Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
আইএসএল যুদ্ধের আগে মুখ খুললেন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন

নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়েই ভারতে এসেছি, বলছেন দেল পিয়েরো

তিন বছর বয়সে ফুটবলে হাতেখড়ি। তবে স্ট্রাইকার নয়, গোলকিপার হিসাবে! কিন্তু গোল আটকাতে আর ভাল লাগছিল না। মন চাইত বিপক্ষের কিপারকে পরাস্থ করতে। আর সেই ইচ্ছা থেকেই হয়ে গেলেন গোলমেশিন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:৩০
Share: Save:

তিন বছর বয়সে ফুটবলে হাতেখড়ি। তবে স্ট্রাইকার নয়, গোলকিপার হিসাবে!

কিন্তু গোল আটকাতে আর ভাল লাগছিল না। মন চাইত বিপক্ষের কিপারকে পরাস্থ করতে। আর সেই ইচ্ছা থেকেই হয়ে গেলেন গোলমেশিন।

বৃহস্পতিবার একটি সর্বভারতীয় চ্যানেলে সাক্ষাত্‌কার দিতে গিয়ে চমকপ্রদ এই তথ্য দিয়ে অবাক করলেন ইতালির তারকা ফুটবলার আলেসান্দ্রো দেল পিয়েরো। ইতালির বিশ্বকাপ জয়ী ফুটবলার খেলতে এসেছেন আইএসএলে। যে দেশের ফুটবলের র‌্যাঙ্কিং দেড়শোরও নিচে। কিন্তু তাতেও কী সিরিয়াস! “ইতালির জার্সিতে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছি। খেলেছি ইউরোপের বিভিন্ন ক্লাবেও। তা সত্ত্বেও বলব ভারতে খেলতে আসার চ্যালেঞ্জটা আমার কাছে একেবারে নতুন অধ্যায়।”

ভারতীয় ফুটবলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে, বিশ্ব ফুটবলের দরবারে ভারতকে পৌঁছে দেওয়ার চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন, দাবি করলেন দেল পিয়েরো। “আমার অভিজ্ঞতা ভারতীয় ফুটবলারদের সঙ্গে ভাগ করে নিচ্ছি। চেষ্টা করছি আইএসএলের মাধ্যমে ভারতীয় ফুটবলের উন্নতি করতে। আইকন ফুটবলার হিসেবে বাড়তি দায়িত্বও রয়েছে। আইএসএল ভারতীয় ফুটবলের উন্নতির প্রথম পদক্ষেপ।” এর সঙ্গেই অবশ্য তিনি যোগ করলেন, “তিন মাসটা অবশ্য খুব কম সময়। তবে এই সময়ের মধ্যেই চেষ্টা করব ভারতকে একটু এগিয়ে নিয়ে যেতে। যতটা পারি।”

দেল পিয়েরো যে শুধু মুখে বলেই দায় সারছেন তা একেবারেই নয়। কাজেও করে দেখাচ্ছেন। দিল্লি ডায়নামোসের মার্কি প্লেয়ার এখন চোখের মণি সতীর্থদের। জুনিয়র থেকে সিনিয়র প্রত্যেকেই দেল পিয়েরোর প্রশংসায় পঞ্চমুখ। প্র্যাকটিস চলাকালীন সতীর্থ ফুটবলারদের সঙ্গে তাঁর খুনসুটি লেগেই থাকে। কখনও কারও মাথার চুল ঘেঁটে দেন। আবার কখনও হালকা রসিকতায় সবাইকে উজ্জ্বীবিত করেন। ফুটবলের কোনও প্রসঙ্গ উঠলে অবশ্য চূড়ান্ত সিরিয়াস। কেউ কিছু জানতে চাইলে বুঝিয়ে দেন। সতীর্থরা কোনও ভুল করলে, সেটা শুধরে দেওয়ার চেষ্টা করেন। একজন যোগ্য নেতার মতোই। দিল্লি টিমের এক ভারতীয় ফুটবলার তো বলেই ফেললেন, “দেল পিয়েরো হচ্ছে যোগ্য নেতা। ও জানে দলকে কী ভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে হয়। আমাদের পথ দেখাচ্ছে ও।”

তাঁর তীক্ষ্ন নাক, উজ্জ্বল চোখ, ঠোঁটের কোণে ঝুলে থাকা হাসি সতীর্থদের আরও কাছে টেনেছে। মননদীপ-আদিলরা তাঁকে মজা করে হলিউডের নায়ক বলেন। তাঁকে হলিউড তারকা বলার পিছনে একদিকে অবশ্যই তাঁর সুন্দর চেহারা। পাশাপাশি ইতালি থেকে তাঁর সঙ্গে একজন স্পেশাল ফটোগ্রাফার এসেছেন। যিনি সব সময় টুর্নামেন্টের সবচেয়ে দামি বিদেশির সঙ্গে থাকছেন। ছবি তুলছেন। সে জন্যই তিনি এখন দিল্লি ডায়নামোসের হলিউড স্টার। দেল পিয়েরোর সতীর্থদের মতে, ‘‘এরকম ফটোগ্রাফার তো হলিউডের স্টারেদের সঙ্গেই থাকে।” ২০০৬ বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য সতীর্থদের এসব কথাবার্তা বেশ উপভোগই করছেন।

শুধু বিশ্বকাপ জেতাই নয়, ফাইনালে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে টাইব্রেকারে তাঁর একটি গোলও রয়েছে। এ ছাড়াও জাতীয় দলের হয়ে ২৭টি গোল করেছেন ইতালির এই তারকা স্ট্রাইকার। ক্লাব ফুটবলে জুভেন্তাস, সিডনি এফসি-র জার্সিতেও তাঁর সাফল্য নেহাত্‌ কম নয়। এ রকম একজন তারকা ফুটবলার, অথচ দিল্লিতে পা রাখার প্রথম দিনের কথা তুললেই রীতিমতো উচ্ছ্বসিত হয়ে পড়ছেন। “আমি ভারতে পা রাখার পর সাধারণ মানুষের উচ্ছ্বাস দেখে অবাক হয়েছিলাম। এ রকমটাও হতে পারে সত্যি ভাবিনি। আমার খুব ভাল লেগেছিল। সবাইকে ধন্যবাদ জানাতে চাই এর জন্য।”

জীবনে অনেক ওঠাপড়ার মধ্যে দিয়ে তাঁকে যেতে হয়েছে। যে বছর বিশ্বকাপ জেতার স্বাদ পেয়েছিলেন দেল পিয়েরো, সে বছরই তাঁর ক্লাব জুভেন্তাসকে দ্বিতীয় ডিভিশনে নামিয়ে দেওয়া হয় ম্যাচ গড়াপেটার অভিযোগে। “তখন বিশ্বকাপের প্রস্তুতি চলছিল। বিশ্বকাপের ঠিক আগেই এই ঘটনাটি ঘটে। তবু ক্লাব ছাড়িনি আমি। বিশ্বকাপ জেতার স্বাদ যতটা তৃপ্তি দিয়েছিল। ততটাই আঘাত পেয়েছিলাম জুভেন্তাসকে নামিয়ে দেওয়ার ঘটনায়,” বলছিলেন দেল পিয়েরো। এ সব ঘটনাও নিজের সতীর্থদের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছেন ইতালির স্ট্রাইকার। মানসিক ভাবে লড়াই করার শক্তি জোগানোর জন্যই। দলকে উদ্দীপ্ত করার জন্য।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE