Advertisement
E-Paper

ওডাফাকে বাপি বাড়ি যা করে বেঙ্গালুরু যাচ্ছে মোহনবাগান

পঞ্জাব দা পুত্তর শেহনাজ সিংহের ছবির মতো গোলটা যখন হল বারাসত স্টেডিয়ামের আকাশে তখন আংশিক পূর্ণিমার চাঁদ উঁকি মারছে। আর সনি নর্ডির সোনার ফ্রেমে বাঁধিয়ে রাখার মতো গোলের সময় মনে হল সবুজ-মেরুন আকাশে শুধু আলো আর আলো। খেতাব জয়ের দরজায় পা রেখে বাগানের নতুন হার্টথ্রব সনি যখন পুরো টিম পিছনে নিয়ে গ্যালারির দিকে দৌড়োচ্ছেন, তখন ওডাফা ওকোলির দিকে তাকালাম। দেখলাম মাটিতে হাঁটু গেড়ে বিপক্ষের গোলমেশিন নাইজিরিয়ান কিছু একটা খুঁজছেন।

রতন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৫ ০৩:৩৭
শনিবার বারাসত স্টেডিয়ামে স্পোর্টিং ক্লুব দ্য গোয়াকে ২-০ হারিয়ে মোহনবাগানকে আই লিগ জয়ের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিলেন সনি-শেহনাজ।

শনিবার বারাসত স্টেডিয়ামে স্পোর্টিং ক্লুব দ্য গোয়াকে ২-০ হারিয়ে মোহনবাগানকে আই লিগ জয়ের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিলেন সনি-শেহনাজ।

মোহনবাগান ২ (শেহনাজ, সনি)
স্পোর্টিং ক্লুব ০

পঞ্জাব দা পুত্তর শেহনাজ সিংহের ছবির মতো গোলটা যখন হল বারাসত স্টেডিয়ামের আকাশে তখন আংশিক পূর্ণিমার চাঁদ উঁকি মারছে।
আর সনি নর্ডির সোনার ফ্রেমে বাঁধিয়ে রাখার মতো গোলের সময় মনে হল সবুজ-মেরুন আকাশে শুধু আলো আর আলো।
খেতাব জয়ের দরজায় পা রেখে বাগানের নতুন হার্টথ্রব সনি যখন পুরো টিম পিছনে নিয়ে গ্যালারির দিকে দৌড়োচ্ছেন, তখন ওডাফা ওকোলির দিকে তাকালাম। দেখলাম মাটিতে হাঁটু গেড়ে বিপক্ষের গোলমেশিন নাইজিরিয়ান কিছু একটা খুঁজছেন। পরে জানা গেল, সনির গোল দেখে হতাশায় নিজের বুকে এমন একটা চাপড় মেরেছিলেন স্পোর্টিং অধিনায়ক যে, গলার চেন থেকে পয়মন্ত ক্রসটাই খুলে পড়ে গিয়েছিল মাঠে। কিন্তু নিজে গোল করলে তো ওটাতেই চুমু খান ওডাফা! যেটা শেষ পর্যন্ত খুঁজে পেলেন বটে, কিন্তু তাতে চুমু খাওয়ার সুযোগ আজ আর যে পেলেন না।
‘‘আরে ওর তো এখন কিছুই নেই। শুধু বিপক্ষ গোলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে। বলের জন্য। দৌড়তে পারবে না জানতামই। ফিটনেস শূন্য। গোয়ায় আমাদের দোষে গোল পেয়ে গিয়েছিল। আজ তো নড়তেই পারেনি,’’ বাঘকে খাঁচাবন্দি করে বিড়াল বানানোর পর শিকারি যে ভাবে ঠোঁট চেটে তৃপ্তির ঢেকুর তোলে, সে রকমই মুখ করে ম্যাচের শেষে বলছিলেন বাগান কোচ সঞ্জয় সেন। তৃপ্তির ঢেকুর তুলবেন না-ই বা কেন?

চতুর্থ বঙ্গসন্তান কোচ হিসেবে কলকাতার ক্লাবকে খেতাব দিতে পারলে আই লিগের হল অব ফেমে ঢুকে যাবেন সাত দিন পরেই। স্বপ্ন ছোঁয়ার মাঝে শুধু দাঁড়িয়ে বেঙ্গালুরু। কোচিং জীবনের ক্যালেন্ডারে চিরদিন লাল কালি দিয়ে লিখতে পারবেন ৩১ মে-র দিনটা। যদি শুধু সামনের রবিবার বেঙ্গালুরুর কান্তিরাভা স্টেডিয়াম থেকে তাঁর ছাত্ররা তুলে আনতে পারে— এক পয়েন্ট। শনিবারই বেঙ্গালুরু-ডেম্পো ১-১ ড্র হওয়ার পর বাগানের চ্যাম্পিয়ন হতে চাই শুধু একটা ড্র।

‘‘ড্রয়ের কথা বলছেন কেন? আমি কখনও ড্রয়ের কথা ভেবে মাঠে নামি না। এখনও কিছুই হয়নি। আরও একটা জয় চাই। সেটা কিন্তু সহজ হবে না,’’ কঠিন মুখ করে বলছিলেন সনি-বোয়া-বলবন্ত-প্রীতম-কাতসুমিদের হেডস্যার। ছাত্রদের মধ্যে এই মোক্ষম সময়ে যাতে আত্মতুষ্টি ঢুকে না পড়ে তার জন্য বাগান কোচ এ রকম বলবেন সেটাই তো স্বাভাবিক।

কিন্তু শতবর্ষ পেরিয়ে আসা ক্লাবে তেরো বছর আগে যিনি জাতীয় লিগের আলো এনেছিলেন সেই সুব্রত ভট্টাচার্য কিন্তু বলে দিলেন অন্য কথা। ‘সেবার সালগাওকরের কাছে হেরে শেষ ম্যাচ খেলতে গিয়েছিলাম গোয়ায়। খেতাব পেতে হলে চার্চিলের সঙ্গে জিততেই হত। প্রচণ্ড চাপ ছিল। সেই তুলনায় এ বার তো মোহনবাগানের লিগ জয়ের রাস্তা অনেক সহজ। অনেক কম চাপ নিয়ে যাচ্ছে সনিরা।’’

সুব্রতর ভাবনার সঙ্গে মিলে যায় শনিবাসরীয় বারাসতের আবহ। বিকেলের ঝলসে যাওয়া গরমের মধ্যেও গ্যালারিতে এত লোক? ব্যান্ড-তাসা বেজে চলেছে। এত সবুজ-মেরুন ব্যানার আর ফেস্টুন ঝুলছিল যে, রেলিংগুলোই দেখা যাচ্ছিল না। মাথায় ফেট্টি বেঁধে আট থেকে আশি সবাই হাজির। মাইকে বাজছে ‘আমাদের সূর্য মেরুন, নাড়ির যোগ সবুজ ঘাসে।’’ উন্মাদনা দেখে মনে হচ্ছিল, আজই জিতলে যেন পাঁচ বছরের ট্রফি-খরা কেটে যাবে। সত্যিই বদলে যাবে বাগানের আকাশের সূর্যের রং। কিন্তু তা তো নয়। আসলে শব্দব্রহ্মের মধ্যে বাজছিল আবাহন। শেষ হোম ম্যাচে সমর্থককুল যেন একযোগে বলতে চাইছিলেন, ‘‘জয়যাত্রায় বেঙ্গালুরুতে যাও হে পালতোলা নৌকা।’’ কিন্তু তাঁদের কে বোঝাবে, এ রকম অবস্থায় ঠোঁটের সঙ্গে পেয়ালা ছোঁয়াতে না পেরে কত টিম আই লিগ হাতছাড়া করেছে শেষ মুহূর্তে!

এ দিনই তো হাফটাইম পর্যন্ত বাগানের পালে সে ভাবে বাতাস-ই লাগছিল না। যে তরতর করে নৌকো এগিয়ে যাবে। স্পোর্টিংয়ের কলজে ওডাফার জন্য জোড়া জোনাল মার্কার। কখনও শেহনাজ-বেলো। কখনও শৌভিক-কিংশুক। তীব্র গরমে কাহিল আটত্রিশের ওডাফার কোমরে হাত পড়ে গিয়েছিল অবশ্য পনেরো মিনিটেই। যেন হাঁফাতে থাকা বৃদ্ধ সিংহ। কিন্তু সে-ও তো মাঝেমধ্যে কেশর ফোলায়। ওডাফাও দু’বার জাগলেন। প্রথমার্ধের শেষ দিকে। দেহের দোলায় ওয়ান-টু-ওয়ান সুযোগ তৈরি করে নিজেই বাইরে মারলেন। আর একবার তাঁর ফ্রিকিক পোস্টে লাগল।

বারাসতে বাগান-গর্জন।

ওডাফার সঙ্গে ম্যাচের আগেই অলিখিত একটা চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছিল সনির। সেটা যে কতটা প্রবল শুরু থেকেই টের পেল চুকুয়ামার দল। সনির টানা তিনটে তিন ধরনের কর্নারেও গোল তুলে আনতে না পেরে বিরতির সময় কাতসুমিরা মাঠেই সভা করে ফেললেন। পরের অর্ধে দেখা গেল অন্য ছবি। আরও কোণঠাসা গোয়ার ক্লাব। সাত-আট জনে মিলে ডিফেন্স সামলাচ্ছিলেন সন্দেশ-মৃগুয়েলরা। আর সেই সময়ই শেহনাজের গোল। দূর থেকে মাটি ঘেঁষা নিখুঁত ফ্রিকিকে। মেরুন-ঝড়ে অগোছালো ওডাফারা এ বার স্ট্র্যাটেজি বদলালেন। ফানেলের মতো ডিফেন্স তৈরি করে প্রতি-আক্রমণে বিপক্ষকে বিপদে ফেলার ছক। আর তখনই শিল্টন পালের গ্লাভস গড়ে তুলল প্রতিরোধ। স্পোর্টিংয়ের অ্যান্টনি উলফের যে শটটা বাগান কিপার বাঁচালেন—অসাধারণ! ভারত এফসি ম্যাচের ‘খলনায়ক’ টানা দু’ম্যাচে ফের নায়কের আসনে।

বাগান টিমটার সবচেয়ে বড় সুবিধে—কোনও একজন তারকার উপর নির্ভরশীল নয়। সবাই গোল করতে জানেন। খেতাব জয়ে বাগানের শেষ কাঁটা অ্যাসলে ওয়েস্টউডের বেঙ্গালুরুও একটা টিম। সেখানেও সবাই রাজা। বাগান কোচ ঠিকই বলেছেন, ‘‘আর কোনও অনুশীলন নয়। শুধু মনের অনুশীলন করতে হবে এখন। মানসিক প্রস্তুতি নিতে হবে।’’

৩১ মে পর্যন্ত এটাই সঞ্জয় ব্রিগেডের স্লোগান। আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ক্যাচলাইন।

মোহনবাগান: শিল্টন, প্রীতম, বেলো, কিংশুক, সুখেন, সনি (পঙ্কজ), শৌভিক (বিক্রমজিৎ), শেহনাজ, কাতসুমি, বোয়া, বলবন্ত।

ছবি: উৎপল সরকার

mohun bagan Football ratan chakroborty I-League sporting clube de goa
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy