আকর্ষণ: চেন্নাইয়ের ওয়াশিংটন সুন্দর (বাঁদিকে) এবং হায়দরাবাদের মহম্মদ সিরাজ। একজন স্পিনার, অন্যজন পেসার। ভারতীয় দলের নকশায় আছেন।
এক জনের বাবা স্কুটারে চাপিয়ে ছেলেকে ক্রিকেট অনুশীলনে নিয়ে যেতেন। রমাকান্ত আচরেকর যেমন কোনও এক বিস্ময় বালককে স্কুটারে চাপিয়ে এক মাঠ থেকে অন্য মাঠে নামিয়ে দিতেন ব্যাট করার জন্য।
অন্য জনের বাবা অটো ড্রাইভার। হায়দরাবাদের রাস্তায় ঘুরে ঘুরে জীবিকা সংগ্রহ করতে হয়। ক্রিকেটের মতো ব্যয়বহুল খেলায় সাজসরঞ্জাম কেনার সামর্থ্যই ছিল না। তবু কখনও ছেলের স্বপ্নের অপমৃত্যু ঘটতে দেননি। ওভারটাইম করেছেন অটো নিয়ে। যাতে ছেলে খেলে যেতে পারে।
দক্ষিণ ভারতের দুই বাবা আর তাঁদের দুই ছেলে। সমস্ত কিছু ঠিকঠাক চললে হার্দিক পাণ্ড্য বা কুলদীপ যাদবের মতো ভারতীয় ক্রিকেটের আরও দুই নতুন রূপকথায় পরিণত হতে চলেছে তাঁদের কাহিনি। হার্দিকদের মতোই এরা আইপিএল প্রজন্মের ক্রিকেটার। একেবারেই টি-টোয়েন্টি ‘প্রোডাক্ট’।
প্রথম জন— চেন্নাইয়ের এম এস সুন্দরের ছেলে ওয়াশিংটন সুন্দর। সদ্য ১৮ বছর বয়সে পা দিয়েছে। এমন কৌতূহলজনক নামকরণের পিছনেও মজাদার কাহিনি রয়েছে। ওয়াশিংটন নামে এক প্রাক্তন সেনা কর্মী ছিলেন এম এসের খুব বন্ধু। নানা সময়ে আর্থিক সাহায্যও করেছেন তিনি। এম এস স্বীকার করেন, তাঁর জীবনে সব চেয়ে বেশি প্রভাব ছিল সেনা কর্মী ওয়াশিংটনের। জামাকাপড় কেনার পয়সাও থাকত না সুন্দরের কাছে। সেনাবাহিনীতে কর্মরত বন্ধু ওয়াশিংটন সেই অভাব পূরণ করতেন নিজের অর্থ দিয়ে। বন্ধু মারা যাওয়ার কয়েক মাস পরেই পুত্রের বাবা হন সুন্দর এবং ছেলের নাম রাখেন তাঁর প্রয়াত বন্ধু এবং হিতৈষীর নামে।
আরও পড়ুন: টি২০ সিরিজে অজি বধে ভারতের ১৫ সেনা কে কে জানেন?
গত বার আইপিএলে রাইজিং পুণে সুপারজায়ান্টের জার্সিতে যথেষ্ট নজর কাড়ে দীর্ঘকায় এই কিশোর অফস্পিনার-অলরাউন্ডার। সফররত অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে প্রস্তুতি ম্যাচে স্টিভ স্মিথ এবং গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের উইকেট নিয়েছে।
ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট ওয়াংশিংটনকে নিয়ে এতটাই উৎসাহিত যে, তাকে চেন্নাইয়ের প্রথম ওয়ান ডে ম্যাচের আগে নেটে বিশেষ আমন্ত্রণ জানিয়ে বল করতেও ডাকে। সদ্য শেষ হওয়া দলীপ ট্রফি ফাইনালে ১১ উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরা হওয়ার পরে তাকে নিয়ে কৌতূহল আরও বেড়ে গিয়েছে। চেন্নাইয়ে তাকে ডাকা হয় ‘জুনিয়র অশ্বিন’ বলে। অশ্বিনের মতোই লম্বা। তাঁর মতোই ব্যাটসম্যান হিসেবে ক্রিকেটজীবন শুরু করে পরে চলে যান স্পিন বোলিংয়ে।
দ্বিতীয় জন— মহম্মদ ঘাউসের ছেলে মহম্মদ সিরাজ। হায়দরাবাদের ২৩ বছরের পেসারকে গত আইপিএলের নিলামে ২০ লক্ষ টাকার বেস প্রাইস থেকে ২.৬ কোটি টাকায় কিনেছিল সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। আশিস নেহরা চোট পেয়ে ছিটকে যাওয়ার পর খেলতে নেমে ১০টি উইকেটও পান তিনি। তার আগে ঘরোয়া ক্রিকেটে আগের মরসুমে ছিলেন তৃতীয় সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি। সম্প্রতি ভারতীয় ‘এ’ দলের দরজাও খুলে গিয়েছে। একেবারেই অবাক হওয়ার থাকবে না যদি খুব শীঘ্রই জাতীয় দলের হাইওয়েতেও সিরাজ উঠে পড়েন।
২০১৯ বিশ্বকাপের কথা মাথায় রেখে ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট এবং জাতীয় নির্বাচকেরা নতুন এবং তরুণ ছেলেদের সুযোগ দিচ্ছেন। যেমন শ্রীলঙ্কা বা অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ওয়ান ডে সিরিজে কুলদীপ যাদব বা যুজবেন্দ্র চহাল-দের খেলানো হয়েছে। অশ্বিন, জাডেজার মতো নামীদের বাইরে রেখেই খেলিয়ে যাওয়া হচ্ছে কুলদীপদের। জানা গিয়েছে, তরুণ রক্তকে প্রাধান্য দেওয়ার এই নীতি এখন চলবে। ঘুরিয়ে বললে, এখনই অশ্বিনদের একদিনের দলে ফেরানোর কোনও ভাবনা নেই। কারও কারও মনে হচ্ছে, বিশ্রামে রাখা হচ্ছে বললেও অশ্বিন বা জাডেজাকে একদিনের দলের উপযুক্ত বলে ভাবা হচ্ছে না। গত এক বছরে তাঁদের খুব বেশি সাফল্যও নেই ওয়ান ডে-তে।
যে হেতু ২০১৯ বিশ্বকাপ হবে ইংল্যান্ডে, ভেবেচিন্তেই কুলদীপ বা যুজবেন্দ্র চহালের মতো ‘রিস্ট স্পিনার’ খেলিয়ে দেখে নেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে, এখনও পর্যন্ত সেই পরীক্ষা দারুণ ভাবেই সফল হয়েছে। বাঁ হাতি অর্থডক্স স্পিনার হিসেবেও রবীন্দ্র জাডেজার চেয়ে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে অক্ষর পটেল-কে। স্পিন বোলিং বিভাগে নতুনদের যে বেশি সুযোগ দেওয়া হচ্ছে, তা পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে।
দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়া চলে যাওয়ার পরে নিউজিল্যান্ড এবং শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে একদিনের সিরিজ রয়েছে। খুব অবাক হওয়ার থাকবে না যদি ওয়াশিংটন বা সিরাজের মতো তরুণদের সেখানে সুযোগ দিয়ে দেখে নেওয়া হয়। হার্দিকের ভাই ক্রুনাল পাণ্ড্য-ও নির্বাচকদের নজরে রয়েছেন। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টি দল বাছতে বসে আশিস নেহরার মতো সিনিয়রকে নিয়েছেন নির্বাচকেরা। কিন্তু সেটা করা হয়েছে রোটেশন প্রথাকে গুরুত্ব দেওয়ার জন্য। ২০১৯ বিশ্বকাপের রোডম্যাপে নেহরা নেই, ৩৮ বছর বয়সে তাঁকে শুধু টি-টোয়েন্টির চার ওভারের জন্যই ভাবা যেতে পারে।
একইসঙ্গে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে সামনের লম্বা মরসুমে টেস্ট ম্যাচের উপরেও। সম্ভবত মহম্মদ শামি বা উমেশ যাদবদের এনার্জি বেশি করে ধরে রাখা হবে টেস্ট ম্যাচের জন্য। আগামী এক বছরে প্রায় ২৫টি টেস্ট খেলতে হবে ভারতকে। আর তার বেশির ভাগই হবে বিদেশের মাটিতে। যা ইঙ্গিত, পেস বোলিং বিভাগে শামি-উমেশ এবং স্পিন বিভাগে অশ্বিন-জাডেজা বেশিটাই থাকবেন টেস্টের নকশায়। একদিনের ক্রিকেটে বেশি প্রাধান্য পাবে ওয়াশিংটন সুন্দরদের তারুণ্য! দেশের মাঠে নজিরবিহীন ভাবে অস্ট্রেলিয়াকে ৪-১ উড়িয়ে দেওয়া এবং হার্দিক, কুলদীপ, চহালদের সাফল্য তারুণ্যের জয়জয়কার আরও-ই বাড়িয়ে তুলল!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy