নাতনির ভাতে বিষ মেশালেন দাদু-ঠাকুমা। অলঙ্করণে তিয়াসা দাস।
মাত্র তিন দিন আগেই জন্মদিন গিয়েছে মেয়ের। বৃহস্পতিবার সকালে কাজে যাওয়ার আগে বাবার কাছে আঙুর খাওয়ার আবদার করেছিল চার বছরের উষসী। তিনি যে আঙুর কিনেছেন, দুপুরবেলা ভিডিয়ো কল করে মেয়েকে তা দেখিয়েও ছিলেন কাঁকিনাড়া কাঁটাডাঙার দীপঙ্কর দে। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেই মেয়ের মৃত্যুসংবাদ শুনতে হল তাঁকে।
এই ঘটনায় জগদ্দল থানায় খুনের অভিযোগ দায়ের করেছেন উষসীর মা আত্রেয়ী। অভিযোগ, তাঁর শ্বশুর-শাশুড়ি উষসীকে বিষ খাইয়ে মেরে ফেলেছে। দীপঙ্করের অভিযোগ, স্ত্রী-কন্যাকে দেখতে পারতেন না তাঁর বাবা-মা। পুলিশ দীপঙ্করের বাবা মনোরঞ্জন এবং মা মিনতি দে’কে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দীপঙ্কর কলকাতায় একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন। ২০১২ সালে তিনি নিজে পছন্দ করে আত্রেয়ীকে বিয়ে করেন। সেই বিয়ে মেনে নেননি তাঁর বাড়ির লোকজন। বিয়ের পরে তাঁকে বাড়িতে থাকতেও দেওয়া হয়নি। দীপঙ্কর ওই এলাকাতেই একটি ভাড়াবাড়িতে থাকেন। ২০১৫ সালে উষসীর জন্ম হয়। এর এক বছর পরে দীপঙ্কর বাড়িতে ফিরে এলে তাঁর বাবা-মা আপত্তি করেননি। তবে ছেলে-বৌমা বা নাতনির সঙ্গে কথা বলতেন না তাঁরা। পরে উষসীর সঙ্গে কথা বললেও তাঁর এবং আত্রেয়ীর সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক সহজ হয়নি বলেই জানান দীপঙ্কর। উষসী কখনও-সখনও দাদু-ঠাকুমার কাছে গেলেও তাঁদের সম্পর্কও তেমন সহজ ছিল না। আত্রেয়ী জানান, এ দিন দপুরে খাওয়ার পরে তিনি মেয়েকে নিয়ে শুয়েছিলেন। সে সময়ে তাঁর শাশুড়ি মেয়েকে ডাকেন। তিনি বলেন, ‘‘মেয়ের ফিরতে দেরি হচ্ছে দেখে আমি ডাকতে যাই। মেয়ে নেমে এলে দেখি, ওর মুখ থেকে ঝাঁজাল গন্ধ বেরোচ্ছে। আমি জানতে চাইলে ও বলে, দাদু ইলিশ মাছ আর ভাত খাইয়েছে।’’
আত্রেয়ী জানান, মেয়েকে এর পর তিনি ঘরে শুইয়ে বাথরুমে যান। ফিরে এসে দেখেন, উষসীর মুখ থেকে গ্যাঁজলা বেরচ্ছে। চোখ স্থির হয়ে রয়েছে। প্রতিবেশীদের ডেকে তিনি স্থানীয় ভাটপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে মেয়েকে নিয়ে যান। চিকিৎসকেরা সেখানে উষসীকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
সন্ধ্যায় তিনি জগদ্দল থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। ততক্ষণে কলকাতা থেকে ফিরে আসেন দীপঙ্কর। তিনি বলেন, ‘‘বাবা-মা আমার স্ত্রীকে দেখতে পারতেন না। সেই প্রতিশোধই কি তাঁরা এ ভাবে তুললেন? দু’দিন আগে মেয়েটার জন্মদিন গেল, আর আজ মেয়ে নেই! আমি বাবা-মায়ের শাস্তি চাই।’’
আরও পড়ুন: শিলিগুড়ি পুরবোর্ড বঞ্চিত, কাউন্সিলরদের নিয়ে ধর্মতলায় ধর্নায় মেয়র
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy