গোল করে এডারের লাফ। -রয়টার্স
ইতালি-১ : সুইডেন-০
(এডার)
গোটা ইউরোপে ফ্রাইডে দ্য থার্টিন্থ অশুভ দিন। অথচ ইতালিতে ১৩ আবার পয়া সংখ্যা। পাওলো রোসির দেশের যত ভয়টয় ১৭-কে। আর ক্যালেন্ডারে ফ্রাইডে দ্য সেভেন্টিন্থ হলে তো আর কথাই নেই। যত্ত রাজ্যের অশুভ আশঙ্কা তখন নাকি ভর করে ইতালিয়ানদের মাথায়।
সুইডেন আর জ্লাটান ইব্রাহিমোভিচের বিরুদ্ধে ইতালির ম্যাচটাও যে ফ্রাইডে দ্য সেভেন্টিন্থে! সেই ইব্রা! যাকে গোটা বিশ্বফুটবল তার অদ্ভুত সব গোলের জন্য এখন ফুটবলের জাদুকর বলে ডাকছে। শুক্রবার সকালেই খবরের কাগজে পড়ছিলাম ইতালির কোন একটা কাগজে এই ম্যাচের প্রিভিউয়ের হেডিং হয়েছে— ইব্রা, আবার তুমি!
আন্তর্জাতিক ফুটবলে অ্যাক্রোব্যাটিক স্টাইলে শরীরকে যত রকম ভাবে বাঁকিয়ে-চুরিয়ে গোল করা যায়, তা প্রায় ম্যাজিশিয়ানের মতো গত কয়েক বছর করে দেখাচ্ছে ইব্রা। আর ইতালিয়ান লিগে অনেক বছর ইব্রা খেলায় বুফনরা তো ভাল জানে ইব্রা-ম্যাজিক কী জিনিস। এটাও জানবে গোটা ম্যাচ ম্যাড়মেড়ে থেকেও হঠাৎ শেষ মুহূর্তে চোখধাঁধানো গোল করে জেতাতে ওস্তাদ এই সুইডিশ ফরোয়ার্ড।
কিন্তু ফুটবল খেলাটার মজা হল এর ভাল-মন্দ, জয়-পরাজয় সবই নির্ধারিত হয় মাঠে। অশুভ সংখ্যা, বার, তারিখের মতোই একজন ‘ম্যাজিশিয়ান’ ফুটবলারও তা ঠিক করতে পারে না। শুক্রবার ইউরোতেও তা করতে পারল না। কোচ কন্তের তুখোড় ট্যাকটিক্সে দ্বিতীয় ম্যাচেও জিতে গ্রুপ অব ডেথ থেকে প্রি-কোয়ার্টারে জায়গা করে নিল ইতালি।
ম্যাচটার প্রথম পঁয়তাল্লিশ মিনিট যদি ইব্রার সুইডেনের হয়, তা হলে হাফটাইমের পরে পুরোটাই ইতালির। ইতালিয়ান ফুটবলের মূল দর্শন এত দিন ছিল— ডিফেন্স করতে করতে কাউন্টার অ্যাটাকে বিপক্ষকে ছিঁড়ে ফেলো। কিন্তু এ বার ইউরোর প্রথম ম্যাচ থেকে একদম অন্য ইতালিকে দেখছি যেন। এই ইতালি কাউন্টার ফুটবলের বদলে বরং অনেক বেশি জোর দিচ্ছে ওপেন অ্যাটাকে। যেটা ওরা এ দিন গোটা দ্বিতীয়ার্ধ জুড়ে করে গেল। ম্যাচে এটাই কন্তের মাস্টারস্ট্রোক। আর তারই নিটফল, কিয়েলিনির থ্রো থেকে বল ধরে সুইড ডিফেন্স চিরে এডারের চমৎকার গোল।
ইউরোয় এ বার যত টিমকে দেখলাম, তাতে ইতালি কাপ জয়ের অন্যতম দাবিদার। ওরাই একমাত্র টিম যারা তিন ব্যাক নিয়ে খেলছে। এ দিনও কন্তে টিম সাজিয়েছিল ৩-৫-২। ইব্রাদের গোটা ম্যাচ চাপে রাখল এই ছক। প্রথমার্ধে যখন উইং ধরে সুইডেন আক্রমণে আসছিল, তখন ইতালির পাঁচ জন মিডফিল্ডার বারবার ট্র্যাফিক জ্যাম করে দিচ্ছিল মাঝমাঠে। ফলে ওদের ডিফেন্স কখনওই সে ভাবে ভাঙতে পারেনি সুইডেন।
প্রথমার্ধে এ ভাবে কাটিয়ে দ্বিতীয়ার্ধ শুরু হতেই কন্তে চলে গেল ৩-৩-৪ ছকে। ফরোয়ার্ডে এডারদের সঙ্গে আক্রমণে উঠে আসছিল কান্দ্রেভা আর ফ্লোরে়ঞ্জি। ওদের সঙ্গে যোগ দিচ্ছিল পারোলো-ও। আর সুইডেন ডিফেন্স থেকে সেকেন্ড বলটা বেরিয়ে এলে তা ধরে পাল্টা আক্রমণ শানানোর জন্য বিপক্ষ বক্সে বারবার ঠিক পৌঁছে যাচ্ছিল ডি’রোসি। ফলে সুইডেনের ব্যাক ফোর গোটা সেকেন্ড হাফ জু়ড়ে বিপক্ষের ছ’জনের মোকাবিলা করতে করতে হাঁফিয়ে উঠছিল। আর ক্রমাগত চাপের মুখে পড়ে একটা সময় ভুলও করল। সেখান থেকেই জয়ের গোল।
ম্যাচ শেষে হতাশ ইব্রার মুখটা দেখছিলাম টিভিতে। মনে হচ্ছিল জাদুদণ্ডটাই ও হারিয়ে ফেলেছে। ইতালি ডিফেন্সে ওকে দাঁত ফোটাতে দেয়নি কিয়েলিনি-বোনুচ্চিরা। এ দিন ড্র করে ইউরোয় টিকে থাকাই এখন ম্যাজিশিয়ান ইব্রার সুইডেনের কাছে বেশ কঠিন হয়ে গেল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy