ভারতীয় টেস্ট ক্রিকেটে বিরাট-যুগ অবশেষে পুরোপুরি এল।
অ্যাডিলেডে ধোনির ‘স্ট্যান্ড-বাই’ অধিনায়ক ছিলেন। সিডনিতে ‘ফুল-টাইম’ ক্যাপ্টেন ছিলেন অস্ট্রেলিয়া সফরের শেষ টেস্টে শুধু। গত মাসে বাংলাদেশ সফরেও কোহলির ভারত কেবল একটাই টেস্ট খেলেছিল।
কিন্তু একটা পূর্ণ টেস্ট সিরিজে (আগামী মাসে শ্রীলঙ্কা সফরে ভারত তিন টেস্টের সিরিজ খেলবে), পুরো শক্তির জাতীয় দলকে বিরাট কোহলি প্রথম নেতৃত্ব দিতে চলেছেন সঙ্গকারার দেশেই।
এবং জাতীয় নির্বাচকমণ্ডলীর প্রধান সন্দীপ পাটিলের কথা অনুযায়ী, ‘‘কোনও দলে অধিনায়কের বদলের সঙ্গে সঙ্গে টিম কম্বিনেশনেও বদল ঘটে।’’
সেই ধারানুযায়ী, অ্যাডিলেডে অশ্বিনের আগে প্রথম একাদশে কর্ণ শর্মা সুযোগ পেয়েছিলেন। সিডনিতে শিখর ধবন-চেতেশ্বর পূজারার আগে বিবেচিত হয়েছিল রোহিত শর্মা-কেএল রাহুলের নাম। ফতুল্লায় মহাপ্রত্যাবর্তন ঘটেছিল হরভজন সিংহের।
এ বার সেই ধারানুযায়ী শ্রীলঙ্কাগামী পনেরো জনের দলে লেগস্পিনার অমিত মিশ্র জায়গা পেলেন। চার বছর পর। শেষ টেস্ট যিনি খেলেছিলেন ২০১১ সালের ইংল্যান্ড সফরে। ধারাবাহিকতাহীনতায় ভোগা রবীন্দ্র জাডেজার আগে। জা়ডেজার মতোই আর এক বাঁ-হাতি স্পিনার প্রজ্ঞান ওঝার নাম আজ এখানে জাতীয় নির্বাচন কমিটির বৈঠকে শুধু আলোচনাতেই সীমাবদ্ধ থাকল।
‘‘অমিত মিশ্র সব সময় আমাদের দল নির্বাচন স্কিমের ভেতর ছিল। আমাদের কাজ ক্যাপ্টেনকে সেরা চোদ্দ জন প্লেয়ার দেওয়া। সুতরাং কেন অমুককে নেওয়া হল আর তমুককে নেওয়া হল না সেটা বড় কথা নয়। শ্রীলঙ্কার কন্ডিশন আর ওদের ব্যাটসম্যানেরা লেগস্পিনটা কেমন খেলে সেটা মাথায় রেখে অমিত মিশ্র সব সময়ই আমাদের চিন্তার ভেতর ছিল,’’ গত দু’মাসের ভেতর তাঁর তৃতীয় সাংবাদিক সম্মেলনে এ দিন বললেন নির্বাচক প্রধান সন্দীপ পাটিল।
যিনি একই সঙ্গে খুব মোলায়েম ভাবে বলে দিলেন, ভারতীয় পেস আক্রমণ নিয়ে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির সঙ্গে তিনি একমত নন।
ধোনি বাংলাদেশে ঐতিহাসিক একদিনের সিরিজ হারের পর বর্তমানে ভারতের এটাই সেরা পেস লাইন আপ কি না তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু নির্বাচক কমিটির চেয়ারম্যান পাটিল আজ সেই প্রসঙ্গে কূটনীতিক ভঙ্গিতে বললেন, ‘‘অধিনায়কের মতামত দেওয়ার পূর্ণ অধিকার আছে। তাতে আমাদের কোনও আপত্তি নেই। এ নিয়ে যা প্রতিক্রিয়া দেওয়ার সেটা বিসিসিআইয়ের ব্যাপার। কিন্তু আমরা সব সময় চেষ্টা করি দলের সঠিক ভারসাম্য রাখতে। আর শ্রীলঙ্কার উইকেটের চরিত্রের কথা মাথায় রেখে আমরা মনে করি এটাই ভারতের সম্ভাব্য সেরা বোলিং কম্বিনেশন।’’
সোজা কথায়, পাটিল বুঝিয়ে দিতে চাইছেন, সেই বরুণ অ্যারন-ইশান্ত শর্মা-ভুবনেশ্বর কুমার-উমেশ যাদবে গড়া পেস অ্যাটাকই ভারতসেরা এখন।
একই সঙ্গে পাটিল প্রায় মোহিত বাংলাদেশে হরভজনের কামব্যাক নিয়ে। ‘‘বয়স কখনও কোনও প্লেয়ারের যোগ্যতার মাপকাঠি হবে না। প্লেয়ারের ফর্ম আর ফিটনেসই আসল,’’ নির্বাচক কমিটি প্রধানের এই মুহূর্তের উপলব্ধি। এমনকী ধোনির প্রবল বিশ্বস্ত রায়না আর জাডেজার শ্রীলঙ্কাগামী টিমে জায়গা না হওয়া নিয়ে পাটিলের তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য, ‘‘দেখুন, চিরকাল অধিনায়ক বদলের সঙ্গে সঙ্গে টিমেও কিছু বদল ঘটে যায়। প্রত্যেক ক্যাপ্টেনেরই তো একটা নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি, চিন্তাভাবনা থাকে, তাই না?’’
দীর্ঘ দিন পর এই প্রথম একটা পূর্ণ টেস্ট সিরিজ উইকেটের পিছনে ধোনির গ্লাভস ছাড়াই ভারত খেলতে চলেছে। ঋদ্ধিমান সাহা তাঁর জায়গায় কিপ করবেন যেমন করছিলেন। তবে বাংলা কিপারের চোট-চোট লাগলে তাঁর এক বিকল্পও ভেবে রাখা হল। যদিও সেই নামটা এখনই জানানো হল না। সাম্প্রতিকে তাঁর ব্যাটিং পারফরম্যান্স দেখে কোনও কোনও মহল থেকে সন্দেহ প্রকাশ করা হচ্ছিল যে, টেস্টে ঋদ্ধিমানের ব্যাটিং কতটা উপযুক্ত। কিন্তু জাতীয় নির্বাচক কমিটির চেয়ারম্যান স্পষ্ট করে দিলেন, ঋদ্ধির উপর তাঁদের যথেষ্ট আস্থা আছে। বললেন, ‘‘ঘরোয়া ক্রিকেটে ওর পারফরম্যান্স দেখেই ওকে নেওয়া। ধোনির বিকল্প হয়ে ওঠা খুব সহজ নয়। কিন্তু ঋদ্ধিমানের উপর আমাদের ভরসা আছে। ও টিমে ব্যালান্স আনবে, আশা করছি।’’
শ্রীলঙ্কা সফরের পুরো দল: কোহলি (অধিনায়ক), অ্যারন, অশ্বিন, ধবন, হরভজন, ভুবনেশ্বর, পুজারা, রাহানে, ঋদ্ধিমান (উইকেটকিপার), ইশান্ত, রোহিত, বিজয়, উমেশ, কেএল রাহুল এবং অমিত মিশ্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy