Advertisement
E-Paper

পাঁচশো জনের রান্না করেও এশিয়াডে রাখি

নদিয়ার পিছিয়ে পড়া মৎস্যজীবী গ্রামের মেয়ে হয়েও তেলুগু, তামিল, ওড়িশি, মণিপুরী ভাষাতে অনর্গল কথা বলতে পারেন।

রতন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৮ ০৩:৪৫
লক্ষ্য: এশিয়াডে পদক জিততে মরিয়া রাখি। —নিজস্ব চিত্র

লক্ষ্য: এশিয়াডে পদক জিততে মরিয়া রাখি। —নিজস্ব চিত্র

আথেন্স অলিম্পিক্সে কর্ণম মালেশ্বরীর কুড়ি বছর আগের রেকর্ড পাঁচ মাস আগে জাতীয় আসরে নেমে ভেঙে দিয়েছেন অবলীলায়। কোচিং নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ৩৫০ টাকা জোগাড় করতে দক্ষিণ ভারতের এক স্কুলে পাঁচশো ছেলে মেয়ের রান্না করতে হয়েছে। দু’বেলা অনুশীলনের পর।

নদিয়ার পিছিয়ে পড়া মৎস্যজীবী গ্রামের মেয়ে হয়েও তেলুগু, তামিল, ওড়িশি, মণিপুরী ভাষাতে অনর্গল কথা বলতে পারেন। জাতীয় শিবিরে অতিরিক্ত প্রোটিনজাত খাদ্যের টাকা জোগাড় করতে নানা জনের কাছে হাত পেতেছেন এক মাস আগেও।

পাঁচ বারের ভারোত্তোলনের জাতীয় চ্যাম্পিয়ন, রেকর্ড, কমনওয়েলথ ও এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে পদক জিতেও বাদ গিয়েছিলেন সদ্য সমাপ্ত কমনওয়েলথ গেমসে। দু’বছর আগে দল নির্বাচিত হয়ে যাওয়ায়।

এ রকম অসংখ্য চড়াই-উতরাই, ঘাত-প্রতিঘাতের নাটকীয় জীবনে হঠাৎই যেন সূর্যের আলো এসে পড়েছে নদিয়ার হতদরিদ্র পরিবারের মেয়ে রাখি হালদারের জীবনে। দু’টি ঘটনা বদলে দিয়েছে বঙ্গকন্যার জীবনটাই। ‘‘সেটা বলতেই পারেন। জাকার্তা এশিয়াডের জন্য ভারতীয় দলের শিবিরে নির্বাচিত হয়েছি। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ক্রীড়া যুব কল্যাণ দফতরের ‘টপস’ (টার্গেট অলিম্পিক্স পোডিয়াম স্কিম) পরিকল্পনায় নেওয়া হয়েছে। যাতে আমার অনুশীলনের জন্য যে খরচ দরকার সেটা পেয়ে যাব। বাড়তি প্রোটিন খাবারও দেওয়া হচ্ছে এখন। রেলে চাকরি করে সামান্য যে মাইনে পাই তাতে তো সংসারই চলে না,’’ শিলংয়ের সিলারুর জাতীয় শিবির থেকে ফোনে বলছিলেন এশিয়াডের পদক জেতার স্বপ্ন দেখা রাখি। সাধারণত দেশের হয়ে যাঁরা পদক জিততে পারেন তাঁদেরই রাখা হয় ‘টপস’-এ। ভারোত্তোলনে যেমন রয়েছেন গোল্ড কোস্ট কমনওয়েলথ গেমসের দুই সেনাজয়ী মীরাবাঈ চানু এবং সঞ্চিতা চানু।

৬৩ কেজি না ৬৯ কেজি—এশিয়াডে কোন বিভাগে রাখি ওজন তুলতে নামবেন এখনও জানেন না। বলছিলেন, ‘‘এখন শিলংয়ের পাহাড়ে উপর এক ডিগ্রি ঠান্ডায় অনুশীলন করছি। এখানে যত ওজন তুলব, পাতিয়ালায় তার চেয়েও বেশি তুলব আশা করছি। তারপরে কোচ ঠিক করবেন কোন বিভাগে নামব।’’ সঙ্গে মন্তব্য, ‘‘কমনওয়েলথে সুযোগ পাইনি আগে দল নির্বাচিত হয়ে যাওয়ায়। না হলে ওখানে আমার বিভাগে যে সোনা জিতেছে সে আমার কাছে হারত। কারণ ওর চেয়ে বেশি ওজন তুলেছি সিনিয়র জাতীয় প্রতিযোগিতায়।’’

কিন্তু কেন জানুয়ারিতে মালেশ্বরীর রেকর্ড ভাঙার পরেও এপ্রিল মাসের কমনওয়েলথে জায়গা হল না রাখির? জাতীয় কোচ বিজয় শর্মা বললেন, ‘‘দু’বছর আগে দল নির্বাচন হয়েছিল। তাই নেওয়া যায়নি। এটা আমারও আফসোস। তবে আমার আশা এশিয়াডে ও পদক পাবে।’’

নদিয়ার হাবিবপুরে মৎস্যজীবী পরিবারের মেয়ে রাখি। তাঁর গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছলেও রাস্তা এখনও মাটির। বাড়ি টালির। পথ দুর্ঘটনায় বাবা আহত হওয়ার আগে তাঁর সঙ্গে মাছ ধরতে বিষ্ণুপুর ঝিলে যেতেন। ছাদে ধানের বস্তা তুলতেন অবলীলায়। বলছিলেন, ‘‘ছোটবেলার এই কাজগুলো আমার পেশির শক্তি বাড়িয়েছে। সেটা এখন কাজে লাগছে।’’ স্ন্যাচ এবং ক্লিন অ্যান্ড জার্ক মিলিয়ে ২৩০ কেজি (১০২ এবং ১২৮) তুলেছেন এ বছর জানুয়ারিতে। যা পরিস্থিতি তাতে জার্কাতায় অগস্টে এই ওজন তুলতে পারলেই পদক জিততে পারবেন পাঁচিশে পা দেওয়া রাখি। কমনওয়েলথের আফসোস তুলে রেখে আপাতত রাখির পাখির চোখ আটকে এশিয়াড পদকে। ‘‘জাকার্তায় পদক জিতে প্রমাণ করতেই হবে আমি কমনওয়েলথে নামলে রেকর্ড গড়তাম,’’ ফোনের অন্য প্রান্তের এই মেয়ের গলায় প্রবল আত্মবিশ্বাস।

Rakhi Haldar Weightlifting
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy