Advertisement
E-Paper

মুম্বই ইন্ডিয়ান্স তো টানা ছ’টা হেরেও চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল

চব্বিশ ঘণ্টা আগে ওই বিশ্রী রান আউটেও যেন কিছুই বদলায়নি। কেকেআরের বিরুদ্ধে মর্যাদার লড়াইয়ে নামার আগে ঘোর আত্মবিশ্বাসী দেখাল তাঁকেই। পুণের টিম হোটেলের চব্বিশ তলায় শনিবার বিকেলে তাঁর সঙ্গে একান্তে আধঘণ্টা কাটিয়ে মনে হল অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক আইপিএলে শুধু আইপিএলই দেখছেন না। স্টিভ স্মিথের লক্ষ্য আরও গভীরে...আমি আগের সিজনটা দারুণ ফর্মে ছিলাম যাকে বলে ব্যাটসম্যানের পার্পল প্যাচ। প্রতি বার একই রকম যাবে ভাবাটা বোকামি। আমি এত বোকা নই।

গৌতম ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:২৪

কোহালি ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা

প্রশ্ন: বিরাট কোহালি সামনে অস্ট্রেলিয়া পেলেই রান করবেন। স্টিভ স্মিথ সামনে ভারত পেলেই রান করবেন। এই অদ্ভুত ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করবেন?

স্মিথ: এটা আর কী। আমি আগের সিজনটা দারুণ ফর্মে ছিলাম যাকে বলে ব্যাটসম্যানের পার্পল প্যাচ। প্রতি বার একই রকম যাবে ভাবাটা বোকামি। আমি এত বোকা নই।

প্র: বিরাটের ব্যাপারটা কী বলবেন? এই যে মোহালিতে একাই অস্ট্রেলিয়াকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে উড়িয়ে দিলেন।

স্মিথ: ওই ইনিংসটা সত্যি অসাধারণ। আমি সেই রাতে ঘুমোতে পারিনি। ভাবতেই পারিনি ম্যাচটা পিছলে যেতে পারে। যথেষ্ট ভাল স্কোর করেছিলাম আমরা। দু’তিনটে উইকেট ঝটঝট পড়েও গিয়েছিল ওদের। কিন্তু তার পর বিরাট এমন একটা ইনিংস খেলে দিল যার কোনও জবাব হয় না।

প্র: বিরাটের ভারত বিশ্বকাপ ফাইনালেও যে উঠল না, তাতে অবাক হয়েছিলেন?

স্মিথ: ওয়েস্ট ইন্ডিজ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মতোই টিম ছিল। অসম্ভব গায়ের জোর ওদের। এক একজন পাওয়ার হিটার এমন আছে যে গ্যালারিতে ফিল্ডার রাখতে হবে। এই কন্ডিশনের জন্য ওদের স্পিন অ্যাটাকটাও খুব ভাল ছিল। তবে আপনার প্রশ্নের জবাবে বলি, ভারতকে অন্যতম ফেভারিট ধরেছিলাম।

প্র: মুম্বইয়ের সেমিফাইনাল টিভিতে দেখেছিলেন?

স্মিথ: হ্যাঁ দুবাইয়ে বসে দেখছিলাম আর ভাবছিলাম নিজের দেশে বিশ্বকাপ খেললে এই সমস্যাটাই হয়। প্রচণ্ড বাড়তি চাপ থাকে। আমাদের যা ছিল দেশে ওয়ান ডে বিশ্বকাপ খেলার সময়।

প্র: কিন্তু সেই চাপ সামলে তো আপনারা বিশ্বকাপ জিতেছিলেন।

স্মিথ: হ্যাঁ, কিন্তু হাড়ে ঠান্ডা বাতাস বইয়ে দিয়েছিল সেই চাপ। আমি এ রকম কিছুর সামনে জীবনে পড়িনি।

প্র: আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে স্নো হোয়াইটের সৎ মা বলত, ওহে আয়না তুমি বল তো পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরী মহিলা কে? আয়না অন্য কারও নাম করলেই সে যন্ত্রণাকাতর হয়ে পড়ত। আপনিও যখন আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের সঙ্গে কথা বলেন, বিশ্বে এক নম্বর ব্যাট হিসেবে কাকে দেখতে পান?

স্মিথ: আমি নিজেকে দেখতে পাই আর সেটা থেকে সাহস শুষে নেওয়ার চেষ্টা করি। যদিও বাস্তব হয়তো সেটা নয় (হাসি)।

প্র: বাস্তব কী?

স্মিথ: বাস্তব হল তিনটে ফর্ম্যাটেই বিশ্বের এক নম্বর ব্যাটসম্যানের নাম এবি ডে’ভিলিয়ার্স। ও হল রিয়েল ৩৬০ ডিগ্রি প্লেয়ার।

প্র: বিরাট-সহ বাকিদের র‌্যাঙ্কিং করে দিন। দুই থেকে পাঁচ।

স্মিথ: বাকিদের র‌্যাঙ্কিং করতে চাই না। তবে ওই জায়গাটায় আমি আছি। বিরাট আছে। জো রুট আছে।

প্র: কাল যখন বিশ্ব ব্যাটসম্যানশিপের রাজমুকুটে আপনার দুই প্রতিদ্বন্দ্বী বিরাট আর ডে’ভিলিয়ার্স বেধড়ক মারছিলেন, কী মনে হচ্ছিল?

স্মিথ: মনে হচ্ছিল, তোমাদের খেলা টিভিতে দেখতে এত ভাল লাগে। কিন্তু ঘুরেফিরে আমার বিরুদ্ধে যে কেন এত খেল কে জানে! টিভিতে তোমরা যতটা উপভোগ্য সামনে মাঠে দাঁড়িয়ে ততটাই যন্ত্রণার!

পুণে সুপারজায়ান্টস

প্র: কাল তো সামনে কেকেআর। আপনার ফ্র্যাঞ্চাইজির এক অর্থে প্রেস্টিজ ফাইট। কী মনে হচ্ছে?

স্মিথ: মনে হচ্ছে, আমাদের দ্রুত ছন্দে ফেরা দরকার। আর সেটা যেন কাল থেকেই হয়।

প্র: শাহরুখের সঙ্গে আলাপ আছে?

স্মিথ: না।

প্র: সে কী চেনেনই না?

স্মিথ: চেনা বলতে যদি এক-আধবার হ্যান্ডশেক হয়ে থাকে তার বেশি না।

প্র: বাট সেটাও আপনার মনে নেই?

স্মিথ: না।

প্র: ওর কোনও ফিল্ম দেখেননি?

স্মিথ: না।

প্র: আর আপনার নতুন ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিক সঞ্জীব গোয়েন্কা?

স্মিথ: ওর সঙ্গে আলাপ হয়েছে। ক্রিকেট নিয়ে দেখলাম খুব প্যাশনেট। কাল খেলার আগে টিমকে উদ্দেশ্য করে উনি বললেনও। না জিততে পারায় নিশ্চয়ই উনি নিরাশ হবেন। কিন্তু কম্পিটিটিভ স্পোর্ট এমনই। জেতা-হারা ও ভাবে কন্ট্রোল করা যায় না।

প্র: ফর্ম বিচারে কেকেআর কাল আপনাদের থেকে অনেক এগিয়ে শুরু করছে। আপনারা তো তিনটে ম্যাচ হেরে বসে আছেন।

স্মিথ: আইপিএল ফর্ম্যাটে শুরুর দিককার রেজাল্ট সব সময় সুনিশ্চিত ম্যাপ নয়। আমরা এখনও জোরদার ভাবে টুর্নামেন্টে ফেরত আসতে পারি। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সকে গত বছর দেখেননি? টানা ছ’টা ম্যাচ হেরেও টুর্নামেন্ট জিতল। আমি শিওর এমএস নিশ্চয়ই নতুন প্ল্যান ছকছে।

প্র: আপনাকে আজ ইন্টারভিউ করতে বসে বারবার ২০১২-র পুণে মনে পড়ে যাচ্ছে। যখন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বলে কারও অধীনে আপনি খেলতেন। আজ খেলছেন এমএস ধোনির নেতৃত্বে। সৌরভ আর ধোনি ভারতীয় ক্রিকেটের যুগন্ধর দুই নেতা। আপনি হলেন অস্ট্রেলিয়ার ক্যাপ্টেন। একটু বলুন এই দুই অধিনায়ক থেকে আপনি অধিনায়কত্বের কী শিখেছেন?

স্মিথ: ওরা দু’জনে সম্পূর্ণ দু’রকমের। এমএস খুব ঠাণ্ডা। ম্যাচ হারলেও চুপচাপ থাকে। সৌরভ অনেক ভোকাল। তবে সৌরভেরটা এখানে ধরা বোধহয় উচিত না। সে বার পুণে লাস্ট পজিশনে থেকে শেষ করে। টিমটার কোনও কিছুই ঠিক মতো চলছিল না। এমএসের আন্ডারেও সবে আমি খেলছি। এখুনি অ্যাসেসমেন্ট করা কঠিন।

প্র: কী বলছেন একটা দেশের যে ক্যাপ্টেন সে যখনই অন্যের অধীনে খেলবে তার মাথার মিটার টিকটিক করবেই যে এই সিচুয়েশনে আমি হলে অমুকটা করতাম।

স্মিথ: এক দিক দিয়ে ঠিক। ধোনির স্পিনারের জন্য ফিল্ড সেটিং আমি খুব মন দিয়ে দেখি। কী করে কখন এই উইকেটে ও স্পিনারকে অ্যাটাকে আনে? কখন সরায়। নানান ধরনের স্পিনার রয়েছে আইপিএলে। এই বৈচিত্রটা আমাকে খুব টানে। আমি খুব মন দিয়ে ওদের কাজ দেখি!

ব্যাগি গ্রিনের উত্তরাধিকার

প্র: ব্যাগি গ্রিনের উত্তরাধিকার এখন আপনার হাতে। এই দোর্দণ্ডপ্রতাপ সাম্রাজ্য নিয়ে কী করবেন কিছু ভেবেছেন?

স্মিথ: অস্ট্রেলিয়াকে তিন ফর্ম্যাটেই বিশ্বের এক নম্বর টিম হিসেবে দেখতে চাই। জিততে চাই ২০১৯ বিশ্বকাপ আবার! আর ইংল্যান্ডের মাঠ থেকে অ্যাসেজ ছিনিয়ে আনতে চাই।

প্র: তার জন্য রোডম্যাপটা কী ভাবে করছেন?

স্মিথ: লক্ষ্যটা গোটা টিমের কাছে পরিষ্কার থাকা চাই যে আমরা কোন দিকে যাচ্ছি। সেই মুভমেন্টের জন্য নিরন্তর ফোকাস চাই। আর চাই উপযুক্ত প্রস্তুতি। আগেকার দিনের চেয়ে বড় তফাত হল, এখন এত বেশি ম্যাচ থাকে যে আপনি টিমকে বলতে পারেন না চলো রোজ প্র্যাকটিসে চলো। আজকালকার দিনে যা তৈরি করতে হয়, তা হল স্মার্ট ট্রেনিং শিডিউল। আর বিপক্ষকে প্রতিনিয়ত নজরে রাখতে হয়। কে কোথায় কী করছে। ব্যক্তিগত ভাবে যদিও আমার কাছে এই কম প্র্যাকটিস করাটা খুব অসহ্য।

প্র: কেন?

স্মিথ: কারণ আমি ক্রিকেট প্লেয়ার হিসেবে খুব হাইপার। আমার সব সময় কিছু না কিছু অ্যাক্টিভিটিজ চাই। হয় আমি ডাইভ দিয়ে বল ধরব। বা ক্রমাগত ব্যাট করে যাব।

প্র: সাধারণ ধারণা হল আইপিএল ড্রেসিংরুমে অনেক জাতীয় মন্ত্রগুপ্তি নিঃসাড়ে পাচার হয়ে যায়। বিপক্ষ কাছ থেকে দেখে ফেলে এত দিন যাকে হারাতে পারছিলাম না তার গোপন রহস্যটা আসলে কোথায় লুকিয়ে? কী ভাবে লোকটা তৈরি হয়? এই রহস্য পাচার হয়ে যাওয়ার দর্শনটা আপনি অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক কি মানেন?

স্মিথ: তত্ত্বটা আমি জানি কিন্তু পুরো বিশ্বাস করি না। এখনকার ভিডিও প্রযুক্তির যুগে সবাই জানে কাকে কী ভাবে মাপতে হবে। রহস্য বলে সেই অর্থে আর কিছু নেই। এই যে আমার টিমেরই অশ্বিন দেখছি নেটে আমায় বেশির ভাগ সময় লেগস্পিন করে। না করে ক্যারম বল বা ওর ট্রেডমার্ক অফস্পিন। আমি তখন মনে মনে বলি তুই কী ভাবছিস, ওই বলগুলো না করলে পরে আমি ইন্ডিয়া ম্যাচে বেকায়দায় পড়ে যাব? আমি তোর বোলিং আগাপাশতলা চিনি। আর তার জন্য তোর সঙ্গে ড্রেসিংরুম শেয়ার করার দরকার পড়ে না।

প্র: অজি ক্রিকেট ক্যাপ্টেন্সিতে দু’টো ধারা আছে। একটা স্টিভ ওয় ঘরানা। একটা শেন ওয়ার্ন-রিকি পন্টিং স্টাইল। আপনি কোনটা?

স্মিথ: আমার তো মনে হয় আমি আমার মতো। দু’টো ঘরানা থেকেই আমি কিছু কিছু করে নিয়েছি। নিয়ে নিজের বৈশিষ্ট্য যোগ করে নতুন ছাঁচ তৈরি করেছি।

প্র: স্টিভ নামটা শেয়ার করেন বলেই শুধু নয়, কোথাও মনে হয় আপনি বেশিটা স্টিভ ওয়।

স্মিথ: কেন?

প্র: কারণ কোথাও আপনার চিন্তাভাবনার ধরন সুদূরপ্রসারী। আপনি একই রকম উচ্চাকাঙ্ক্ষী। এই আইপিএলেও মনে হয় আপনি যত না টাকার জন্য খেলেন, তার চেয়ে বেশি ভারতীয় উইকেটকে আত্মস্থ করার জন্য খেলেন। যাতে পরে গিয়ে ব্যাগি গ্রিনের কাজে লাগে।

স্মিথ: (হাসি) বলছেন এটা আমার ক্র্যাশ কোর্স?

প্র: তাই তো মনে হয়।

স্মিথ: বোধহয় তাই। এই ভিনদেশি পিচে রপ্ত হওয়ার মধ্যে একটা চ্যালেঞ্জের ব্যাপার আছে। অনেক কিছু শিক্ষণীয় আছে। তার টানটা উপেক্ষা করা যায় না।

প্র: শেষ প্রশ্নে চলে এসছি।

স্মিথ: বলুন।

প্র: এটা না জিজ্ঞেস করে পারলাম না যে, কিছু দিন আগে ওয়ার্ন আর ওয়-র মধ্যে খুলেআম ঝগড়াঝাঁটি চলছিল, তখন আপনি অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক বসে কী ভাবছিলেন?

স্মিথ: খুব হতাশ লেগেছিল যে এটা কী হচ্ছে?

আমরা না বলি অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট হল একটা বড় পরিবার যেখানে একে অপরের জন্য সব সময় রয়েছে। সেখানে ভেতরের কেচ্ছা নিয়ে এমন প্রকাশ্য আলোচনা! হায় বাকি পৃথিবীর কাছে তো আমরা ছোট হয়ে গেলাম।

IPL 2016 mumbai indians virat kohli steve smith
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy