চলতি বছর উত্তরাখণ্ডে ৩৮তম জাতীয় গেমসে একের পর এক পদক আনছেন বাংলার ক্রীড়াবিদরা। তিরন্দাজির রিকার্ভ ৭০ মিটার ইভেন্টে সোনা জিতে বাংলার নাম আরও উজ্জ্বল করেছেন মালদহের ১৯ বছরের জুয়েল সরকার।
ছোটবেলায় বিদ্যালয়ের শিক্ষকের পরামর্শে হাতে তির-ধনুক তুলে না নিলে হয়তো বাংলা তাঁর মতো রত্নকে পেত না। ঝাড়গ্রামে রাজ্য সরকারের বেঙ্গল আর্চারি অ্যাকাডেমিতে অ্যাডভাইসর হিসেবে কাজ করার সময় অলিম্পিয়ান রাহুল বন্দ্যোপাধ্যায়ের নজরে আসেন জুয়েল। প্রথম দিন দেখেই তিনি বুঝেছিলেন এই ছেলে কিন্তু ভবিষ্যতের ‘জুয়েল’ হতে চলেছে।
শুধু ঝাড়গ্রামেই নয়, কলকাতায় রাহুলের ব্যক্তিগত অ্যাকাডেমিতে প্রশিক্ষণে নিজেকে আরও পরিণত করে তুলেছেন জুয়েল। আনন্দবাজারকে ফোনে রাহুল বলছিলেন, “প্রথম দিনেই আমি ওর মধ্যে সম্ভাবনা দেখেছিলাম। শুরুতে প্রতিযোগিতার একেবারে চূড়ান্ত মুহূর্ত পর্যন্ত চাপ নিতে পারত না। আমার পরামর্শ মতো বেশ কয়েকটি ট্রেনিং করে আস্তে আস্তে সেই সমস্যা কাটিয়ে উঠেছে।”
শুধু তাই নয়, জুয়েলকে হাতে ধরে টেকনিকেও নানা সংশোধন করে দিয়েছেন রাহুল। তাতেই বাজিমাত বাংলার ছেলের। রাহুলের কথায়, “জুয়েলের ‘শুটিং ফর্ম’-এ কয়েকটি জায়গায় সমস্যা ছিল। ডান হাতে তির ছোঁড়ার সময় ছোটখাটো ভুলের জন্য লক্ষ্যভেদ হচ্ছিল না। তবে এতে শুধু আমার কৃতিত্ব নয়, প্রথম দিন থেকেই আমার প্রত্যেকটি পরামর্শ গুরুবাক্যের মতো মেনে চলেছে। তাই সোনা জয় সম্পূর্ণ ওর কৃতিত্ব।”
ঝাড়গ্রামের অ্যাকাডেমিতে অনুশীলন করেন দীপিকা কুমারী। তিনিও রাহুলেরই ছাত্রী। তিনি নিজেও উত্তরাখণ্ডে হাজির ছিলেন। দুই শিক্ষার্থীর সাফল্যে উচ্ছ্বসিত রাহুল বললেন, “দারুণ লাগছে। মনে হচ্ছে, আমিও যেন সোনা জিতেছি।”
মালদহের গাজোলের কৃষক পরিবারের সন্তান জুয়েল। ২০১৮ সালে মাত্র ১২ বছর বয়সে ঝাড়খণ্ডের অ্যাকাডেমিতে আসেন তিনি। তাঁকে ফোনে ধরতে অ্যাকাডেমির শিক্ষকদের পাশাপাশি রাহুলকেও কৃতিত্ব দিতে ভুললেন না জুয়েল। তাঁর কথায়, “রাহুল স্যর না থাকলে আমি এত কিছু শিখতে পারতাম না। প্রথম দিন থেকে আমায় সমর্থন করেছেন। আমি শুধু ওঁর পরামর্শ মেনে চলেছি। মনঃসংযোগ বাড়াতেও স্যরের পরামর্শ বিশেষ ভাবে কাজে এসেছে।”
সোনা জয়ের কথা কি ভেবেছিলেন? জুয়েল বললেন, “এক বারের জন্যও ভাবিনি। পদক পাব জানতাম। কিন্তু সোনার কথা এক বারের জন্যও মাথাতে আসেনি। আগের বার জাতীয় গেমসে থেকেই খালি হাতে ফিরেছিলাম। প্রথম থেকেই তাই পদক প্রাপ্তিকে পাখির চোখ করে এগিয়েছিলাম।”
পরবর্তী লক্ষ্য কী? বললেন, “জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে পদক পেতে চাই। দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করার স্বপ্ন ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি। আশা করি সেই লক্ষ্যেও সফল হব।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)