ওয়ালেট খুলে দেখেন সব পাঁচশো আর হাজার টাকার নোট। নরেন্দ্র মোদীর রাজ্যেই বেশ অস্বস্তিতে পড়ে যান বিরাট কোহালি। প্রথম টেস্টের পর রাজকোটের টিম হোটেল থেকে চেক আউট করার সময় এই কাণ্ড।
কোটিপতি বিরাট কোহালির ওয়ালেটে বড় নোট থাকা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তখন কপর্দকশূন্য কোনও ব্যক্তির মতো অবস্থা ভারতের অন্যতম ধনী ক্রিকেটারের।
বুধবার বিশাখাপত্তনমে দ্বিতীয় টেস্টে নামার আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় সেই ঘটনার কথা নিজেই জানান বিরাট। বলেন, ‘‘রাজকোটে হোটেল বিল দিতে গিয়ে দেখি প্রায় সবই পুরনো নোট। ভুলেই গিয়েছিলাম যে ওগুলো আর চলবে না। বরং ওগুলোতে অটোগ্রাফ করে বিলিয়ে দেওয়াই ভাল।’’
শেষ পর্যন্ত ক্রেডিট কার্ডে বিল মেটাতে হয় কোহালিকে। এমনিতে বোর্ডই ক্রিকেটারদের হোটেলের বিল মিটিয়ে দেয়। কিন্তু বোর্ডের নির্দিষ্ট বিলের বাইরে তাঁরা কিছু খরচ করলে তার বিল ক্রিকেটারদেরই দিতে হয়। সেটাই মেটাতে গিয়েছিলেন বিরাট।
প্রধানমন্ত্রীর রাজ্যেই এমন অপ্রস্তুতে পড়লেও বিরাট কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তে বেশ খুশি। নির্দ্বিধায় বলে দিলেন, ‘‘ভারতীয় রাজনীতিতে আমার দেখা সেরা পদক্ষেপ এটাই। সিদ্ধান্তটা আমার খুব ভাল লেগেছে। অবিশ্বাস্য ঘটনা।’’
কোহালি সে দিন ক্রেডিট কার্ডে বিল মেটাতে পারলেও তাঁর কয়েক জন সতীর্থ নোট সমস্যায় বেশ কাবু বলে ভারতীয় দল সূত্রের খবর। শোনা গেল রাজকোটে অজিঙ্ক রাহানেও এমন সমস্যায় পড়েছিলেন। এমনিতেই রাহানে ক্রিকেট পাগল। অবসর সময়ে টিভিতে ক্রিকেটই দেখেন। খবরের কাগজ, নিউজ চ্যানেল বা খবরের ওয়েবসাইটের ধারেকাছেও যান না। হোটেলের মধ্যেই কিছু একটা কিনবেন বলে ঠিক করেছিলেন এক দিন। সঙ্গে ছিল হঠাৎ বাতিল হয়ে যাওয়া নোট। জিনিসটা কেনা হয়ে যাওয়ার পর তিনি নাকি জানতে পারেন নোট বাতিলের খবর। কিন্তু এমনই অবস্থা যে তখন সঙ্গে কোনও কার্ডও ছিল না তাঁর। হোটেল কর্তৃপক্ষের সাহায্যে পরে ক্রেডিট কার্ডে টাকা মেটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে শেষ পর্যন্ত রোহাই পান। তবে দেরি করেননি। ঘণ্টা দুয়েক পরেই অবশ্য কার্ডে দাম মিটিয়ে দেন তিনি।
নোটকাণ্ডে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন ইংল্যান্ডের ক্রিকেটাররা। পাঁচশো ও হাজার টাকার নোট বাতিল হয়ে যাওয়ায় তাঁদের হাতে কোনও নগদ টাকা নেই। তাই তাঁদের কোথাও গিয়ে খাওয়া বা কেনাকাটা করাও হচ্ছে না।
প্রতিবারই ইংল্যান্ডের ক্রিকেটাররা ভারতে এসে ভাল রকম শপিং করেন বা বেড়াতে যান। এ বার তেমন কাউকেই তা করতে দেখা যাচ্ছে না। দলের এক সাপোর্ট স্টাফ বলছিলেন, এখানে এসে টাকা ভাঙানোর সময় আমরা বেশির ভাগই ৫০০-১০০০ নোট পেয়েছি। কিন্তু এখন শুনছি এর কোনওটাই চলবে না। এটিএমেও শুনছি নতুন নোট পাওয়া যাচ্ছে না আর বেশিরভাগ এটিএমই বন্ধ। আমাদের ক্রিকেটাররা তাই কোথাও যেতেও পারছে না। না রেস্তোরাঁয়, না শপিংয়ে। ভারতের এতে উন্নতি হতে পারে, আমরা পড়েছি মহা সমস্যায়।’’
শোনা গেল ব্যাপারটা ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড পর্যন্ত গড়িয়েছে। ইসিবি নাকি চেষ্টা করছে ভারতীয় বোর্ডের সাহায্যে ক্রিকেটারদের জন্য কিছু ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ডের ব্যবস্থা করার। এমনিতেই কোনও ‘মউ’ ছাড়াই এই সিরিজ হচ্ছে। তার উপর ভারতীয় বোর্ডও আর্থিক সমস্যায় জর্জরিত। লোঢা কমিটির অনুমতি ছাড়া একটা টাকাও খরচ করতে পারবে না তারা। এখন ইসিবি-র এই অনুরোধ ভারতীয় বোর্ড রাখতে পারবে কি না, সেটাই সববচেয়ে বড় প্রশ্ন।