অবশেষে জোসে মোরিনহোকে নিয়ে ধৈর্যচ্যুতি ঘটল ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের। মঙ্গলবার ক্লাবের পক্ষ থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ম্যানেজারের পদ থেকে বরখাস্ত করা হল জোসেকে। ক্লাবের শেষ ২৮ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ শুরুর পরিণতি এই ছাঁটাইয়ের ঘটনা। ম্যান ইউ এই মরসুমে মোরিনহোর কথাতেই ১১ জন ফুটবলারকে নিতে প্রায় ৩ হাজার ৫৭৭ কোটি টাকা খরচ করেছে। ঘনিষ্ঠ সূত্রের দাবি, ক্লাব মনে করছে পুরো বিনিয়োগই জলে গিয়েছে। সেই সঙ্গে মনে করা হচ্ছে, জুনিয়রদের তুলে আনতেও তিনি ব্যর্থ। পল পোগবা-সহ বেশ কয়েক জন তারকার সঙ্গেও তাঁর সম্পর্ক বেশ খারাপ হয়ে ওঠে। মোরিনহোর উপর মারাত্মক বিরক্ত ক্লাবের সভ্য-সমর্থকেরাও। এ সবই এই বরখাস্তের ঘটনা নিশ্চিত করেছে।
মোরিনহো বরখাস্ত হওয়ার পরপরই পল পোগবার টুইট নিয়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। ফরাসি তারকা নিজের যে ছবি পোস্ট করেন সেখানে দেখা যাচ্ছে তিনি আড়াআড়ি ভ্রু কুঁচকে ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে আছেন। ছবির তলায় আবার তাঁর ‘ফলোয়ারদের’ উদ্দেশে লিখেছেন, ‘‘ছবির ক্যাপশন করো।’’ তাতে অত্যন্ত বিরক্ত হন ম্যান ইউয়ের বেশ ক’জন প্রাক্তন তারকা। গ্যারি নেভিল লিখে দেন, ‘‘তুমি নিজেই কাজটা করো না।’’ এক ধাপ এগিয়ে জেমি ক্যারাঘার লেখেন, ‘‘ইউরোপে অনেক ক্লাব কিন্তু তোমাকে ছাড়াই ভাল খেলে যাচ্ছে।’’ ম্যান ইউয়ের প্রাক্তন ডিফেন্ডার প্যাট্রিক এভ্রা আবার এই ধরনের টুইটকে চূড়ান্ত রুচিহীন একটা ব্যাপার বলে মন্তব্য করেছেন। পোগবা অবশ্য নিজের ভুল বুঝতে পেরে দ্রুত টুইটটি সরিয়ে দেন। প্রসঙ্গত, ফরাসি তারকার সঙ্গে পর্তুগিজ ম্যানেজারের দ্বন্দ্ব বারবার প্রকাশ্যে এসেছে। মোরিনহো তাঁকে বিরক্ত হয়ে ‘ভাইরাস’ পর্যন্ত বলেছিলেন। তার আগে তাঁর কাছে থেকে নেতৃত্বও কেড়ে নেন।
আপাতত নতুন ম্যানেজার নিয়োগ করছে না ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড। যাঁকে দায়িত্ব দেওয়া হবে তিনি অন্তর্বর্তীকালীন ম্যানেজার হিসেবে কাজ করবেন। তবে অস্থায়ী ম্যানেজার হিসেবে কে আসছেন তাও জানায়নি ক্লাব। যত দিন না জানানো হচ্ছে, তত দিন ম্যান ইউয়ের প্রশিক্ষণ তত্ত্বাবধান করবেন মাইকেল ক্যারিক। তবে ক্যারিক বা নিক বাটের মতো কেউ বাকি মরসুমে কাজ চালানোর দায়িত্ব পাবেন না বলেই খবর ব্রিটিশ প্রচারমাধ্যমগুলিতে। এখন দেখার, নতুন কেউ দায়িত্ব নিলে ইপিএলে ক্লাবের অবস্থানে উন্নতি হয় কি না।
পরের মরসুমে হলেও স্থায়ী ম্যানেজার হিসেবে নতুন কে দায়িত্ব নেবেন তা নিয়েও জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে। শোনা যাচ্ছে অনেকের নামই। যেমন ওলে গানার সোলসায়ের, জ়িনেদিন জ়িদান, মাউরিসিয়ো পচেত্তিনো, লরা ব্লাঁ, আন্তোনিয়ো কন্তে, দিদিয়ে দেশঁ, আর্সেন ওয়েঙ্গারদের কথা। একটি ব্রিটিশ প্রচারমাধ্যম দাবি করেছে, দৌড়ে এগিয়ে নাকি সোলসায়ের। তার পরেই আছেন ব্লাঁ ও জ়িদান। এমনও শোনা যাচ্ছে যে, অস্থায়ী ম্যানেজারকেই পরের মরসুমেও রেখে দেওয়া হবে। মোরিনহোকে বরখাস্ত করার বিবৃতিতে ক্লাব পরিষ্কার বলেছে যে, ম্যান ইউ বিখ্যাত তাদের আক্রমণাত্মক ফুটবলরের জন্য। আশা প্রকাশ করা হয়েছে, নতুন ম্যানেজার ক্লাবের ঐতিহ্য উপলব্ধি করবেন, যার মধ্যে রয়েছে চিরাচরিত আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলার ব্যাপারটাও।
মোরিনহোর কোচিং জীবনে বরখাস্তের ঘটনা এটাই প্রথম নয়। ২০০০ সালে তাঁকে বরখাস্ত করে বেনফিকা। ২০০৭ সালে চেলসিতে তাঁর ম্যানেজারের চাকরি যায় প্রথম বার। আবার তিনি এই একই ক্লাবে বরখাস্ত হন ২০১৫ সালে। তার পরে মঙ্গলবার সকালে তাঁর চাকরি গেল ম্যান ইউয়েও। গ্যারি লিনেকারের মতো লোক টুইট করে লিখলেন, ‘‘ম্যান ইউ যা খেলছিল তাতে এটা অবশ্যম্ভাবী ছিল। ইপিএলে এই মরসুমে এখন পর্যন্ত ম্যান ইউর পয়েন্ট ১৭ ম্যাচে ২৬। তারা রয়েছে ছ’নম্বরে। শীর্ষে থাকা লিভারপুলের থেকে তারা ১৯ পয়েন্ট পিছনে। ম্যান সিটির থেকে পিছিয়ে ১৮ পয়েন্টে। তার উপর লিভারপুলের কাছে শেষ ম্যাচে ১-৩ হারটাও মোরিনহোর বিদায় নিশ্চিত করে। যার পরে ক্লাবের প্রাক্তন অধিনায়ক নেভিল বলে ফেলেন, ‘‘ক্লাবটার গোড়া থেকে পচন ধরেছে।’’ সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং ওয়েবসাইটেও মোরিনহোর বরখাস্তের ঘটনা নিয়ে প্রচুর হইচই হচ্ছে। অনেকেই আফসোস করে লিখেছেন, ‘‘স্যর অ্যালেক্স ফার্গুসন বিদায় নেওয়ার পরে ক্লাবে যে শূন্যস্থান সৃষ্টি হয়েছিল তা আজও ভরাট হল না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy