Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
কিপিং দক্ষতাতেই ঋষভকে হারাতে পারেন বঙ্গ কিপার

দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে আস্থা হয়তো ঋদ্ধিতে

কাকতালীয় হতে পারে, কিন্তু এই দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধেই চোট পেয়ে দল থেকে ছিটকে গিয়েছিলেন ঋদ্ধিমান। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে কেপ টাউনে শেষ বার তিনি ভারতের হয়ে খেলেছিলেন।

দ্বৈরথ: দেশের মাঠে ঋদ্ধিই এগিয়ে ঋষভের চেয়ে। ফাইল চিত্র

দ্বৈরথ: দেশের মাঠে ঋদ্ধিই এগিয়ে ঋষভের চেয়ে। ফাইল চিত্র

সুমিত ঘোষ 
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৪:১৫
Share: Save:

ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে দুই টেস্টের একটিতেও প্রথম একাদশে জায়গা না পেলেও ঋদ্ধিমান সাহার ক্রিকেটজীবন মোটেও থেমে যাচ্ছে না। বরং দেশের মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে আসন্ন টেস্ট সিরিজে উইকেটের পিছনে পুরনো জায়গা ফিরে পাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে তাঁর।

কাকতালীয় হতে পারে, কিন্তু এই দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধেই চোট পেয়ে দল থেকে ছিটকে গিয়েছিলেন ঋদ্ধিমান। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে কেপ টাউনে শেষ বার তিনি ভারতের হয়ে খেলেছিলেন। এমনই খারাপ কপাল যে, চোট পেয়ে বাইরে থাকতে হয় আঠেরো মাস এবং সেই সময়েই উত্থান ঘটে ঋষভ পন্থের। রুরকির তরুণ প্রতিভার কিপিং মান নিয়ে যতই তর্ক-বিতর্ক চলুক, আগ্রাসী ব্যাটিং দেখে অনেকেই বলতে শুরু করেন, মহেন্দ্র সিংহ ধোনির উত্তরসূরি পেয়ে গিয়েছে ভারতীয় ক্রিকেট! ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ায় টেস্ট সেঞ্চুরি করে ঋষভ সেই সব কথাবার্তাকে আরও গতি পাইয়ে দেন।

ভিভ রিচার্ডসের দেশে দুই টেস্টের তিন ইনিংসে বাঁ হাতি ঋষভ মাত্র ৫৮ রান করার পরে তাঁকে নিয়ে রাতারাতি স্বপ্নভঙ্গ হয়ে গেল, বলা যাবে না। তবে সামান্য হলেও খটকা তৈরি হয়েছে যে, টেস্ট ক্রিকেটে তিনিই সেরা লোক কি না। এখনও সীমিত ওভারের ক্রিকেটে তিনিই হয়তো প্রথম পছন্দ। বিশ্বকাপ পরবর্তী অধ্যায়ে ধোনির পরিবর্ত হিসেবে তাঁকেই ভাবা হচ্ছিল এবং এখনও দল পরিচালন সমিতির সেই ভাবনায় পরিবর্তন হচ্ছে না। একই সঙ্গে অনেকের মাথায় ঘুরছে, ঋষভের কিপিং দুর্বলতার কথাও। যা চোখে পড়েছে সদ্য সমাপ্ত টেস্ট সিরিজেও।

ওয়েস্ট ইন্ডিজে তা-ও হয়তো উইকেটের পিছনে কিপারের দুর্বলতা ততটা প্রকট হয়ে দেখা দেয়নি। যশপ্রীত বুমরা এবং বোলাররা দুরন্ত ফর্মে ছিলেন বলে অনেক খামতিই ঢাকা পড়ে গিয়েছে। দেশের মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে তিন টেস্টের সিরিজ হবে ঘূর্ণি পিচে। তখন ওয়েস্ট ইন্ডিজে একটিও টেস্ট না-খেলা অশ্বিন এবং জাডেজাকে উইকেটের সামনে দাঁড়িয়ে সারা দিন ধরে ‘কিপ’ করার চ্যালেঞ্জ নিতে হবে। ব্যাটিংয়ের চেয়েও উইকেটকিপারের কাছে বেশি করে চাওয়া হবে কিপিং দক্ষতা।

এই যুক্তিতেই ঋষভকে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে ফেলে দিতে চলেছেন বাংলার ঋদ্ধি। তাঁর কিপিং দক্ষতা নিয়ে কারও মনে কোনও সংশয় নেই। দলের অন্দরমহলে অনেকে বরং বিশ্বাস করেন, ঋদ্ধি শুধু ভারতের নয়, বিশ্বের সেরা উইকেটকিপার। উড়ে গিয়ে তাঁর সেই স্লিপ কর্ডন থেকে ক্যাচ তুলে নেওয়া দেখে নামকরণই হয়ে গিয়েছেন ‘সুপারম্যান ঋদ্ধিমান’। সব কিছু ঠিকঠাক চললে ক্রিকেট ভক্তরা সেই দৃশ্য ফের দেখার সুযোগ পেতেই পারেন ঘরের মাঠে আসন্ন সিরিজে।

এটাও ভুললে চলবে না যে, বিরাট কোহালি উইকেটকিপিং দক্ষতার উপর ভীষণ ভাবেই জোর দেন। অধিনায়ক মনে করেন, উইকেটকিপার ব্যাট হাতে যতই কেরামতি দেখাক, কিপিং গ্লাভস হাতে একটা বড় ভুলের জন্য ম্যাচই গলে যেতে পারে। দেশের মাঠে ঘূর্ণি পিচ এবং সম্ভাব্য এলোমেলো বাউন্সের বাইশ গজে কিপিং দক্ষতাকে গুরুত্ব দেওয়ার এই বিরাট-প্রবণতা আরও বেড়ে যেতে পারে।

দেশের মাঠে আবার বরাবরের প্রথা হচ্ছে, এক জনই উইকেটকিপার স্কোয়াডে জায়গা পায়। সেক্ষেত্রে ঋদ্ধি বা ঋষভের যে কোনো এক জনকে রেখে দল গড়তে হবে। আবার ক্রিকেটের নতুন নিয়ম অনুযায়ী, উইকেটকিপার আহত বা অসুস্থ হলে বিকল্প উইকেটকিপারও পরিবর্ত হিসেবে নামানো যেতে পারে। আগের মতো পরিবর্ত নামিয়ে দলের মধ্যে কারও হাতে কিপিং গ্লাভস তুলে দেওয়ার সেই রেওয়াজ উঠে যাওয়ার মুখে। তাই প্রশ্ন উঠছে, দু’জন উইকেটকিপার রেখেই বা দল গড়া হবে না কেন? প্রয়োজনে আগের মতো ১৪ জনের দল না গড়ে ১৫ জন নিলেই তো হয়।

দক্ষিণী লবি অবশ্য টেস্টে নতুন বিকল্প হিসেবে অন্ধ্র প্রদেশের এস ভরতের নাম তুলতে শুরু করেছে। আসন্ন টেস্ট সিরিজেও ফের তাঁর নাম ভাসানো হতে পারে। বলা হতে পারে ভারতীয় ‘এ’ দলের হয়ে দারুণ সফল ভরত। তবে ভরত রেড্ডির পরে একই নামের কোনও উইকেটকিপারের গায়ে ভারতীয় জার্সি ওঠার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। টেস্টে অন্তত ঋষভকে যদি সরাতে হয়, যোগ্যতম বিকল্প যে ঋদ্ধিমানই, তা কারও পক্ষেই খণ্ডন করা সম্ভব নয়। বিশেষ করে তাঁকে যখন ওয়েস্ট ইন্ডিজে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল এবং একটি সুযোগও না দিয়ে কী করে ছেঁটে ফেলা সম্ভব?

আর কে বলল, ঋদ্ধিমান সাহা ব্যাট করতে পারেন না? ভারতীয় ক্রিকেটে সব চেয়ে সফল এবং নামী উইকেটকিপারদের পাশেও তিনি ব্যাট হাতেই বা বেমানান কোথায়? ৩২ টেস্টে ঋদ্ধির ব্যাটিং গড় ৩০.৬৩। সেখানে সৈয়দ কিরমানির ৮৮ টেস্টে ব্যাটিং গড় ২৭.০৪, ফারুক ইঞ্জিনিয়ারের ৪৬ টেস্টে ব্যাটিং গড় ৩১, কিরণ মোরের ৪৯ টেস্টে ব্যাটিং গড় ২৫, নয়ন মোঙ্গিয়ার ৪৪ টেস্টে ব্যাটিং গড় ২৪। সে ভাবে দেখতে গেলে ঋদ্ধির চেয়ে ব্যাটিংয়ে এগিয়ে থাকবেন দু’জন। ৯০ টেস্টে ৩৮ ব্যাটিং গড় নিয়ে ধোনি এবং ১১ টেস্ট খেলার পরে ৪৪.৩৫ গড় থাকা ঋষভ। পাশাপাশি, ঋদ্ধির তিনটি টেস্ট সেঞ্চুরিও আছে। যার একটি রাঁচীতে স্টিভ স্মিথের অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে যথেষ্ট কঠিন পরিস্থিতিতে করা।

ঋষভ ভবিষ্যৎ হতে পারেন, কিন্তু ঋদ্ধিমান সাহাও মোটেই অতীত নন!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE