক্ষক কে?

এই বিতর্ক থামার নয়। ফিফা এক নম্বরে রেখেছিল লেভ ইয়াসিনকে। দুইয়ে ছিলেন তিনি। কোনও এক সাংবাদিক একবার তাঁকে প্রশ্ন করেন, এ হেন নির্বাচনে আপনি কি বিরক্ত? তাতে বেশ রেগে জবাব দেন, ‘‘লেভ ইয়াসিনের পরে দু’নম্বর যে হয়েছি, তার চেয়ে বড় সম্মান আর কিছু হতে পারে না। ইয়াসিনের মতো পজিশন জ্ঞান আর কারও ছিল না।’’

উঠে এসেছিলেন নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে। হয়তো সে কারণেই চিরকাল মাটির মানুষ। জীবনের একাশিতম বসন্তে পা রাখার মাস দুয়েকের মধ্যেই চলে গেলেন কিংবদন্তি ইংরেজ গোলরক্ষক গর্ডন ব্যাঙ্কস। যিনি বলেছিলেন, ছেষট্টির বিশ্বকাপ জয়ী ইংল্যান্ডের এক গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে নয়, তাঁকে দুনিয়া মনে রাখবে একটা মাত্র সেভের জন্য।

সেই সেভ! সত্তরে মেক্সিকো বিশ্বকাপে ব্রাজিলের বিরুদ্ধে ম্যাচে পেলের হেড এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে শূন্যে উড়ে বিপন্মুক্ত করার দৃশ্যে আজও মানুষ খুঁজে ফেরে ফুটবল রূপকথা। অনেকের মতে, সেটা শতাব্দীর সেরা গোলরক্ষা।

‘‘পুরো ব্যাপারটা এত দ্রুত ঘটেছিল যে বলার নয়। পেলের হেডটা হাতে লাগানোর পরে নিজেও বুঝিনি বলটা ঠিক কোন দিকে যাচ্ছে। মাটিতে পড়ার পরে দেখলাম বলটা গোলের বাইরে, আমার পিছনে। স্টেডিয়ামে সে কী চিৎকার! যার অর্ধেক গোল হয়ে গিয়েছে ধরে চিৎকার করেছিল। বাকিরা বলটা বারের উপর দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার পরে,’’ এ ভাবেই বারবার স্মৃতিচারণ করেছেন ব্যাঙ্কস।

ব্যাঙ্কসের মুখেই সবাই শুনেছিল যে পেলে এসে তাঁর পিঠ চাপড়ে বলেছিলেন, ‘‘ভেবেছিলাম গোলই হয়েছে। আমার তো মনে হয়, তুমিও সেটাই ভেবেছিলে।’’ আর কিংবদন্তি গোলরক্ষকের কথায়, ‘‘মাটি থেকে উঠে নিজের জায়গায় যাওয়ার সময় টিভি ফুটেজে সবাই দেখেছিল, আমি ববি মুরের দিকে তাকিয়ে শুধু হেসে যাচ্ছি। আসলে, ববি মজা করে বলেছিল, তুমি একেবারে বুড়িয়ে যাচ্ছ ব্যাঙ্কসি। একটা সময় এই সব বলও তুমি দিব্যি হাতে ধরে নিতে।’’

বছর চারেক আগে জানা যায়, তাঁর কিডনিতে ক্যানসার ধরা পড়েছে। চিকিৎসাও শুরু হয়ছে। আর মৃত্যুর খবরটা মঙ্গলবার সরকারি ভাবে প্রথম জানায় স্টোক সিটি ক্লাব। পরে পরিবার। লেস্টার সিটি থেকে এই ক্লাবেই তাঁর ফুটবল জীবনের অনেকটা সময় কেটেছে। ব্রিটিশ ফুটবলে বহু ম্যাচ আজও অবিস্মরণীয় তাঁর দুরন্ত গোলরক্ষার সৌজন্যে! ব্যাঙ্কসের শরীরের অবিশ্বাস্য সেই মোচড়, নিখুঁত টাইমিং এবং বহু বার উড়ন্ত সব সেভের প্রসঙ্গ আজও ফিরে ফিরে আসে ফুটবল আড্ডায়।

ব্যাঙ্কস যখন খেলেছেন তখন বৈজ্ঞানিক ট্রেনিংয়ের দখিনা বাতাসে আলোড়িত হয়নি ফুটবল প্রশিক্ষণ। কোথায় মাল্টি জিম? পরবর্তী কালে নিজেই অবাক হয়ে দেখতেন, কী ভাবে ওজন তুলে তুলে শরীর গড়েপিটে নিচ্ছেন তাঁর উত্তরসূরি পিটার শিল্টন। যা দেখতে দেখতে ব্যাঙ্কসের মনে পড়েছিল, নিজের শৈশবের কথা। ওজন তো তিনিও তুলেছেন! তবে কয়লার কারখানায়। পরে বাড়ি তৈরির কাজেও হাত লাগান। কখনও মাটি খুঁড়েছেন। করেছেন চুন-সুরকি-সিমেন্ট মাখানোর কাজ। অথবা ইটে দিয়েছেন সিমেন্টের পলেস্তারা। ‘‘মাত্র পনেরো বছর বয়সে স্কুলের পাট চুকিয়ে আমাকে যা যা কাজ করতে হয়েছিল, তাতেই তৈরি করে ফেলি শরীরটা। খানিকটা নিজের অজান্তে,’’ এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন ছেষট্টির বিশ্বজয়ী ইংল্যান্ড দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ব্যাঙ্কস।

শেফিল্ডে খুবই দরিদ্র পরিবারে যাঁর জন্ম। বেড়ে ওঠা ইয়র্কশায়ারে। ফুটবলই ভাগ্য গড়ে দিয়েছিল। অর্থ, খ্যাতি— সবই এই খেলাটার জন্য।

১৯৬৩ থেকে ’৭২। জাতীয় দলের জার্সিতে খেলেছেন ৭৩টি ম্যাচ। সঙ্গে শুধু স্টোক সিটির হয়েই দু’শোর কাছাকাছি। সব ক্লাব ধরলে ৫১০ ম্যাচে। আশ্চর্যের ব্যাপার, পিটার শিল্টন উঠে আসায় ব্যাঙ্কসকে লেস্টার সিটি ’৬৬ বিশ্বকাপের পরেই বিক্রি করে দেয়। ব্যাঙ্কস চেয়েছিলেন, লিভারপুলের হয়ে অ্যানফিল্ডে খেলতে। সে স্বপ্ন সত্যি হয়নি। তখন গোলরক্ষকদের জন্য কোনও ক্লাব খুব বেশি খরচ করত না। তাই স্টোক সিটিতেই খেলতে বাধ্য হন সর্বকালের অন্যতম সেরা গোলরক্ষক। সেখান থেকেই চিরঅবসর।

আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে আগেই অবসর নিয়েছিলেন। ১৯৭২ সালের অক্টোবরে ক্লাবে অনুশীলনের পরে গাড়ি চালিয়ে বাড়ি ফেরার সময় মারাত্মক দুর্ঘটনায় একটি চোখই নষ্ট হয়ে যায় ব্যাঙ্কসের। তার পরে খেলা চালিয়ে যাওয়ার সুযোগই ছিল না। তখন তাঁর বয়স ৩৪। গোলরক্ষকেরা তো আরও অনেকদিন খেলতেই পারেন। ব্যাঙ্কস পারেননি। কিন্তু ওই অল্প সময়ে বারবার বিশ্বফুটবলকে আলোড়িত করেছেন। বেঁচে থাকতেই দেখে গিয়েছেন, ইংল্যান্ডে তাঁর ব্রোঞ্জ মূর্তি বসেছে। মূর্তির আবরণ উন্মোচন করতে ব্রাজিল থেকে স্টোক সিটিতে এসেছিলেন স্বয়ং পেলে। সেই অনুষ্ঠানেই মজা করে ফুটবল সম্রাট বলেছিলেন, ‘‘জীবনে হাজারের বেশি গোল করেছি। কিন্তু বন্ধু ব্যাঙ্কসের সেই অবিশ্বাস্য সেভের জন্য যে গোলটা করতে পারিনি, লোকে সব সময় তার কথাই বলে। আমার

এমনই কপাল।’’

Gordon Banks England Football FIFA
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy