Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

পরীক্ষাটা আগুন নেভাতে কাদের রক্ষণ বেশি পটু

লড়াইটা আসলে ইস্টবেঙ্গল রক্ষণ বনাম স্পোর্টিং ক্লুবের রক্ষণের। যেমন নব্বই মিনিট ধরে র‌্যান্টি-ডুডু ঝড় আছড়ে পড়বে গোয়ান বক্সে তেমনই গোল-খিদে নিয়ে ওডাফা-উলফ যুগলবন্দি ছিঁড়ে ফেলতে চাইবে লাল-হলুদ রক্ষণ।

দুই গোলমেশিন। যুবভারতীতে ওডাফা-ডুডু।

দুই গোলমেশিন। যুবভারতীতে ওডাফা-ডুডু।

রতন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৫ ০৩:৫১
Share: Save:

ওকোলি ওডাফা বনাম ডুডু ওমাগবেমি। আগুনে মেজাজের দুই নাইজিরিয়ান।

বিশ্বকাপার অ্যান্টনি উলফ বনাম গোলমেশিন র‌্যান্টি মার্টিন্স। গোলের সামনে ইদানিং দু’জনেই ভয়ঙ্কর।

না, আজ শনিবাসরীয় আই লিগ যুদ্ধটা ওদের মধ্যে নয়।

লড়াইটা আসলে ইস্টবেঙ্গল রক্ষণ বনাম স্পোর্টিং ক্লুবের রক্ষণের।

যেমন নব্বই মিনিট ধরে র‌্যান্টি-ডুডু ঝড় আছড়ে পড়বে গোয়ান বক্সে তেমনই গোল-খিদে নিয়ে ওডাফা-উলফ যুগলবন্দি ছিঁড়ে ফেলতে চাইবে লাল-হলুদ রক্ষণ।

সাংবাদিকদের সামনে বসা ইস্টবেঙ্গল কোচ এলকো সতৌরি হিসেব দিচ্ছিলেন। “আমি কোচ হয়ে আসার পর ইস্টবেঙ্গল আট গোল খেয়েছে। তার মধ্যে মাত্র দুটো রক্ষণের দোষে। ওখানে তা হলে বদলাব কেন?”

কিন্তু ক্লুবে তো এখন ওডাফা এসে গিয়েছেন? লাল-হলুদের ডাচ কোচের মুখে এ বার প্রশংসাসূচক নিন্দা। “ও বড় ফুটবলার। কিন্তু কতটা ফিট জানি না। দেখিওনি। রোমারিও খুব অলস ফুটবলার ছিল। কিন্তু একটা সুযোগেই গোল করত।”

এর আধঘণ্টা পরে যুবভারতীতে দাঁড়িয়ে ডেম্পোর অলিখিত কোচ ক্লিফোর্ড চুকুয়ামার মন্তব্য, “আমাদের স্ট্রাইকিং লাইনের যা শক্তি তা আটকানোর ক্ষমতা ইস্টবেঙ্গলের নেই। লিখে নিন। কাল প্রমাণ হয়ে যাবে।”

স্পোর্টিং ক্লুব মানেই ইদানীং ইস্টবেঙ্গলে ঠকঠকানি। কাঁপুনি।

ফেড কাপে ০-৩ পিছিয়ে পড়েও ৪-৩ উত্তেজক জয় পেয়েছিল গোয়ার ক্লাবটি। আই লিগে প্রথম পর্বেও জিততে পারেননি ডুডুরা। ফলে মরসুমে ০-১ পিছিয়ে যুবভারতীতে নামবেন মেহতাবরা। একটা মানসিক চাপ তো থাকবেই এলকো বাহিনীর।

সেটা যেন আরও একধাপ বাড়িয়ে দিয়েছেন প্রায় এক বছর পর হঠাত্‌-ই মাঠে ফেরা ওডাফা। কানের সেই হিরের দুলের সঙ্গে মাথার সোনালি রং করা চুল আবার ঝকঝক করছে। শরীরের মেদ ঝরিয়ে ছিপছিপে হয়েছেন। অনুশীলনে দেখা গেল রিফ্লেক্স কিছুটা কমলেও গোলের সামনে এখনও আগের মতোই নাছোড়। “আবার মিরাকেল কিছু করব। ঈশ্বর আমাকে আর বঞ্চিত করবেন না। কাল থেকেই দেখবেন স্পোর্টিং জয়ের রাস্তায় ফিরবে,” বলে হেসে ফেলেন মোহনবাগান থেকে এক বছর আগে বিতাড়িত নাইজিরিয়ান তারকা। যোগ করেন, “ঈশ্বর চাইলে আরও কিছু প্রমাণ করতে পারব।”

সেই আগের মতো সব কথায় নিজেকে ঈশ্বরের হাতে সঁপে দেওয়া। নিজের ফুটবলের স্বর্ণযুগেও যে রকম বলতেন ওডাফা। “বহু দিন পর মাঠে নামছি। নতুন এক জীবন যেন শুরু হচ্ছে,” বললেন তিনি। একটু যেন বেশি আত্মবিশ্বাসী দেখায় তাঁকে।

লিগ টেবল দেখলে স্পোর্টিংকে হেলাফেলার টিম বলেই মনে হবে। ব্যাক বেঞ্চার। সবার শেষে। আট ম্যাচের একটাও জেতেনি। ‘‘এ বার জিতবে, আমি এসে গিয়েছি। ফেড কাপের পর ভিসা সমস্যা মেটাতে দেশে ফিরে গিয়েছিলাম বলে টিমের সংগঠনটাই নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। সেটা আবার ফিরে এসেছে,” বলছিলেন ফেডারেশনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ‘বেআইনি’ ভাবে কোচিং করিয়ে যাওয়া চুকুয়ামা। সুভাষ, সুব্রতর মতো তাঁরও ‘এ’ লাইসেন্স নেই। কিন্তু বিদেশি চুকুয়ামা বহাল তবিয়তে দলের রিজার্ভ বেঞ্চে বসছেন! গোয়ার ক্লাবের কি ফেডারেশনের নিয়ম আলাদা? কে জানে?

চুকুয়ামা নিয়ে যাঁরা হইচই বাঁধাতে পারতেন সেই ইস্টবেঙ্গলে বেতনভূক ম্যানেজাররা কাজে চূড়ান্ত অপেশাদার। তাঁদের যাবতীয় লম্ফঝম্ফ সাংবাদিকদের লাল-হলুদের অনুশীলন দেখার নিয়মাবলী নিয়ে। এমনিতেই ভারতীয় ফুটবলে মিথ হল, এএফসি কাপ যারা খেলে তারা আই লিগ পায় না। বিদেশ জার্নির ধকল আর ক্লান্তির নাকি খেসারত দেয় টিম। হঠাত্‌ মাঝপথে কোচের দায়িত্ব নেওয়া এলকো তার মধ্যেই মানানোর চেষ্টা করছেন। “লালরিন্দিকা ফিরে এসেছে এটা সুখবর। কিন্তু টিমের তিন চারটে পজিশনে কাকে খেলালে ভাল হয় সেটা এখনও বুঝে ওঠার সময় পাইনি,” বলার পর লাল-হলুদ কোচকে প্রশ্ন করা হয়, সিঙ্গাপুর থেকে ফিরে মাত্র এক দিন অনুশীলন করেই নামতে হচ্ছে আই লিগে। এটা তো সমস্যা? “সমস্যা তো বটেই। কিন্তু কিছু করার নেই।”

দেশের অন্যতম সেরা ডিফেন্ডার অর্ণব মণ্ডল ফিরেছেন। ফিরেছেন কেভিন লোবো, সৌমিক দে-রা। কিন্তু ইস্টবেঙ্গল কোচ যা ইঙ্গিত দিয়েছেন, তাতে এঁদের কারও প্রথম একাদশে আজ জায়গা হবে বলে মনে হচ্ছে না। স্টপারে মিলান সুসাকের সঙ্গে রাজু-ই খেলবেন। ৪-৪-২ ফমের্শনে সামনে সেই ডুডু-র‌্যান্টি জুটি। স্পোর্টিং অবশ্য ওডাফাকে পেয়ে ফেড কাপে হ্যাটট্রিক করা সেই ছটফটে ফরোয়ার্ড ভিক্টোরিনো ফার্নান্ডেজকে উইংয়ে ব্যবহার করছে এখন। ফলে শেষ পর্যন্ত ফর্মেশনটা ৪-৩-৩ হয়ে যেতে পারে তাদের। যা এলকোর মাথাব্যথার কারণও হতে পারে।

নাইজিরিয়ান চুকুয়ামা বনাম ডাচ এলকোর স্ট্র‌্যাটেজি ম্যাচটাকে অন্য মাত্রায় পৌঁছে দিতে পারে। দু’জনের হাতেই কিন্তু অনেক ‘মারণাস্ত্র’ মজুত।

ছবি: উত্‌পল সরকার।

শনিবারে আই লিগ ফুটবল

ইস্টবেঙ্গল: স্পোর্টিং ক্লুব (যুবভারতী ৪-৩০)

রয়্যাল ওয়াহিংডো: ভারত এফসি (শিলং)

সালগাওকর: বেঙ্গালুরু এফসি (গোয়া)।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE