Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
পাঁচ মন্ত্রে মোক্ষলাভ

ধ্বংসের বিশ্বাস নিয়ে নামছে কেকেআর তরুণকে নারিনের আশ্বাস, আমি আছি

অধুনা ক্রিকেট বিশ্বের সবচেয়ে পরাক্রমী টি-টোয়েন্টি ক্লাব টিম। নতুন ‘সিএসকে’। আইপিএল পৃথিবীর অস্ট্রেলিয়া। পুরনো অস্ট্রেলিয়া। কেকেআর আজ থেকে জিতছে না। আইপিএল সেভেন থেকে শুরু হয়েছে। কিন্তু সেই ধারাবাহিকতার ঔদ্ধত্য বাড়তে-বাড়তে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এমন জায়গায় এসে পৌঁছেছে যে, আমজনতা থেকে টিম কর্তা ভিন্ন দুই শ্রেণি হলেও একই ঘোরে তাঁরা আচ্ছন্ন।

রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়
হায়দরাবাদ শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:২৪
Share: Save:

অধুনা ক্রিকেট বিশ্বের সবচেয়ে পরাক্রমী টি-টোয়েন্টি ক্লাব টিম।

নতুন ‘সিএসকে’।

আইপিএল পৃথিবীর অস্ট্রেলিয়া। পুরনো অস্ট্রেলিয়া।

কেকেআর আজ থেকে জিতছে না। আইপিএল সেভেন থেকে শুরু হয়েছে। কিন্তু সেই ধারাবাহিকতার ঔদ্ধত্য বাড়তে-বাড়তে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এমন জায়গায় এসে পৌঁছেছে যে, আমজনতা থেকে টিম কর্তা ভিন্ন দুই শ্রেণি হলেও একই ঘোরে তাঁরা আচ্ছন্ন। যে ঘোরের প্রতিচ্ছবি রাত সাড়ে বারোটার উপ্পলে সমর্থকদের নাচানাচিতে, টুইটার-ফেসবুকে, শহরের অভিজাত টিম হোটেলে কেকেআর ম্যানেজমেন্টের প্রচ্ছন্ন গর্বের অভিব্যক্তিতে। সবার যেন বদ্ধমূল বিশ্বাস হয়ে গিয়েছে যে, টিমটা আর হারতে পারে না। হারলে সেটাই খবর, জয় নয়।

সোমবার সকালে দেখা গেল এক কেকেআর কর্তা একটা ব্যাপারে মোটামুটি নিঃসন্দেহ। মহম্মদ হাফিজদের টিমকে কেকেআর হারানোর পর গুগলে সার্চ দিয়ে আর কোনও টি-টোয়েন্টি ক্লাব টিম তিনি অন্তত পাননি, যারা এগারোটা ম্যাচ টানা জিতেছে। রেকর্ডটা তাঁর কাছে অবিশ্বাস্য নয়, অবিশ্বাস্য যে ফর্ম্যাটে রেকর্ডটা হল। বক্তব্যের সারমর্ম খুব পরিষ্কার টেস্ট ক্রিকেটে একটা ভাল টিম নামলে সত্তর শতাংশ নিশ্চিত থাকা যায় যে তারাই জিতবে। কিন্তু টি-টোয়েন্টিতে সেই দর্শন চলে না। ভাল টিমও সেখানে যে কোনও দিন চূর্ণ হতে পারে। টেস্টের মতো একটা সেশনে খারাপ খেলে পরেরটায় প্রত্যাবর্তন ঘটানোর সময় বা উপায় কোনওটাই টি-টোয়েন্টিতে নেই। কেকেআরের মাহাত্ম্য তাই আলাদা।

বোঝা গেল। কিন্তু এমন মাহাত্ম্য তো এক দিনে তৈরি হয় না। কারণ থাকে। আর উদাহরণ সমেত যা যা কারণের খোঁজ পাওয়া গেল কেকেআর অন্দরমহল থেকে, তা টিমের এগারোয় এগারো-র রেকর্ডের চেয়ে কম আকর্ষণীয় নয়।

মন্ত্র এক) কেকেআর টিম নয়, পরিবার: রবিবার রাতের ঘটনা। প্রথম ওভারটা করতে গিয়ে ভাল রকম নার্ভাস হয়ে পড়েছিলেন কেকেআরের হয়ে অভিষেক ঘটানো চায়নাম্যান কুলদীপ যাদব। শোনা গেল, কুলদীপ চাপে পড়ছেন দেখে ওই সময় তাঁকে ডেকে নেন সুনীল নারিন আর গৌতম গম্ভীর। বলা হয়, খারাপ কিছু হলে তোমাকে ভাবতে হবে না। দায়টা আমাদের। তুমি না পারলে, নারিন উইকেট তুলে নেবে। পীযূষ চাওলা আছে, ও নেবে। শুনে কুলদীপ মুগ্ধ হয়ে যান। তার পর থেকে আর ভাবেনওনি উইকেট পাব কি না। বলটা শুধু স্পটে পড়ছে কি না, সেটা দেখেছেন। বলা হচ্ছে, এটাই কেকেআরের চরিত্র। ঠিক যে কারণে চরমতম দুঃসময়েও ইউসুফ পাঠানের সঙ্গে থেকেছে টিম। তাঁকে ব্রাত্য না করে দিয়ে। কেকেআরে নাকি যা হয়, একসঙ্গে হয়। সেটা ভোরে গল্ফ খেলা হোক (এ দিনও কালিসরা সদলবলে গেলেন) বা ডিনার-পর্ব।

মন্ত্র দুই) যুদ্ধের আগে দীক্ষা: প্রত্যেক ম্যাচেই যেটা নাকি হয়ে থাকে। মাঠে নামার আগে এগারো জনকে বলে দেওয়া হয়, প্রতিপক্ষের জার্সি দেখার দরকার নেই। শুধু বিশ্বাস করতে হবে, মাঠ থেকে ওরা নয়, আমরা জিতে বেরোব। আর বিশ্বাসটা সবাইকে করতে হবে। কেকেআরের এক সাপোর্ট স্টাফ সন্ধেয় বলছিলেন, টিম মিটিংয়ে বড় রান করা নিয়ে নাকি কোনও চাপও দেওয়া হয় না। বলা হয়, বড় রান হলে ভাল। না হলেও ঠিক আছে। কিন্তু দেখতে হবে দরকারের সময় যেন ব্যাট থেকে কুড়ি-পঁচিশ আসে। সেটা দু’তিন জন করে দিতে পারলে একটা বড় রানের অভাব সামলে দেওয়া কঠিন হবে না। তাতে কাজও নাকি হচ্ছে। বলা হচ্ছে, লাহৌরের বিরুদ্ধে কেকেআর ব্যাটিং শেষ দিকে ‘চোক’ করছিল। কিন্তু ওই ‘দরকারে দশ-পনেরো’ করে ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত বার করে নিয়েছেন সূর্যকুমার যাদবরা।

মন্ত্র তিন) নিলাম-নীতি: যার নেপথ্যে সবচেয়ে বড় ভূমিকা কেকেআর সিইও বেঙ্কি মাইসোরের। মহাতারকা নয়, কিন্তু তারকা হওয়ার ভবিষ্যৎ-সম্ভাবনা আছে এমন ক্রিকেটারদের তুলে নেওয়া এখন কাজে দিচ্ছে। কোথাও গিয়ে যেন লা লিগার আটলেটিকো মাদ্রিদ-মডেল। যেখানে ক্যারিশমার উপরে থাকে কার্যকারিতা। চেন্নাই সুপার কিংসের মতো কেকেআর নিউক্লিয়াস একই রকম রাখা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু রায়ান টেন দুশখাতের মতো প্লেয়ারদের আবার নেওয়া হয়েছে যাঁদের নেওয়ার কথা নাকি কোনও ফ্র্যাঞ্চাইজি ভাবতে পারত না। কারণ তিনি কোনও টেস্টখেলিয়ে দেশ থেকে আসেননি। আইপিএলে অ্যাসোসিয়েট দেশের একমাত্র সদস্য। অথচ তুখোড় টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটার হিসেবে তাঁর যে সুনাম আছে, কেকেআর কর্তাদের অভিমতে, সে খবরই বাকি কেউ রাখেনি নিলাম টেবলে বসার আগে।

মন্ত্র চার) শক্তিশালী রিজার্ভ বেঞ্চ: টিম ম্যানেজমেন্টের অধিকাংশের মতে, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ টি-টোয়েন্টিতে যা কেকেআরের সবচেয়ে বড় পাওনা। বলা হচ্ছে, আইপিএলে একটা সেট টিম খেলে গিয়েছিল। কিন্তু চ্যাম্পিয়ন্স লিগের প্রথম ম্যাচে রবিন উথাপ্পা ছিলেন না, যিনি আইপিএলে সবচেয়ে বেশি রান করেছেন। একটা আন্দ্রে রাসেল চেন্নাই ম্যাচ জিতিয়ে দিয়েছেন। লাহৌরের বিরুদ্ধে রবিন ফিরলেন, কিন্তু মণীশ পাণ্ডে জ্বরের জন্য খেলতে পারলেন না। কেকেআর ঠিকই জিতল।

মন্ত্র পাঁচ) আমি সাকিব আল হাসান, ঢাকা থেকে বলছি: “আমার মনে হয়, এ ভাবে টানা জয়ের আসল কারণ হল অসম্ভব আত্মবিশ্বাস। ব্যাপারটা ঠিক বলে বোঝানো যাবে না। অনুভূতির ব্যাপার। আসলে টিমটার মনে হতে শুরু করছে, আমরা আইপিএল জিতেছি। ভারতের সব ফ্র্যাঞ্চাইজির মধ্যে আমরাই সেরা। আর আইপিএলটা বিশ্বের সমস্ত টি-টোয়েন্টি ক্লাব টুর্নামেন্টের মধ্যে সেরা।”

বাংলাদেশ বোর্ডের ফতোয়ায় সাকিবের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ খেলা হচ্ছে না। টিভিতে দেখছেন। আইপিএল সেভেনে কেকেআরের অলিখিত ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট ফোনে অবিচলিত, “আরে, আমি নেই তো কী? কেকেআর কোনও দিন এক বা দু’জনে চলেনি। কম্বিনেশনে চলেছে। একটা সাকিবের বদলি সব সময়ই বেঞ্চে ছিল। সমান দক্ষতা নিয়ে। নামেনি, তাই এত দিন দেখেননি।” যাঁর মনে হচ্ছে টিমের তুখোড় আত্মবিশ্বাস আর রিজার্ভ বেঞ্চই অধরা ট্রফি এ বার দিয়ে দেবে ক্যাপ্টেন গম্ভীরকে। যে রিজার্ভ বেঞ্চের এক-একটা মুখ রাসেল থেকে কুলদীপ যাদব। যাঁদের কেউ কেউ প্রতিদ্বন্দ্বিতার আঁচের মধ্যেই উত্থানের সিঁড়িও তৈরি করে নিতে চাইছেন।

চায়নাম্যান কুলদীপ যেমন। বুধবার পারথ স্কর্চার্সের সঙ্গে খেলা, যেখানে ব্র্যাড হগ বলে এক অভিজ্ঞ চায়নাম্যান আছেন। কুলদীপ ঠিক করে ফেলেছেন বুধবার হগের সঙ্গে দেখা করবেন মাঠে, ম্যাচের আগে।

দেখা করে বলবেন, তোমার প্রশংসার টুইটটা আমি দেখেছি। এ বার তোমার ‘রং ওয়ান’-টা আমাকে শিখিয়ে দাও তো!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE