Advertisement
১৬ মে ২০২৪

চেহারার মতো খেলাতেও এখন দৈত্য কার্লোভিচ

জকোভিচ, নাদাল, সেরিনা, রাওনিক, প্লিসকোভা— টেনিসের বড় নামেরা বৃহস্পতিবার অস্ট্রেলীয় ওপেনে দ্বিতীয় রাউন্ডে নামার আগে সবাই বুধবার মেলবোর্ন পার্কে স্বভাবতই যে যাঁর মতো ট্রেনিং করবেন, বল হিট করবেন। কেউ বেশি, কেউ কম।

লকার রুমে কোচিং টিমের সঙ্গে কার্লোভিচ। ছবি: টুইটার

লকার রুমে কোচিং টিমের সঙ্গে কার্লোভিচ। ছবি: টুইটার

মেলবোর্ন শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:৩০
Share: Save:

জকোভিচ, নাদাল, সেরিনা, রাওনিক, প্লিসকোভা— টেনিসের বড় নামেরা বৃহস্পতিবার অস্ট্রেলীয় ওপেনে দ্বিতীয় রাউন্ডে নামার আগে সবাই বুধবার মেলবোর্ন পার্কে স্বভাবতই যে যাঁর মতো ট্রেনিং করবেন, বল হিট করবেন। কেউ বেশি, কেউ কম। একজনই শুধু বলে দিয়েছেন, ‘‘কাল আমার পুরো অফ। একটাও বল হিট করব না। তার বদলে আইস বাথ নেব। ভাল খাব। তাড়াতাড়ি ঘুমোতে যাব। তার পরেও জানি না, পরের ম্যাচে কতটা তাজা থাকব!’’ তারকা বাছাইদের মতো তিনিও মঙ্গলবার সবে প্রথম রাউন্ড টপকেছেন। তাতেই এমন সিদ্ধান্ত। এ রকম ধারণা!

কিন্তু জকোভিচ-নাদাল-সেরিনার চেয়ে ইভো কার্লোভিচের এ দিনের জয়টা একটু অন্য ধরনের। মেলবোর্ন পার্ক এরিনার এক কোণে পড়ে থাকা একটা সাধারণ কোর্ট (১৯ নম্বর) আর সেখানে এ দিন সূচিতে থাকা একটা গড়পরতা ম্যাচ, দু’টোকেই শুধু অসাধারণ নয়, চিরস্মরণীয়ও করে রাখলেন ছয় ফুট এগারো ইঞ্চি, ১০৪ কেজির ক্রোট টেনিস-দৈত্য। কেবল চেহারাতেই নয়, টেনিস খেলাটাতেও ২০১৭-র ১৭ জানুয়ারি থেকে যেন দৈত্য হয়ে থাকলেন কার্লোভিচ। যিনি আট বছর আগে এক বারই উইম্বলডনে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠা ছাড়া অন্য তিনটে গ্র্যান্ড স্ল্যামে কোনও দিন চতুর্থ রাউন্ড টপকাননি।

পরের মাসেই আটত্রিশে পা দিতে চলা বিশ্বের ২১ নম্বর প্লেয়ার দু’সেট পিছিয়ে পড়েও পাঁচ ঘণ্টা চোদ্দো মিনিট লড়াইয়ের পর বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ে ৬৮ নম্বর আর্জেন্তিনীয় হোরাসিও হেবালসকে ৬-৭ (৬-৮), ৩-৬, ৭-৫, ৬-২, ২২-২০ হারানোর পথে তিন-তিনটে রেকর্ড করে ফেললেন। অস্ট্রেলীয় ওপেনের ইতিহাসে দীর্ঘতম পঞ্চম সেট খেলার (৪২ গেম)। এই টুর্নামেন্টে একটা ম্যাচে কোনও প্লেয়ারের সর্বাধিক ‘এস’ সার্ভ করার (৭৫টা)। গেমের বিচারে অস্ট্রেলীয় ওপেনের দীর্ঘতম ম্যাচের (৮৪ গেম)।

টেনিসের ইতিহাসে কার্লোভিচের আজকের ‘এস’ সার্ভের সংখ্যা থাকছে চতুর্থ স্থানে। শুধু দু’ঘণ্টা সাঁইত্রিশ মিনিটের পঞ্চম সেটেই তিনি মেরেছেন ৩৮টা ‘এস’। তবে যাঁর পেশাদার টেনিস জীবনে মোট ‘এস’ সার্ভের সংখ্যা ১১৬৮৯, টেনিসের সর্বকালীন দশটা সর্বোচ্চ ‘এস’ সার্ভ হওয়া ম্যাচের মধ্যে ছ’টায় যাঁর নাম, সেই কার্লোভিচের থেকেই বোধহয় এমন কাণ্ড দেখতে পাওয়াটা মানায়। গোটা ম্যাচে তিনি মাত্র একটা সার্ভিস গেম হারেন এ দিন। প্রথম সার্ভে পয়েন্ট জেতার সাফল্য ৯১ শতাংশ। কার্লোভিচের প্রতিদ্বন্দ্বীও এ দিন কোনও অংশে কম যাননি। যে কারণে লড়াইটা আরও বেশি মহাকাব্যিক হয়ে উঠেছিল। একত্রিশের হেবালসের উচ্চতাও ছয় ফুটের উপর। ছয়-দুই। তিনিও গোটা তিরিশেক ‘এস’ মারেন ম্যাচে। পঞ্চম সেটে ৪১তম গেম পর্যন্ত দুই প্রতিদ্বন্দ্বীই একে অন্যের সার্ভিস এক বারের বেশি ভাঙতে পারেননি। শেষমেশ ৪২ নম্বর গেমে হেবালস নিজের সার্ভে ১৫-৪০ পিছিয়ে পড়লে দর্শকে টইটম্বুর গ্যালারি ধরে নেয়, এই গেমেই ম্যারাথন ম্যাচ শেষ হতে যাচ্ছে। হেবালস একটা ম্যাচ পয়েন্ট বাঁচালেও পরেরটা আর পারেননি। যার পরেও কার্লোভিচের মন্তব্য, ‘‘পঞ্চম সেটে আমার সেই উইম্বলডনে ইসনার-মাহুর এগারো ঘণ্টার ম্যাচের কথা মনে পড়ছিল। ইচ্ছে করছিল আমাদের ম্যাচটাও আরও বেশি সময় চলুক। যাতে ওই রেকর্ডটা ভাঙতে পারি।’’

ম্যাচটা বিকেলে শুরু হওয়ার সময় মেলবোর্নের আকাশে চড়চড়ে রোদ থাকলেও খেলা যখন শেষ হয় তখন গভীর রাত। কিন্তু গোড়ার দিকের ফাঁকা গ্যালারি অত রাতেও ভর্তি হয়ে উঠেছিল। উচ্ছ্বসিত কার্লোভিচ কোর্টে টিভি সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘দর্শকরাই তো আমাকে স্ট্যামিনা জুগিয়েছেন। ম্যারাথন পঞ্চম সেটের খবর ছড়াতে অন্য সব কোর্ট থেকে দর্শকেরা এই ম্যাচ দেখতে চলে আসেন। তাঁদের মধ্যে প্রচুর ক্রোট আর আর্জেন্তিনিয়ান যেমন ছিলেন, তেমনই অন্য দেশের লোকেরাও। এ রকম ম্যাচই লোকে মনে রাখেন। আমি যদি সহজে জিততাম বা হারতাম দর্শকদের মতো নিজেও ক’দিন বাদে ভুলে যেতাম ম্যাচটা। মানসিক ভাবেও এই লড়াইটা আমার কাছ স্পেশ্যাল। কারণ আমি ০-২ থেকে ৩-২ সেটে জিতেছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Australian Open Karlovic five-set marathon Tennis
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE