উল্লাস: চার্চিলের বিরুদ্ধে গোল করে ডিকা। রবিবার বারাসতে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
মোহনবাগান ৫ : চার্চিল ব্রাদার্স ০
পাঁচ গোলের জবাবে পাঁচ গোল!
চব্বিশ ঘণ্টা আগে বারাসত স্টেডিয়ামে লাজং এফসি-কে ৫-১ গোলে বিধ্বস্ত করে আই লিগে দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন ঘটিয়েছিল ইস্টবেঙ্গল।
রবিবার সেই বারাসত স্টেডিয়ামেই চার্চিল ব্রাদার্সকে উড়িয়ে দিয়ে তিন ম্যাচে সাত পয়েন্ট পেয়ে লিগ টেবলের শীর্ষে উঠে এলেন সনি নর্দে-রা।
মোহনবাগানের বিরুদ্ধে ম্যাচের আগের দিন চার্চিল ডিফেন্ডার মানডে ওসাগিয়ে দাবি করেছিলেন, সনিকে আটকানোর জন্য তিনি তৈরি। কারণ, হাইতি তারকার বিরুদ্ধে তাঁর খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে। তাই তিনি একেবারেই চিন্তিত নন। আই লিগের ‘সুপার সানেড’-তে নেমে মানডে বুঝলেন, শুধুমাত্র সনিকে আটকানোর স্ট্র্যাটেজি নিয়ে মাঠে নামার ফল কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে। চার্চিলকে ধ্বংস করার নেপথ্যে আসল নায়ক অবশ্য সঞ্জয় সেন। মোহনবাগান কোচের স্ট্র্যাটেজিতেই গোলের বন্যায় ভেসে গেল দু’বারের আই লিগ চ্যাম্পিয়নরা। বিধ্বস্ত চার্চিল কোচ মিকোলা শেভচেঙ্কো ম্যাচের পরে সাংবাদিক বৈঠকে বলেই ফেললেন, ‘‘পাঁচ গোলে হেরেছি। আমার কথা বলার মতো অবস্থা নেই।’’ রবিবার বারাসতেই হয়তো চার্চিলের কোচ হিসেবে শেষ বারের মতো রিজার্ভ বেঞ্চে বসেছিলেন। তাঁর উত্তরসূরি চার্চিল কর্তারা প্রায় ঠিকই করে ফেলেছেন। অঘটন না ঘটলে শেখ জামাল ধানমন্ডিতে সনি-র কোচ জোসেফ আফুসি দায়িত্ব নিচ্ছেন চার্চিলের। রবিবার তিনিও ছিলেন বারাসত স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে!
আরও পড়ুন: চার ফুটবলারের চোটে উৎসব ম্লান বাগান তাঁবুতে
চার্চিলের বিরুদ্ধে ফরোয়ার্ডে দিপান্দা ডিকা ও আনুসুমানা ক্রোমা। সনি খেললেন অনেক পিছন থেকে। চার্চিল ফুটবলারদের শুরু থেকেই লক্ষ্য ছিল সনিকে আটকানো। কিন্তু সবুজ-মেরুন তারকা মাঝমাঠে নেমে আসায় এমুএজেরে প্রেসাস, মানডে-দের যাবতীয় পরিকল্পনা তালগোল পাকিয়ে যায়। ডিকা, ক্রোমা, ফৈয়জ না সনি— কাকে আটকাতে হবে বুঝে ওঠার আগেই ২-০ এগিয়ে যায় মোহনবাগান। ২৩ মিনিটে ফৈয়জের পাস থেকে গোল করেন ক্রোমা। ৩৪ মিনিটে তিনিই আবার গোল করান ডিকা-কে দিয়ে।
দ্বিতীয়ার্ধেও এক ছবি। ম্যাচ শুরু হওয়ার এক মিনিটের মধ্যে গোল করেন ডিকা। আর ৪৯ মিনিটে গোল ফৈয়জের। চার গোলের ধাক্কায় সম্ভবত সনিকে আটকানোর কথা ভুলে গিয়েছিলেন মানডে-রা। ম্যাচ শেষ হওয়ার ছ’মিনিট আগে গোল করলেন সবুজ-মেরুন অধিনায়ক। ম্যাচের ভবিষ্যৎ অবশ্য ৪৯ মিনিটে চার গোলের পরেই চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছিল। বারাসত স্টেডিয়ামের প্রায় বারো হাজার মোহনবাগান সমর্থকের যাবতীয় আগ্রহ তখন ছিল স্কোর লাইন নিয়ে। আগের দিন মহম্মদ আল আমনা-রা জিতেছিলেন ৫-১ গোলে। মোহনবাগানকেও তাই পাঁচ গোল করতে হবে। সবুজ-মেরুন অধিনায়ক অবশ্য তাঁদের হতাশ করেননি। ম্যাচ শেষ হওয়ার পরেই সতীর্থদের নিয়ে গ্যালারির সামনে চলে গিয়েছিলেন।
জাতীয় দলের প্রাক্তন স্ট্রাইকার এবং মোহনবাগানের প্রাক্তন অধিনায়ক শিশির ঘোষ বলছিলেন, ‘‘মোহনবাগানের প্রধান ফুটবলার সনি-ই। পুরো দলটাকে ও খেলায়। সনি জানত, ওকে আটকানোই মূল লক্ষ্য থাকবে চার্চিল ফুটবলারদের। কিন্তু ও মাঝমাঠে নেমে এসে চার্চিলের পুরো পরিকল্পনাই ভেস্তে দিয়েছে। তবে জোড়া গোল করলেও ডিকার খেলায় আমি হতাশ।’’ সঙ্গে যোগ করেছেন, ‘‘চার্চিল একেবারেই সাধারণ মানের দল। ওদের এক জন বিদেশিকেও ভাল লাগল না।’’
হতাশ জোড়া গোল করে ম্যাচের সেরা ডিকা নিজেও। সাংবাদিক বৈঠকে বললেন, ‘‘এ বার আই লিগে প্রথম গোল করলাম। কিন্তু আমি প্রচুর সহজ গোল নষ্ট করেছি।’’ আর এক গোলদাতা ফৈয়জ যাবতীয় কৃতিত্ব দিলেন কোচ ও সনিকেই। কলকাতা প্রিমিয়ার লিগে দুর্দান্ত খেলে মোহনবাগান টিম ম্যানেজমেন্টের নজরে পড়েছিলেন হাওড়ার ফৈয়জ। বাবা বাড়ি বাড়ি ঘুরে আতর বিক্রি করে কোনও মতে সংসার চালান। রবিবার চার্চিলের বিরুদ্ধে গোল করা ছাড়াও অসাধারণ খেলেছেন প্রতিশ্রুতিমান মিডফিল্ডার। ম্যাচের পর বলছিলেন, ‘‘প্রথমার্ধে ঠিক মতো খেলতে পারছিলাম না। হাফটাইমে ড্রেসিংরুমে কোচ বলেছিলেন, বল ধরে খেলতে। ওঁর পরামর্শেই ছন্দ ফিরে পাই। আর মাঠের ভিতর সনি তো সব সময়ই উৎসাহ দিয়েছে। যা আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে।’’
মোহনবাগান: শিল্টন পাল, অরিজিৎ বাগুই (গুরজিন্দর কুমার), কিংশুক দেবনাথ, কিংগসলে ওবুমেনেমে, রিকি লাললাওমাওয়া, শেখ ফৈয়জ, রেনিয়ার ফার্নান্দেজ, ইউতা কিনোয়াকি (শিল্টন ডি’সিলভা), সনি নর্দে, আনসুমানা ক্রোমা (রানা ঘরামি) ও দিপান্দা ডিকা।
চার্চিল ব্রাদার্স: জেমস কিথান, ইয়েনদ্রেম মিতাই, এমুএজেরে প্রেসাস, মানডে ওসাগিয়ে, বানপায়ানখেয়াওনাম নংখলাও, পিটার ওমুদুমুকে, জোসুয়া ভাজ (সূরজ), কার্তিক গোবিন্দস্বামী (ইজরায়েল গুরুঙ্গ), নিকোলাস ফার্নান্দেজ (আলবের গঞ্জালেস), উত্তম রাই ও এরিক নোয়াইমো।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy