চাঞ্চল্যকর সব অজানা তথ্য ফাঁস করে শাহিদ আফ্রিদি তাঁর আত্মজীবনী নিয়ে আগ্রহ বাড়িয়ে তুলেছেন ঠিকই। কিন্তু এর মূল্যও চোকাতে হতে পারে পাক ক্রিকেটের সুদর্শন তারকাকে।
গৌতম গম্ভীরের সঙ্গে বাগ্যুদ্ধ নিয়ে নয়, আফ্রিদি বিপাকে পড়তে চলেছেন তাঁর বয়স সংক্রান্ত তথ্য নিয়ে। এত দিন ওয়ান ডে ক্রিকেটে সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেটার হিসেবে সেঞ্চুরির রেকর্ড ছিল তাঁরই দখলে। ৩৭ বলে করা সেই ঝোড়ো সেঞ্চুরি দেখে নামকরণ হয়েছিল ‘বুম বুম আফ্রিদি’। কিন্তু আত্মজীবনীতে পাক তারকা নিজেই ফাঁস করেছেন, ৩৭ বলে সেই ঝোড়ো সেঞ্চুরি করার সময়ে তাঁর বয়স ১৬ ছিল না। ছিল ১৯। এমনও স্বীকার করেছেন যে, পাঁচ বছর বয়স ভাঁড়ানো ছিল তাঁর। নথিপত্রে দেখানো আছে, তাঁর জন্ম ১৯৮০ সালে। আসলে তাঁর জন্ম ১৯৭৫-এ।
এই তথ্য জানাজানি হওয়ার পরেই আইসিসিতে চিন্তাভাবনা শুরু হয়ে গিয়েছে যে, আফ্রিদিকে রেকর্ড বই থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে কি না। ওয়ান ডে ক্রিকেটে সর্বকনিষ্ঠ হিসেবে সেঞ্চুরি করার কীর্তি এখনও দেখানো হচ্ছে আফ্রিদির নামেই। ১৯৯৬-তে নাইরোবিতে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে করা সেই সেঞ্চুরি তিনি করেছিলেন ১৬ বছর ২১৭ দিনে। এখন যা পরিস্থিতি, আফ্রিদির নিজের বয়ান অনুযায়ীই, এই বয়সে জল মেশানো আছে।
সোমবার ওয়াকিবহাল মহলে কথা বলে জানা গেল, যে-হেতু আত্মজীবনীতে আফ্রিদি নিজেই এই বয়স ভাঁড়ানোর কথা ফাঁস করেছেন, রেকর্ড বই থেকে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া কার্যত নিশ্চিত। শুধু সঠিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কী ভাবে তা করা হবে, তা নিয়েই এখন আলোচনা চলছে। জানা গিয়েছে, পরিসংখ্যানবিদের সঙ্গে কথা বলছেন আইসিসি-র শীর্ষ কর্তারা। কী ভাবে রেকর্ডের পাতায় এই ভুলের সংশোধন করা হবে, সেটাই খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে।
আফ্রিদির পরেই সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেটার হিসেবে ওয়ান ডে-তে সেঞ্চুরির কীর্তি রয়েছে আফগানিস্তানের উসমান ঘনির। ২০১৪ সালে বুলাওয়াতে জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে সেঞ্চুরি করার সময়ে ঘনির বয়স ছিল ১৭ বছর ২৪২ দিন। ধরেই রাখা যায়, আফ্রিদিকে রেকর্ড বই থেকে সরিয়ে আফগানিস্তানকে প্রথম বিশ্বরেকর্ড উপহার দিতে চলেছেন তিনি। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ৩৭ বলের সেই সেঞ্চুরির দৌলতে দীর্ঘ দিন ধরে আফ্রিদি এক দিনের ক্রিকেটে দ্রুততম সেঞ্চুরির মালিকও ছিলেন। এখন যা এ বি ডিভিলিয়ার্সের দখলে। ২০১৫-তে জোহানেসবার্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ৩১ বলে বিধ্বংসী সেঞ্চুরি করেছিলেন এ বি।
অলিম্পিক খেলায় ফলাফল বা পুরস্কার দিয়ে দেওয়ার পরেও ডোপ পরীক্ষার ফলাফল অনুযায়ী পরে গিয়ে পদক কেড়ে নেওয়ার প্রচুর নিদর্শন রয়েছে। ১৯৮৮ সোল অলিম্পিক্সে বেন জনসনের ১০০ মিটারে সোনা জয়ের পরেও পদক হারানোর ঘটনা বিখ্যাত হয়ে রয়েছে। ২০০০ সিডনি অলিম্পিক্সে সোনাজয়ী মারিয়ন জোন্সের পদক কেড়ে নেওয়া হয় ‘বালকো’ ডোপ কেলেঙ্কারিতে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায়। ক্যানসারজয়ী সাইক্লিস্ট লান্স আর্মস্ট্রংয়ের সাতটি ত্যুর দ্য ফ্রান্স পদক কেড়ে নেওয়া হয় ব্লাড ডোপিংয়ের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায়।
আফ্রিদির বিরুদ্ধে ডোপিংয়ের অভিযোগ ওঠেনি। কিন্তু বয়স নিয়ে নিজের স্বীকারোক্তির পরে প্রমাণ হয়ে যাচ্ছে, একেবারেই সর্বকনিষ্ঠ তিনি ছিলেন না। ক্রিকেটে শেন ওয়ার্নের মতো তারকা ডোপিংয়ের অপরাধে শাস্তি পেয়েছেন। কিন্তু এ ভাবে রেকর্ড বই থেকে নাম মুছে ফেলার ঘটনা ক্রিকেটে কার্যত নজিরবিহীন।
সমস্যা হচ্ছে, আত্মজীবনীতে স্বীকারোক্তির পরেও আফ্রিদির বয়স নিয়ে বিভ্রান্তি কাটেনি। বরং, তা আরও বেড়ে গিয়েছে। এক বার তিনি বলেছেন, পাঁচ বছর কমানো ছিল বয়স। আবার বলেছেন, সর্বকনিষ্ঠ হিসেবে সেঞ্চুরির বিশ্বরেকর্ডের সময় বয়স ছিল ১৬ নয়, ১৯। পরিষ্কার হিসাবে পাঁচ বছর ভাঁড়ালে তো সেটা হওয়া উচিত ২১। এই হিসাব ঠিক হলে ওয়ান ডে ক্রিকেটে সর্বকনিষ্ঠ সেঞ্চুরি করা ব্যাটসম্যানদের তালিকায় আফ্রিদির আগে এক বা দু’জন নয়, অন্তত ২৬ জন আছেন। তালিকায় ভারতের দুই সর্বকনিষ্ঠ বিনোদ কাম্বলি (২১ বছর ০ দিন) এবং বিরাট কোহালিও (২১ বছর ৪৯ দিন) এগিয়ে থাকবেন। এমনকি, এগিয়ে থাকতে পারেন তালিকায় ৩৮ নম্বরে থাকা সচিন তেন্ডুলকরও। যিনি কলম্বোতে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ২১ বছর ১৩৮ দিন বয়সে ওয়ান ডে ক্রিকেটে তাঁর প্রথম সেঞ্চুরি করেছিলেন। আফ্রিদির নিজের বয়ান অনুযায়ী, যদি তিনি পাঁচ বছর ভাঁড়িয়ে থাকেন, তা হলে প্রথম সেঞ্চুরির সময় তাঁর আসল বয়স হওয়ার কথা ২১ বছর ২১৭ দিন। এ দিন নাকি আফ্রিদি আবার দাবি করেছেন, ছোট্ট ভুল হয়েছে। পাঁচ নয়, আসলে তিন বছর ভাঁড়িয়েছিলেন। তাঁর এই ‘একাধিক’ বয়স নিয়ে বিভ্রান্ত জনতা। টুইটার, ফেসবুকেও হাসির রোল উঠেছে।
ক্রিকেটের নিয়ামক সংস্থা অবশ্য শুধুই হাসি-মজা নয়, গুরুত্ব দিয়েই বিষয়টিকে দেখছে। তাদের মনে হচ্ছে, নিজেই স্বীকার করে নেওয়ার পরে আফ্রিদিকে ‘বেনিফিট অফ ডাউট’ দেওয়ার জায়গাও আর থাকছে না। আইসিসিকে দুসরা দিয়ে তিনি এত দিন বিশ্বরেকর্ড ধরে রেখেছিলেন। এ বার তাঁর ‘আউট’ হওয়ার পালা!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy