Advertisement
E-Paper

‘স্নো লেপার্ড’দের হাত ধরে স্বপ্ন দেখছে কাশ্মীর

মাঠ বরফের পুরু আস্তরণে ঢেকে থাকার জেরে ভেস্তে গিয়েছে রবিবারের গুরুত্বপূর্ণ আই লিগের ম্যাচ। সেই টিআরসি স্টেডিয়ামেই শনিবার বিকেলে একেবারে অন্য ছবি।

রতন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:৩৯
আচ্ছাদন: বরফের চাদরে এখনও ঢাকা পড়ে রয়েছে রিয়াল কাশ্মীরের মাঠ। নিজস্ব চিত্র

আচ্ছাদন: বরফের চাদরে এখনও ঢাকা পড়ে রয়েছে রিয়াল কাশ্মীরের মাঠ। নিজস্ব চিত্র

মাঠ বরফের পুরু আস্তরণে ঢেকে থাকার জেরে ভেস্তে গিয়েছে রবিবারের গুরুত্বপূর্ণ আই লিগের ম্যাচ। সেই টিআরসি স্টেডিয়ামেই শনিবার বিকেলে একেবারে অন্য ছবি।

কৃত্রিম ঘাসের যে অংশে বরফ গলে, সেখানেই নেমে পড়েছে একদল ছেলে। এরা শ্রীনগর স্পোর্টস অ্যাকাডেমির বয়সভিত্তিক তিনটি দলের ফুটবলার। বড় স্টাডের বুট পরে বরফের উপর বল চলে গেলেও দৌড়ে গিয়ে সেখান থেকেই তা নিয়ে চলে আসছে সতীর্থদের কাছে। কয়েক দিন আগেও এই ফুটবল স্কুলে কোচিং করাতেন প্রাক্তন জাতীয় তারকা মেহরাজউদ্দিন। এখন করান সাজিদার আমেদ। প্রাক্তন ফুটবলার। জনা তিরিশ ছেলে মাঠের বরফ সরে যাওয়া অংশে ফুটবল খেলছে দেখতে হাজির সেনা জওয়ানরাও। এ দিন হরতাল ছিল কাশ্মীর জুড়ে। ফলে আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সেনা হাজির রাস্তায়। তাঁরাই দেখলাম ভিড় জমিয়েছেন স্টেডিয়াম চত্ত্বরে।

সকাল থেকে রোদ উঠেছে ভূস্বর্গে। পাহাড়ের গায়ে লেপটে থাকা সাদা বরফে ঠিকরে পড়ে প্রাকৃতিক শোভা আরও মোহময় করে তুলেছে। স্টেডিয়ামের পিছনেই ডাল লেক। দূরে পাহাড়ের উপর শঙ্করাচার্যের মন্দির তুষারে ঢাকা। এই অঞ্চলে আসা পর্যটকেরাও অনেকেই স্টেডিয়াম দেখতে চলে এসেছেন। উপভোগ করছেন আইস-ফুটবল!

চার বছর আগে প্রবল বন্যায় বিধ্বস্ত হয়েছিল শ্রীনগরের সবচেয়ে বড় স্টেডিয়াম। সেই চল্লিশ হাজারের বক্সি স্টেডিয়াম পুনর্নির্মাণের কাজ চলছে। টিআরসি স্টেডিয়াম ছোট। হাজার পনেরো লোক ধরে। ফলে রিয়াল কাশ্মীর ম্যাচের দিন মাঠে যত লোক থাকে, বাইরে দাঁড়িয়ে থাকে তার দ্বিগুণ। কাশ্মীরের ইস্টবেঙ্গল এবং মোহনবাগান বলা হয় যে দল দুটিকে তাদের একটি রিয়াল কাশ্মীর, অন্যটি লোন স্টার। দু’দলই আই লিগ খেলছে। প্রথম ও দ্বিতীয় ডিভিশনে। দু’দলের খেলা দেখতেই মাঠে উপচে পড়ছে ভিড়। এই দুটি ক্লাবের জন্যই কাশ্মীর ফুটবলের উত্থান ঘটেছে গত কয়েক বছরে।

আর ডেভিড রবার্টসনের দল রিয়াল আই লিগের মূল পর্বে ওঠার পরে ফুটবলপ্রেমীদের উচ্ছ্বাস কলকাতার ময়দানের দুই প্রধানের সমর্থকদের ছুঁয়ে ফেলেছে। এতটাই যে, ‘স্নো লেপার্ড’দের (রিয়াল কাশ্মীরের স্থানীয় নাম ‘সেনি সে’) জার্সি বা জ্যাকেট পরে কোনও ফুটবলার রাস্তায় হাঁটলে তাঁর সঙ্গে নিজস্বী তোলার জন্য হুড়োহুড়ি পরে যায়। শুধু তাই নয়, ব্যানার, ফেস্টুন, স্থানীয় ব্যান্ড, মুখোশ পরে মাঠে আসেন সবাই। যাঁর মধ্যে একটা অংশ আবার মহিলা। ছোট ছেলেদের বা পরিবার নিয়ে আসেন সবাই। বিনা পয়সার টিকিট। ফলে ভোর থেকে লাইন পড়ছে ম্যাচের দু’দিন আগে। তিন ঘণ্টার মধ্যেই সব টিকিট শেষ।

মোহনবাগান ম্যাচে সেনার সাহায্য নিতে হয়েছিল টিকিট না পাওয়া দর্শক সামলাতে। ইস্টবেঙ্গল ম্যাচ হলেও সে রকমই হত বলে জানাচ্ছেন রিয়াল কাশ্মীর ক্লাবের কর্তারা। এখানেই শেষ নয়, কাশ্মীরের রাস্তায় মাঝেমধ্যেই জিজ্ঞাসাবাদ করে সেনারা। রিয়াল কাশ্মীর বা লোন স্টারের জার্সি দেখলে তাদের পিঠ চাপড়ে ছেড়ে দেয়। রিয়ালের অন্যতম মালিক সন্দীপ ছাট্টু বলছিলেন, ‘‘কাশ্মীরে ফুটবল বরাবরই জনপ্রিয়। প্রতিভারও অভাব নেই। কিন্তু সবাই সর্বভারতীয় একটা মঞ্চ চাইছিল। আই লিগ খেলার সুযোগ পেয়ে রিয়াল সেটা করেছে। এখন সবাই রিয়ালের জার্সি পরার জন্য উদগ্রীব। রিয়াল বারো ম্যাচ অপরাজিত থাকায় গগনচুম্বী আগ্রহ তৈরি হয়েছে দল নিয়ে। যা আমরা আশা করিনি।’’

অশান্ত কাশ্মীরকে শান্ত করতে ফুটবল দলের এই উত্থানকে হাতিয়ার করেছে প্রশাসনও। গত তিন বছর ধরে রিয়ালকে দল গড়ার জন্য প্রতি বছর দুই কোটি টাকা দিচ্ছে কাশ্মীর সরকার। এ বার অবশ্য জম্মু-কাশ্মীর ব্যাঙ্ক-কে স্পনসর হিসেবে পেয়েছে আই লিগের খেতাবের লড়াইতে থাকা ক্লাব। এখনকার আর একটা জনপ্রিয় দল লোন স্টার। তাদের আই লিগের দ্বিতীয় ডিভিশনের খেলা দেখতেও উপচে পড়ে ভিড়। রিয়াল এবং লোন— এই দুটি ক্লাবেরই বয়সভিত্তিক তিনটি করে দল আছে। যাঁরা খেলছে যুব আই লিগে। এই স্রোতে গা ভাসিয়ে কাশ্মীর ফুটবল সংস্থাও নেমে পড়েছে ফুটবল-জাগরণ মঞ্চে। ২২টি জেলায় ২৮টি অ্যাকাডেমি খুলেছেন সংস্থার কর্তারা। যাঁর দুটি আবার সীমান্ত এলাকা কার্গিল এবং লাদাখে। ফিফা বিশেষ সাহায্য করছে এ জন্য।

কেএফএ সচিব জামির আহমেদ ঠাকুর হিসাব দিলেন, পনেরো হাজার নথিভুক্ত ফুটবলার রয়েছে সংস্থায়। ৭০০ ক্লাব খেলছে স্থানীয় বিভিন্ন লিগে। বলছিলেন, ‘‘এখানে ফুটবল বরাবরই বাংলা এবং গোয়ার মতো জনপ্রিয় খেলা। মোহনবাগান, মহমেডানকে এনে প্রদর্শনী ম্যাচ খেলিয়েছিলাম। মাঠে জায়গা দিতে পারিনি। সেই দলগুলো এসে রিয়াল কাশ্মীর বা লোন স্টারের সঙ্গে খেলছে, এটা দেখার পর এখানকার ফুটবল মাঠে জোয়ার এসেছে।’’

Football I League 2018-19 Real Kasmir FC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy