Advertisement
E-Paper

টি-টোয়েন্টি যুগে ত্যাজ্য এখন সচিনের ভারী ব্যাট

শহরের বেশ কয়েকটি ক্রিকেট কোচিং ক্যাম্পে ঘুরে দেখা গেল আগামী প্রজন্মের কেউই ভারী ব্যাটে খেলায় বিশ্বাসী নয়। ছাত্রদের ভারী ব্যাটে খেলতে বারণ করছেন তাঁদের কোচেরাও।

ইন্দ্রজিৎ সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৮ ০৪:০৬
চর্চায়: সচিন নয়, পন্টিংয়ের ব্যাটই হোক আদর্শ। বলছেন বাংলার বিশেষজ্ঞেরা। ফাইল চিত্র

চর্চায়: সচিন নয়, পন্টিংয়ের ব্যাটই হোক আদর্শ। বলছেন বাংলার বিশেষজ্ঞেরা। ফাইল চিত্র

ক্লাইভ লয়েড থেকে সচিন তেন্ডুলকর। একটা সময়ে কিংবদন্তিরা বোলারদের শাসন করেছেন ভারী ব্যাট হাতে নিয়ে। কিন্তু টি-টোয়েন্টির রমরমার যুগে ভারী ব্যাট নিয়ে খেলার প্রবণতা কমতে কমতে এখন প্রায় হারিয়ে যাওয়ার পথে। গোটা ক্রিকেট বিশ্বের মতোই কলকাতা ময়দানেও যার ছোঁয়া লাগতে শুরু করেছে।

শহরের বেশ কয়েকটি ক্রিকেট কোচিং ক্যাম্পে ঘুরে দেখা গেল আগামী প্রজন্মের কেউই ভারী ব্যাটে খেলায় বিশ্বাসী নয়। ছাত্রদের ভারী ব্যাটে খেলতে বারণ করছেন তাঁদের কোচেরাও। সদ্য বাংলার মেন্টর হওয়া অরুণ লালকে যে রকম এক ছাত্রকে বলতে শোনা গেল, ‘‘তোমার বয়সের তুলনায় এই ব্যাটটা বেশ ভারী। এ রকম ব্যাটে খেললে তুমি অনেক স্ট্রোক তো নিতেই পারবে না।’’ বাংলার ক্রিকেটের অন্যতম সেরা মস্তিষ্কের মুখে এর পর রিকি পন্টিংয়ের উদাহরণ শোনা গেল। নিজের অ্যাকাডেমিতে দাঁড়িয়ে ছাত্রদের বলছিলেন, ‘‘রিকি পন্টিংয়ের ব্যাটিং দেখেছ? পেস বোলারকে হেঁটে এসে সামনের পায়ে পুল মেরে দিত। সেটা পন্টিং পারত কারণ হাল্কা ব্যাটে খেলত বলে।’’

অরুণের মতো অনেকেই মনে করছেন, ক্রিকেট পাল্টে গিয়েছে। আগের মতো আর শুধু রক্ষণ সামলে চললেই হয় না। স্ট্রোক নিতে হয়। স্কোরবোর্ডকে সচল রাখার ব্যাপারটা এখনকার দিনে অনেক বেশি করতে হয়। সেটা চার দিনের বা পাঁচ দিনের ম্যাচেও এসে গিয়েছে আধুনিক ক্রিকেটের হাত ধরে। আগেকার দিনে ভারী ব্যাটের ধারণা প্রাধান্য পেয়েছিল মূলত মাটিতে স্ট্রোক খেলার অভ্যেস রপ্ত করার জন্য। লয়েড বা সচিন ভারী ব্যাটে খেলার জন্য বিখ্যাত হলেও কেউ মন্থর ব্যাটিং করতেন না। কিন্তু এখনকার দিনে তাঁরা ব্যতিক্রম বলেই বিবেচিত হচ্ছেন। মনে করা হচ্ছে, আরও বেশি স্ট্রোক খেলার জন্য হাল্কা ব্যাটের দিকেই বেশি করে ঝুঁকবেন তরুণরা।

আরও পড়ুন: বিরাটের পছন্দ হাল্কের চরিত্র!

বাংলার প্রাক্তন অধিনায়ক সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায় বহু দিন ধরে দক্ষিণ কলকাতায় ক্রিকেট কোচিং ক্যাম্প চালাচ্ছেন। অরুণের মতো তিনিও ছাত্রদের হাল্কা ব্যাটে খেলারই পরামর্শ দেন। সম্বরণ মনে করেন, চোট লাগার প্রবণতা বেড়ে যায় ভারী ব্যাট ব্যবহার করলে। ‘‘ভারী ব্যাটে খেললে কনুইয়ে চোট লাগতে পারে। যাকে বলা হয় টেনিস এলবো। সচিন তেন্ডুলকরের টেনিস এলবো হওয়ার পরেও ও হাল্কা ব্যাটে খেলেনি। কারণ ছোটবেলায় দাদার ব্যাটে খেলত। সেখান থেকেই ভারী ব্যাট ব্যবহার করার অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল ওর। কিন্তু সচিন ব্যতিক্রম,’’ মত সম্বরণের। বাংলার রঞ্জিজয়ী অধিনায়কের পর্যবেক্ষণ, ‘‘টি-টোয়েন্টি আসার পরে বেশ কিছু নতুন শট আবিষ্কার হয়েছে, যা ভারী ব্যাটে খেলা কঠিন। যাঁরা ভারী ব্যাটে খেলেন তাঁদের স্কুপ, আপার কাট, হুকের মতো শট খেলতে কম দেখা যায়। আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি, হাল্কা ব্যাট দিয়েই ক্রিকেট জীবন শুরু করা উচিত। না হলে সব রকম শটের বৈচিত্র রপ্ত করা যাবে না।’’ হাল্কা ব্যাটে খেললে টেকনিকে প্রভাব পড়তে পারে— আগেকার এই মতকে মানছেন না অরুণ বা সম্বরণ। তাঁদের পাল্টা বক্তব্য, ‘‘ভাল টেকনিক সেটাই যা তোমাকে সাফল্য দেবে। যা তোমাকে বেশি রান দেবে। এখনকার খেলাধুলো পুরোপুরি ফল-নির্ভর।’’

ভারতীয় টেস্ট দলের উইকেটকিপার ঋদ্ধিমান সাহারও মনে হয়েছে, হাল্কা ব্যাট ব্যবহার করার প্রবণতা বেড়েছে এখনকার প্রজন্মের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে। ঋদ্ধির মতে, আধুনিক যুগের এখনকার তারকাদের মধ্যে মহেন্দ্র সিংহ ধোনি, ক্রিস গেল বা ডেভিড ওয়ার্নার ভারী ব্যাট ব্যবহার করেন। বড় শট মারতে তবু তাঁদের কোনও অসুবিধা হয় না। বরং তাঁরা ক্রিকেটের ‘বিগহিটার’ বলেই পরিচিত। ঋদ্ধি বলছেন, ‘‘ওয়ার্নার, গেল, ধোনিদের ব্যাটিং দেখলে বোঝা যাবে ওরা বেশির ভাগ স্কোরিং শট নেয় লং অন, মিড উইকেটের ওপর দিয়ে। স্কুপ, রিভার্স স্কুপের মতো শট মারার প্রয়োজন পড়ে না। তবুও টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। কারণ ওদের গায়ে প্রচণ্ড শক্তি।’’ তার পরেই ঋদ্ধি স্বীকার করছেন, ‘‘কিন্তু সবার তো আর সেই শক্তি থাকে না।’’ এখনকার ক্রিকেটে সব চেয়ে ধারাবাহিক বিরাট কোহালি কেমন ব্যাট নিয়ে খেলেন? ঋদ্ধি বলছেন, ‘‘আমি বিরাটকে খুব একটা ভারী ব্যাট দিয়ে খেলতে দেখিনি। টেস্ট, ওয়ান ডে, টি-টোয়েন্টি সব ধরনের ক্রিকেটেই ও একই ওজনের ব্যাট ব্যবহার করে। হাল্কা ব্যাট ব্যবহার করে এ বি ডিভিলিয়ার্সও। আমিও টি-টোয়েন্টিতে ভারী ব্যাট ব্যবহার করি না। কারণ আমাকে রান করতে গেলে সব ধরনের শট খেলতে হবে। ভারী ব্যাট দিয়ে সেটা সম্ভব নয়।’’

বাংলার আর এক প্রাক্তন তারকা এবং কোচ অশোক মলহোত্র অবশ্য মনে করেন, যাঁর যেটাতে সুবিধা সেটাই ব্যবহার করতে দেওয়া উচিত। তাঁর মন্ত্র, ‘‘আমি ছাত্রদের বলি তোমাদের যে ধরনের ব্যাটে সুবিধা হয়, সেটাই ব্যবহার করো।’’ যদিও অশোক একমত হচ্ছেন টি-টোয়েন্টি যুগে হাল্কা ব্যাটে খেলার প্রবণতা নিয়ে। ‘‘ক্রিকেট পাল্টে গিয়েছে। শটে বৈচিত্র আনতেই ভারী ব্যাট ছেড়ে হাল্কা ব্যাটকে বেছে নিচ্ছে ছেলেরা।’’ সচিনের চেয়েও তাই হয়তো বেশি করে উদাহরণ করা হবে পন্টিংকে!

Cricket India Bat Sachin Tendulkar Ricky Ponting
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy