Advertisement
E-Paper

সিরিজ জিতে নতুন সিরিজ জয়ের বৈঠক

ভুবনেশ্বর পৌঁছেই টিম মিটিং এবং টিম ডিনার ডেকে দিলেন রোহিত। উদ্দেশ্য— পুরনো সিরিজের সাফল্যের কুশন থেকে বেরিয়ে এসে নতুন সিরিজের জন্য নতুন শপথ নিয়ে নেওয়া। 

সুমিত ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:৪৪
আগমন: ভারতকে ওয়ান ডে সিরিজ জিতিয়ে ভুবনেশ্বরে পা রোহিত শর্মার। এ বার সামনে টি-টোয়েন্টি।

আগমন: ভারতকে ওয়ান ডে সিরিজ জিতিয়ে ভুবনেশ্বরে পা রোহিত শর্মার। এ বার সামনে টি-টোয়েন্টি।

একটা সিরিজ জয় সম্পন্ন হল। আর তার চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই নতুন বিজয় অভিযানের নকশা তৈরির কাজ শুরু হয়ে গেল।

সিরিজ জয়ের আত্মতুষ্টি বা বিলাসিতা নেই, আছে পেশাদারিত্ব এবং ফোকাস না হারানোর সংকল্প। যেটা বিরাট কোহালি, রোহিত শর্মা, শিখর ধবনদের নিয়ে তৈরি বর্তমান এই ভারতীয় দলের ধারাবাহিকতার প্রধান কারণ। জিতি বা হারি, ব্লাড সুগার ধরতে দেব না। দৌড়ে যাও।

বিশাখাপত্তনম থেকে কটক। ওয়ান ডে সিরিজ জেতা রোহিত শর্মার ভারতীয় দল যখন ভুবনেশ্বরে পৌঁছল, বিকেল হয়ে গিয়েছে। কিন্তু তাতে কী, টানা আট সিরিজ জিতে কীর্তি গড়লেও টিম সংস্কৃতিতে কোনও তারতম্য ঘটতে দেওয়া যাবে না যে! বিরাট কোহালি নেই, সদ্য বিবাহিত ভারত অধিনায়কের জায়গায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন রোহিত শর্মা।

অধিনায়ক পাল্টেছে, পাল্টায়নি দলগত রীতিনীতি। ভুবনেশ্বর পৌঁছেই টিম মিটিং এবং টিম ডিনার ডেকে দিলেন রোহিত। উদ্দেশ্য— পুরনো সিরিজের সাফল্যের কুশন থেকে বেরিয়ে এসে নতুন সিরিজের জন্য নতুন শপথ নিয়ে নেওয়া।

আরও পড়ুন: সিরিজ জিতে নতুন সিরিজ জয়ের বৈঠক

ম্যাচ সেই বুধবার রাতে। তা-ও আবার টি-টোয়েন্টি। রাতে খেলা শুরু হয় বলে আইপিএলের মতো ব্লকবাস্টার টুর্নামেন্টেও বিকেলে টিম মিটিং করে সন্ধেবেলায় মাঠে পৌঁছয় সব দল। এখানেও মনে করা হচ্ছিল, অন্তত মঙ্গলবারের আগে কিছু হবে না। বিশেষ করে এ দিনই যখন বিশাখাপত্তনম থেকে টিম এল। টানা ক্রিকেটের সূচির মধ্যে অন্তত একটা দিন যে যাঁর মতো বিশ্রামে কাটাবেন। কিন্তু হেড কোচ রবি শাস্ত্রী এবং অধিনায়ক কোহালি মিলে অনুশাসনের এমন টেমপ্লেট তৈরি করে দিয়েছেন এই ভারতীয় দলে যে, কারও তা থেকে বেরনোর উপায় নেই। কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ের মতো সব ‘সেট’ করা যেন। উড়ানকে অটো পাইলট মোডে দিয়ে দেওয়ার মতো।

শিখর ধবন আবার দেখা পেয়ে গেলেন সুনীল গাওস্করের।

এমনই সেই অনুশাসনের বহর যে, একবার পিছলে গিয়েছো কী মরেছো। ফিটনেস এবং টিম-মন্ত্র মেনে চলার এমন কড়াকড়ি গুরু গ্রেগ জমানাকে মনে করানোর মতো। যুবরাজ সিংহ এবং সুরেশ রায়না ফিটনেসে পিছিয়ে পড়েছিলেন। আর টিমে ঢুকতেই পারছেন না। বারবার তাঁদের ইয়ো ইয়ো ফিটনেসের অগ্নিপরীক্ষায় বসতে হচ্ছে। আরও হালফিলের উদাহরণ হচ্ছে অশ্বিন এবং রবীন্দ্র জাডেজা। মাত্র ছয় মাস আগেও তাঁরা ছিলেন ভারতীয় দলের সেরা দুই অস্ত্র। এখন সীমিত ওভারের ক্রিকেটে দলেই নেই। সেই যে শ্রীলঙ্কা সফরের ওয়ান ডে সিরিজ থেকে যুজবেন্দ্র চহাল এবং কুলদীপ যাদব জায়গা নিয়েছেন, এখনও যুজ-কুল রিংটোন বেজে চলেছে। বিশাখাপত্তনমেও জিতিয়েছে এই ‘রিস্ট স্পিন’ জুটি। এ রকম একটা বিপ্লবের আবহে অধিনায়ককে বাড়তি সক্রিয় না হয়ে উপায় নেই।

বুধবার থেকে শুরু টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রাথমিক নকশাও তাই এ দিনই করে রাখতে হবে। পরের দিনের জন্য ফেলে রাখার কোনও ব্যাপার নেই। তা সে যতই প্রতিপক্ষ হোক ন্যাতানো এক শ্রীলঙ্কা দল। এবং এই নিয়ে গত দু’বছরে অর্জুন রণতুঙ্গার দেশের বিরুদ্ধে রোহিত-রা সম্ভবত ‘তিনশোতম’ ম্যাচ খেলছেন! খোঁজ করলে দেখা যাবে, দু’দেশের মধ্যে এত বেশি ক্রিকেট ম্যাচ হয়েছে সাম্প্রতিক কালে যে, রেকর্ড বইয়ে জায়গা করে নিতে পারে।

আর কে না জানে, সেই লঙ্কাও নেই, সেই রাবণও নেই। এক সময়কার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন টিম। অর্জুন রণতুঙ্গার হাত ধরে যাদের বিশ্ব ক্রিকেটে উত্থান। লাহৌরে বেনজির ভুট্টোর হাত থেকে ছিয়ানব্বই বিশ্বকাপ নেওয়া সেই রণতুঙ্গার ছবি আজও ক্রিকেট ভক্তদের মনে গেঁথে রয়েছে। কী সব কিংবদন্তি বেরিয়েছে স্বর্ণযুগের সেই শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট থেকে! অর্জুন রণতুঙ্গা। অরবিন্দ ডি’সিলভা। সনৎ জয়সূর্য। মুথাইয়া মুরলীধরন। সেই রমরমার কোনও ছোঁয়া তো নেই-ই, উল্টে অন্তর্কলহের আগুনে পুড়ছে শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট।

ভুবনেশ্বর এবং কটকের ক্রিকেট ভক্তদের উৎসাহ দেখে অবশ্য বোঝার উপায় নেই যে, এটা শ্রীলঙ্কা ‘বি’ বা ‘সি’। আর এত ঘন-ঘন ভারত-শ্রীলঙ্কা ম্যাচ হওয়ার কোনও একঘেয়েমির রেশও নেই। বিকেলে ভারতীয় দল হুটার বাজিয়ে ঢোকার সময় বরং বোঝাই দায়, গুজরাত ভোট গণনার যন্ত্র ঢুকছে না টিমবাস!

তা-ও আবার নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় ঘিরে ফেলা হয়েছে দু’টি দলকে। সাম্প্রতিককালে পূর্বাঞ্চলের কয়েকটি মাঠে আন্তর্জাতিক ম্যাচে হামলার ঘটনা ঘটেছে। কটকে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টি ম্যাচে হারের মুখে দর্শকরা জলের বোতল ছুড়ে খেলা বন্ধ করে দিয়েছিল। গুয়াহাটিতে অস্ট্রেলীয় টিম বাসে ঢিল ছোড়ার ঘটনা ঘটেছিল। সেই কারণে নিরাপত্তা আরও বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বরাবাটি স্টেডিয়ামে এ বার ইডেনের মতোই জলের বোতল নিয়ে ঢোকাও নিষিদ্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।

এমনিতে কটকে ম্যাচ মানে ক্রিকেটারেরা থাকেন ভুবনেশ্বরে। প্র্যাকটিস বা ম্যাচের দিন এখান থেকে যাতায়াত করেন তাঁরা। যে হেতু কটকে থাকার মতো ভাল হোটেল নেই। দিন বদলেছে, ক্রিকেট বদলেছে, পাল্টায়নি এই প্রথা। এ বার ভুবনেশ্বরের হোটেল এবং কটকের বরাবাটি স্টেডিয়াম— দু’টোকেই একেবারে দুর্গে পরিণত করে ফেলা হচ্ছে। আর সেই দুর্গের অন্দরে নিজেদের দুর্গও আরও নিশ্ছিদ্র করার লক্ষ্য নিয়ে বসে পড়েছেন রোহিত-রা!

ছবি: পিটিআই, টুইটার

Rohit Sharma Indian Cricket Team Skipper India Vs Sri Lanka T20 Series Cuttack Cricket Cricketer
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy