Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

বোলার খুনের টেকনিকটা গেইলের থেকেই শিখেছি

কেকেআর টিমে শোনা যায়, তিনিই সবচেয়ে হাসিখুশি ক্রিকেটার। ঠাট্টা-ইয়ার্কিতে টিমের কেউ নাকি তাঁর সঙ্গে লড়ে পারে না। অথচ বাইশ গজে আন্দ্রে রাসেল কী বস্তু, সবচেয়ে ভাল বোধহয় জানেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ টি-টোয়েন্টিতে চেন্নাই সুপার কিংসের বিরুদ্ধে তাঁর ২৫ বলে ৫৮ এখনও কেউ ভুলতে পারেননি। মঙ্গলবারের উপ্পলে কেকেআর থেকে ক্রিস গেইলকে ‘গুরুদক্ষিণা’— সব প্রসঙ্গে নাইটদের ক্যারিবিয়ান তারকা আনন্দবাজারকে যা যা বললেন...

রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়
হায়দরাবাদ শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:৫৪
Share: Save:

কেকেআর টিমে শোনা যায়, তিনিই সবচেয়ে হাসিখুশি ক্রিকেটার। ঠাট্টা-ইয়ার্কিতে টিমের কেউ নাকি তাঁর সঙ্গে লড়ে পারে না। অথচ বাইশ গজে আন্দ্রে রাসেল কী বস্তু, সবচেয়ে ভাল বোধহয় জানেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ টি-টোয়েন্টিতে চেন্নাই সুপার কিংসের বিরুদ্ধে তাঁর ২৫ বলে ৫৮ এখনও কেউ ভুলতে পারেননি। মঙ্গলবারের উপ্পলে কেকেআর থেকে ক্রিস গেইলকে ‘গুরুদক্ষিণা’— সব প্রসঙ্গে নাইটদের ক্যারিবিয়ান তারকা আনন্দবাজারকে যা যা বললেন...

প্রশ্ন: চেন্নাই সুপার কিংসের বিরুদ্ধে আপনার খুনে ব্যাটিং দেখে কেকেআর সমর্থকরা একটা কথা খুব বলছেন। শুনেছেন?

রাসেল: কী?

প্র: লোকে বলছে, ক্রিস গেইল কেকেআর থেকে চলে গিয়েছে। কিন্তু গেইল টু-কে কেকেআর পেয়ে গিয়েছে।

রাসেল: কথাটা শুনতে খুব ভাল। কিন্তু আমার দেশে যদি কেউ শোনে গেইলের সঙ্গে আমার তুলনা হচ্ছে একটা ইনিংস দেখে, হাসবে। কোথায় গেইল, কোথায় আমি। ও রকম খুনে ব্যাটিং, হি ইজ সামথিং এলস ম্যান। আমি ওকে নকল করার চেষ্টা করি মাত্র।

প্র: কিন্তু লোকে বলছে, ও রকম পাওয়ার হিটিং গেইল ছাড়া কারও থেকে দেখা যায়নি। টিভি দেখিয়েছে যে ছয়গুলো মেরেছেন, সেগুলো ধোনির ছক্কাগুলোর চেয়েও দূরে দূরে পড়েছে।

রাসেল: জানি। আমি জানতাম, পাওয়ার আমার এমনিই আছে। ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগে যখন খেলি, তখনও বলগুলো মাঠের বাইরেই পড়ে। কখনও টাইমিং হয়, কখনও না হলেও শক্তিতে ফেলে দিই! চেন্নাইয়ের বিরুদ্ধে টাইমিংটাও একদম ঠিকঠাক হচ্ছিল। তাই বলগুলো মাঠে থাকার কোনও চান্স ছিল না। কিন্তু গেইলটা বাদ রাখবেন। ও কী জিনিস, আমি জানি। একসঙ্গে খেলি বলে জানি।

প্র: জামাইকা তালাওয়াজ-এর কথা বলছেন?

রাসেল: হ্যা।ঁ ক্যারিবিয়ান টি-টোয়েন্টি লিগে আমার আর গেইল— দু’জনের টিমই ওটা। গেইল আমার গুরু। টি-টোয়েন্টিতে কী ভাবে বোলারকে রক্তাক্ত করে দিতে হবে, সেটা গেইলকে দেখেই শেখা। এটা ঠিক যে, আমার ব্যাটিংয়ে ওর খুনে মানসিকতার প্রভাবটা আছে। ওর যেমন বোলার দেখলেই থেঁতলে দিতে ইচ্ছে হয়, আমিও সেই নৃশংস ব্যাটিংটা করার চেষ্টা করি। কিন্তু একটা ম্যাচে চেন্নাইকে উড়িয়ে দিয়ে কিছু প্রমাণ হয় না। লাহৌর ম্যাচে আমি পারিনি। আমাকে অনেক বেশি ধারাবাহিক হতে হবে। গেইল আইপিএলে প্রত্যেকটা ম্যাচে ও ভাবে রান করে করে সব টিমের বোলারের মনে ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছিল। আমাকেও সেই আতঙ্কের মধ্যে বোলারকে ফেলে দিতে হবে।

প্র: ভেবে খারাপ লাগছে না যে, আপনাকে চেনা গেল শেষ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন্স লিগ টি-টোয়েন্টিতে এসে। আইপিএলে কেকেআরের হয়ে দু’একটা ম্যাচ বাদে খেলেননি। বিশেষ কিছু করতেও পারেননি।

রাসেল: খারাপ লাগার কিছু নেই। আমি এখন ফর্মে আছি, তাই টিমের হয়ে নামছি। ক্যারিবিয়ান টি-টোয়েন্টি লিগটা এ বার খুব ভাল গিয়েছে আমার। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ খেলতে আসার আগেই মেজাজে ছিলাম। আক্রমণাত্মক ব্যাটিং আমি আগেও করতাম। কিন্তু ক্যারিবিয়ান টি-টোয়েন্টি লিগ আমাকে এই জায়গায় এনে দিয়েছে। ওখান থেকে যে আত্মবিশ্বাসটা পেয়েছি, সেটা এখানে কাজে দিচ্ছে।

প্র: টি-টোয়েন্টিটা কি কেরিয়ারের শুরু থেকেই ভাল লাগত?

রাসেল: একটা ব্যাপার বুঝতে হবে। টেস্ট ক্রিকেট এক রকম ব্যাপার। ক্রিকেটীয় দক্ষতার প্রয়োগ লাগে ওখানে। আর টি-টোয়েন্টিতে দরকার বিস্ফোরণ। রান করার জন্য অফুরন্ত সময় তোমার হাতে থাকবে না। দশটা বল পাবে, তাতেই দেখতে হবে প্রতিপক্ষকে কী ভাবে ওড়ানো যায়। তুমি পারলে ভাল, নইলে টি-টোয়েন্টি তোমার জায়গা নয়। টি-টোয়েন্টিতে আলাদা চ্যালেঞ্জ থাকে।

প্র: তাই এই ফর্ম্যাট বেশি পছন্দ?

রাসেল: ফর্ম্যাটটা পছন্দ কারণ এটা আমাকে উত্তেজিত করে। আমি নিজেই নিজেকে এন্টারটেইন করতে পারি বলে! বললাম তো, চ্যালেঞ্জটা আলাদা। যত বড় বোলারই হোক, তুমি তাকে পাত্তা দিতে পারবে না। তোমাকে তাকেই ছয় মারতে হবে। এখানে দেখা বা বোঝার সময়টা তোমাকে কেউ দেবে না। নামো, বিস্ফোরণ ঘটাও, ঘটিয়ে বাড়ি চলে যাও! যারা দেখছে, তারা খুশি। তেমন আমি যদি চ্যালেঞ্জটা জিততে পারি, আমিও খুশি। টি-টোয়েন্টি আমার কাছে অন্য রকম মজা।

প্র: অথচ আপনার দেশের এক স্পিনারকে তো টি-টোয়েন্টিতে কেউ খেলতে পারছে না। মারা দূরে থাক। সুনীল নারিনকে খেলা কি সত্যিই এতটা কঠিন?

রাসেল: হ্যাঁ, সত্যিই এতটা কঠিন। আমাদের টিম ভাগ্যবান যে নারিন আমাদের হয়ে নামে। ও এতটাই স্পেশ্যাল। কোনও টিমের কোনও ব্যাটসম্যানকে দেখলাম না ওকে মারার টার্গেট করছে। ওরা নারিনকে দেখে খেলে বাকিদের মারতে যায়, আর লাভ হয় আমাদের।

প্র: আর আপনি? নেটে তো খেলেন নারিনকে।

রাসেল: নেট বা মাঠ, নারিনের বল কোথাওই পুরোপুরি বোঝা যায় না। আমি নেটে ওকে মারতে যাই কি না জানতে চাইছেন তো? না, নারিনকে মারতে যাওয়ার সাহসটা আন্দ্রে রাসেলেরও হয় না!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE