কাঁধে সফল অস্ত্রোপচারের শেষে লন্ডন থেকে এক মাস পর ঢাকায় ফিরেছেন রীতিমতো ‘জামাই আদরে’। বাংলাদেশ বিমানের সাড়ে ৯ ঘন্টার যাত্রায় কেবিন ক্রু থেকে শুরু করে এয়াহস্টেসদের থেকে আলাদা খাতির পেয়েছেন। মুস্তাফিজুরের সঙ্গে সেলফি তুলেছেন অনেকেই। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাঁকে সঙ্গে করে নামিয়েছেন স্বয়ং পাইলট।
বিমানবন্দরে নেমে মিডিয়ার সঙ্গে কথাবার্তায় চলেই এল সেই ইঞ্জেকশনে ভয়ের কথা। কাটার যাদুতে আতঙ্ক ছড়ান যে ছেলে, তিনি শরীরে ইনজেকশন পুশের কথা শুনলেই আঁতকে ওঠেন। অস্ত্রোপচারের দৌলতে এত দিনে যে ভয়ের কথা জেনে গেছেন দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে আম মুস্তাফি-ভক্তের দল। ফিরে নিজের মুখে স্বীকারও করলেন বাঁ হাতি পেসার, ‘ইনজেকশনের কথা শুনলেই ভয় পাই। সুঁই দেখলে ভয় লাগে। এর আগে হাতে গোনা ক’বার মাত্র ইনজেকশন নিয়েছি। অপারেশনের আগে নিজেকে বলেছি, ইনজেকশন দিলে ব্যথা লাগবে, কিন্তু অস্ত্রোপচারের সময় তো ব্যথা পাব না। তাই অপারেশনের আগে মনের এই ভয়টাকেই জয় করতে হয়েছে।’
গত ১১ অগস্ট অপারেশন টেবিলে নেওয়ার আগে মুস্তাফিজুরকে অভয় দিতে টেলিফোনে কথা বলেছিলেন বাংলাদেশ দলের ওয়ানডে এবং টি-২০ অধিনায়ক মাশরাফি। ভয় কাটাতে লন্ডনের বুপা ক্রমওয়েল হাসপাতালে ছুটে গিয়েছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। সব কিছুর উপর, মুস্তাফিজুরকে টেলিফোনে সাহস জুগিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বয়ং। অস্ত্রোপচারের আগে বিশেষজ্ঞ সার্জন অ্যান্ড্রু ওয়ালেশ মুস্তাফিজুরকে সহজ করতে তার সঙ্গে ছবি পর্যন্ত তুলেছেন !
গত শুক্রবার লন্ডন থেকে ঢাকায় ফেরার কথা ছিল মুস্তাফিজুরের। কিন্তু অ্যান্ড্রু ওয়ালেসের কাছে অপারেশন পরবর্তী প্রয়োজনীয় চেক আপ শেষ করে ফিরেছেন গতকাল, সোমবার। কাঁধের সেলাই এবং ব্যান্ডেজ খুলে দিয়েছেন অ্যান্ড্রু ওয়ালেশ। বাঁ কাঁধে অপারেশনের জায়গায় ব্যথা নেই আর।

তবে দেশে ফিরলেও ঘর কাতুরে ছেলেটি এখন ঘরে ফিরতে পারছেন না। ঢাকায় নেমে পরিবার পরিজনের কাউকে চোখের দেখা দেখতে পারেননি। সেলফোনে কথা বলেছেন বাবা, মা’র সঙ্গে। ঢাকায় থেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ড্রিলগুলো করতে হবে, আস্তে আস্তে হালকা জিম করতে হবে। তাই এখন সাতক্ষীরায় যেতে পারছেন না মুস্তাফিজুর। উঠেছেন মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে অ্যাকাডেমি ভবনে। ‘‘অস্ত্রোপচারের পর ডাক্তার (অ্যান্ড্রু ওয়ালশ) আমাকে কী কী করতে হবে, তা দেখিয়ে দিয়েছেন। বিসিবি’র ডাক্তার দেবাশিসদা’কে উনি সব কিছু বুঝিয়ে দিয়েছেন । সে অনুযায়ী কাজ করব। চার সপ্তাহ পর থেকে আমার নিজের কাজটা আরও বাড়তে থাকবে’- বললেন মুস্তাফিজ।
আরও পড়ুন: মুস্তাফিজুরের কাঁধে অস্ত্রোপচার সফল, মাঠে ফিরতে অন্তত চার মাস
মাঠে ফিরতে অপেক্ষা করতে হবে অন্তত চার মাস। খেলতে পারবেন না ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আসন্ন হোম সিরিজ। মিস করতে পারেন আগামী নভেম্বরে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল)। ‘খেলতে না পারলে খারাপ তো লাগবেই’- মনের হতাশা এ ভাবই খানিক হালকা করার চেষ্টা করলেন তিনি।
ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) দর্শকের হৃদয় জয় করে বড় আশা নিয়েই ইংলিশ কাউন্টিতে খেলতে গিয়েছিলেন মুস্তাফিজুর। চেম্পসফোর্ডে গত ২১ জুলাই নিজের অভিষেকে টি-২০ ব্লাস্টে এসেক্সের বিপক্ষে চার উইকেট (৪/২৩) নিয়ে কাউন্টি মাতানোর আভাস দিয়েছিলেন। ওভালে পরের ম্যাচে এসেক্সের বিপক্ষে উইকেটহীন কাটিয়ে ওয়ানডে ম্যাচে যখন নামবেন, তার ঠিক আগে অনুশীলনে কাঁধে চোট পেলেন। এমআরআই রিপোর্টে অপারেশন ছাড়া বিকল্প পথ খোলা ছিল না। ‘আশা করেছিলাম, সাসেক্সের হয়ে বাকি ম্যাচগুলো খেলতে পারব। কিন্তু ইনজুরির কারণে খেলতে পারিনি বলে খুব খারাপ লাগছে’- বললেন মুস্তাফিজুর। এই নিয়ে কেরিয়ারে দু’বার ইংল্যান্ড সফর করেছেন। ২০১৪ সালে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে, আর এবার কাউন্টি মিশনে। দু’বারই আহত হয়ে ফিরেছেন।