Advertisement
E-Paper

অভিশাপের ঐতিহ্য ধরে রেখে প্লে অফ আতঙ্কে নাইটরা

আইপিএলে তো এ রকম হয়েই থাকে! প্রথম বল পড়া থেকে নিশ্ছিদ্র দেখানো টিমকে গ্রুপ পর্বের শেষে এসে দেখতে হয়, প্লে-অফে ওঁত পেতে অনিশ্চয়তা। দেখতে হয়, শেষ চারে থাকতে হলে তাদের শেষ গ্রুপ ম্যাচটা হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘দ্য ফাইনাল’। দেখতে হয়, লিগ টেবলে তাদের নিশ্চিন্ত জায়গাটা ছিনিয়ে নিতে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে দাঁড়িয়ে আছে একদল ক্ষুধার্ত বাঘ। এক পা ফস্কেছ কী তুমি গেলে।

প্রিয়দর্শিনী রক্ষিত

শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০১৫ ০৩:৪৩

আইপিএলে তো এ রকম হয়েই থাকে!

প্রথম বল পড়া থেকে নিশ্ছিদ্র দেখানো টিমকে গ্রুপ পর্বের শেষে এসে দেখতে হয়, প্লে-অফে ওঁত পেতে অনিশ্চয়তা। দেখতে হয়, শেষ চারে থাকতে হলে তাদের শেষ গ্রুপ ম্যাচটা হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘দ্য ফাইনাল’। দেখতে হয়, লিগ টেবলে তাদের নিশ্চিন্ত জায়গাটা ছিনিয়ে নিতে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে দাঁড়িয়ে আছে একদল ক্ষুধার্ত বাঘ। এক পা ফস্কেছ কী তুমি গেলে।


আইপিএলে এ রকম তো হয়েই থাকে!

হারের ডাবল হ্যাটট্রিকের দিকে এগোতে থাকা একটা টিম একেবারে শেষ লগ্নে হুড়মুড়িয়ে চলে আসে প্লে-অফ অঙ্কে। ঝড়ের মতো ওলটপালট করে দেয় দিনের পর দিন সযত্নে তৈরি করা যাবতীয় হিসেব। খড়কুটোর মতো উড়িয়ে দেয় দু’বারের ট্রফিজয়ীর গর্ব।


আইপিএলে তো এ রকম হয়েই থাকে!

জেতার জন্য শেষ দুটো ওভারে চাই ২১। অসম্ভব? নাহ, একেবারেই না। বিশেষ করে টিমের নাম যেখানে কলকাতা নাইট রাইডার্স। আর যেখানে ক্রিজে আছেন ইউসুফ পাঠান নামের এক দীর্ঘদেহী। কিন্তু কোথায় কী? হঠাত্‌ চোক করে যান পাঠান। মালিঙ্গাকে একটা ছক্কা মারেন ঠিকই, কিন্তু শেষ ওভারে জয়ের কাছে পৌঁছেও উইকেটটা দিয়ে আসেন কোনও এক কায়রন পোলার্ডের স্লোয়ারে।


আইপিএলে তো এ রকম হয়েই থাকে!

গোটা ম্যাচে কর্তৃত্ব দেখায় একটা টিম। অন্যটা বেশির ভাগ সময় ধুঁকতে ধুঁকতেও আসল মুহূর্তগুলো নির্ভুল ভাবে পকেটে পুরে নেয়। একটা টিম জেতা ম্যাচ মাঠে ফেলে আসে, আর অন্যটা হারের মুখ থেকে জয় ছিনিয়ে নেয়। হার-জিতের ব্যবধান দাঁড়ায় মাত্র পাঁচ রান।


আইপিএলে তো এ রকম হয়েই থাকে!

গভীর রাতের ওয়াংখেড়েতে দেখা গেল, হার্দিক পাণ্ডিয়া ম্যাচ সেরার পুরস্কার নিতে যাচ্ছেন আর পিছনে-পিছনে হাঁটছে স্টেডিয়ামের হাজার পঞ্চাশের সমুদ্রগর্জন। এই পাণ্ডিয়াকেই দু’দিন আগে এবি ডে’ভিলিয়ার্স কাঁদিয়ে ছেড়েছিলেন না? আবার পীযূষ চাওলা, ইডেনের শেষ যুদ্ধে ঠিক এমন জায়গা থেকেই ছক্কা মেরে ম্যাচ কেকেআরকে জিতিয়ে দিয়েছিলেন। আজও ৩ বলে ৭ ছিল। একটা ওয়াইড হল। ৩ বলে ৬। কিন্তু আজ তিনটের একটাও ব্যাটে লাগল না!


আইপিএলে যেমন হয়েই থাকে!

গৌতম গম্ভীরের কেকেআর এত দিন আইপিএলের নিষ্ঠুর সব নিয়মাবলীকে অগ্রাহ্য করে কলার তুলে এগোচ্ছিল। কুড়ি ওভারে একশো আশি টার্গেট, কেকেআর তুলে দিচ্ছে। প্রথমে ব্যাট করে স্কোরবোর্ডে একশো ষাট? চুয়াল্লিশের চায়নাম্যান এসে বিপক্ষের টুঁটি ছিঁড়ে নিয়ে চলে যাচ্ছেন। বৃহস্পতিবারের ওয়াংখেড়েতে কেকেআর শুধু স্কোরশিটের বিচারে হারল না, এত দিনের অর্জিত ঔদ্ধত্যটা আরব সাগরে তলিয়ে গেল। কুড়ি ওভারে ১৭১ তাড়া করতে হবে, উল্টো দিকে মুম্বইয়ের রোলারকোস্টার সম বোলিং, এই পরিস্থিতিতে প্রগাঢ় মুম্বই-সমর্থক ছাড়া রোহিতদের উপর ক’জনই বা বাজি ধরেছিলেন? ব্যাটিং উইকেট, শুরুতে ওভার পিছু আট-সাড়ে আট উঠছে অনায়াসে, গম্ভীরের ‘সি লিঙ্ক রোডের’ মতো মস়ৃণ ড্রাইভ দেখে মনে পড়ে যাচ্ছে চার বছর আগের বিশ্বকাপ ফাইনালের মোহিনী রাত— কেকেআরকে মারবে কে? কেকেআর বোলিংয়ের শুরুও একই দর্পে। পার্থিব পটেল সবে হাত খোলার আগেই শেষ। একটু পরে সিমন্স ও রায়ডু—পরপর। রোহিত শর্মা? সুনীল নারিনের দুসরাটা জীবনে বোধহয় ভুলতে পারবেন না। মুম্বই ৭৯-৪।

কিন্তু ব্যাটিং-বোলিং, কেকেআরের দু’টোরই শুরুটা যা ভাল হল। শেষ নয়।

বোলিংয়ে খলনায়ক হয়ে থাকল মুম্বই ইনিংসের শেষ চারটে ওভার। যেখানে উমেশ যাদবরা ষাটের কাছাকাছি হার্দিক পাণ্ডিয়াদের ‘উপহার’ দিয়ে গেলেন। বরোদার তরুণ তো মৃতপ্রায় মুম্বইকে জীবিত করে তুললেন ৩১ বলে অপরাজিত ৬১-র দুর্ধর্ষ ইনিংসে। কায়রন পোলার্ডের সঙ্গে ৯২ রানের জুটিতে। ব্যাটিংয়ে সেখানে ডুবে গেল তিনটে কারণে। ভুল। তিন জনের ভুলে।

এক, ইউসুফ পাঠান। শেষ ওভারে বারো দরকার, তিনি একমাত্র সেট ব্যাটসম্যান— ইউসুফ পাঠান সব জানতেন। কিন্তু জেনেও পোলার্ডকে প্রথমেই ওড়াতে গিয়ে নিজে উড়ে গেলেন। ক্রিজে নেমেই আউট হয়ে গেলে কিছু বলার থাকে না। কিন্তু তীরে এসে তরী ডোবালে থাকে। ওটা অমার্জনীয়।

দুই, সূর্যকুমার যাদব। আইপিএল শুরু করেছিলেন অদম্য গতিতে, ডাবল প্রোমোশন দিয়ে। টিমের ভাইস ক্যাপ্টেন হয়ে, ব্যাটিং অর্ডারেও আরও উপরের দিকে এসে। টুর্নামেন্টের শেষ লগ্নে যে দিনগুলোকে মনে হচ্ছে স্বপ্ন। আদৌ কোনও দিন ঘটেছিল কি না, তাই নিয়েই সন্দেহ উঠে পড়ছে! গত আইপিএলে শেষ দিকে এসে কতগুলো ম্যাচ জিতিয়েছেন, নাইট ভক্তদের নিশ্চয়ই মনে আছে। কিন্তু এই সূর্যই কি সেই সূর্য? ৫ বলে ১১ করেই যিনি অস্তাচলে যান? পাঠানের সঙ্গে দরকার ছিল একটা পার্টনারশিপ। সেটা মুম্বইয়ের ছেলে দেবেন না তো ওয়াংখেড়েতে আর কে দেবেন?

তিন, পীযূষ চাওলা। পিঞ্চ হিটার বলে ইদানীং যাঁকে দেখা হচ্ছে নাইট ম্যানেজমেন্টে। কিন্তু আদতে দেখা যাচ্ছে, পীযূষের ব্যাটিং অনেকটা ‘লাগলে তুক, না লাগলে তাক’। সাত সাতটা বল খেলে যদি কেউ ১ রানের বেশি করতে না পারে, তাকে কোন পৃথিবীতে পিঞ্চ হিটার বলা হয়, কেকেআরই জানে।


সবিস্তার জানতে ক্লিক করুন।

নির্যাসে এই। যে কারণে ওয়াংখেড়ে শাহরুখ খানের টিমের জন্য বরাবরের মতো অভিশপ্ত হয়ে থাকল। গৌতম গম্ভীরকে দেখা গেল ক্লিষ্ট গলায় বলছেন, মুম্বইকে চেপে ধরেও একশো সত্তর তুলে দেওয়ার মধ্যে কোনও যুক্তি নেই। বলছেন, কেকেআরের কাছে সহজে আর কোন দিন কী এসেছে?

অবশ্যই প্লে অফের কথা বললেন। দুঃখের হচ্ছে, গম্ভীরের অবশ্য এখন এই হারের ময়নাতদন্ত করতে বসার সময় নেই। কয়েক ঘণ্টা পেরোতে না পেরোতেই সামনে রাজস্থান রয়্যালস। নিয়মরক্ষার হতে পারত যে ম্যাচটা, সেটাই এখন মরণফাঁদ নিয়ে অপেক্ষা করে আছে ওয়াংখেড়ের ঢিল ছোড়া দূরত্বের ব্রেবোর্নে।

সত্যি, আইপিএলে এ রকম তো হয়েই থাকে!

সংক্ষিপ্ত স্কোর

মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ১৭১-৪ (পাণ্ডিয়া ৬১ ন.আ)

নাইট রাইডার্স ১৬৬-৭ (ইউসুফ ৫২, পোলার্ড ১-৬)

abpnewsletters priyadarshini rakshit kkr play off IPL8 kkr lost kkr vs mumbai indian result mumbai indian win
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy