Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
রোহিত আর রিস্টস্পিনই জেতাল ম্যাচ

‘পঁচিশ বছরের অধরা স্বপ্নপূরণ বিরাট বাহিনীর হাত ধরে’

রোহিতের একটা ক্ষমতা হল, যে কোনও বলের জন্য ওর হাতে তিন-চারটে শট মজুত থাকে। তাই একবার সেট হয়ে গেলে ওকে আটকানো যে কোনও বোলিং আক্রমণের পক্ষে কঠিন।

হুঙ্কার: আরও একটা দক্ষিণ আফ্রিকার উইকেট। গর্জন় বিরাট কোহালি়র। নাচ শুরু সিরিজের অন্যতম নায়ক যুজবেন্দ্র চহালের। মঙ্গলবার পোর্ট এলিজাবেথে। ছবি: এএফপি

হুঙ্কার: আরও একটা দক্ষিণ আফ্রিকার উইকেট। গর্জন় বিরাট কোহালি়র। নাচ শুরু সিরিজের অন্যতম নায়ক যুজবেন্দ্র চহালের। মঙ্গলবার পোর্ট এলিজাবেথে। ছবি: এএফপি

সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৩:৫৪
Share: Save:

ইতিহাস যে এই সিরিজেই হবে, সেটা আগেই বোঝা গিয়েছিল। ইতিহাসটা লেখা হল পোর্ট এলিজাবেথে। যেখানে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৭৩ রানে হারিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটি থেকে প্রথম ওয়ান ডে সিরিজ জিতল ভারত। ছয় ম্যাচের সিরিজে পঞ্চম ম্যাচের পরে ভারত এগিয়ে গেল ৪-১।

সিরিজ জয়ের পিছনে রয়েছে ভারতের প্রথম তিন ব্যাটসম্যান এবং অবশ্যই দুই রিস্টস্পিনার। মঙ্গলবার শিখর ধবন (৩৪) বা বিরাট কোহালি (৩৬) বড় রান না করলেও সেই দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিয়ে নিয়েছিল রোহিত শর্মা। ২০, ১৫, ০, ৫। প্রথম চারটি ওয়ান ডে ম্যাচে এটাই ছিল রোহিতের মিলিত রান! যার ফলে দেখলাম কেউ কেউ বলে দিচ্ছেন, রোহিতের পক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকায় সফল হওয়া কঠিন হবে। এঁরা ভুলে গিয়েছিলেন, রোহিতরা হল জিনিয়াস। আর সীমিত ওভারের ফর্ম্যাটে রোহিতের চেয়ে ভাল ব্যাটসম্যান খুব কমই আছে। । নিজের ১৭ নম্বর ওয়ান ডে সেঞ্চুরি করার পথে রোহিত করল ১২৬ বলে ১১৫। ম্যান অব দ্য ম্যাচ হল রোহিতই।

রোহিতের একটা ক্ষমতা হল, যে কোনও বলের জন্য ওর হাতে তিন-চারটে শট মজুত থাকে। তাই একবার সেট হয়ে গেলে ওকে আটকানো যে কোনও বোলিং আক্রমণের পক্ষে কঠিন। ওয়ান ডে ক্রিকেটে রোহিতের তিনটে ডাবল সেঞ্চুরি তো আর এমনি আসেনি। এ দিনের রোহিতকে শুরু থেকে দেখে মনে হচ্ছিল, নিজের কাছে শপথ নিয়ে নেমেছে কিছুতেই মনঃসংযোগ নষ্ট করে উইকেট ছুড়ে দিয়ে আসবে না। প্রথম দিকে ব্যাটের মাঝখান দিয়ে খেলার চেষ্টা করছিল। তার পরে দিনের ষষ্ঠ ওভারে কাগিসো রাবাডাকে মারা একটা শট দেখে বুঝতে পারলাম, ও ছন্দে চলে এসেছে। রাবাডার ওই বলটায় সামনের পায়ে এসে মি়ড অনের ওপর দিয়ে গ্যালারিতে পাঠিয়ে দিল। একেবারে ক্লাসিকাল শট।

আরও পড়ুন: ৭৩ রানে প্রোটিয়া বধ করে ঐতিহাসিক সিরিজ জয় ভারতের

বিরাট কোহালির (৩৫) রান আউটের ক্ষেত্রে আমি রোহিতকে কোনও দোষ দেব না। আসলে কোহালি সব সময় মাথায় রাখতে পারে না যে উল্টো দিকের ব্যাটসম্যান ওর মতো ফিট নয় বা ওর মতো জোরে দৌড়তে পারে না। রোহিত প্রথম থেকেই ‘নো-নো’ বলে চেচাচ্ছিল। কোহালি খেয়াল করেনি। তবে অজিঙ্ক রাহানের ক্ষেত্রে রোহিতের দোষ আছে। রাহানের কলটা ঠিকই ছিল। এমনকী ও-ই ডেঞ্জার এন্ডের দিকে যাচ্ছিল। রোহিত ঠিক সময় দৌড়লে সমস্যা হয় না।

দুরন্ত: পোর্ট এলিজাবেথে সেঞ্চুরি করে রোহিত। মঙ্গলবার। ছবি: এপি

রোহিত অবশ্য শেষ পর্যন্ত টিকে থেকে ভারতের রান তিনশোর ওপর নিয়ে যেতে পারল না। এর জন্য অবশ্য ভারতের মিডল অর্ডারও সমান দায়ী। এই সিরিজে কিন্তু মিডল অর্ডার সে ভাবে খেলতেই পারেনি। এই ম্যাচেই তো একটা সময় ভারতের রান ছিল ৩০ ওভারে ১৭০। তখন মনে হচ্ছিল, তিনশো তো হবেই, আরও বেশি হতে পারে। কিন্তু শেষ ১০ ওভারে ভারত মাত্র ৫৫ রান যোগ করল। চারটে উইকেটও পড়ে গেল। ভারত শেষ পর্যন্ত ৫০ ওভারে ২৭৪-৭ স্কোরের বেশি এগোতে পারেনি। দক্ষিণ আফ্রিকার বোলাররা ওই সময় স্ট্র্যাটেজিটাও ঠিক নিয়েছিল। শর্ট অব লেংথে বল করে যাওয়া। এমনকী মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকেও (১৭ বলে ১৩) ওরা ঠিক বুঝে নিয়েছে। ধোনিকে নিজের পছন্দমতো একটা শটও খেলতে দেয়নি। আগের সেই ধোনিকে কিন্তু এই সিরিজে সে ভাবে দেখতে পাচ্ছি না আমরা। ফলে ডেথ ওভারে ভারতের রানটাও সে রকম উঠছে না। মিডল অর্ডার চাপ সামলাতে পারছে না। তার ওপর হার্দিক পাণ্ড্য এবং শ্রেয়স আইয়ার ভাল খেলতে না পারায় সমস্যা বাড়ছে।

যে সমস্যাটা এই ম্যাচে বড় হয়ে উঠল না ভারতীয় রিস্টস্পিনারদের সৌজন্যে। আগের ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানরা ভারতের রিস্টস্পিনারদের খেলে দিলেও এই ম্যাচে কিন্তু স্বমহিমায় দেখা গেল কুলদীপ যাদব (৪-৫৭) এবং যুজবেন্দ্র চহাল-কে (২-৪৩)। একমাত্র হাশিম আমলা (৭১) এবং পরের দিকে হেনরিক ক্লাসেন (৩৯) কিছুটা সামলাতে পারল স্পিনারদের। কিন্তু সেটা যথেষ্ট ছিল না।

হার্দিক অবশ্য ব্যাটে রান না পেলেও বলে এবং ফিল্ডিংয়ে সেটা পুষিয়ে দিল। প্রথমে দু’ওভারে দু’উইকেট তুলে নিল। যার মধ্যে একটা এ বি ডিভিলিয়ার্সের (৬)। প্রথমে মনে হচ্ছিল, ডিভিলিয়ার্সের উইকেটটাই টার্নিং পয়েন্ট হতে চলেছে। কিন্তু তার পরে আমলা ম্যাচটা ধরে নিয়েছিল। স্পিনারদেরও সুন্দর খেলছিল। কিন্তু ওই সময় আমলার একটা ব্যাকফুট ড্রাইভ মিড অফে ধরে এক থ্রোয়ে উইকেট ভেঙে দেয় হার্দিক। আমলা প্যাভিলয়নে ফিরে যাওয়াটাই ম্যাচের রং বদলে দিল। খেলাটাও তখন মোটামুটি বেরিয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকার হাত থেকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE