Advertisement
E-Paper

ফিরে মণীশ গর্জন, আমি তৈরি

পর্যটন যদি আপনার প্রিয় হয়, শহর বেঙ্গালুরুতে আপনি স্বাগত। রাহুল দ্রাবিড়ের শহর থেকে কুর্গ, মাইসোর বিভিন্ন জায়গায় চলে যাওয়া যে অনায়াস, তা শুধু নয়। বাগানের শহরের সৌন্দর্যও আপনাকে প্রতি মিনিটে মুগ্ধ করবে। কেম্পেগৌড়া এয়ারপোর্ট থেকে যে সুবিস্তৃত ফ্লাইওভার শহরের হৃদয়ে আপনাকে পৌঁছে দেবে, তার আশপাশের সবুজের আধিক্য চোখে জ্বালা ধরিয়ে দিতে পারে।

রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায় l

শেষ আপডেট: ০২ মে ২০১৬ ০২:২৪
প্র্যাকটিসে ফিরলেন মণীশ।

প্র্যাকটিসে ফিরলেন মণীশ।

পর্যটন যদি আপনার প্রিয় হয়, শহর বেঙ্গালুরুতে আপনি স্বাগত। রাহুল দ্রাবিড়ের শহর থেকে কুর্গ, মাইসোর বিভিন্ন জায়গায় চলে যাওয়া যে অনায়াস, তা শুধু নয়। বাগানের শহরের সৌন্দর্যও আপনাকে প্রতি মিনিটে মুগ্ধ করবে। কেম্পেগৌড়া এয়ারপোর্ট থেকে যে সুবিস্তৃত ফ্লাইওভার শহরের হৃদয়ে আপনাকে পৌঁছে দেবে, তার আশপাশের সবুজের আধিক্য চোখে জ্বালা ধরিয়ে দিতে পারে। যদি ঢুকে পড়েন ব্রিগেড রোড চত্বরে, শহরের রূপ অনুভূত হবে অজান্তে। রাস্তার ধারে অনিন্দ্যসুন্দর গির্জা। গাছগাছালিতে ঢাকা কাব্বন পার্ক। ছিমছাম, কিন্তু মুগ্ধতার মাধ্যাকর্ষণ বাড়িয়ে দেওয়া সব বাড়ি। আবার বেঙ্গালুরুর যৌবন উপভোগ করতে চাইলে, তা-ও আছে। রেস্তোঁরা, বড়-মেজ-ছোট পাব রাস্তার ধারে আলগোছে পড়ে। সব মিলিয়ে অদ্ভুত একটা মাদকতা যেন। যা সম্মোহিনী, কিন্তু উগ্র নয়।

আইপিএল-পর্যটন যদি আপনার প্রিয় হয়, শহর বেঙ্গালুরুতে আপনি স্বাগত। সোমবার রাতে যে এখানে ম্যাচটা হবে, ক্রিকেটপ্রেমিকের কাছে তার আকর্ষণও যে বড় কম নয়। সোমবার রাতে এখানে আরসিবি বনাম কেকেআর। সহজে, বিরাট কোহালি বনাম গৌতম গম্ভীর। কিন্তু এতটাও সহজ নয় এবং স্রেফ দুই দিল্লিওয়ালার মুষলযুদ্ধের ট্যাগলাইন দিয়ে ব্যাপারটাকে মিটিয়ে ফেলাও যাবে না। আইপিএল ইতিহাস মাঝপথে আটকে দেবে।

রবিবার সন্ধেয় চিন্নাস্বামীতে গিয়ে শোনা গেল, আইপিএলে আরসিবির অবস্থা ভাল না হলেও টিকিটের চাহিদা নাকি বেশ ভাল। লাল-হলুদ গ্যালারির চিন্নাস্বামী খুব একটা ফাঁকা পড়ে থাকার সম্ভাবনা নেই। লোক নাকি হবে। আসলে আইপিএলের এই ম্যাচটার বিনোদন মশলা শুধু বাইশ গজ থেকে পাওয়া যায় না। তার আশপাশ থেকেও আসে। গম্ভীর বনাম কোহালির তীব্র ঝামেলা কয়েক বছর আগে এ মাঠেই তো লেগেছিল। যার নিদারুণ স্মৃতিতে এখনও ধুলো পড়েনি।

এবং টানা দু’টো হারের ধুলো-ময়লা এখনও কেকেআর টিমের সঙ্গে জুড়ে আছে বলে যদি ভেবে থাকেন, তা হলে প্রথমেই একটা সতর্কীকরণ ছেড়ে রাখা ভাল। বলে রাখা ভাল যে, কেকেআর কিন্তু চার্জড!

গল্প শোনাচ্ছে? আজগুবি লাগছে? লাগলে সম্পূর্ণ দোষ দেওয়া যায় না। টিমের জয়ের রথ ছুটতে-ছুটতে যদি হটাৎ হোঁচটে মুখ থুবড়ে পড়ে, কে আর কোথায় চার্জড হয়েছে? টেনশন আর আতঙ্কই সেই টিমের বাহ্যিক প্রতিক্রিয়া হওয়া উচিত। উচিত, কিন্তু কেকেআরের ক্ষেত্রে হচ্ছে না। বেঙ্গালুরুর ঘরের ছেলে তো নাইট-পৃথিবীতে আবার ঢুকে পড়লেন।

না, নামটা একদমই রবিন উথাপ্পা নয়। তাঁর কোথাও যাওয়ার ব্যাপার ছিল না। তিনি টিমের সঙ্গে আছেন, যে ভাবে থাকার কথা ছিল। কিন্তু আর এক জন ঢুকে পড়লেন।

মণীশ পাণ্ডে ঢুকে পড়লেন!

সন্ধের চিন্নাস্বামী। সরকারি নির্ঘণ্টে না থাকলেও আচমকা প্র্যাকটিস ডেকে দিয়েছে কেকেআর, প্রায় দুপুর পেরিয়ে শহরে পৌঁছেও। আর নামেই সেটা অপশনাল। অধিনায়ক গম্ভীর থেকে রবিন, পিচ দেখা নিয়ে ঝুলোঝুলি— ফাঁকা বাজারে কী হল না আজ? সবচেয়ে নাটকীয় মুহূর্ত অবশ্য তৈরি হল একটু পর, যখন ব্যাট হাতে আবির্ভূত হলেন মণীশ পাণ্ডে। কেকেআরের রেগুলার নাম্বার থ্রি!

চিকেন পক্সে আক্রান্ত হয়ে যে দিন থেকে নাইট-ক্লাব ছেড়ে গিয়েছেন কর্নাটকী, টুর্নামেন্টের ভাগ্যদেবতাও যেন ছেড়ে গিয়েছিলেন নাইটদের। পুণে ম্যাচ শেষ ওভারে গিয়ে জিতেছিল কেকেআর। মণীশের জায়গায় নেমে টেনে দিয়েছিলেন সূর্যকুমার যাদব। কিন্তু তার পর থেকে মুম্বইকরকে তিন নম্বর থেকে দুম করে সরিয়ে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং পরপর হার। দিল্লি ডেয়ারডেভিলস ম্যাচ শেষে রবিন উথাপ্পা বলে গিয়েছিলেন যে, বেঙ্গালুরুতে টিমের সঙ্গে যোগ দিতে পারেন মণীশ। যেটা বলেননি তা হল, নাইট নেটে নেমে যেতে পারেন এবং এতটা রুদ্রমূর্তিতে কর্নাটকীকে দেখা যেতে পারে।

দৃষ্টি যদি ভরসা হয়, তা হলে মণীশে এখন কোনও জড়তা নেই। এক নয়, দু’-দু’বার নেটে ব্যাট করলেন। মোট এক ঘণ্টা। কপিবুক শট থেকে ইম্প্রোভাইজেশন— সব দেখা গেল। শুধু তাই নয়, তাঁর জন্য আলাদা ফিল্ডিং সেশনেরও ব্যবস্থা করল কেকেআর এবং একটা ক্যাচও গলল না!

কেকেআর তাঁকে বেঙ্গালুরুতে খেলাবে না কলকাতায়, জানা নেই। কিন্তু এটা শোনা গেল যে, নেটে ঢুকে মণীশ বলে দিয়েছেন, তিনি ফিট। সম্পূর্ণ সুস্থ। নামতে প্রস্তুত। কেকেআর ব্যাটিং কোচ সাইমন কাটিচ রাতের চিন্নাস্বামীতে দাঁড়িয়ে বলছিলেন, ‘‘দেখে তো অসাধারণ লাগল। পুরো ফিট দেখাচ্ছে। নিজেও এসে বলল যে, ফিট। নামতে তৈরি। দেখা যাক এখন জাক (কালিস), গৌতি (গম্ভীর) কী করে। এমনিতে কিন্তু ওকে দেখে ভীষণ শার্প লাগছে। ভাল বিশ্রামও পেয়েছে। আমি তো বলব, টিমের সতীর্থদের চেয়ে মণীশ এখন অনেক বেশি ঝরঝরে।’’

কলকাতা সমর্থকদের কাছে এর চেয়ে ভাল খবর এই মুহূর্তে থাকতে পারে কিছু? এটা মেনে নিতেই হবে পরাজয়ে ন্যুব্জ হয়ে পড়ে না থেকে, ঠিক সময়ে অ্যালার্ম বাজিয়ে দেওয়া হয়েছে কেকেআরে। নইলে গম্ভীর সহ টিমের অধিকাংশ হুড়মুড়িয়ে মাঠে ঝাড়া দু’ঘণ্টা পড়ে থাকত না। মাঠে পৌঁছে বার্তাও দিত না যে, কভার তোলো। পিচ দেখব।

কোথাও গিয়ে যেন মনে হবে, মুম্বইয়ের চেয়েও দিল্লির হার অনেক বেশি আঘাত করেছে নাইটদের। সেখানে তারা পিচ বোঝেনি। গম্ভীর রান পাননি। টিম ভুল করেছে পরের পর। এ দিন তাই মাঠে ঢুকে সর্বপ্রথম পিচ বুঝে নেওয়া, তার পর নেটে দু’বার গম্ভীর। টিম বুঝতে পারছে যে, বাস্তবের জমি কতটা রুক্ষ হয়। কী ভাবে তা টিমকে টেবলের এক নম্বর থেকে চারে পাঠিয়ে দিতে পারে মাত্র দু’টো দিনে। টিম মেনে নিচ্ছে যে, মণীশ চলে যাওয়ায় ব্যালান্সটা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। টিম বলে দিচ্ছে, সোমবার যে কোনও ভাবে আরসিবির চার আতঙ্ককে দ্রুত ফেরাতেই হবে। ‘‘নইলে তো শেষ। ওরা বিশাল স্কোর তুলে শেষ করে দেবে সব,’’ বলে টিম বাসের দিকে এগিয়ে গেলেন কাটিচ।

কী মনে হচ্ছে? কী হবে? মার্কশিট বলা অসম্ভব। কিন্তু একটা আন্দাজ পাওয়া সম্ভব।

অতীতের মতো আরও একটা কেকেআর-আরসিবি রক্তক্ষয়ী মহাযুদ্ধের দিকে এগোচ্ছে সোমবার রাতের বেঙ্গালুরু।

আজ আইপিএলে

রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু : কলকাতা নাইট রাইডার্স (চিন্নাস্বামী, রাত ৮-০০)।

IPL 2016 KKR goutam gambhir manish pandey
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy