Advertisement
E-Paper

দিল্লি যাত্রায় নয়াগ্রামের ভরসা শুধুই মনোবল 

সুব্রত কাপে মেয়েদের বিভাগে রাজ্য চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেপ্টেম্বরে দিল্লি যাবে নয়াগ্রাম থানা বালিকা বিদ্যালয়। কিন্তু তার প্রস্তুতি নেই বললেই চলে। খোঁজ নিলেন সৌমেশ্বর মণ্ডলওই বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা রেবতী পাত্রের ক্ষোভ, ‘‘দিল্লিতে খেলতে যাওয়ার আগে আমাদের মেয়েদের বিশেষ প্রশিক্ষণ হয় না। আমাদের স্কুলের পরিকাঠামো সীমিত। তাতে মেয়েদের স্কিল তেমন  বাড়ে না। তাই দিল্লির মাঠে নেমে সমস্যা হয়।’’

শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০১৮ ০১:৫৯
অনুশীলনে মগ্ন নয়াগ্রাম থানা বালিকা বিদ্যালয়ের মেয়েরা। —নিজস্ব চিত্র

অনুশীলনে মগ্ন নয়াগ্রাম থানা বালিকা বিদ্যালয়ের মেয়েরা। —নিজস্ব চিত্র

ভারতীয় স্কুল ফুটবলের ‘বিশ্বকাপ’ বলে পরিচিত সুব্রত কাপে যোগদানকারী স্কুলের সংখ্যা প্রতি বছর বাড়ছে। মহকুমা স্তর থেকে শুরু হওয়া এই প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্যায়ের খেলা হয় দিল্লিতে। ২০১২ সাল থেকে শুরু হয়েছে মেয়েদের বিভাগ। জঙ্গলমহলের কয়েকটি মেয়েদের বিভিন্ন সময়ে স্কুল রাজ্য চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুবাদে চূড়ান্ত পর্যায়ে যোগ দিয়েছে। কিন্তু সেখানে সাফল্য আসেনি বললেই চলে। এই বছরও রাজ্যের মেয়েদের অনূর্ধ্ব ১৭ বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ঝাড়গ্রামের নয়াগ্রাম থানা বালিকা বিদ্যালয়। চূড়ান্ত পর্যায়ের খেলা হবে সেপ্টেম্বর মাসে। কিন্তু অগস্টের অর্ধেক দিন কেটে গেলেও স্কুলে সুব্রত কাপের জন্য আলাদা প্রস্তুতি শুরু হয়নি। সরকারি স্তরে কোনও সাহায্যও মেলেনি। আপাতত মেদিনীপুর থেকে একজন প্রশিক্ষক সপ্তাহে চার দিন স্কুলের মেয়েদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন।

ওই বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা রেবতী পাত্রের ক্ষোভ, ‘‘দিল্লিতে খেলতে যাওয়ার আগে আমাদের মেয়েদের বিশেষ প্রশিক্ষণ হয় না। আমাদের স্কুলের পরিকাঠামো সীমিত। তাতে মেয়েদের স্কিল তেমন বাড়ে না। তাই দিল্লির মাঠে নেমে সমস্যা হয়। শুধু মনোবলের ভরসায় ম্যাচ জেতা যায় না। এ বার দিল্লি যাওয়ার আগে মেয়েদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার জন্য ব্লক যুব আধিকারিককে জানিয়েছি। বিদ্যালয়ের খেলার নিজস্ব মাঠও নেই। মেয়েরা বিদ্যালয় সংলগ্ন ক্লাবের মাঠে অনুশীলন করে। বিদ্যালয়ের মাঠের ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে।’’ যদিও বিদ্যালয়ের পাশেই নয়াগ্রাম স্টেডিয়াম রয়েছে। কিন্তু ব্যবহার না করায় সেটি নষ্ট হচ্ছে। দুস্কৃতীরা মাঠের ঘাস কেটে নিয়ে পালাচ্ছে। বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ওই স্টেডিয়াম ব্যবহারের অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। নয়াগ্রাম থানা বালিকা বিদ্যাপীঠের ক্রীড়া শিক্ষিকা কাকলি চক্রবর্তী জানান, অন্যান্য রাজ্যের ক্ষেত্রে চ্যাম্পিয়ন স্কুলের ফুটবলারদের দিকে প্রশাসন বিশেষ নজর দেয়। পুষ্টিকর খাবার ও খেলার সরঞ্জাম দেওয়া হয়। তাই মাঠে নামার আগে মানসিক ভাবে তারা কিছুটা হলেও এগিয়ে থাকে। তাঁর পরামর্শ, কলকাতা ময়দানের প্রথম সারির দলের সঙ্গে প্রস্তুতি ম্যাচ খেললে মেয়েদের মনোবল ও স্কিল বাড়ে।

নয়াগ্রামের স্কুলটি এই নিয়ে তিন বার দিল্লি যাওয়ার সুযোগ পেয়েছে। ২০১৩ সালে সুব্রত কাপে রাজ্য চ্যম্পিয়ন হয়েছিল নয়াগ্রামের এই স্কুল। কিন্তু দিল্লিতে প্রথম রাউন্ডেই হেরে ফিরতে হয়েছিল তাদের। ২০১৪ সালে ঝাড়গ্রামের কেশিয়াপাতা জিএম হাইস্কুলের মেয়েরা রাজ্য চ্যাম্পিয়ন হয়ে দিল্লি যাওয়ার ছাড়পত্র পায়। ঝাড়গ্রামের স্কুলটিও প্রথম রাউন্ডে ছিটকে যায়। ২০১৭ সালেও রাজ্য চ্যাম্পিয়ন হয়ে দিল্লি যাওয়ার সুযোগ পায় নয়াগ্রাম। সেবার বিদায় নিতে হয় দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে। ফের সুযোগ এসেছে ২০১৮ সালে। কিন্তু এ বারেও পর্যাপ্ত প্রস্তুতি না নিয়েই সম্ভবত দিল্লি যেতে হবে জঙ্গলমহলের কন্যাশ্রীদের। যদিও রাজ্য বিদ্যালয় ক্রীড়া সংসদের সম্পাদক দিলীপ যাদব আশ্বাস দিয়েছেন, ‘‘চলতি বছরে দিল্লি যাওয়ার আগে নয়াগ্রামের স্কুলের মেয়েদের বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা হবে।’’

জঙ্গলমহলের দিকে বরাবরই বিশেষ নজর রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর। মূলত পুলিশের উদ্যোগে চালু হওয়া ‘জঙ্গলমহল কাপ’-এর দৌলতেই জঙ্গলমহলের বিভিন্ন জায়গায় মেয়েদের ফুটবল দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। মেয়েদের কয়েকটি স্কুলও ফুটবলের অনুশীলন শুরু করে। রাজ্য ভিত্তিক প্রতিযোগিতায় যোগ দিয়ে সাফল্য পায় জঙ্গলমহলের কয়েকটি ক্লাব ও স্কুল। নয়াগ্রাম ও শালবনিতে তৈরি হয় আধুনিক মানের স্টেডিয়াম। কিন্তু সেগুলি ব্যবহার হয় না বললেই চলে। দীর্ঘদিন তালবন্ধ থাকার পরে সম্প্রতি দু’টি স্টেডিয়ামে ঘাস কাটার কাজ শুরু হয়েছে। নয়াগ্রামের বিডিও সৌরেন্দ্র পতি জানিয়েছেন, নয়াগ্রাম স্টেডিয়ামের মাঠ ঠিক হয়ে গেলে নয়াগ্রাম থানা বালিকা বিদ্যালয়ের মেয়েরা অনুশীলনের সুযোগ পাবে।

নয়াগ্রাম থানা বালিকা বিদ্যামন্দিরের এক শিক্ষিকার আক্ষেপ, ‘‘আমাদের নিজেদের মাঠ নেই। নয়াগ্রাম স্টেডিয়ামে অনুশীলনের সুযোগ পেলে মেয়েদের সুবিধা হত। কিন্তু সেই মাঠ এখনও খেলার উপযুক্ত নয়।’’ তিনি আরও জানান, স্কুলের ফুটবলারদের অনেকেই বিদ্যালয়ের ছাত্রীবাসে থাকে। বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তাদের জন্য পুষ্টিযুক্ত খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। পোশাক ও খেলার সরঞ্জাম কিনে দেওয়া হয়। তবে সেটা যথেষ্ট নয়। দিল্লিতে মেয়েদের তিন তারা বা পাঁচ তারা হোটেলে থাকতে দেওয়া হয়। সেখানে রকমারি খাবার থাকে। অনেকেই পরিমাণ বুঝতে না পেরে বেশি খাবার খেয়ে নিয়ে পেটের সমস্যায় ভুগতে শুরু করে। দিল্লি যাওয়ার কয়েকদিন আগে থেকে যদি মেয়েদের তিন তারা বা পাঁচ তারা হোটেলে রাখা যায়, তাহলে এই সমস্যা হবে না।

২০১৪ সালে রাজ্য চ্যাম্পিয়ন হয়ে দিল্লি গিয়েছিল ঝাড়গ্রামের কেশিয়াপাতা গোপীনাথ মেমোমিয়াল হাইস্কুলের মেয়েরা। ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমাদের স্কুল দিল্লি যাওয়ার আগে তৎকালীন বিডিও-র উদ্যোগে কলকাতা থেকে প্রশিক্ষক এসে মেয়েদের প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন। তবে তাতেও লাভ কিছু হয়নি। কারণ দিল্লির মাঠে লড়াই দিতে গেলে ধারাবাহিক প্রস্তুতি দরকার।’’

বিদ্যালয় স্তরের খেলাধুলো দেখভালের জন্য জেলায় বিদ্যালয় ক্রীড়া সংসদ রয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা বিদ্যালয় ক্রীড়া সংসদের (ক্রীড়া মানচিত্রে ঝাড়গ্রাম এখনও পশ্চিম মেদিনীপুরের অধীনে) সাধারণ সম্পাদক সোমনাথ দাস বলেন, ‘‘আমরা সব রকম চেষ্টা করি। তবে বিদ্যালয়ের অসুবিধে ও চাহিদার কথা জেলা ও রাজ্য স্তরে লিখিত জানাতে হবে।’’

Nayagram Football Subrata Cup
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy