Advertisement
E-Paper

ক্রিকেটের লালকেল্লায় ম্যাচ জেতানোর দায় পেসারদের

এই গ্রহের কোনও ক্রিকেট মাঠকে যদি ‘লালকেল্লা’ মনে করা যায়, তা হলে সেটা অবধারিত ভাবে এমসিজি! বিশাল! লম্বা-চওড়া দু’টোতেই। ইডেন যদি লার্জ হয়, এমসিজি তা হলে এক্সএক্সএল। কীর্তিগুলোও তো সে রকম। বিশ্বের প্রথম টেস্ট এখানে। প্রথম ওয়ান ডে এখানে। গ্যারি সোবার্সের ২৫৪ এখানে। যেখানে লিলিকে একটা ছক্কা এত জোরে মেরেছিলেন সোবার্স, যে সাইড কংক্রিটে ধাক্কা খেয়ে বল নাকি পিচের পাশে ফেরত এসেছিল! ব্র্যাডম্যানের বডিলাইন সিরিজে আবির্ভাব এবং প্রথম বলে বোল্ড হয়ে লজ্জার লম্বা প্যাভিলিয়ন যাত্রা এই মাঠে।

গৌতম ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০১৫ ০৪:৫৫
কোয়ার্টার ফাইনালে আজ সামনে বাংলাদেশ। ফুরফুরে মেজাজে অধিনায়ক ও সহ-অধিনায়ক। বুধবার। ছবি: এএফপি।

কোয়ার্টার ফাইনালে আজ সামনে বাংলাদেশ। ফুরফুরে মেজাজে অধিনায়ক ও সহ-অধিনায়ক। বুধবার। ছবি: এএফপি।

এই গ্রহের কোনও ক্রিকেট মাঠকে যদি ‘লালকেল্লা’ মনে করা যায়, তা হলে সেটা অবধারিত ভাবে এমসিজি!

বিশাল! লম্বা-চওড়া দু’টোতেই। ইডেন যদি লার্জ হয়, এমসিজি তা হলে এক্সএক্সএল। কীর্তিগুলোও তো সে রকম।

বিশ্বের প্রথম টেস্ট এখানে। প্রথম ওয়ান ডে এখানে। গ্যারি সোবার্সের ২৫৪ এখানে। যেখানে লিলিকে একটা ছক্কা এত জোরে মেরেছিলেন সোবার্স, যে সাইড কংক্রিটে ধাক্কা খেয়ে বল নাকি পিচের পাশে ফেরত এসেছিল! ব্র্যাডম্যানের বডিলাইন সিরিজে আবির্ভাব এবং প্রথম বলে বোল্ড হয়ে লজ্জার লম্বা প্যাভিলিয়ন যাত্রা এই মাঠে।

আকারে-কীর্তিতে-গরিমায় এমনই বড় ক্রিকেট অনুষ্ঠানকেন্দ্র যে, বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনালও সেখানে কেমন পুঁচকে-পুঁচকে। ছিয়ানব্বই হাজার সিট কাল ভরবে এমন কোনও গ্যারান্টি পাওয়া গেল না। বরং অনলাইন এখনও ম্যাচের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার এক কর্তার সঙ্গে ডেনিস লিলির মূর্তিটার কাছে দেখা হয়ে গেল। কর্তাটি বলছিলেন, “লোকে ধরে নিচ্ছে, কোয়ার্টার ফাইনালে লাইভ গেম বলতে সেই অর্থে দু’টো। আজ একটা (দক্ষিণ আফ্রিকা-শ্রীলঙ্কা) সিডনিতে ছিল। আর একটা অ্যাডিলেডে পাকিস্তান-অস্ট্রেলিয়া। ওদের আগ্রহ সে ভাবেই চলছে।”

কথা শুনে মনে হল ক্রিস গেইলের ব্যাট যে নিউজিল্যান্ডের দিন কিছুতেই ঝলসাবে না, সেটা ধরে নিয়েছেন। আর রুবেলরা দুই পেসার যে ঘণ্টায় একশো চল্লিশ কিলোমিটারের ওপরে বল করেন, সেটা বোধহয় তাঁর মনেই নেই। দু’দিক দিয়ে ভারত এবং নিউজিল্যান্ডকে তিনি বা তাঁরা কোয়ার্টার ফাইনালে বল পড়ার আগেই সেমিফাইনালে পাঠিয়ে বসে রয়েছেন।

অথচ বুধবার বাংলাদেশ অধিনায়কের সাংবাদিক সম্মেলন শুনে মনে হল, প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে তাঁদের তাচ্ছিল্য করার কোনও উপায় নেই। রাত্তিরে নাসের হুসেন বলছিলেন, “ভারতকে আইসিসি টুর্নামেন্টে চাপ দিয়ে হারানো যাবে না। ওরা চাপ দারুণ নিতে পারে। বাংলাদেশ ক্যাপ্টেনের ছেলেদের এ ভাবে উদ্দীপ্ত করে লাভ নেই যে, জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে জান লড়িয়ে দাও। তাতে ওরা আরও স্টিফ হয়ে যাবে।”

কিন্তু সেটা তো একেবারেই করছে না বাংলাদেশ। একে বৃষ্টির জন্য ম্যাচ কমে এসে তাদের সুবিধে করে দিতে পারে, এমন লক্ষণ আশেপাশে ঘুরছে। তার ওপর মাশরফি মর্তুজার কথা শুনে আভাস পাওয়া গেল তিনি ছেলেদের পরিষ্কার বলবেন, “তোমাদের পাশ মার্কস পাওয়া হয়ে গিয়েছে। সেটা ছিল কোয়ার্টার ফাইনালে যাওয়া। এ বার যা করবে তা-ই বোনাস। আরাম করে খেলো।”

এই কোয়ার্টার ফাইনাল যুদ্ধ মোটেও ‘ডেভিড বনাম গোলিয়াথ’ বলে যেমন টুইটারে চলছে, তা নয়। ফর্মুলা ওয়ানের মতো কোনও পক্ষের একাধিপত্যও এখানে নেই যে, মেলবোর্ন রেসের পর লোকে লিখবে, ‘লুইস হ্যামিল্টন হেভিওয়েট বক্সার হলে রেফারি তিন রাউন্ডের পরেই লড়াই থামিয়ে দিয়ে বলতেন, তুমি বিজয়ী। আর অনর্থক টেনো না।’

ভারতের এই দল যত ভালই হোক, তারা ফর্মুলা ওয়ানের লুইস হ্যামিল্টন নয়! তাদের সেমিফাইনাল যাওয়া রকমারি শর্তের ওপর নির্ভর করবে। যেমন, পেস ব্যাটারির কাজ করে যাওয়া। সেই বিভাগে মহম্মদ শামি সবচেয়ে হাততালি পেলেও নীরবে গেমচেঞ্জারের কাজ করে যাচ্ছেন কিন্তু হরিয়ানার মোহিত শর্মা। তিরাশির মদনলাল আর দু’হাজার পনেরোর তিনি— সমগোত্রীয়। ইডেন পার্কে প্রথম স্পেলেই বল করতে যাওয়ার সময় মোহিতের ল্যান্ডিং ঠিকমতো হয়নি। মুখ বিকৃত করে তিনি বসে পড়েন। মনে হচ্ছিল ইনিংসে আর বল করা হবে না। তখনই মোহিতকে ঘিরে ছুটে আসা আতঙ্কিত মুখচোখ পরিষ্কার বোঝালো, এই টিমে এত কম সময়েই তাঁর নির্ভরযোগ্যতা কোন পর্যায়ে!

তবে ভারতীয় দলকে তুমুল ফুর্তিতে দেখা গেল। ইদানীং কালের নিয়মিত ছবি এ রকমই। অথচ দু’হাজার এগারো আর উনিশশো তিরাশি কোনও বারই টিমের স্পিরিট খুব উচ্চাঙ্গে ছিল না। ভেতরে ভেতরে কাটাকাটি লেগেই থাকত। ধোনির নতুন টিমের স্পিরিট কিন্তু দুর্দান্ত। এ দিন শিখর ধবনকে দেখা গেল সানন্দে ‘রোহিত’ লেখা জার্সি পরে ঘুরছেন। আবার রোহিত কোলে নিয়ে ঘুরছেন ধবনের ছেলেকে! বোলারের টুপি এগিয়ে দেওয়ার জন্যও এই টিমে দু’জন সব সময় হাজির রাহানে আর রায়না।

মেলবোর্ন মাঠের স্কোরবোর্ডে এখনও অদ্ভুত ভাবে ‘ইংল্যান্ড ২৩১’ আর ‘অস্ট্রেলিয়া ৩৪২’ ফুটে রয়েছে। গ্রুপ লিগের পুরনো স্কোর এত দিনেও কেউ কেন সরায়নি, জানার উপায় আছে বলে মনে হল না। কিন্তু প্রাচীন মাঠে এই নব্য স্কোরবোর্ডও যেন একটা চিত্রকল্পের জন্ম দিচ্ছে। একটা কল্পনাকে ভাসিয়ে তুলছে যে, এখানে সব কিছুই কালের পৌনঃপুনিকতা মেনে চলবে। ক্রিকেটের আপন ধারাপাতে নয়।

দক্ষিণ আফ্রিকা যেমন ‘মনোবিদ আনব না আনব না’ করে শেষমেশ মাইক হর্নকে নিয়ে চলে এল, তেমন শেষ মুহূর্তের কোনও পথ্য নেই ভারতের। টিমের একজন বলছিলেন, সেরা মনোবিদ স্বয়ং ধোনি। প্লেয়ারদের এমন স্পেসে রাখে যে বুঝতেই দেয় না বিশ্বকাপ নকআউট ম্যাচের চাপটা কী!

অকারণ ওয়ান ডে ম্যাচ বন্ধ করার ব্যাপারে অস্ট্রেলিয়া ইদানীং খুব অগ্রণী। আর এ ব্যাপারে ধোনির মনোভাব তাদের খুব প্রিয়। এই যে আইসিসি অনুমোদিত টুর্নামেন্ট এলেই ধোনি গা-ঝাড়া দিয়ে ওঠেন আর বাকি সময় সিরিয়াসলি নেন না, এটা তাদের পছন্দের। পাঁচ দশকেরও বেশি সাংবাদিকতা করা, ব্র্যাডম্যান পরিবারের ঘনিষ্ঠতম মাইক কাওয়ার্ড এ দিন বলছিলেন, “ধোনি এই যে ত্রিদেশীয় সিরিজকে কোনও পাত্তাই দেয়নি, সেটা দারুণ লেগেছে। ঠিক যখন দরকার, ও নিজের সুইচ অন বোতামটা টিপে দিল।”

ধোনি সম্পর্কে অধুনা অস্ট্রেলীয় মনোভাব হল, ‘হোয়েন দ্য গোয়িং গেটস সিরিয়াস, ওনলি দ্য সিরিয়াস গেটস গোয়িং।’ ধোনি হচ্ছেন সেই লোক যিনি বোঝেন, কোনটা গুরুত্ব পাওয়ার যোগ্য। কোনটা ঔদ্ধত্যসহ পরিত্যাজ্য!

সঙ্গকারা চলে যাওয়ার বিষণ্ণতাকে ভারত কি পরের রাত্তিরে আরও বাড়াবে, নাকি নক আউট পাঞ্চে উড়িয়ে দেবে বাংলাদেশকে? আর কী! খেলা শুরু হওয়ার মুখে। আম্পায়ার ‘প্লে’ বললেন বলে!

world cup 2015 gautam bhattacharya
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy