পুণের বিরুদ্ধে রবিবারের জয়টা ক্রিকেটের সেই অদ্ভুত ম্যাচগুলোর একটা। মানতেই হবে আমরা রবিবার খারাপ খেলেছি। তার পরেও যে শেষ পর্যন্ত জিতেছি, ভাগ্য ভাল বলতে হবে। আমাদের অনেক কিছুই সাধারণ মানের চেয়ে নিচু ছিল। মনে হচ্ছিল যেন আমরা ম্যাচটা হারার উপায় খুঁজছিলাম। তবে ঈশ্বর এই জয়টা আমাদের দিকে ঠেলে দিয়েছেন। প্রথমেই আমার আত্মঘাতী, বোকার মতো রান আউটের কথা বলতে হয়। দ্বিতীয় রানটা নেওয়ার মাঝপথে বুঝে গিয়েছিলাম, যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। ইচ্ছে করছিল তখনই ওখানে গর্ত খুঁড়ে নিজেকে পুঁতে ফেলি।
পরেও আমাদের অনেক ব্যাটসম্যান অভিনব, বড় শট নেওয়ার চেষ্টা করেছে। যেখানে দরকার ছিল স্রেফ প্রতিটা বলে রান নেওয়া। আমার তো মনে হয় আক্ষরিক ভাবেই আমরা জেল থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছি ম্যাচটায়। বোলিংয়েও তো শেষ পাঁচ ওভারে পুণেকে নিয়ন্ত্রণ করার সুযোগ দিয়ে ফেলেছিলাম। যেখানে ওরা ১৫ ওভারে ১০০-৩ ছিল, সেখান থেকে কুড়ি ওভারে তুলল ১৬০-৫।
আমাদের দিক থেকে একটু বেশিই গা-ছাড়া দেওয়া হয়েছে। একটা ভাল দল ম্যাচ জেতে, কিন্তু একটা গ্রেট দল দাপট দেখায়। খেলোয়াড় হিসেবে এটাই আমি শিখেছি। অল ব্ল্যাকস রাগবি টিম, সোনার সময়ের ওয়েস্ট ইন্ডিজ, স্টিভ ওয়ের অস্ট্রেলিয়া, ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড, সবার মধ্যে একটা কমন ব্যাপার ছিল— স্রেফ উপস্থিতির মধ্য দিয়েই প্রতিপক্ষের উপর দাপট দেখানো। আর ঠিক এই জিনিসটার জন্য লড়ছে কেকেআর।
আমাদের ড্রেসিংরুমে সেই প্রতিভা রয়েছে। শক্তি আর লড়ার ইচ্ছেও কম নেই। সূর্যকুমার যাদবের মতো তরুণ তুর্কিকে দেখলেই বুঝবেন কী বলতে চাইছি। শুনেছি মুম্বই ক্রিকেটে অনেকেই ওকে পছন্দ করে না। কিন্তু সেটা যে কেন, বুঝতে পারি না। হয়তো ও মনে যা আসে সেটা সটান বলে দেয় বলে, হয়তো ও জীবনকে ভালবাসে তাই। শরীরে বাবা-মার ট্যাটু আছে, চুল রং করা, নতুন করে হলুদ রং করা টয়োটা ফরচুনার বা হার্লে ডেভিডসন বাইকে ঘুরে বেড়াতে ভালবাসে বলে। ক্যাপ্টেন হিসেবে এর কোনওটা নিয়েই আমার মাথাব্যথা নেই। লক্ষ্য করেছি সূর্য বা ওকে আমি আদর করে যে নামে ডাকি স্কাই, জিম সেশনটা মন দিয়ে করে, নেটে প্রচুর খাটে আর দারুণ অন-ড্রাইভ মারতে পারে, যে রকম ও রবিবার অ্যালবি মর্কেলকে মারল।
ম্যান অফ দ্য ম্যাচের পুরস্কার নিয়ে সূর্য
সবচেয়ে বড় ব্যাপার হল ব্যাটিং অর্ডারে উপরে বা নীচে যেখানেই পাঠানো হোক, সূর্য কোনও অভিযোগ করে না। আমি এমনও কয়েকজন ক্রিকেটারকে জানি যাদের জন্য টিমের স্বাৈৈর্থ জাহান্নমে গেলে যাক, তবু তারা কিছুতেই ব্যাটিং অর্ডার বদলাবে না। তবে আমি চাইব সূর্যর প্রথম শ্রেণির রেকর্ডটা আরও ভাল হোক। এই মুহূর্তে ওর ব্যাটিং গড় প্রায় ৪৬.৯৭, সঙ্গে দশটা সেঞ্চুরি, তা-ও ৪৭ ম্যাচে। এই রঞ্জি মরসুমে ও ৪৩.১২ গড়ে ৬৯০ রান করেছে। তবে ভাল রেকর্ড হলেও এখনও গ্রেট নয়। তাই স্কাইকে আরও খাটতে হবে। আমি ওর জায়গায় থাকলে জাক কালিসের হোটেল ঘরের বাইরে পড়ে থাকতাম। শুধু ওর মতো গ্রেটের কাছ থেকে ব্যাটিংয়ের শিল্প শেখার জন্যই নয়, ক্রিকেটটা বুঝতেও।
আমার আর এক বন্ধু ইউসুফ পাঠানও দারুণ খেলল। মনে হচ্ছে ওর সঙ্গে এখন যা-ই হচ্ছে, জোড়ায় হচ্ছে। সদ্য ওর দ্বিতীয় ছেলে হয়েছে, দুটো ছক্কা মেরেছে, সঙ্গে দুটো বাউন্ডারি! আমাদের জন্য আনন্দের সমাপতন।
যাই হোক, এখন আমি মুম্বই পৌঁছে গিয়েছি। আমার আনন্দের খনি আজিনের সঙ্গে আছি। ও আর ওর মা এই লেখাটা শেষ হওয়ার অপেক্ষায় আছে। শেষ হলেই সবাই মিলে একটু মেরিন ড্রাইভে চক্কর দিয়ে আসব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy