এল ট্রফি। দূরত্ব কিন্তু ঘুচল না।
কোচ হিসেবে বার্সেলোনায় প্রথম মরসুমেই ঐতিহাসিক স্প্যানিশ ত্রিমুকুট। লা লিগা থেকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, সব কিছুই ক্যাবিনেটে। তবু তাঁর দলের সেলিব্রেশনের মধ্যেও থাকল জল্পনার চোরাস্রোত। ম্যাচ শেষের সাংবাদিক সম্মেলনে যা উসকে দিলেন স্বয়ং লুই এনরিকে। তাঁর কোচিং ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠলে বার্সা কোচ বলে দিলেন, ‘‘সত্যি বলতে কী, আমি জানি না ভবিষ্যতে কী অপেক্ষা করে আছে।’’
চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে ওঠার কয়েক মাস আগে স্প্যানিশ মিডিয়ায় জোর গুজব ছিল, ক্লাবকে ত্রিমুকুট এনে দিলেও নাকি নিজের চাকরি বাঁচাতে পারবেন না এনরিকে। আর সেই গুজবকে প্রায় সত্যি প্রমাণ করে লুই এনরিকের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয় পরবর্তী সাংবাদিক সম্মেলন শোনালো বিদায়ী ভাষণের মতো। তিনি যখন বললেন, ‘‘এমন একটা সময় আসবে যখন কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এই বছরটা খুব কঠিন ছিল। যাঁরা আমাদের উপর ভরসা রেখেছেন, তাঁদের ধন্যবাদ। এ বার ষাটটা ম্যাচের ছ’টায় হেরেছি, ড্র চারটে। যাঁরা আমার সমালোচনা করছিলেন, তাঁদের যোগ্য জবাব দিলাম।’’
এনরিকের এহেন মন্তব্যের পরপর প্রশ্ন উঠতে শুরু করে, যে কোচ ক্লাবকে তাদের দ্বিতীয় ত্রিমুকুট এনে দিলেন, তিনি হঠাৎ এ ভাবে সরে যেতে চাইছেন কেন? কেন তিনি ক্লাবে নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে চূড়ান্ত কোনও মন্তব্য করতে চাইছেন না? দিনভর যে আলোচনা চলছে ফুটবলমহলে, তাতে এনরিকের এই অবস্থার পিছনে প্রধান নাম হিসেবে উঠে আসছে, লিওনেল মেসি। যা খবর, তাতে মেসি আর এনরিকের সম্পর্ক এখন এতই ভঙ্গুর যে, দু’জন নাকি আর একসঙ্গে কাজই করতে পারছেন না। শুধু তাই নয়, স্প্যানিশ প্রচারমাধ্যমের খবর, মাস কয়েক আগে বার্সা কর্তাদের নাকি মেসি জানিয়েও দিয়েছিলেন, এনরিকে থাকলে তিনি আর ক্লাবে থাকবেন না। দুইয়ের মধ্যে বাছতে হলে ক্লাব যে কার পক্ষে যাবে, সেটাও জলবৎ তরলং। তবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতার পরে দু’জনের সম্পর্ক জোড়া লাগবে কি না, তা দেখতে আগ্রহী অনেকেই। কিন্তু ঘটনা হল, চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরেও এনরিকে যে রকম ইঙ্গিত দিয়েছেন, তাতে মনে করা হচ্ছে বার্সায় কোচ বদল অবশ্যম্ভাবী।
কী এমন কারণ যে, কোচের সঙ্গে তাঁর এক নম্বর তারকার সম্পর্ক আজ এই তলানিতে এসে ঠেকেছে? শোনা যাচ্ছে, নতুন বছরের শুরুতেই রিয়াল সোসিয়েদাদ ম্যাচ হেরে যাওয়ার পরে মেসির সঙ্গে এনরিকের মতবিরোধের সূত্রপাত। ড্রেসিংরুমে তাঁদের এতটাই কথা কাটাকাটি হয় যে তার পর থেকে নাকি দু’জনকে আর একসঙ্গে কথাই বলতে দেখা যায়নি। ইতিহাস ধরতে হলে, মেসির সঙ্গে ঝামেলায় পড়া কোচেদেরই ক্লাব ছাড়তে হয়েছে। তার উপর এনরিকেকে কোচ করতে এখন থেকেই ওঁত পেতে বসে রয়েছে ম্যাঞ্চেস্টার সিটি।
এনরিকের ভবিষ্যত্ নিয়ে যখন জল্পনা তুঙ্গে, ফুটবলাররা তখন ব্যস্ত ছিলেন ক্লাবের কিংবদন্তি জাভি হার্নান্দেজকে বিদায় জানাতে। টানা সতেরো বছর বার্সায় খেলা জাভি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ট্রফি জিতেই বার্সা কেরিয়ার শেষ করলেন। কেরিয়ারের চার নম্বর চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতে জাভি বলছেন, ‘‘ক্লাব ছেড়ে চলে যেতে খুব খারাপ লাগছে। খুব নস্ট্যালজিক লাগছে ভেবে যে, আর কোনও দিন ক্লাবের হয়ে খেলতে পারব না। কিন্তু আশা করেছিলাম চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেই ক্লাব ছাড়ব।’’ জাভি চান যে, এনরিকেই তাঁর প্রিয় ক্লাবের দায়িত্বে থাকুন। ‘‘লুই এনরিকে যোগ্য কোচ হিসাবেই ট্রফিগুলো জিতেছে। অনেক সমালোচনা শুনতে হয়েছে ওকে। কিন্তু নেতৃত্ব দিয়ে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে দলকে। পরের মরসুমে খুব ভাল হবে এনরিকে কোচ থাকলে।’’
ও দিকে আবার বার্সায় তাঁর দ্বিতীয় মরসুমেই ত্রিমুকুট জেতার স্বপ্ন ছুঁয়ে ফেললেন নেইমার। যার পর তিনি বলেছেন, ‘‘ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতার। সেটা পুরো হয়েছে ভাবতেই পারছি না।’’ আর ব্যালন ডি’অর? মেসি-রোনাল্ডোর যুগ্ম দাপট শেষ করার জন্য ফেভারিট ধরা হচ্ছে নেইমারকে। কিন্তু তিনি বলে দিচ্ছেন, ‘‘ওটা তো এখন থেকেই আমার দলের দশ নম্বরের জন্য রাখা থাকল!’’
এনরিকের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক যা-ই থাকুক না কেন, টেন প্লাস ইলেভেনের জুটি আপাতত অটুট!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy