ছত্রিশ বছরের ক্রিকেটজীবনে মঙ্গলবারের পর সম্ভবত সইদ আজমলের দু’টো আক্ষেপ থাকবে।
অনেক দেরিতে ক্রিকেট-কেরিয়ার শুরু করা।
বিশ্বকাপের ছ’মাস আগে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে নির্বাসিত হওয়া।
বর্তমান প্রেক্ষাপট ধরলে, দ্বিতীয় ধাক্কার প্রভাব বেশি মারাত্মক। ওয়ান ডে ক্রিকেটে বোলারদের মধ্যে আজমলই এখন শীর্ষে। আর বিশ্বকাপের মাস ছ’য়েক আগে কি না তাঁকেই নির্বাসনে পাঠাল আইসিসি! মঙ্গলবার ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ামক সংস্থা রায় দিয়ে দিল যে, আজমলের অ্যাকশন পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে বল ডেলিভারির সময় তাঁর কনুই পনেরো ডিগ্রির বেশি ভাঙে। যা নিয়মবিরুদ্ধ। অর্থাৎ, পাকিস্তানি অফ স্পিনারের অ্যাকশন অবৈধ। এবং সেটা শুধু দুসরা করার ক্ষেত্রেই নয়। আজমলের সমস্ত ডেলিভারিই অবৈধ। অতএব যত দিন না অ্যাকশন শুধরোচ্ছেন, তত দিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তিনি নামতে পারবেন না।
যার পর ক্রিকেটমহলে প্রশ্ন উঠে পড়ে, আইসিসির রায় ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে আজমলের বিশ্বকাপও শেষ হয়ে গেল কি না। পাক অফস্পিনার নিজে আশাবাদী। তাঁর মনে হচ্ছে, অ্যাকশন ঠিকঠাক করে নামতে পারবেন। আজমল মনে করেন, তাঁর অ্যাকশনে এমন কোনও মারাত্মক ভুলত্রুটি নেই যা শুধরে নিয়ে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ টুর্নামেন্টে নামা যাবে না।
“ব্রিসবেনে বায়োমেকানিক পরীক্ষা থেকে যা বেরোল, তা নিশ্চয়ই হতাশজনক। কিন্তু আমি বরাবরের যোদ্ধা। জীবনে অনেক কিছু লড়াই করে আদায় করতে হয়েছে। এ বারও লড়ব। আমি জানি বিশ্বকাপের আগে ফিরে আসতে গেলে আমাকে কী করতে হবে,” ফয়জলাবাদ থেকে এ দিন বলে দিয়েছেন আজমল। সঙ্গে যোগ করেছেন, “নির্বাসন নিয়ে খুব বেশি ভাবছি না। আমি মনে করি যা ত্রুটি আছে, সে সব দ্রুত শুধরে নেওয়া যাবে।” গত মাসে গলে শ্রীলঙ্কা-পাকিস্তান প্রথম টেস্টের সময় যাঁর অ্যাকশন নিয়ে রিপোর্ট জমা পড়েছিল।
ক্রিকেট-জীবনের এমন দুর্দিনে আজমল পাশে পাচ্ছেন পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডকে। কিংবদন্তি আব্দুল কাদিরকে যিনি খবর শুনেই আইসিসিকে শুনিয়ে রাখলেন। পাচ্ছেন, সাকলিন মুস্তাককেও। যিনি বলে রাখলেন, প্রত্যাবর্তনে আজমলকে সাহায্য করতে তাঁর কোনও অসুবিধে নেই।
পাক বোর্ড আকার-ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিয়েছে, তারা আইসিসির রায়কে চ্যালেঞ্জ জানাতে চলেছে। প্রাক্তন পাকিস্তানি ফাস্ট বোলার শোয়েব আখতারও পাক অফস্পিনারকে পরামর্শ দিয়েছেন, আইনি পথে এগোতে। “আমি মনে করি সইদের উচিত আইসিসি-র বিরুদ্ধে আইনি পথে যাওয়া। আচমকাই দেখতে পাচ্ছি আইসিসি ম্যাচ অফিশিয়ালরা প্রচুর ক্রিকেটারের বিরুদ্ধে সন্দেহজনক অ্যাকশনের অভিযোগ আনছে। এ সব বন্ধ হওয়া উচিত। আমার বিরুদ্ধেও এ সব হয়েছিল। ভাগ্য ভাল, বোর্ড সে সময় আমার পাশে ছিল। আশা করব, আজমলের পাশেও এখন থাকবে। কারণ এটা শুধু আজমলের পরীক্ষা নয়, পাক বোর্ডেরও পরীক্ষা।”
কাদিরেরও সহ্য হচ্ছে না আইসিসির এ ভাবে আজমলকে নির্বাসনে পাঠিয়ে দেওয়া। “আইসিসি আসলে পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের দেখতে পারে না! সমস্ত শাস্তি আমাদের জন্যই তোলা থাকে,” বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন কাদির। শুধু আইসিসি নয়, পাক বোর্ডকেও একহাত নিয়ে কাদিরের সংযোজন, “ভারতীয় বোর্ডকে দেখুন। শ্রীলঙ্কা বোর্ডকে দেখুন। দেখুন ওরা আইসিসিকে কী ভাবে সামলায়। পাক বোডের্র সেই সাহসটা নেই। আর পাকিস্তানের কাছে এ সব তো নতুন নয়। আমরা রিভার্স সুইং বার করলাম, তখন ওরা বলল চিট করছি। এখন সবাই সেটা করছে।” তবে সাকলিনই শুধু সরাসরি সাহায্যের প্রস্তাব দিয়েছেন আজমলকে। টুইট করে বলেছেন, ‘যদি দরকার পড়ে আমি আমার সেরাটা দিয়ে আজমলকে সাহায্য করব।’ আর উমর গুলের প্রার্থনা স্বমেজাজে ফিরে আসুন আজমল। কারণ, পাকিস্তান ক্রিকেটের তিনিই সবচেয়ে বড় সম্পদ।
পাকিস্তান কেন, দক্ষতায়, রেকর্ডে বিশ্ব ক্রিকেটেরই সম্পদ আজমল। তাঁর মতো জাদুকরকে ক্রিকেটই বা কেন হারাতে চাইবে?
আইসিসি-র আজ মনে হচ্ছে যে আজমল চাকার? ১১১ ওয়ান ডে, ৩৫ টেস্ট খেলে ফেলার পর? অবাক লাগছে। যার অ্যাকশনে সমস্যা থাকবে, তার প্রথম থেকেই থাকবে। একশোটা ওয়ান ডে খেলে ফেলার পর রাতারাতি সমস্যা তৈরি হবে না। খুব দুঃখজনক। অন্যায় হল আজমলের সঙ্গে।
আনন্দবাজারকে ফোনে এরাপল্লি প্রসন্ন
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy