Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
বাইশ গজের বাইরে হিউজকে শ্রদ্ধার্ঘ্য

টেস্ট পিছনোর সিদ্ধান্তে ক্রিকেটেরই মর্যাদা বাড়ল

ব্রিসবেনের প্রথম টেস্ট পিছিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তকে আমি পুরোপুরি সমর্থন করছি। ভারত-অস্ট্রেলিয়া টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচ নির্ধারিত দিনেই শুরু হওয়া উচিত কি উচিত নয়, এ নিয়ে অনেক চর্চা হচ্ছে। নানা মত রয়েছে। তবে আমি সেই দলেই পড়ি যারা মনে করে টেস্ট ম্যাচটা পিছিয়ে দিয়ে একদম ঠিক করা হয়েছে। ফিল হিউজের অন্ত্যেষ্টি হবে ৩ ডিসেম্বর। শেষ যাত্রায় বন্ধুর সঙ্গে থাকবে পুরো অস্ট্রেলিয়া টিম। প্রথম টেস্ট সূচি মেনে শুরু করতে হলে তার মাত্র চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই সব আবেগ সামলে সিডনি থেকে ব্রিসবেন গিয়ে মাঠে নেমে পড়তে হত অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটারদের।

কার্ডিফে দক্ষিণ আফ্রিকা-ওয়েলস রাগবি ম্যাচের আগে।

কার্ডিফে দক্ষিণ আফ্রিকা-ওয়েলস রাগবি ম্যাচের আগে।

সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০১৪ ০১:৪১
Share: Save:

ব্রিসবেনের প্রথম টেস্ট পিছিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তকে আমি পুরোপুরি সমর্থন করছি। ভারত-অস্ট্রেলিয়া টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচ নির্ধারিত দিনেই শুরু হওয়া উচিত কি উচিত নয়, এ নিয়ে অনেক চর্চা হচ্ছে। নানা মত রয়েছে। তবে আমি সেই দলেই পড়ি যারা মনে করে টেস্ট ম্যাচটা পিছিয়ে দিয়ে একদম ঠিক করা হয়েছে। ফিল হিউজের অন্ত্যেষ্টি হবে ৩ ডিসেম্বর। শেষ যাত্রায় বন্ধুর সঙ্গে থাকবে পুরো অস্ট্রেলিয়া টিম। প্রথম টেস্ট সূচি মেনে শুরু করতে হলে তার মাত্র চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই সব আবেগ সামলে সিডনি থেকে ব্রিসবেন গিয়ে মাঠে নেমে পড়তে হত অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটারদের। সে ক্ষেত্রে কিন্তু ওদের উপর মানসিক এবং শারীরিক ধকলটা মারাত্মক হত। আমার মনে হয়, শুধু ওরা কেন, কারও পক্ষেই সেই ভাবে খেলা সম্ভব হত না।

হিউজ সে দিন যখন আঘাতটা পাচ্ছে, সেই সময় এই অস্ট্রেলিয়া টিমের অনেকেই মাঠে হাজির ছিল। ওয়ার্নার, ওয়াটসনের মতো বেশ কয়েক জন তো মাটিতে পড়ে যাওয়ার পর নিজেরাই কোলে তুলে মাঠের বাইরে নিয়ে যায়। বন্ধুকে ওই রকম মারাত্মক আঘাত পেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়তে দেখা, আর তার মাত্র দু’দিনের মধ্যে তার মৃত্যুর মর্মান্তিক খবরটা ওদের মানসিক ভাবে পুরোপুরি বিধ্বস্ত করে দিতে বাধ্য। এত বড় শোকের ধাক্কা সামলে ওদের সঙ্গে সঙ্গে টেস্ট ম্যাচ খেলতে মাঠে নেমে পড়তে বলাটা সত্যিই বাড়াবাড়ি হয়ে যেত।


ম্যান ইউয়ের মাঠে।

জোর করে চার তারিখ থেকেই খেলা শুরু করা হলে একটা টেস্ট ম্যাচ হয়তো হত। কিন্তু আমার কাছে ক্রিকেটটা শেষ পর্যন্ত খেলাই। মানবিকতা, মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক, বন্ধুর জন্য আবেগ এগুলো এই মুহূর্তে ক্রিকেটের থেকে অনেক বড়। আমি তো বলব, এমন মানবিক একটা সিদ্ধান্ত নেওয়ায় ক্রিকেটবিশ্বের চোখে ক্রিকেট খেলাটারই আরও উত্তরণ ঘটল, মর্যাদা বেড়ে গেল।

হিউজ শুধু তো নিউ সাউথ ওয়েলসের প্লেয়ার ছিল না। এখনকার অস্ট্রেলিয়া টিমের প্রায় প্রত্যেকের সঙ্গেই ও টেস্ট আর ওয়ান ডে খেলেছে। ফলে একজন টিমমেট আর নেই, তাও মাত্র পঁচিশ বছরেই তার জীবনটা শেষ হয়ে গিয়েছেএই বাস্তবটাকে মেনে নিতে পারাই এই মুহূর্তে বাকিদের পক্ষে ভীষণ কঠিন। তবে সময় সব ক্ষতকেই সারিয়ে তোলে। আশা করি আগামী ক’টা দিন একে অপরের সঙ্গে কাটিয়ে নিজেদের মতো করে শোকটা সামলে ওঠার সুযোগ পেলে ওরা অনেকটা শান্ত ভাবে আবার খেলায় মন ফেরাতে পারবে।


ভারতীয় হকি দলের শেষ সেলাম।

তবে প্রশ্ন হল, এই অবস্থায় ভারতীয় ক্রিকেটারদের এখন কী করণীয়? আজ বেশ কিছু দিন হয়ে গেল ওরা অস্ট্রেলিয়া পৌঁছেছে। একটা প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক দুর্ঘটনাটার কারণে ওদের দ্বিতীয় প্রস্তুতি ম্যাচ বাতিল হয়েছে। আসলে অস্ট্রেলিয়ায় এই মুহূর্তে ক্রিকেট-পরিবেশটাই এমন যে ভারতীয় প্লেয়ারদের পক্ষে অনুশীলনের সুযোগ বা পরিকাঠামো পাওয়াটাই কঠিন হতে পারে। এমনিতেই এত গুরুত্বপূর্ণ একটা সিরিজে নামার আগে মাত্র দু’টো দু’দিনের ম্যাচ অস্ট্রেলিয়ার পরিবেশ এবং আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল না বলে আমি মনে করি। আর এখন তো সেটুকু প্রস্তুতি নেওয়ারও সুযোগ থাকছে না বিরাট কোহলিদের সামনে।

ছবি: রয়টার্স, টুইটার

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE