ভারতীয় ফুটবলের ‘নতুন ভাইচুং ভুটিয়া’-ই এখন বড় ভরসা স্টিভন কনস্ট্যান্টাইনের।
আজ বৃহস্পতিবার তিরুঅনন্তপুরমে মলদ্বীপের বিরুদ্ধে সাফ কাপ সেমিফাইনালে নামছে ভারত। চোটের জন্য বাইরে চলে গিয়েছেন গোলের মধ্যে থাকা রবিন সিংহ। সুনীল ছেত্রীর সঙ্গে তাই ‘নতুন ভাইচুং’ লালিয়ানজুয়ালার যুগলবন্দির উপর বাড়তি দায়িত্বভার বর্তাচ্ছে। দেশকে গোল করে ফাইনালে তোলার।
এবং সেটাই এই মুহূর্তে স্বাভাবিক।
যে ছেলে দেশের জার্সি গায়ে নেমেই ভেঙে দিতে পারেন ভারতীয় ফুটবল আইকন ভাইচুং ভুটিয়ার রেকর্ড, তাঁর উপর বাড়তি দায়িত্ব তো জাতীয় দলের কোচ দিতেই পারেন। গ্রুপ লিগের দ্বিতীয় ম্যাচে নেপালের বিরুদ্ধে জোড়া গোল করেছিলেন লালিয়ানজুয়ালা। জাতীয় দলের জার্সি গায়ে ভারতের সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতা হিসেবে এত দিন নাম ছিল ভাইচুংয়ের। সেই রেকর্ড ভেঙে ১৮ বছর বয়সে নতুন নজির গড়েছেন মিজোরামের এই স্ট্রাইকার। স্বভাবতই লালিয়ানজুয়ালাকে নিয়ে নতুন স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে দেশের ফুটবলমহল। ভরসা রাখছেন ভারতের সদা খুঁতখুঁতে ব্রিটিশ কোচও। যেমনটা ভারতীয় ফুটবলসমাজে হয়েছিল প্রায় কুড়ি বছর আগে ভাইচুংকে নিয়েও।
পাহাড়ি বিছে ভাইচুংকে অবশ্য সেই সময় এ সব উন্মাদনা খুব একটা স্পর্শ করতে পারেনি। কিন্তু বছর আঠারোর লালিয়ানজুয়ালাকে নিয়ে যে ভাবে ‘নতুন ভাইচুং’ বলে আলোড়ন উঠেছে তাতে শঙ্কিত তাঁর সতীর্থ থেকে কোচ— টিমের প্রায় সবাই। আর সে জন্যই প্রত্যেকে যেন একটু বেশি সাবধানী। টিমের সিনিয়র ফুটবলারদের মন্তব্য, ‘‘এত তাড়াতাড়ি ওকে নিয়ে লাফালাফি না করে আগে খেলতে দেওয়া উচিত। এত প্রচার, এত হইচই— এ সবের ফলে কিন্তু বাচ্চা ছেলেটার উপর দ্বিগুণ চাপ তৈরি হচ্ছে।’’
রবিন সিংহ নেই। তার উপর আবার মলদ্বীপের মতো কঠিন প্রতিপক্ষের সামনে স্টিভনের দল। এই পরিস্থিতিতে টিনএজার লালিয়ানজুয়ালার উপর বাড়তি চাপ দিতে নারাজ সুনীলরা। বরং প্রত্যেকেই তাঁকে আগলে রাখতে চেষ্টা করছেন। সুনীল-অর্ণবদের কোচ স্টিভন তো সরাসরি বলেই দিয়েছেন, ‘‘জাতীয় দল বা ব়ড় ক্লাবের হয়ে এক জন তরুণ ফুটবলারের অভিষেক ম্যাচেই সাফল্য পাওয়াটা খুব বড় ব্যাপার ঠিকই। কিন্তু ওকে মহাতারকা ফুটবলার তৈরি করতে গেলে অনেক বেশি সময় দিতে হবে। ধৈর্য ধরে আরও বেশি পরিচর্যা করতে হবে। এমন কিছু করা ঠিক নয় যাতে ওর মাথা ঘুরে যায়।’’
শেষ চারের লড়াইয়ে নামার আগে স্টিভন কনস্ট্যান্টাইনকে স্বস্তি দিতে পারে ভারত-মলদ্বীপ লড়াইয়ের পরিসংখ্যান। ১৪ ম্যাচের দশটা জিতেছে ভারত। হার মাত্র দু’টো। গত সাফ কাপ সেমিফাইনালেও মলদ্বীপকে হারিয়েই ফাইনালে উঠেছিল ভারত। তবে বাস্তবে পরিসংখ্যান ভুলে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ভারতের (১৬৬) চেয়ে ছয় ধাপ এগিয়ে থাকা মলদ্বীপকে (১৬০) কনস্ট্যানটাইন সমীহ করছেন যে সেটা তাঁর এ দিনের কথাতেই পরিষ্কার। ‘‘মলদ্বীপ খুব শক্তিশালী প্রতিপক্ষ। ওদের ফুটবলারদের মধ্যে বোঝাপড়া দারুণ। আর ওদের আক্রমণাত্মক মনোভাবটাও সমীহ করার মতো,’’ প্রাক ম্যাচ সাংবাদিক সম্মেলনে এসে বুধবার বলে দিয়েছেন ভারতের কোচ।
শ্রীলঙ্কা আর নেপালের বিরুদ্ধে সহজ জয় পেয়ে শেষ চারে পৌঁছেছে ভারত। এখন সেমিফাইনালে গত বারের পুনরাবৃত্তি হওয়ার অপেক্ষায় ভারতীয় ফুটবল মহল। কনস্ট্যানটাইনও চাইছেন, সাফ কাপ জিতে ভারতীয় টিমের কোচের চাকরিটা বাঁচিয়ে রাখতে!
ভাইচুংয়ের নেতৃত্বাধীন টেকনিক্যাল কমিটি ভারতীয় ফুটবল দলের দায়িত্বে দ্বিতীয় বার এনেছে এ বার কনস্ট্যান্টাইনকে। আর এখন ‘নতুন ভাইচুং’-এর উপর যেন নির্ভর করছে কনস্ট্যান্টইনের চাকরি-ভাগ্য!
বৃহস্পতিবার
সাফ কাপ সেমিফাইনাল— ভারত : মলদ্বীপ (স্টার স্পোর্টস, ৩-৩০), আফগানিস্তান : শ্রীলঙ্কা।