মোসাদ্দেক হোসেনকে ফেরানোর পরে বুমরাকে অভিনন্দন কোহালির। ছবি: এএফপি।
এই এজবাস্টনেই গত রবিবার ইংল্যান্ডের কাছে হেরে গিয়েছিল ভারত। মঙ্গলবার সেই এজবাস্টনেই বাংলাদেশকে ২৮ রানে হারিয়ে সেমিফাইনালে পৌঁছে গেল ভারত। অন্য দিকে, বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গেল বাংলাদেশ।
ভারতের ৩১৪ রান তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশ থামল ২৮৬ রানে। শাকিব আল হাসান একা লড়লেন। বাংলাদেশের সেরা অলরাউন্ডার ৬৬ রানে ফেরার পরেও চেষ্টা চালাচ্ছিলেন সাব্বির রহমান ও মহম্মদ সইফউদ্দিন। শেষ তিন ওভারে বাংলাদেশের জেতার জন্য দরকার ছিল ৩৬ রান। হাতে মাত্র দু’ উইকেট। এখনকার দিনে এই রান খুব সহজেই তাড়া করে ম্যাচ জেতা যায়। কিন্তু, ভারতীয় দলে যে রয়েছেন যশপ্রীত বুমরার মতো বোলার। পর পর দু’ বলে তিনি তুলে নেন রুবেল ও মুস্তাফিজুরকে। ৪৮ ওভারে শেষ হয়ে যায় বাংলাদেশের প্রতিরোধ। সইফউদ্দিন ৫১ রানে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকে যান। ভারতীয় বোলারদের মধ্যে সফল বুমরা। তিনি চারটি উইকেট নেন।
আসলে বাংলাদেশের হাতের বাইরে ম্যাচটা নিয়ে যান রোহিত শর্মাই। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি। এ দিনও সেঞ্চুরি হাঁকান ‘হিটম্যান’। অথচ মাত্র ৯ রানের মাথায় তাঁর ক্যাচ ফেলে দেন তামিম ইকবাল। জীবন ফিরে পেয়ে রোহিত থামেন ১০৪ রানে। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে যেখানে শেষ করেছিলেন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সেখান থেকেই শুরু করেন মুম্বইকর। মাশরাফির প্রথম ওভারেই দশ রান নেন ভারতের সহ অধিনায়ক। পরের ওভারেই মাশরাফি নিজেকে সরিয়ে নেন। বল তুলে দেন মুস্তাফিজুর রহমানের হাতে।
আরও পড়ুন: দলে এলেন কার্তিক ও ভুবি, দেখে নিন ভারতের প্রথম একাদশ
আরও পড়ুন: দলে এলেন সাব্বির ও রুবেল, দেখে নিন বাংলাদেশের প্রথম একাদশ
মুস্তাফিজুর অতীতে ভারতকে বহুবার বেগ দিয়েছেন। বাঁ হাতি ‘কাটার মাস্টার’ শুরুতেই রোহিতকে তুলে নিতে পারতেন। শর্ট বল দিয়েছিলেন বাঁ হাতি মুস্তাফিজুর। ঠিকমতো টাইমিং না হওয়ায় ডিপ স্কোয়ার লেগে তামিমের হাতে লোপ্পা ক্যাচ যায়। সবাইকে অবাক করে রোহিতকে ফেলে দেন তামিম। তখনই যদি ফিরে যেতেন রোহিত, তা হলে বড় সমস্যায় পড়ে যেতে পারত ভারত। চলতি বিশ্বকাপে নিজের চতুর্থ সেঞ্চুরি করে ফেলেন রোহিত।
২০১৫ বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার প্রাক্তন উইকেট কিপার কুমার সঙ্গকারা পর পর চারটি শতরান করেছিলেন। রোহিত টানা চারটি সেঞ্চুরি না করলেও এক বিশ্বকাপে সব চেয়ে বেশি সেঞ্চুরি করার দিক থেকে সঙ্গকারাকে ছুঁয়ে ফেললেন। ভারতীয় হিসেবে এক বিশ্বকাপে সব চেয়ে বেশি সেঞ্চুরির নজির এজবাস্টনে গড়লেন রোহিত। তাঁর আগে ২০০৩ বিশ্বকাপে ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় তিনটি সেঞ্চুরি করেছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকায়। রোহিত টপকে গেলেন মহারাজকেও।
রোহিত যখন ফেরেন, তখন ভারতের রান এক উইকেটে ১৮০। ৩৫০ রানের পাহাড়ে চড়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে ভারতের ব্যাটিং। অথচ ৫০ ওভারের শেষে ভারত থামল ৯ উইকেটে ৩১৪ রানে। আরও বেশি রান হলেও অবাক হওয়ার কিছু ছিল না। মুস্তাফিজুর রহমান নিলেন পাঁচটি উইকেট। মাঝের ওভারগুলোয় উইকেট চলে যাওয়ায় ৩৫০ বা তার কাছাকাছি পৌঁছনো সম্ভব হয়নি ‘টিম ইন্ডিয়া’র পক্ষে। এই সব বিষয়গুলোর দিকে নজর দেওয়া উচিত কোহালির। সেমিফাইনালে অন্য লড়াই।
এত দিন বিশ্বকাপে লোকেশ রাহুল শুরুটা ভাল করলেও বড় ইনিংস গড়তে পারছিলেন না। আগের ম্যাচগুলোয় ক্রিজে জমে যাওয়ার পরে আউট হয়ে যাচ্ছিলেন। এ দিন ৯২ বলে রাহুল ৭৭ রান করেন তিনি। ওপেনিং জুটিতে রোহিতের সঙ্গে ১৮০ রানের পার্টনারশিপ গড়েন লোকেশ। রাহুল ফিরে যাওয়ার সময়ে ভারতের রান ছিল ২ উইকেটে ১৯৫। বাংলাদেশের হাতের বাইরে ম্যাচ নিয়ে যাওয়ার মোক্ষম সুযোগ তখন। বিরাট কোহালি (২৬) অন্যদিনের মতো খেলতে পারলেন না। ঋষভ পন্থ দ্রুতগতিতে ৪১ বলে ৪৮ রান করে ব্যাকওয়ার্ড স্কোয়ার লেগে ধরা পড়েন। দ্রুতগতিতে রান তোলার জন্য পাঠানো হয়েছিল হার্দিক পাণ্ড্যকে। তিনি খাতা খুলতে পারেননি। ধোনি ৩৩ বলে ৩৫ রান করেন। তাঁর ব্যাটিং এ দিনও প্রশ্নের ঊর্ধ্বে নয়। ধোনি তো ‘ফিনিশার’ হিসেবে বিখ্যাত। শেষের দিকে কোথায় সেই ধোনির দ্রুতলয়ে ব্যাটিং!
রবিবার ইংল্যান্ডের কাছে হারের পরে ভারতীয় দলকে কম সমালোচনা সহ্য করতে হয়নি। সেই সব সমালোচনা কোহালিদের ফোকাস নড়াতে পারেনি। তাঁরা লক্ষ্যে অবিচল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: ভারত (৫০ ওভার) ৩১৪/৯
বাংলাদেশ (৪৮ ওভার) ২৮৬
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy