শিব-বিকাশ-মনোজ (বাঁ দিক থেকে)।
বিশ্বের দরবারে ভারতীয় বক্সিং অন্য উচ্চতা ছুঁয়েছে তাঁদের তিন জনের মুষ্ঠির জোরে। অলিম্পিক্স, বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের মতো সর্বোচ্চ মঞ্চ থেকে দেশকে এনে দিয়েছেন একাধিক পদক, সম্মান। তিন জনের কেউই এ বার রিওয় নেই। তবে নিজেদের অভিজ্ঞতার কষ্টিপাথরে যাচাই করে বলে দিচ্ছেন, রিও গেমসে ভারতীয় বক্সাররা ঐতিহাসিক কাণ্ডকারখানা ঘটিয়ে বসলে এতটুকু অবাক হবেন না।
বিজেন্দ্র সিংহ, এম সি মেরি কম আর অখিল কুমারের ভবিষ্যদ্বাণী মিলে গেলে, একাধিক পদক আসছে রিওর রিং থেকে!
অলিম্পিক্সে এ বার লড়াইয়ে আছেন ভারতের তিন বক্সার। শিব থাপা (৫৬ কেজি), মনোজ কুমার (৬৪ কেজি) ও বিকাশ কৃষ্ণ যাদব (৭৫ কেজি)। তিন জনকেই খুব কাছ থেকে চেনেন পেশাদার বক্সিংয়ে নিজের ওজন বিভাগে সদ্য এশিয়া সেরার খেতাব জেতা বিজেন্দ্র। যিনি সটান বলে দিচ্ছেন, ‘‘আমি তো আশা করছি রিও থেকে ওরা তিন জনেই পদক নিয়ে ফিরবে।’’
রিও পৌঁছে গেলেন দীপা কর্মকার। রবিবার কোচের সঙ্গে ভারতীয় জিমন্যাস্ট। ছবি: পিটিআই
কাজটা ঠিক কতটা কঠিন, সেটা ভারতকে অলিম্পিক্সের প্রথম বক্সিং পদক দেওয়া বিজেন্দ্রের চেয়ে ভাল আর কেউ সম্ভবত জানেন না। বেজিং গেমসের ব্রোঞ্জ জয়ী এবং এক সময়ে নিজের বিভাগে বিশ্বের এক নম্বর থাকা ভারতীয় বক্সিংয়ের পোস্টার বয় নিজের আশাবাদের পক্ষে যুক্তি দিয়ে এ দিন বলেছেন, ‘‘ওরা তিন জনেই লন্ডন অলিম্পিক্সে ছিল। শিবের তো যুব অলিম্পিক্সে রুপোও আছে। তিন জনেই জানে অলিম্পিক্সে চাপটা ঠিক কোন পর্যায়ের থাকে। কিন্তু লন্ডনের অভিজ্ঞতা থেকে ওরা শিখেছে। তা ছাড়া গত চার বছরে তিনজনেই অনেক বেশি চৌখস আর অভিজ্ঞ হয়েছে। রিওয় চাপ যতই থাক না কেন, তিন জনেই পদক নিয়ে ফিরতে পারে বলে আমি মনে করছি।’’
বিজেন্দ্রের মতোই আশাবাদী শোনাচ্ছে লন্ডন গেমসের ব্রোঞ্জ জয়ী মেরি কমকেও। পাঁচ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন বলেছেন, ‘‘জোর দিয়ে বলছি, এরা খুব ভাল পারফর্ম করবে। এটা ঠিক যে অলিম্পিক্স মানে তোমার উপর চাপের পাহাড় থাকবে। কিন্তু সেটা সামলানোর মতো অভিজ্ঞতা আর স্নায়ুর জোর ওদের আছে। তিন জনেই অসম্ভব দক্ষ বক্সার এবং পদক জেতার ক্ষমতা রাখে।’’
২০১০ কমনওয়েলথ গেমসের সোনাজয়ী অখিল কুমার আবার ভারতীয় ত্রয়ীকে নিজেদের পুরনো সাফল্য থেকে প্রেরণা নিয়ে রিওয় জেতার জেদটা আরও জোরদার করে নিতে বলছেন। বিশ্ব কাপের ব্রোঞ্জ জয়ী এবং বেজিং গেমসে বিশ্বের তৎকালীন এক নম্বরকে হারিয়ে কোয়ার্টারফাইনালে উঠে সাড়া ফেলা অখিলের কথায়, ‘‘রিও থেকে আমি অন্তত দু’টো পদক তো আশা করছিই।’’ তার পর যোগ করেছেন, ‘‘তিন বক্সারই এর আগে বড় মঞ্চ থেকে পদক এনেছে। শিব আর বিকাশের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের ব্রোঞ্জ আছে। বিকাশ এশিয়ান গেমসে আর মনোজ কমনওয়েলথ গেমসে সোনা জিতেছে। এ ছাড়া এশীয় পর্যায়ে আরও অনেক সাফল্য আছে। তাই বড় মঞ্চে সফল হওয়ার স্বাদটা ওরা আগেই পেয়েছে। আমি মনে করি সেটা রিওয় এগিয়ে রাখবে ওদের।’’
ছত্রিশ বছর পর আবার ভারতের মহিলা হকি দল অলিম্পিক্সে। রবিবার রিওর গেমস ভিলেজের ব্রেকফাস্ট টেবলে। ছবি: টুইটার
অলিম্পিক্সের রিং থেকে ভারতের প্রাপ্তি এখনও পযর্ন্ত মাত্র দু’টি ব্রোঞ্জ। প্রথমটা বিজেন্দ্রের হাত ধরে ২০০৮-এর বেজিংয়ে। যার চার বছর পর লন্ডন থেকে আরও একটি ব্রোঞ্জ নিয়ে ফেরেন মেরি কম। দু’জনেই চাইছেন, রিওর পর পদকের সংখ্যা তিনের বেশিতে দাঁড়াক। পুরনো সাফল্য থেকে আত্মবিশ্বাস মুঠোয় পুরে পদকের জন্য ঝাঁপানোর পরামর্শ দিচ্ছেন অখিল।
এক দিকে, বিজেন্দ্রদের বিশ্বাসের জোর। অন্য দিকে, রিওর রিংয়ে ভারতের তিন মূর্তির ঘুষির জোর। দুইয়ের যোগ ফলে অন্তত একটা ঐতিহাসিক পদক আসবে, আশায় প্রত্যেক ভারতীয়ও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy