সোধি ও উইলিয়ামসন: সিরিজে ভারতের দুই কাঁটা।
ভারত বনাম নিউজিল্যান্ড টেস্ট সিরিজ শুরু হতে আর দিন পনেরোও বাকি নেই। কিন্তু কেন জানি না, সিরিজটা নিয়ে অদ্ভুত একটা চিন্তা মনের মধ্যে ক্রমাগত ঘুরপাক খাচ্ছে।
নিউজিল্যান্ড দিয়ে নয়। বরং দেশের মাটিতে বিরাট কোহালিদের তেরো টেস্টের সফর ইংল্যান্ড বা অস্ট্রেলিয়া দিয়ে শুরু হলে বোধহয় ভাল হত!
কেউ কেউ বাড়াবাড়ি বলবেন জানি। বলবেন, কোথায় অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড আর কোথায় নিউজিল্যান্ড। একটা পাল্টা যুক্তি দিচ্ছি। অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং লাইন আমরা গড়গড়িয়ে বলতে পারব। ইংল্যান্ডের টিমও বলে দিতে পারব মোটামুটি। বলে দিতে পারব, ভারতকে দেশের মাটিতে এই দু’টো টিমের কারা কারা ভোগাতে পারে। কিন্তু নিউজিল্যান্ড নিয়ে বলা যাবে তো কোন স্পিনার ভারতের পক্ষে চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠবে বা কাকে আউট করা সবচেয়ে কঠিন হবে?
পারব না। আর ঠিক এটাই নিউজিল্যান্ডের সুবিধে। ভারতের অসুবিধে।
১৯৭৯-র পর দেশের মাটিতে আবার টানা তেরোটা টেস্ট খেলছে ভারত। এত লম্বা টেস্ট সফরের শুরুটা ভাল হওয়া জরুরি। নিউজিল্যান্ডকে হারানো যাবে না, বলছি না। বলছি, নিউজিল্যান্ড মানে রিস্ক ফ্যাক্টর বাড়ল।
নিউজিল্যান্ডের সবচেয়ে বড় অ্যাডভান্টেজ হল ওরা আন্ডারডগ। কোথাও কোনও দিন ফেভারিট হিসেবে আসেনি। কিন্তু ঠিক ভাল করেছে। বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল পর্যন্ত ওরা মোটামুটি ধারাবাহিক ভাবে যায়। বাইরে সিরিজ খেলতে গেলে ধ্বংস হয়ে ফেরে না। তা ছাড়া এ বার ভারত সফরে যে টিমটা আসছে, তারা উপমহাদেশের জন্য যথেষ্ট ভাল।
প্রথমেই বলি ওদের স্পিন-আক্রমণের কথা। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের প্রথম ম্যাচটা মনে আছে? নাগপুরের ঘূর্ণিতে ফেলে নিউজিল্যান্ডকে ওড়াতে গিয়ে ভারতই উড়ে গিয়েছিল। সে দিন ইশ সোধি আর মিচেল স্যান্টনার নামের ওদের দু’জন স্পিনার শেষ করে দিয়েছিল ভারতকে। এ বার কিন্তু ওরা দু’জনেই আসছে। মার্ক ক্রেগ নামের এক অফস্পিনারকেও আনছে ওরা। যত দূর শুনেছি, বেশ ভাল।
টার্নারের উপযুক্ত ব্যাটিং— আছে। বিশ্বের শ্রেষ্ঠ স্পিন খেলিয়ে ব্যাটসম্যানদের একজন কেন উইলিয়ামসন। নিউজিল্যান্ড ক্যাপ্টেন স্পিনটা অসম্ভব ভাল খেলে। রস টেলর, মার্টিন গাপ্টিল, ওয়াটলিং—এরাও স্পিনের বিরুদ্ধে যথেষ্ট ভাল। নিউজিল্যান্ডের পেস আক্রমণের কথা বলিনি এখনও। ওদের দু’রকমের পেসারই আছে। গতি চাইলে ট্রেন্ট বোল্ট, নিল ওয়াঘনার। বৈচিত্র চাইলে টিম সাউদি। আর এই তিন জনই রিভার্স সুইংটা দারুণ করায়। আর একটা ব্যাপার। সাম্প্রতিকে দেখেছি, ভারতীয়রা যত স্বচ্ছন্দে ডান হাতি পেসারদের খেলে, বাঁ হাতিদের ততটা নয়। বোল্ট আর ওয়াঘনার—দু’জনেই কিন্তু বাঁ হাতি।
তা হলে কি বিরাটরা পারবে না?
ভাবাটা মূর্খামি হবে। বিরাট কোহালির টিম যত দিন যাচ্ছে, তত যেন দুর্দান্ত হয়ে উঠছে। একমাত্র ওপেনিং সমস্যাটা বাদ দিলে বিরাটের টিমে বলতে গেলে কোনও সমস্যা নেই। লোয়ার অর্ডার নিয়ে এত দিন একটা খচখচানি ছিল। এখন ঋদ্ধিমান বড় রান করছে। অশ্বিন করছে। তার উপর ঘরের মাঠের উইকেট। সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে খেলা বলে মারাত্মক টার্নার হবে না হয়তো, কিন্তু ঘুরবে ঠিকই। অশ্বিন-মিশ্রকে সামলানো অত সহজ হবে না। নিউজিল্যান্ডকে অন্যান্যদের তুলনায় আননোন ফ্যাক্টর বলছিলাম। ঠিকই বলেছি। কিন্তু এটাও ঘটনা যে, আজকের যুগে অতটাও অচেনা কেউ থাকে না। ভিডিও দেখে-টেখে একটা বেসিক ধারণা পাওয়া যায়। আর ভারত সেটা ইতিমধ্যে করছেও। নাম বলছি না। দলীপে ভারতের এক টেস্ট প্লেয়ারের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। তখনই শুনলাম যে, নিউজিল্যান্ডকে ওরা মনে মনে খেলতে শুরু করে দিয়েছে।
তাই বললাম যে, ভারত পারবে না এটা ভাবছি না আমি। নিউজিল্যান্ড নিয়ে অত কথা একটা কারণেই বললাম। দেশের মাটিতে শেষ টেস্ট সিরিজ খেলেছি আমরা দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে। উড়িয়ে দিয়েছিলাম ওদের। কারণ একমাত্র এবি ডে’ভিলিয়ার্স ছাড়া ওই টিমের একজনও ছিল না যে ভাল স্পিন বোলিং খেলার ক্ষমতা রাখে। কিন্তু এই নিউজিল্যান্ড টিম রাখে। একজন নয়, তিন-চার জন রাখে।
ভারত টেস্ট সিরিজটা জিতবে হয়তো শেষ পর্যন্ত। কিন্তু ওই কেকওয়াকের মাস্তানিটা মনে হচ্ছে, এই সিরিজে হবে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy