Advertisement
E-Paper

গালাগাল করেছিলেন ফ্রেজিয়ারকে আবার কেঁদেও ছিলেন তাঁর জন্য

কেন্টাকির সেই সাইকেল চোরকে বক্সিং দুনিয়া কোনও দিন ভুলবে না! ভাগ্যিস! মেলার ভিড়ের সুযোগে বছর বারোর কিশোরের সাইকেলটা বেমালুম হাতসাফাই করে ফেলেছিল সে! না হলে মহম্মদ আলিকে হয়তো পেত না বক্সিং দুনিয়া। ছোট্ট ক্যাসিয়াস ক্লের ভীষণ রাগ হয়েছিল সাইকেল চুরি যাওয়ায়। সাইকেলটা একটু রেখে মেলায় ফ্রি পপকর্ন আর ক্যান্ডির খোঁজে গিয়েছিল ক্যাসিয়াস।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০১৬ ০৩:৫২
যে অলিম্পিক্স সোনার পদক ছুড়ে ফেলেছিলেন নদীতে।

যে অলিম্পিক্স সোনার পদক ছুড়ে ফেলেছিলেন নদীতে।

কেন্টাকির সেই সাইকেল চোরকে বক্সিং দুনিয়া কোনও দিন ভুলবে না!

ভাগ্যিস! মেলার ভিড়ের সুযোগে বছর বারোর কিশোরের সাইকেলটা বেমালুম হাতসাফাই করে ফেলেছিল সে! না হলে মহম্মদ আলিকে হয়তো পেত না বক্সিং দুনিয়া।

ছোট্ট ক্যাসিয়াস ক্লের ভীষণ রাগ হয়েছিল সাইকেল চুরি যাওয়ায়। সাইকেলটা একটু রেখে মেলায় ফ্রি পপকর্ন আর ক্যান্ডির খোঁজে গিয়েছিল ক্যাসিয়াস। এর মধ্যেই কিনা সাধের সাইকেলটা ভ্যানিশ! চোরটাকে ধরে খুব একচোট দিতে হবে ভেবেই পুলিশের কাছে নালিশ ঠুকতে গিয়েছিল ক্যাসিয়াস। সেই পুলিশ অফিসার জো মার্টিন কিশোরকে পরামর্শ দেন বক্সিং শিখে নিলে চোরকে পেটাতে সুবিধে হবে। রাজি হয়ে গেল কিশোর।

রিংয়ে ভয়ঙ্কর। রিংয়ের বাইরে সম্পূর্ণ উল্টো। এক প্রহেলিকা। যাঁর নাম মহম্মদ আলি।

কারও কাছে তিনি বিশ্বের সর্বকালের সেরা চ্যাম্পিয়ন। গতি আর বুদ্ধির যুদ্ধে তাঁকে মাত দেবে সাধ্য কার! আবার মহম্মদ আলি মানে নেতা, সমাজসেবী আর ভীষণ ভাবে মানবিক একটা মুখও। তাঁর ভিয়েতনাম যুদ্ধে যেতে না চাওয়া প্রেরণা হয়ে দাঁড়িয়েছিল ১৯৬০-এর যুদ্ধ-বিরোধী আন্দোলনের। বিশ্বে কোথায় না ছুটে গিয়েছেন সমাজসেবার টানে। তা সে ১৯৯০-এ ইরাকে ১৫ জন পণবন্দিকে ছাড়াতে আলোচনার টেবলে বসা হোক বা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে শান্তির উদ্যোগে। লক্ষ লক্ষ ডলার দান করেছেন সমাজসেবায়। জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে। রাষ্ট্রপুঞ্জের শান্তিদূতও হয়েছেন ১৯৯৮-এ। তিন দশক ধরে পার্কিনসন্সের ভয়ঙ্কর প্রভাব সামলেও সাহস জুগিয়েছেন লক্ষ লক্ষ মানুষকে। নিজের শহর লুইভিলে গড়েছেন সমাজসেবার জন্য তাঁর সংস্থা মহম্মদ আলি সেন্টার।

তবে টানা বত্রিশ বছর পার্কিনসন্সের সঙ্গে বাউটের পরে শেষ রাউন্ডে আর জিততে পারলেন না ‘দ্য গ্রেটেস্ট’। গত কয়েক দিন নিশ্বাসে কষ্টের জন্য ফিনিক্সের এক হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন মহম্মদ আলি। এ দিন তাঁর পরিবারের মুখপাত্র জানান, পার্কিনসন্সের সঙ্গে দীর্ঘ যুদ্ধের পরে ৭৪ বছরে মারা গিয়েছেন মহম্মদ আলি। তাঁর শেষকৃত্য হবে কেন্টাকিতেই।

রিংয়ের লড়াইয়ের পাশাপাশি মহম্মদ আলিকে জীবনের গোড়ায় আর একটা যুদ্ধে লড়তে হচ্ছিল। বর্ণবিদ্বেষের। রোম অলিম্পিক্স থেকে দেশে ফিরে যার শিকার হতে হয়েছিল তাঁকে। রেস্তোরাঁয় অপমান, রাস্তায় এক দল ‘হোয়াইট’য়ের সঙ্গে মারপিট ক্যাসিয়াসকে এতটা বিক্ষুব্ধ করে দেয় যে রাগে, দুঃখে রোমে পাওয়া পদকটা ওহিয়ো নদীতে ছুড়ে ফেলে দেন।

রিংয়ে নামার আগেই তাঁর বিখ্যাত আত্মবিশ্বাস আর কথা বলার দুর্ধর্ষ ক্ষমতা ঘুম ছুটিয়ে দিত প্রতিপক্ষের। সনি লিস্টনকে বলেছিলেন ‘কুৎসিত, বুড়ো ভাল্লুক’। মায়ামি বিচে লিস্টনকে হার মানতে বাধ্য করে ২২ বছরের ক্যাসিয়াস বিশ্বের অন্যতম কনিষ্ঠ হেভিওয়েট বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হন। তাতে বর্ণবিদ্বেষের গরগরে রাগটা এতটুকুও কমেনি। তাই সটান বলে দিয়েছিলেন লড়াইয়ের পরই ‘ক্যাসিয়াস ক্লে’ অতীত। এখন থেকে তিনি মহম্মদ আলি।

ভিয়েতনাম যুদ্ধে যেতে অস্বীকার করায় শাস্তি হিসেবে তাঁর খেতাব আর লাইসেন্স কেড়ে নেওয়া হয়। পাঁচ বছর জেলের শাস্তি দেওয়া হয়। সেটা অবশ্য কার্যকর হয়নি। তবে রিংয়ে নামতে দেওয়া হয়নি কেরিয়ারের অমূল্য তিনটে বছর। কিন্তু অদম্য মহম্মদ আলি পরোয়া করলে তো!

রিংয়ে ফিরে ১৯৭১ থেকে ১৯৭৫ আলির কেরিয়ারের বিশ্বখ্যাত তিনটে লড়াই। যার প্রথমটায় হেভিওয়েট বিশ্বচ্যাম্পিয়ন জো ফ্রেজিয়ারের কাছে তিনি অবশ্য হেরে গিয়েছিলেন। তবে তাঁর শব্দাস্ত্র চালু ছিল। বলেছিলেন, ‘‘ফ্রেজিয়ার এতটাই কুৎসিত যে ওর মুখটা মার্কিন ব্যুরো অব ওয়াইল্ডলাইফকে দান করে দেওয়া উচিত।’’ বলেছিলেন, ‘‘ফ্রেজিয়ার ম্যানিলায় গোরিলা,’’ ‘‘ফ্রেজিয়ার এত কুৎসিত যে তিনি কাঁদলে চোখের জল মাথার উপর দিয়ে ঘুরে যায়।’’ কিন্তু পরে এগুলো বলার জন্যই অনুতাপের শেষ ছিল না। একটি তথ্যচিত্রে তাঁর মেয়ে হানা স্বীকার করেছিলেন, ফ্রেজিয়ারকে নিয়ে এ সব বলার জন্য তাঁর বাচ্চারা কী ভাবে স্কুলে হেনস্থা হত শুনে মহম্মদ আলি চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি। আলির অন্যতম ম্যানেজার জিন কিলরয় স্বীকার করেছিলেন, ‘‘ফ্রেজিয়ারের শেষকৃত্যে আলি খুব দুঃখে ছিল। জো-কে ও খুব সম্মান করত। জোকে ও কখনও ঘৃণা করেনি।’’

ফ্রেজিয়ারের শেষকৃত্যে ফুল পাঠিয়েছিলেন আলি। এবং তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীর জন্য আলির বার্তা ছিল— ‘‘শান্তিতে বিশ্রাম নাও বন্ধু। যতক্ষণ না আবার আমাদের দেখা হচ্ছে। তবে পরের বার দেখা হলে লড়াই নয়, শুধু জড়িয়ে ধরব তোমায়।’’

Muhammad Ali Joe Frazier
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy