Advertisement
E-Paper

সাহসী হও, বড়দিনের আগে দুনিয়াকে জীবনের মন্ত্র বিরাটের

প্রথম জন, দুর্ধর্ষ এক বছরের শেষে নতুনের আগমনী-মন্ত্র ঠিক করে ফেলেছেন। চলতি বছর দেখেছে কতটা নির্দয় হতে পারে তাঁর ব্যাট, দেখেছে কতটা দাপুটে অধিনায়কত্ব পাওয়া যেতে পারে তাঁর থেকে।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০১৬ ০২:৩৭

প্রথম জন, দুর্ধর্ষ এক বছরের শেষে নতুনের আগমনী-মন্ত্র ঠিক করে ফেলেছেন। চলতি বছর দেখেছে কতটা নির্দয় হতে পারে তাঁর ব্যাট, দেখেছে কতটা দাপুটে অধিনায়কত্ব পাওয়া যেতে পারে তাঁর থেকে। এবং আগামী বছরের যে নিজ-মন্ত্র বেছেছেন তিনি, বিশ্বজোড়া বোলারকুলের রাতের ঘুম কেড়ে নেওয়ার জন্য যথেষ্ট। ওটা তো তাঁর ব্যাটিংয়ের মতোই দাপুটে, হিংস্রতা মেশানো— ‘গো বোল্ড!’

চলতি বছরের সাফল্য যদি বিচারের মানদণ্ড হয়, দ্বিতীয় জনের বায়োডেটাও প্রবল আকর্ষণীয়। এ বছরই ইউরোপে শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পেয়েছে তাঁর দেশ, তাঁর ক্লাব পেয়েছে শ্রেষ্ঠ ক্লাবের শিরোপা। ইনি আপাতত কয়েক দিন ছুটিতে আছেন। ফুটবল থেকে দূরে, মেদেইরার বাড়িতে, পরিবারের সঙ্গে। বড়দিনটা ওখানেই কাটবে, তারপর জীবনে ফের ফিরবে ফুটবল। ফিরবে আরও একটা জিনিস। অসহায়ের পাশে দাঁড়ানো। একটা ভিডিও মেসেজ তো ইতিমধ্যে দেখা যাচ্ছে তিনি ছেড়েছেন। সিরিয়ার অসহায় শিশুদের নিয়ে তাঁর ব্যক্তিগত এক ভিডিও মেসেজ। যেখানে লেখা— ‘আমি বিখ্যাত ফুটবলার। কিন্তু আসল নায়ক তোমরা। জেনে রেখো আমি এখন থেকে তোমাদের সঙ্গে থাকব।’

তৃতীয় জন, এক কথায় কিংবদন্তি। টেনিসে তাঁর সমতুল্য প্লেয়ার সমস্ত প্রজন্ম ধরে খুব কম। চোট তাঁকে কোর্টে নামতে দেয়নি ছ’টা মাস। সবে ফিরেছেন। নতুন বছরটা কেমন যাবে, জানেন না তিনি। তাঁর নিজের মনে হয়, হয়তো জকোভিচের হবে। বা অ্যান্ডি মারের। আর তিনি? নতুন বছরের শপথ হিসেবে একটাই কথা ভেসে আসছে, ‘‘আমি চেষ্টা করব।’’

অবশ্যই এঁরা ক্রীড়াবিদ এবং অতি বিখ্যাত ক্রীড়াবিদ। চেনা নয়, যাঁদের না চেনাটাই খবর।

এঁরা— বিরাট কোহালি। ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। এবং রজার ফেডেরার। যথাক্রমে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় জন।

নতুন বছরে নতুন চ্যালেঞ্জ

বিরাট কোহালি

• অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে টেস্ট সিরিজে স্মিথ-স্টার্কদের সামলে জেতা।
• চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির গ্রুপে পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কার মতো দলকে টপকে নক আউটে ওঠা।
• আইপিএল ফাইনালে হারের যন্ত্রণা ভুলিয়ে বেঙ্গালুরু রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্সকে চ্যাম্পিয়ন করা।

রজার ফেডেরার

• অস্ট্রেলীয় ওপেনের অন্তত সেমিফাইনালে যাওয়া।
• ছ’মাস রিহ্যাবের পর সার্কিটে ফিরে গোটা মরসুম ফিটনেস ধরে রাখা।
• আঠারো নম্বর গ্র্যান্ড স্ল্যাম খেতাব জিতে নতুন মাইলস্টোন তৈরি।

ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো

• রাশিয়ায় ২০১৭ কনফেডারেশনস কাপে পর্তুগালকে চ্যাম্পিয়ন করা।
• বার্সেলোনার হ্যাটট্রিক থামিয়ে রিয়াল মাদ্রিদকে লা লিগা জেতানো।
• লিওনেল মেসিকে ছুঁয়ে পাঁচ বার ব্যালন ডি’অর জেতা।

কোহালিতে আসা যাক। তাঁর ক্রিকেট যেমন অভিনবত্বের খোঁজ দেয়, বার্তাও দেখা গেল তেমন। শনিবার সোশ্যাল মিডিয়ায় নতুন বছরে নিজের লক্ষ্য নিয়ে এক বার্তা ছেড়েছেন ভারতের টেস্ট অধিনায়ক। লিখেছেন, ‘লোকে বিশ্বাস করে আমি যা করি, সব বোধহয় জেনেবুঝে করি। বোধহয় আমি জানি কোন সিদ্ধান্তটা আমার ঠিক হবে। মাঠে সাফল্যের পর মনে হচ্ছে এই বিশ্বাসটা বোধহয় গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু আসল ব্যাপারটা তা নয়।’ সঙ্গে কোহালি আরও জুড়েছেন, ‘সত্যিটা হল, ছকের বাইরে যখন কোনও সিদ্ধান্ত আমি নিই, কী হবে না হবে, না জেনেই নিই। কিন্তু আমি একটা ব্যাপার জানি। যতই ভয় লাগুক না কেন, সময় এলে আমাকে সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ভয়-টয় সরিয়ে রেখে নিতে হবে। দু’বছর আগের অস্ট্রেলিয়া টেস্ট যেমন। অ্যাডিলেডে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ড্রয়ের রাস্তায় না গিয়ে আমরা জয়ের দিকে ঝাঁপিয়েছিলাম। আমরা সে দিন ইতিহাস করতে পারতাম, যদিও পারিনি শেষ পর্যন্ত। কিন্তু তার জন্য আজ আমার একবিন্দু আফসোস হয় না। বরং ভবিষ্যতে যদি ও রকম পরিস্থিতি আবার আসে, আমি একদম একই কাজ করব। আর এটা শুধু ক্রিকেটের ক্ষেত্রের কাজে লাগে, বলছি না। বিশ্বাস করুন, সাহসী সিদ্ধান্তের ফলাফল নিয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে শুধু একটা জিনিসই খারাপ। সাহসী সিদ্ধান্তটা না নেওয়া।’

এবং চিঠির শেষে আসল বিষয়, তাঁর নতুন বছরের মন্ত্র। যেখানে কোহালি লিখেছেন, ‘আমার নতুন বছরের মন্ত্রটা তাই খুব সহজ। নিজের অনুভূতি মেনে চলো। আর যে সিদ্ধান্তটা সঠিক মনে হবে, সেটা করো। গো বোল্ড। সাহস দেখাও। ভয়ডরহীন থাকো।’

ভক্তদের লেখা সেই চিঠি

“ছকের বাইরে যখন কোনও সিদ্ধান্ত আমি নিই, কী হবে না হবে, না জেনেই নিই।

কিন্তু আমি একটা ব্যাপার জানি। যতই ভয় লাগুক না কেন, সময় এলে আমাকে সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
ভয়-টয় সরিয়ে রেখে নিতে হবে।” —বিরাট কোহালি।

যে কোনও পেশার ব্যক্তিত্বকে উদ্দীপ্ত করে দেওয়ার মতো চিঠি। রোনাল্ডো আবার যে ভিডিও বার্তা দিয়েছেন, তাতে তাঁর মানবিক দিকটা ফুটে উঠেছে। সিরিয়ার শিশুদের উদ্দেশ্যে ভিডিও বার্তায় সিআর সেভেন বলেছেন, ‘‘আমি জানি তোমরা কী অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছ। আমি, গোটা বিশ্ব তোমাদের পাশে আছে।’’ কোনও কোনও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মনে হচ্ছে পতুর্গিজ মহাতারকার এই একটা ভিডিও হাজার-হাজার অসহায় শিশুর হৃদয়ে আশার আলো জ্বালিয়ে দেবে। নতুন বছরে তাঁরা শত দুঃখের মধ্যেও এক চিলতে রোদ দেখতে পাবে। রজার ফেডেরার— তাঁর নতুন বছরের শপথ পুরোটাই ব্যক্তিগত। নিজের ফিটনেস, ফর্ম, জকোভিচদের সঙ্গে যুদ্ধের প্রেক্ষিতে কোথায় দাঁড়িয়ে তিনি, তা নিয়ে। কিন্তু কোহালি-রোনাল্ডোর বার্তা, মন্ত্র কোথাও যেন ব্যক্তিগত লক্ষ্যের সীমানা ছাড়িয়ে আরও বৃহত্তম পর্বে উত্তীর্ণ। যার প্রভাব জনজীবনে। যার প্রভাব আট থেকে আশিতে।

ঠিকই আছে। কোহালি দিচ্ছেন জীবনের মন্ত্র, রোনাল্ডো আশার। একজন বলে দিচ্ছেন, জীবনের নানা প্রতিকুলতাতেও কী ভাবে সাহসী থেকে হার-জিতের উর্ধ্বে নিজেকে নিয়ে যাওয়া যায়। আর একজন বলছেন, আর কেউ না থাকুক আমি আছি। অসহায় মানুষের জন্য আমি ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো, সব সময় আছি।

নতুন বছরের প্রাক্-লগ্নে এর চেয়ে ভাল উপহার আর কী পেতে পারত পৃথিবী?

‘Make A Bold Move’ Virat Kohli
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy