Advertisement
১১ মে ২০২৪

মোহালিতে জিতে দৌড়ে টিকে রইলেন নাইটরা, তবু প্রশ্ন উঠছে বিস্ময়কর সিদ্ধান্তে

রবিবার মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বিরুদ্ধে জিতলে প্লে-অফে ওঠার স্বপ্ন সত্যি হয়ে যেতেই পারে নাইটদের।

 যুগলবন্দি: রাসেলের ঝোড়ো ব্যাটিংয়ের পাশে ধ্রুপদী ইনিংসে ম্যাচের সেরা শুভমন। শুক্রবার। পিটিআই

যুগলবন্দি: রাসেলের ঝোড়ো ব্যাটিংয়ের পাশে ধ্রুপদী ইনিংসে ম্যাচের সেরা শুভমন। শুক্রবার। পিটিআই

অশোক মলহোত্র
শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০১৯ ০৩:২৮
Share: Save:

শুভমন গিলকে যত দেখছি, তত ভাল লাগছে। এই বয়সেই অত্যন্ত পরিণত। ক্রিস লিন দারুণ একটা শুরু করার পরে ম্যাচটা শেষ করে এল শুভমন। দু’ওভার বাকি থাকতে কিংস ইলেভেন পঞ্জাবের রান টপকে গিয়ে প্লে-অফের দৌড়ে টিকে রইল কেকেআর। রবিবার মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বিরুদ্ধে জিতলে প্লে-অফে ওঠার স্বপ্ন সত্যি হয়ে যেতেই পারে নাইটদের।

তবে সহজে জিতলেও নাইটদের ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে আমার কয়েকটা প্রশ্ন আছে। যেমন, রবিন উথাপ্পাকে কেন তিন নম্বরে নামানো হল বুঝলাম না। আগের ম্যাচে তিন নম্বরে এসে দুর্দান্ত খেলেছিল আন্দ্রে রাসেল। এ দিন নামল চারে। ওকে তিনে পাঠানোই যেত, বিশেষ করে যেখানে নেট রান রেট বাড়ানোর ব্যাপারটা ছিল।

সানরাইজার্স হায়দরাবাদের নেট রান রেটের (০.৬৫৩) চেয়ে কেকেআর (০.১৭৩) এখনও বেশ পিছিয়ে থাকল। আজ, শনিবার রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরকে যদি হায়দরাবাদ হারিয়ে দেয়, তা হলে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সকে বিশাল ব্যবধানে হারাতে হবে কার্তিকদের। নাইট-অধিনায়ক নিজেকেও ব্যাটিং অর্ডারে উপরে তুলে আনতে পারে। কার্তিক, রাসেল— উপরের দিকে নামা মানে বিপক্ষ বোলাররা সব সময় চাপে থাকবে। উথাপ্পা, নীতীশ রানা ওদের পরেই নামুক না।

আরও পড়ুন: গিল ম্যাজিক, না ওয়ারিয়রের যুদ্ধ, নাইটদের পঞ্জাব বধের মূল কারণ কী

আরও একটা ব্যাপারে অবাক হয়েছিলাম। টস হয়ে যাওয়ার পরে কেকেআরের দলটা দেখে প্রশ্নটা করতেই হচ্ছে। কুলদীপ যাদবকে কেন বাইরে রাখা হল?

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের বিরুদ্ধে ম্যাচে কুলদীপ মার খেয়ে যাওয়ার পর থেকে ও মাঠের বাইরে। তার জায়গায় পীযূষ চাওলাকে খেলানো হচ্ছে, যার কোনও মানেই নেই। কুলদীপ যে কোনও দলের কাছে তুরুপের তাস হয়ে উঠতে পারে। ওর দুর্ভাগ্য, আইপিএলের বাইরে থাকতে হচ্ছে। বিশ্বকাপে ভারতের যে পনেরো জনের দল বাছা হয়েছে, তার মধ্যে কুলদীপই একমাত্র ক্রিকেটার যে আইপিএলে নিয়মিত প্রথম একাদশে সুযোগ পাচ্ছে না। কুলদীপের আত্মবিশ্বাস নষ্ট হলে অবাক হব না।

তবে নাইট ম্যানেজমেন্ট একটা ভাল সিদ্ধান্ত নিয়েছে শুভমনকে (৪৯ বলে অপরাজিত ৬৫) দিয়ে ওপেন করিয়ে। এটাই ওর ঠিক জায়গা। ফ্রন্টফুট, ব্যাকফুট— দু’টোতেই খুব শক্তিশালী। শট নেওয়ার সময় শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বলটা দেখে, মাথাটা স্থির থাকে। তাই এত সুন্দর শট খেলতে পারে। শুভমন মাথা ঠান্ডা রেখে ইনিংসটা না খেললে কিন্তু দু’ওভার বাকি থাকতে জয় আসে না। মোহালিতে ১৮৩ রান কিন্তু খুব কম ছিল না। ঠিক ক্রিকেটারকেই ম্যাচের সেরা বাছা হয়েছে।

পঞ্জাব ম্যাচে কেকেআরের সব চেয়ে বেশি ভয় ছিল ওদের দুই ওপেনারকে নিয়ে। কে এল রাহুল এবং ক্রিস গেল। শুক্রবার দু’জনেই ব্যর্থ। দুই ওপেনারকেই ফিরিয়ে দিল কেকেআরের নতুন পেসার সন্দীপ ওয়ারিয়র। কেরলের এই পেসারের হাতে গতি আছে। ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটারের উপরে বল করতে পারে। আবার সুইংও করায়। ভাল স্লোয়ারও আছে। এ রকমই একটা স্লোয়ারে ফিরিয়ে দিল রাহুলকে। আগে শটটা খেলে দিল। আর গেলকে দেখে মনে হচ্ছিল, একটু যেন জড়সড় হয়ে আছে। পুরো শক্তি নিয়ে পুল শটটা খেলল না। যার ফলে ডিপ স্কোয়ার লেগে ধরা

পড়ে গেল।

কিন্তু দুই ওপেনার শুরুতে ফিরলেও পঞ্জাবকে ১৮৩ রানে পৌঁছে দিল নিকোলাস পুরান এবং স্যাম কারেন। প্রথমে পুরান আক্রমণের রাস্তায় হাঁটল। শেষ দিকে কারেন। হ্যারি গার্নির করা শেষ ওভারে কারেন তুলল ২২ রান। কারেন শেষ পর্যন্ত ২৪ বলে ৫৫ রানে অপরাজিত থেকে গেল। ইংল্যান্ড অলরাউন্ডারের পাল্টা আক্রমণ বুঝিয়ে দিল, ডেথ ওভারে ভাল বল করার মতো বোলার নাইটদের হাতে নেই।

কেকেআরকে দেখে মনে হচ্ছিল, দলের মধ্যে সমস্যা আছে। টিভি-তে দেখলাম, সুনীল নারাইনের মতো মাথা ঠান্ডা ক্রিকেটারও উত্তেজিত হয়ে কী সব বলছে। তার পরে ম্যাচের মধ্যেই দলের ক্রিকেটারদের নিয়ে একটা ছোটখাটো বৈঠক করে ফেলল কার্তিক। কেকেআর অধিনায়ককে সেখানে উত্তেজিত ভাবে সতীর্থদের কী সব বলতে দেখা গেল। দেখে মনে হওয়া স্বাভাবিক, সতীর্থদের মনোভাব বা খেলায় ঠিক খুশি হতে পারছে না কার্তিক।

পঞ্জাবের পাল্টা আক্রমণ শুরু হয় পুরানের ব্যাট থেকে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান এ বারে বিশ্বকাপ দলে আছে। ত্রিনিদাদের এই ছেলেটা কিন্তু বুঝিয়ে দিল, ছোটখাটো চেহারার হলেও গ্যালারিতে বল পাঠাতে ওস্তাদ। ওর ইনিংসে রয়েছে চারটে ছয়। নীতীশ রানার যে বলে পুরান আউট হল, সেটা গ্যালারিতে পড়া উচিত ছিল। কিন্তু ব্যাটের নীচের দিকে লাগায় বাউন্ডারি লাইনে ধরা পড়ে গেল।

কেকেআর এই ম্যাচে দুই স্পিনারে খেলছে। তার মধ্যে চাওলা মার খেয়ে গেল। চার ওভারে ৪৩ দিয়ে বসল। পীযূষ এখন লেগস্পিন খুব কমই করায়। ওর অস্ত্র গুগলি। এখানে দেখলাম ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা তো বটেই, পুরানও বুঝে যাচ্ছে বল কোন দিকে ঘুরবে। এবং সেটা বুঝে ফেলায় পীযূষকে মারা সহজ হয়ে যায়। শেষ ওভার বাদে বাকি তিন ওভারে অবশ্য নারাইন চাপে রেখে গেল পঞ্জাবের ব্যাটসম্যানদের। তবে কারেনের পাল্টা আক্রমণ শেষ বেলায় ধাক্কা দিয়ে গেল নাইট বোলিংকে। যদিও ব্যাটসম্যানদের জন্য সেই ধাক্কা সামলে নিল কেকেআর।

টানা ছ’টা ম্যাচ হারার পরে দুটোতে জয়। এই কেকেআর প্লে-অফে না গেলে খারাপই লাগবে। আমার মতে, এ বারের আইপিএলের সেরা অলরাউন্ড তিনটে দল হল, চেন্নাই সুপার কিংস, মুম্বই ইন্ডিয়ান্স এবং কেকেআর। চেন্নাই, মুম্বই তো প্লে-অফে উঠেই গিয়েছে। এ বার কেকেআর পারে কি না, সেটাই দেখার।

মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে রবিবার কিন্তু কেকেআরকে ঠিক দল নামাতে হবে, ঠিক ব্যাটিং অর্ডার সাজাতে হবে। ওয়াংখেড়েতে খেলা। ওখানে একটা ভুল করা মানে কিন্তু প্লে-অফের দৌড় থেকে ছিটকে যেতে হবে। সে ক্ষেত্রে মূল্যহীন হয়ে পড়বে এই লড়াই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

KKR Mohali IPL IPL 2019
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE