প্রার্থনা: কালীঘাটে পুজো দিয়ে বেরোচ্ছেন জুহি। নিজস্ব চিত্র
এলেন, দেখলেন, আর মাঠ ছাড়লেন রুদ্ধশ্বাস ম্যাচ জিতে। গত বছর আইপিএলে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বিরুদ্ধে এই ইডেনেই বড় ব্যবধানে হেরে ড্রেসিংরুমে না গিয়েই স্টেডিয়াম ছেড়েছিলেন বিরক্ত শাহরুখ খান। আর রবিবার বর্ণময় মেজাজে ইডেনে ধরা দিলেন ‘বাদশা’।
খেলা দেখার মাঝে কখনও ভক্তদের ছুড়ে দিলেন চুম্বন। কখনও বা দর্শকদের অনুরোধে ক্ষণিকের জন্য নাচলেন। কখনও ডিজে-র বাজানো গানের সঙ্গে তাল ঠুকলেন হসপিটালিটি বক্সের বারান্দার রেলিংয়ে। গোটা স্টেডিয়াম মোবাইলের ফ্লাশবাল্ব জ্বেলে রাখার সময় মোবাইলে তার ছবিও তুললেন। এক সময় টেনশনে হসপিটালিটি বক্সের বারান্দায় পিছনের সারিতে বসেও পড়েছিলেন। চুপ করে দেখছিলেন ম্যাচ।
নীতীশ রানা তখন সদ্য ফিরে গিয়েছেন। নাইটদের স্কোর তখন ১১৮-৪। কিন্তু আন্দ্রে রাসেলের ১৯ বলে ঝটিকা ৪৯ রানে সানরাইজার্স হায়দরাবাদকে হারানোর পরে শাহরুখ আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলেন না। বাঁধ ভাঙা উচ্ছ্বাসে মেতে গেলেন। প্রথমে দলের আর এক মালিক জুহি চাওলার হাতে চাপড় মেরে নাচতে শুরু করে দিলেন শাহরুখ। তার পরে মাঠে ঢুকে গোটা স্টেডিয়াম পরিক্রমা করে দর্শকদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করলেন তিনি। মাঠেই রসিকতায় মাতলেন দিনের নায়ক আন্দ্রে রাসেল ও নীতীশ রানার সঙ্গে। ড্রেসিংরুমে ফিরে মালকিন জুহি চাওলার সঙ্গে দলের প্রতিটি ক্রিকেটারকে শুভেচ্ছা জানিয়ে দেড় ঘণ্টা পরে খোশমেজাজে ইডেন ছাড়লেন কিং খান।
হোটেলে দলের নৈশ পার্টিতে যোগ দিতে যাওয়ার আগে সাংবাদিকদের বলে গেলেন, ‘‘দুর্দান্ত একটা জয় উপহার দিল ছেলেরা। আজ আর কথা নয়। বুধবার আবার আসব। তখন কথা হবে।’’
স্কোরকার্ড
এসআরএইচ ১৮১-৩ (২০)
কেকেআর ১৮৩-৪ (১৯.৪)
সানরাইজার্স হায়দরাবাদ
ওয়ার্নার ক উথাপ্পা বো রাসেল ৮৫• ৫৩
বেয়ারস্টো বো চাওলা ৩৯•৩৫
বিজয় ন. আ. ৪০•২৪
ইউসুফ বো রাসেল ১•৪
মণীশ ন. আ. ৮•৫
অতিরিক্ত ৮
মোট ১৮১-৩ (২০)
পতন: ১-১১৮ (বেয়ারস্টো, ১২.৫), ২-১৪৪ (ওয়ার্নার, ১৫.৬), ৩-১৫২ (ইউসুফ, ১৭.৩)।
বোলিং: প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ ৪-০-৩১-০, পীযূষ চাওলা ৩-০-২৩-১, লকি ফার্গুসন ৪-০-৩৪-০, সুনীল নারাইন ৩-০-২৯-০, কুলদীপ যাদব ২-০-১৮-০, আন্দ্রে রাসেল ৩-০-৩২-২, নীতীশ রানা ১-০-৯-০।
কলকাতা নাইট রাইডার্স
লিন ক রশিদ বো শাকিব ৭•১১
নীতীশ এলবিডব্লিউ বো রশিদ ৬৮•৪৭
উথাপ্পা বো কল ৩৫•২৭
কার্তিক ক ভুবনেশ্বর বো সন্দীপ ২•৪
রাসেল ন. আ. ৪৯•১৯
শুভমন ন. আ. ১৮•১০
অতিরিক্ত ৪
মোট ১৮৩-৪(১৯.৪)
পতন: ১-৭ (লিন, ১.৬), ২-৮৭ (উথাপ্পা, ১১.৪), ৩-৯৫ (কার্তিক, ১২.৪), ৪-১১৮ (নীতীশ, ১৫.৩)।
বোলিং: ভুবনেশ্বর কুমার ৪-০-৩৭-০, শাকিব আল হাসান ৩.৪-০-৪২-১, সন্দীপ শর্মা ৪-০-৪২-১, সিদ্ধার্থ কল ৪-০-৩৫-১, রশিদ খান ৪-০-২৬-১।
তবে শাহরুখের মতো আবেগ চেপে রাখেননি মালকিন জুহি চাওলা। প্রথম ম্যাচেই সেই সানরাইজার্সের বিরুদ্ধে দুরন্ত জয়ের পরে জুহি বলেই দিলেন, তাঁর দল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার অন্যতম দাবিদার। বললেন, ‘‘রাসেল অবিশ্বাস্য ভাবে ম্যাচটা জিতিয়ে দিল। হসপিটালিটি বক্সের বারান্দায় এক সময় টেনশনে থাকতে পারছিলাম না। কিন্তু সেই সব টেনশন একা উড়িয়ে দিয়েছে রাসেল।’’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘‘শুধু রাসেলই নয়। নীতীশ রানাও দুর্দান্ত একটা ইনিংস খেলে দিয়ে গেল। শেষের দিকে শুভমনের ১০ বলে ১৮ রানের ইনিংসটাও দুর্দান্ত। শুরুটা এ বার ভালই হল। আমরাই চ্যাম্পিয়ন হব। তবে প্রতি ম্যাচেই এই ছন্দে খেলা চাই।’’
এ দিন দুপুরেই কলকাতায় চলে এসেছিলেন শাহরুখ। তবে মাঠে ঢোকেন খেলা শুরুর ৪৫ মিনিট পরে। হায়দরাবাদের দুই ওপেনার জনি বেয়ারস্টো ও ডেভিড ওয়ার্নার দলের রান ১০০ পার করে দিয়েছেন। শাহরুখ হসপিটালিটি বক্সের বারান্দায় এসেই নাইটদের পতাকা হাতে দাঁড়ানো ঊষা উত্থুপ ও নাইটদের চিফ এগজিকিউটিভ অফিসার (সিইও) বেঙ্কি মাইসোরের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করলেন। ততক্ষণে ক্লাব হাউসের লোয়ার টিয়ার ও ‘বি’ ব্লক-সহ গোটা স্টেডিয়ামের নজরই ইডেনের ২২ গজ থেকে ঘুরে গিয়েছে নাইটদের হসপিটালিটি বক্সে। এর কিছু পরেই বেয়ারস্টো আউট আর শুরু ‘শাহরুখ শো’।
তবে নিজের দলের ইনিংসের সময় প্রথমে বারান্দায় আসেননি শাহরুখ। ক্রিস লিন আউট হতেই ফের উদয় তাঁর। সঙ্গে সঙ্গেই চার মেরে শাকিব আল হাসানদের পাল্টা আক্রমণ শুরু নীতীশ রানার। কিন্তু রশিদ খান, সিদ্ধার্থ কল-রা যখন ম্যাচ প্রায় বার করে নিয়ে যাচ্ছেন, তখন চুপ করে খেলা দেখছিলেন। কিছু পরেই দু’হাত মুখের কাছে এনে চিৎকার করে কেকেআরকে উজ্জীবিত করা শুরু শাহরুখের। আর তার পরেই ঝড় তুলে নাইট শিবিরে জয় তুলে
আনলেন রাসেল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy