E-Paper

অনুকরণ করি শুভমন গিলকে, ফাঁস করে দিলেন অঙ্গকৃষ রঘুবংশী

ব্যাটিং স্টান্স থেকে তাঁর শট খেলার ধরন, ইনিংস গড়ে তোলার চরিত্র, সব কিছুই যেন মিলে যায় শুভমনের সঙ্গে। অনেকের মনেই প্রশ্ন, তিনি কি শুভমনকে অনুকরণ করেন?

ইন্দ্রজিৎ সেনগুপ্ত 

শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ০৮:১৮
আপ্লুত: শাহরুখ বুঝিয়েছেন, বাকিদের মতো অঙ্গকৃষও নাইট শিবিরের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য।

আপ্লুত: শাহরুখ বুঝিয়েছেন, বাকিদের মতো অঙ্গকৃষও নাইট শিবিরের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। —ফাইল চিত্র।

আইপিএলে প্রথম বার ব্যাট করতে নেমেই নিজের জাত চিনিয়েছিলেন তিনি। কলকাতা নাইট রাইডার্স সমর্থকদের অনেকেই ভেবেছিলেন, ‘‘শুভমন গিল ফিরে এলেন নাকি?’’

ব্যাটিং স্টান্স থেকে তাঁর শট খেলার ধরন, ইনিংস গড়ে তোলার চরিত্র, সব কিছুই যেন মিলে যায় শুভমনের সঙ্গে। অনেকের মনেই প্রশ্ন, তিনি কি শুভমনকে অনুকরণ করেন? আনন্দবাজারের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে তাঁর মনের কথা তুলে ধরলেন নাইটদের তরুণ নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান অঙ্গকৃষ রঘুবংশী। জানিয়ে দিলেন, তিনি শুভমনকে অনুকরণ করেন। এমনকি তাঁর রাজ্য দলের সতীর্থেরাও একই কথা বলেন।

অঙ্গকৃষ বলছিলেন, ‘‘শুভমনের মতোই ব্যাট করার চেষ্টা করি। আমার রাজ্য দলের সতীর্থদের সঙ্গে কথা বলে দেখবেন, তারাও ভাবে আমি শুভমনকেই অনুকরণ করি। নাইটদের হয়ে শুভমন যে বিশেষ সব মুহূর্ত উপহার দিয়েছে, আমি সেইটুকু করতে পারলেই খুশি।’’

অঙ্গকৃষ সেই দিকেই এগোচ্ছেন। মাত্র পাঁচটি ম্যাচ খেলেছেন তরুণ ব্যাটসম্যান। তাঁর রানসংখ্যা ১১৫। ব্যাটিং গড় ২৮.৭৫। ১৬৬.৬৭-এর স্ট্রাইক রেটে গড়েছেন ইনিংস। টেস্ট ম্যাচে যে ধরনের শট খেলে রান করতে দেখা যায়, অঙ্গকৃষ সে রকম শট খেলেই দ্রুত রান করেন টি-টোয়েন্টিতে। রাজস্থান রয়্যালসের ট্রেন্ট বোল্টকে ফ্লিক করে ইডেনে যে ছক্কাটি মেরেছিলেন, তা নিঃসন্দেহে ম্যাচের অন্যতম সেরা। একটি স্ট্রেট ড্রাইভ মেরেও বোল্টকে বিস্মিত করতে দেখা যায় তাঁকে। অঙ্গকৃষ জানিয়েছেন, আগে থেকে কোন শট খেলবেন ভেবে রাখেন না। বলের মান অনুযায়ী চলে তাঁর ব্যাট। সুনীল নারাইন, আন্দ্রে রাসেলদের সঙ্গে ব্যাট করলে তাঁর আত্মবিশ্বাস যেন দ্বিগুণ হয়ে যায়। বলছিলেন, ‘‘রাসেল ও নারাইনের সঙ্গে ব্যাট করার সময় আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়। নিজের ইচ্ছে মতো শট খেলার স্বাধীনতা দেয়। ওরাই তো বড় শট খেলে। আমাকে বেশি কিছু করতে হয় না।’’ করতে না হলেও তিনি এক দিক থেকে যে ইনিংসটি গড়েন, তা নাইট শিবিরকে নিঃসন্দেহে ভাল জায়গায় পৌঁছে দেয়।

অঙ্ককৃষের জার্সি নম্বর ১৮। ভারতীয় দলে কার জার্সি নম্বর ১৮ তা নিশ্চয়ই বলে দেওয়ার প্রয়োজন নেই। লিয়োনেল মেসির ১০, ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর ৭ নম্বরের পরে সারা বিশ্বে অন্যতম জনপ্রিয় জার্সি নম্বর ১৮। অঙ্গকৃষের বলতে দ্বিধা নেই, তিনি বিরাট কোহলির ভক্ত। তাঁর স্বপ্নের নায়কের সঙ্গে মিল রেখেই ১৮ নম্বর পরেন। বলছিলেন, ‘‘আমি কোহলির বড় ভক্ত। ভারতের বাকি তরুণদের মতোই আমি কোহলিকে শ্রদ্ধা করি। ওর আগ্রাসন আমাকেও প্রভাবিত করে। কোহলি ভক্ত বলেই ১৮ নম্বর জার্সি পরি।’’

বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে আরসিবি-র বিরুদ্ধে ম্যাচের পরে প্রথম বার কথা হয় কোহলির সঙ্গে। কী জানতে চেয়েছিলেন? তরুণ ব্যাটসম্যান বলছিলেন, ‘‘বিরাটের সঙ্গে কথা হয়েছে আগের ম্যাচ নিয়ে। চেষ্টা করছিলাম ওর মানসিকতা বোঝার। ম্যাচটা কী ভাবে দেখে ও। সেই নিয়েই কথা হচ্ছিল। রবিবার ইডেনেও দেখা হবে। আমি খুবই উৎসাহী।’’ কিন্তু গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে ইডেন দ্বৈরথে দেখা যাবে কি না রয়েছে প্রশ্ন। কোমরের চোট এখনও সারেনি। কিন্তু দ্রুত মাঠে ফেরার আশ্বাস দিয়েছেন অস্ট্রেলীয় অলরাউন্ডার। অঙ্গকৃষ তা নিয়ে যদিও ভাবছেন না। বিপক্ষে যাঁরাই থাকুক, ম্যাচ জেতাই উদ্দেশ্য উদীয়মান ক্রিকেটারের।

নাইট শিবিরের কণিষ্ঠতম ক্রিকেটার হলেও দলে তাঁর জায়গা বাকিদের মতোই গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম কয়েক দিন সিনিয়র ক্রিকেটারদের সঙ্গে সহজে মিশতে পারতেন না। বেশি কথা বলতেন না। ভয় পেতেন। যে কোনও জুনিয়র ক্রিকেটারের যা হয়। কিন্তু নাইটদের অন্যতম কর্ণধার শাহরুখ খানের সঙ্গে দেখা করার পরে অঙ্গকৃষ উপলব্ধি করেন, দলে তাঁর গুরুত্ব বাকিদের চেয়ে কম নয়। বলছিলেন, ‘‘আমি যে কেকেআর শিবিরের অন্যতম সদস্য সেটা এসআরকে আরও ভাল ভাবে বুঝিয়েছেন। যে কোনও বিষয়ে শাহরুখ স্যরের সঙ্গে কথা বলা যায়। প্রথম দিনই বুঝিয়ে দিয়েছেন, তাঁকে ভয় পাওয়ার দরকার নেই।’’

ইডেনে শেষ ম্যাচে জস বাটলারের তাণ্ডবের সময় তিনি মাঠেই ছিলেন। চোখের সামনে থেকে দেখলেন, একা কুম্ভ ইনিংস কী ভাবে ম্যাচ পাল্টে দিতে পারে। কখন বুঝলেন ম্যাচটা তাঁদের হাত থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে? অঙ্গকৃষ বলেন, ‘‘বাটলার ক্রিজ়ে থাকা পর্যন্ত জানতাম, এই ম্যাচ সহজে জিতছি না। কিন্তু কেউ হাল ছাড়েনি। শেষ পর্যন্ত লড়াই করেছি বলেই না শেষ বল পর্যন্ত ম্যাচ গড়িয়েছে।’’

অঙ্গকৃষের সামনের পথ মসৃণ কি না তা বোঝা যাবে আইপিএল শেষ হলেই। ধারাবাহিক ভাবে ভাল খেললে ভবিষ্যতে তাঁকে দেশের জার্সিতেও দেখা যেতে পারে। অঙ্গকৃষ যদিও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট নিয়ে এখনই ভাবছেন না। বলছিলেন, ‘‘আমি ক্রিকেট খেলতে চাই। দেশের হয়ে খেলছি কি না সেটা বড় কথা নয়। আমি ভাল ক্রিকেটার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে চাই।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

IPL 2024 KKR Cricket

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy