Advertisement
E-Paper

বন্ধুত্ব থেকে তিক্ততার নয়া দ্বৈরথ বার্মিংহামে

এশীয় ক্রিকেটে নতুন জন্ম নেওয়া এক দ্বৈরথের আগুন মঙ্গলবার গ্রাস করতে চলেছে বার্মিংহামকে। ভারত বনাম ইংল্যান্ডে মাঠে কোহালিরা হেরেছেন।

সুমিত ঘোষ

শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০১৯ ০২:৫৪
ভারত বনাম ইংল্যান্ডে মাঠে কোহালিরা হেরেছেন। কিন্তু গ্যালারিতে ইংরেজ দর্শকদের দাঁড়াতে দেননি ভারতীয়েরা।

ভারত বনাম ইংল্যান্ডে মাঠে কোহালিরা হেরেছেন। কিন্তু গ্যালারিতে ইংরেজ দর্শকদের দাঁড়াতে দেননি ভারতীয়েরা।

বিশ্বকাপের টেবলে যে যেখানেই থাকুক, কিছু যায়-আসে না। শেষ চারের যোগ্যতামান অর্জনের দৌড়ে কে এগিয়ে, কে পিছিয়ে, দেখার দরকার নেই। যদি কেউ ঘড়ি দেখিয়ে বলেন, কলকাতা থেকে ঢাকা উড়ে যেতে লাগে চল্লিশ মিনিট, তাতেও চিত্রনাট্য পাল্টাবে না।

এশীয় ক্রিকেটে নতুন জন্ম নেওয়া এক দ্বৈরথের আগুন মঙ্গলবার গ্রাস করতে চলেছে বার্মিংহামকে। ভারত বনাম ইংল্যান্ডে মাঠে কোহালিরা হেরেছেন। কিন্তু গ্যালারিতে ইংরেজ দর্শকদের দাঁড়াতে দেননি ভারতীয়েরা। সংখ্যাগরিষ্ঠতা এতটাই তেরঙ্গার পক্ষে ছিল যে, মাইকেল ভন টুইট করেন, ‘‘গুনে দেখলাম, মাঠে মোট ৮৬ জন ইংরেজ দর্শক উপস্থিত রয়েছে। তা-ও সেই সংখ্যাটা ইংল্যান্ডের টিম এবং ম্যানেজমেন্টকে ধরে।’’

মঙ্গলবার এমন সমীকরণ থাকার আশা কম। একে তো ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে এত আশা নিয়ে মাঠে আসা ভারতীয় দর্শকেরা মহেন্দ্র সিংহ ধোনি এবং কেদার যাদবের টেস্ট ম্যাচ ব্যাটিং দেখে ক্ষুব্ধ। ধোনির মতো মহাতারকাকে ধিক্কার দিতে দিতে মাঠ ছেড়েছেন। তার উপরে ‘বার্মি আর্মি’-র মতো সহজে গ্যালারির ম্যাচ ছেড়ে দিতে চাইবে না ‘বাংলা আর্মি’। বার্মিংহামের হোটেলগুলিতে ঢুকতে শুরু করেছেন তাঁরা। বেশ কয়েকটি দলের সঙ্গে দেখা হতে মনে হল, মঙ্গলবারের ম্যাচে ভারতীয় দর্শকদের সঙ্গে ডেসিবেলে পাল্লা দেওয়ার জন্য তাঁরা প্রস্তুত হয়ে এসেছেন।

প্রতিদ্বন্দ্বী: সৌহার্দের মোড়কে এমন হুঙ্কারও দেখা যেতে পারে। ফাইল চিত্র

ক্রিকেটীয় দ্বৈরথের হিসেবে কোহালিরা এখনও এগিয়ে। তা সে যতই তাঁরা ইংল্যান্ডের কাছে হেরে যান। কোহালি নিজে বলেছেন, ‘‘সব টিমই এক-আধটা ম্যাচ হারবে। তাই বিরাট কোনও ঝটকা লেগেছে বলে আমি মনে করি না।’’ আর একটা ম্যাচ জিতলেই শেষ চারে স্থান পাকা ভারতের। তাই কোহালিদের রক্তচাপ হয়তো অতটা বেড়ে যাচ্ছে না। বাংলাদেশকে কিন্তু টিকে থাকতে হলে জিততেই হবে। যতই তারা চলতি বিশ্বকাপে দুর্ধর্ষ খেলে থাকুক, যতই শাকিব-আল-হাসান এই টুর্নামেন্টের সেরা অলরাউন্ডারের পুরস্কার ইতিমধ্যেই পকেটে পুরে ফেলে থাকুন, ফের বিশ্ব মঞ্চ থেকে খালি হাতে ফেরার আতঙ্ক তাড়া করে যাচ্ছে বাংলাদেশকে। কিন্তু শুধু মাঠের হিসেবনিকেশ দিয়ে হালফিলে কোথায় আর ভারত বনাম বাংলাদেশ ক্রিকেট ম্যাচের বিচার করা গিয়েছে? সোশ্যাল মিডিয়ায় যে-রকম তিক্ততা তৈরি হয় বারবার আর তা ছড়িয়ে পড়ে দু’দেশের ক্রিকেট-ভক্তদের মধ্যে, তাতেই এই ম্যাচ অন্য রং পেয়ে যায়। কতটা বাড়তে পারে উত্তেজনা, তার উদাহরণ চাই? বাংলাদেশের অধিনায়ক মাশরফি মর্তুজা ও তাঁর দলের কোন ক্রিকেটার এজবাস্টন মাঠের এক দিকের ছোট বাউন্ডারির সুযোগ নেবেন, তা নিয়ে বলার আগে দেশের সমর্থকদের উদ্দেশে আবেদন জানিয়েছেন। অন্য বাউন্ডারির কথা শোনা গেল তাঁর মুখে। ‘‘দু’দলের মধ্যে উত্তেজক ক্রিকেট হোক, সকলে চাই। প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকুক, কিন্তু সেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা যেন সীমানা অতিক্রম না-করে,’’ বার্তা তাঁর।

রাফায়েল নাদালের মতো কেউ শুনলে হয়তো ঘোরতর আপত্তি তুলতে পারতেন, খেলার মাঠে ‘আগুন’ শব্দ ব্যবহার নিয়ে। কিন্তু ভারত বনাম বাংলাদেশ ক্রিকেটের দ্বৈরথ ইদানীং এমনই রেষারেষি এবং তিক্ততা আমদানি করতে শুরু করেছে যে, এটাই হয়তো ঠিক শব্দ। ভারত বনাম পাকিস্তান যদি মহারণ হয়, তা হলে এটা মহাভারতের যুদ্ধের মতো। কুরু এবং পাণ্ডবেরা যেমন ভাই-ভাই হয়েও জড়িয়ে পড়েছিল রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ে, এটাও যেন তেমনই।

ভারত বনাম পাকিস্তান ম্যাচেও দু’দেশের ক্রিকেট ভক্তদের মধ্যে এমন সোশ্যাল মিডিয়া যুদ্ধ দেখা যায় না, যা ভেসে ওঠে ধোনি বনাম মাশরফি হলে। কে বলবে, মাঠের বাইরে এই দু’জন গলায় গলায় বন্ধু। বার্মিংহামেও তঁদের দেখা এবং সৌজন্য বিনিময় হয়েছে বলে শোনা গেল।

ঐতিহাসিক ভাবেও ভারত ও বাংলাদেশ ক্রিকেট মাঠে ধোনি এবং মাশরফির মতোই বন্ধু ছিল। জগমোহন ডালমিয়ার স্নেহপূর্ণ সাহায্যে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আবির্ভাব বাংলাদেশের। আইসিসি-তে শ্বেতাঙ্গ অধ্যুষিত শাসকদের চড়া সুর থামিয়ে বাংলাদেশকে পূর্ণ সদস্য বানিয়েছিলেন ডালমিয়া। ঢাকায় বাংলাদেশ ঐতিহাসিক টেস্ট খেলেছিল সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের ভারতের সঙ্গে।

কিন্তু সে আজ থেকে উনিশ বছর আগের কথা। সাম্প্রতিকতম ছবি হচ্ছে, বাংলাদেশে ওয়ান ডে সিরিজ হারের পরে সেখানকার একটি দৈনিক ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের মাথা মুড়িয়ে কার্টুন ছাপল। তাতে লেখা, মুস্তাফিজ়ুরের কাটারে এমনই অবস্থা হয়েছে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের। তার আগে বাংলাদেশের ক্রিকেট-ভক্তদের খেপিয়ে দেয় ভারতীয় টিভি সংস্থার সেই ‘মওকা মওকা’ বিজ্ঞাপন। তাতে বাংলাদেশের ক্রিকেট-ভক্তকে রীতিমতো অপমান করছেন ভারতের এক দর্শক। সে-বার বাংলাদেশ যখন ভারতকে হারাচ্ছে, মীরপুরের স্টেডিয়াম চিৎকার করে গিয়েছিল ‘মওকা মওকা’। এখানেই শেষ নয়। এর পরে এশিয়া কাপে খেলতে গেলে ছড়িয়ে পড়ল আর এক ছবি। ধোনির কাটা মুন্ডু হাতে দাঁড়িয়ে আছেন বাংলাদেশের ফাস্ট বোলার তাসকিন। সেই ম্যাচে বাংলাদেশের পেসারদের নির্মম প্রহারে জবাব দিলেন ধোনি। নিদাহাস কাপে ম্যাচ জিতে নাগিন ডান্স করছিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটারেরা। দীনেশ কার্তিক ফাইনালে শেষ ওভারে ভারতকে জেতানোর পরে এ বার ভারতীয় সমর্থকেরা ইন্টারনেট হামলা চালালেন। কার্তিকের হাতে বিন ধরিয়ে তাঁকে সাপুড়ে সাজানো হল।

এক দিনের ক্রিকেটে মুখোমুখি সাক্ষাতের রেকর্ড এখনও ভারতের পক্ষে ২৯-৫। কিন্তু বিশ্বকাপের মঞ্চেও তিক্ত লড়াইয়ের ইতিহাস রয়েছে। ২০০৭ ওয়েস্ট ইন্ডিজে লিফটের মধ্যে অনিল কুম্বলেদের বলতে শোনেন মাশরফি যে, তাঁরা নক-আউট পর্বের পরিকল্পনা সাজাচ্ছেন। ফিরে গিয়ে সতীর্থদের সে-কথা বলে তাতিয়েছিলেন তিনি যে, ‘‘আমাদের ওরা হিসেবের মধ্যেই রাখছে না।’’ পরের দিন ভারতকে হারিয়ে অঘটন ঘটিয়ে দেন মাশরফিরা। সচিন, সৌরভ, সহবাগ, দ্রাবিড়, ধোনিদের তারকাখচিত দল গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নেয়। এর পরে ২০১৫-তে অস্ট্রেলিয়ায় গত বিশ্বকাপে ভারত জিতলেও রোহিত শর্মা আউট থাকলেও অন্যায় ভাবে আম্পায়ার ‘নো বল’ দেন বলে অভিযোগ জানায় বাংলাদেশে। তা নিয়ে বাগ্‌যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে দু’দেশের ভক্তদের মধ্যে। বাংলাদেশের অভিমান, ভারত তাদের দুয়োরানির মতোই দেখে এসেছে। বারবার কোনও না কোনও বাহানা দেখিয়ে টেস্ট খেলা এড়িয়ে গিয়েছে। আইপিএলে খুব বেশি ক্রিকেটার ডাক পান না। বিজ্ঞাপনে অপমান করেছে।

কে বলল, বার্মিংহামে আজ শুধুই বিশ্বকাপের আর একটি ম্যাচ!

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদেরYouTube Channel - এ।

Virat Kohli Cricket Cricketer ICC World Cup 2019 ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০১৯
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy