Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

মর্গ্যানের আশ্বাসে আশ্বস্ত হওয়া যাচ্ছে না

গম্ভীর মুখটা নিমেষে বদলে গেল তৃপ্তির হাসিতে। চনমনে ভাব। স্বস্তির ছায়া।

মর্গ্যানের হাসি।

মর্গ্যানের হাসি।

প্রীতম সাহা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:৩৭
Share: Save:

ইস্টবেঙ্গল-১ (ডং)

জর্জ টেলিগ্রাফ-০

গম্ভীর মুখটা নিমেষে বদলে গেল তৃপ্তির হাসিতে। চনমনে ভাব। স্বস্তির ছায়া।

বৃহস্পতিবার বারাসত স্টেডিয়ামে খেলা শেষে মর্গ্যানকে হঠাৎ দেখলে মনে হবে, জর্জ টেলিগ্রাফ ম্যাচ নয়, ডার্বি জিতে ড্রেসিংরুমে ফিরছেন! ইস্টবেঙ্গল কোচের পাশ দিয়ে তখন একে একে তাঁর ফুটবলাররা রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বেরিয়ে যাচ্ছেন, ‘‘এই ভাবে বিপক্ষ দশ জনে ডিফেন্স করলে কী গোল করা যায়? এই ভাবে ফুটবল হয় না। চলতে পারে না।’’ কিন্তু মেহতাবদের রাগে মর্গ্যান নিরুত্তাপ। কখনও রসিকতায় মজে। কখনও টিমের জন্য শুভেচ্ছাবার্তা, ‘‘ডার্বির জন্য ছেলেরা তৈরি। ডার্বিতে ইস্টবেঙ্গলই ফেভারিট।’’

লাল-হলুদ কোচ থাকছেন না মোহনবাগান ম্যাচে। চিকিৎসার জন্য এ দিন রাতেই দেশে ফিরে যাচ্ছেন। কিন্তু তাঁর শরীরীভাষায় যেন বড় ম্যাচের দায়বদ্ধতা নেই! চাপমুক্ত মোড-এ। না হলে ময়দানের তথাকথিত ছোট দল জর্জের বিরুদ্ধে ইস্টবেঙ্গল এমন বিশ্রী খেলার পরেও, মর্গ্যান হালকা থাকতে পারেন কী ভাবে? গোটা সাংবাদিক সম্মেলনটা হাসতে হাসতে করে গেলেন, ‘‘দলকে কলকাতা লিগে সাতটা ম্যাচের সাতটাই জিতে থাকা দেখে যেতে পারছি বলে স্বস্তি লাগছে। আই লিগের আগে ফিরে আসব। ডার্বির যা প্রস্তুতি দরকার, সেটা হয়ে আছে। তার আগে আমাকে ফোন করতেও হবে না।’’

মর্গ্যান যতটা আশ্বাস দিলেন, ততটা কি তৈরি ইস্টবেঙ্গল? যতই দশ ম্যাচের লিগে সাতটা ম্যাচ জিতে পুরো ২১ পয়েন্ট পেয়ে থাকুক! অন্তত এ দিনের ম্যাচের পরে সেটা বুক চাপড়ে হয়তো বলতে পারবেন না কট্টর ইস্টবেঙ্গল সমর্থকও। লাল-হলুদের ট্রেডমার্ক জেদের বদলে ঢিলেমির ভাইরাস ঢুকে পড়েছে দলে। বাড়তি তাগিদ নেই। ইচ্ছাশক্তি প্রায় শূন্যতে।

ডংয়ের গোল। বৃহস্পতিবার বারাসতে ইস্টবেঙ্গলের প্রাপ্তি। ছবি: সুদীপ ঘোষ।

আসলে ইস্টবেঙ্গল জার্সি পরলেই তো আর মশাল জ্বালানো যায় না! এই জার্সির ভার বইতে সুধীর কর্মকার, গৌতম সরকার, সুভাষ ভৌমিক, মনোরঞ্জন ভট্টাচার্যের মতো খিদেটাও তৈরি করতে হয়। সেটাই খুঁজে পাওয়া গেল না অবিনাশ রুইদাস-প্রহ্লাদ রায়দের মধ্যে। রফিক-বিকাশ জাইরু জাতীয় দলে থাকায় প্রথম দলে সুযোগ পেয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু মাঠে সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পারলেন না। আর জিতেন? আগের সাদার্ন সমিতি ম্যাচে গোল করেই যেন রাতারাতি তারকা হয়ে উঠেছেন! একা বল নিয়ে উঠছেন। পাস বাড়ানোর ভাল সুযোগ থাকলেও, দিচ্ছেন না। তবু সাহেব কোচের সান্ত্বনার হাত সবার মাথায়, ‘‘দারুণ খেলছে দল। এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হবে।’’

কোথাও যেন ইস্টবেঙ্গলে প্রথম ইনিংসের মর্গ্যানকে দ্বিতীয় ইনিংসে মেলানো যাচ্ছে না। এতটা হালকা ভঙ্গি তাঁর আগে কখনও দেখা গিয়েছে কি না সন্দেহ! তবে ডার্বির আগে ইস্টবেঙ্গলের হয়তো প্রাপ্তি টিমের সিনিয়র ফুটবলারদের মানসিকতা। যেমন মেহতাব। ডার্বির গুরুত্ব তাঁর কাছে খুবই পরিচিত। তাই ডার্বির আগের ম্যাচে এ দিন মাঠে সারাক্ষণ নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করে গেলেন মাঝমাঠের এই পোড়খাওয়া ফুটবলার। অর্ণব মণ্ডল জাতীয় দলে থাকায় দলের ডিফেন্সকে যেমন যোগ্য হাতে সামলালেন, তেমনই বিকাশ-রফিকদের অনুপস্থিতিতে মাঝমাঠকে নেতৃত্ব দিলেন সুন্দর ভাবে। বাড়ি ফেরার সময় ষাটোর্ধ্ব এক লাল-হলুদ সমর্থক বলছিলেন, ‘‘ডার্বিতে আমরা গোল না করতে পারলেও মেহতাব যখন আছে তখন অন্তত গোল খাব না।’’

এই ইস্টবেঙ্গলে মেহতাব যদি গেমমেকার হন, তা হলে গেমচেঞ্জার বদলে যাওয়া ডং। এ দিনও ম্যাচের একমাত্র গোলটি করে টিমের মুখরক্ষা করেন তিনি। শুধু তাই নয়, এখানে মাত্র দু’মরসুমের বিদেশি হয়েও ডার্বির গুরুত্ব তাঁর এবং তাঁর ক্লাবের কাছে কতটা, সেটাও বুঝিয়ে দিলেন এ দিনের ম্যাচের সেরা কোরিয়ান মিডিও। ‘‘ডার্বির আগে আজকের গোলটা আমার খুব দরকার ছিল। সামনের ক’দিন আমাদের দ্বিগুণ খাটতে হবে প্র্যাকটিসে। রাতের ঘুম উড়বে। যে করেই হোক ডার্বি জিততে হবে আমাদের। ডার্বি হেরে লিগ চ্যাম্পিয়ন হলে তার কোনও দাম থাকবে না ইস্টবেঙ্গলের কাছে।’’

ডং না হয় জ্বলছেন দাউদাউ করে! মেহতাব না হয় ডার্বির ঠিক আগে স্বমহিমায় ফিরছেন। কিন্তু মর্গ্যানের নিশ্চিন্ত মেজাজে দেশে ফেরার মধ্যে কোনও অশনি সঙ্কেত নেই তো? আত্মবিশ্বাস আর অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস যে বরাবর দু’মেরুর বস্তু!

ইস্টবেঙ্গল: দিব্যেন্দু, রাহুল, গুরবিন্দর, ক্যালাম, রবার্ট, মেহতাব, প্রহ্লাদ (সামাদ), লালরিন্দিকা, অবিনাশ (নিখিল), ডং (আদিলেজা), জিতেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Morgan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE