Advertisement
E-Paper

Nadal-Djokovic: হার না মানা রাফা, নিজের ফাঁদে পড়েই ডুবল নোভাক

রাফায়েল নাদাল বনাম নোভাক জোকোভিচের প্রায় চার ঘণ্টারও বেশি চলা এই কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচটার জন্য এই কথাগুলো একেবারে যথোপযুক্ত।

জয়দীপ মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০২২ ০৮:০৭
বিষণ্ণ: নাদালের কাছে শেষ আটে হেরে বিদায় জোকোভিচের।

বিষণ্ণ: নাদালের কাছে শেষ আটে হেরে বিদায় জোকোভিচের। ছবি রয়টার্স।

মঙ্গলবার গভীর রাতে দুই কিংবদন্তির লড়াই টিভিতে দেখতে দেখতে চোখ চলে যাচ্ছিল ফিলিপ সঁতিয়ে কোর্টের স্ট্যান্ডে লেখাটার দিকে ‘‘ভিক্টরি বিলংগস টু দ্য মোস্ট টেনাসিয়াস।’’ অর্থাৎ সংকল্পে যে অনড় থাকে বিজয়মাল্য তার গলাতেই শোভা পায়।

মনে হচ্ছিল, রাফায়েল নাদাল বনাম নোভাক জোকোভিচের প্রায় চার ঘণ্টারও বেশি চলা এই কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচটার জন্য এই কথাগুলো একেবারে যথোপযুক্ত। সত্যিই আমরা ভাগ্যবান টেনিসের তিন অন্যতম সেরা রত্ন রজার ফেডেরার, নাদাল আর জোকোভিচের ঐতিহাসিক লড়াইগুলোর সাক্ষী থাকতে পেরেছি গত আড়ই দশকে। কী অসাধারণ সব ম্যাচই না দেখেছি এদের। মঙ্গলবার রাতের ম্যাচটাও বহুদিন মনে থাকবে। শুধু এই প্রজন্মের দুই সেরা অ্যাথলিটের লড়াই দেখার সৌভাগ্য হল বলেই নয়, দুই প্রতিপক্ষের লড়াইয়ের উৎকর্ষ কোন পর্যায়ে যেতে পারে, সেটার সাক্ষী থাকতে পেরে। সেই লম্বা র‌্যালি। কোর্টের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে অক্লান্ত ভাবে বল ধাওয়া করে যাওয়া। আক্রমণ-প্রতিআক্রমণের দুরন্ত মিশেল দেখা গেল আবারও। যেখানে এক জন বিশ্বের এক নম্বর। অন্য জন ১৩ বারের চ্যাম্পিয়ন। সবচেয়ে বড় কথা, শেষে জয় হল সর্বস্ব উজাড় করে দেওয়া সেই নাছোড় নাদালেরই।

স্কোর দেখাবে নাদাল ৬-২, ৪-৬, ৬-২, ৭-৬ (৭-৪) ফলে হারিয়েছে জোকোভিচকে। কিন্তু যেটা দেখাবে না সেটা হল, এই জয়ের জন্য নাদালকে কোন পর্যায়ে নিজের খেলাকে তুলে আনতে হয়েছে। কয়েক দিন আগেই যে কি না হাঁটুর চোটের জন্য প্রিয় প্যারিসের ক্লে-কোর্টে নামতে পারবে কি না, ঠিক ছিল না। প্যারিসে সঙ্গে চিকিৎসক নিয়ে আসার কথাও বলেছিল। সে-ই শারীরিক সক্ষমতার চূড়ান্ত নিদর্শন রেখে সেমিফাইনালে উঠে গেল গত বারের চ্যাম্পিয়নকে হারিয়ে। যার কাছে গত বার সেমিফাইনালে হেরে গিয়েছিল নাদাল।

কেন হারল জোকোভিচ? আমার মনে হয়, এই ম্যাচটায় নামার আগে চাপে পড়ে গিয়েছিল ও। তা সে যতই দু’জনের মধ্যে এই নিয়ে ৫৯তম লড়াই হোক না কেন। তাই ওকে ম্যাচের প্রথম থেকে কিছুটা আড়ষ্ট লাগছিল। মন খুলে খেলতে দেখা যাচ্ছিল না। দ্বিতীয় সেটে ঘুরে দাঁড়ানোর পরে চতুর্থ সেটও দখল করার সুবর্ণ সুযোগ পেলেও সেটা কাজে লাগাতে পারেনি জোকোভিচ। কৌশলগত ভুলও ছিল। বারবার জোকোভিচ চেষ্টা করছিল নাদালকে কোর্টের পিছনে ঠেলে দিয়ে ড্রপ শটের ফাঁদে ফেলার। কিন্তু নাদাল তাতে পা দেয়নি। আর এই পরিকল্পনা কাজে না আসায় দ্বিতীয় কোনও পরিকল্পনাতেও যেতে পারেনি ও। নাদাল তখন ড্রপ শটে পয়েন্ট তুলে নিয়েছে। নিজের ফাঁদেই নিজে পড়ে গিয়েছে জোকোভিচ।

আসলে প্যারিসে রাতের সেশনে খেলা হলে কোর্টটা একটু ধীর গতির হয়ে যায়। বাউন্স বেশি হয়। বলটা ভারি হয়ে যায়। যে রকম পরিবেশে সুবিধে পায় নাদাল। জোকোভিচ দ্রুত গতির কোর্ট পছন্দ করে। তাই বারবার ও চেষ্টা করছিল শটের গতি বাড়ানোর। সেটা যখনই করতে পরেছে, ম্যাচে ফিরে এসেছে। কিন্তু নাদাল ওকে বার বার সে সুযোগ দেয়নি।

গোটা কোর্ট জুড়ে যেন প্রজাপতির মতো উড়ে বেড়াচ্ছিল ক্লে-কোর্টের সম্রাট। ফিলিপ সঁতিয়ে কোর্ট যার ঘর-বাড়ির মতো হয়ে গিয়েছে এত দিনে। জোকোভিচের ড্রপশটগুলো নেটে দ্রুত এগিয়ে এসে ভোঁতা করে দিচ্ছিল নাদাল। আসলে নাদালের হারানোর কিছুই ছিল না। এ মরসুমের অস্ট্রেলীয় ওপেন জিতে ২১ নম্বর গ্র্যান্ড স্ল্যাম দখল করে ফেলেছে। ফরাসি ওপেনের আগেই ওর পায়ে চোট লাগে রোমে। তাই নিশ্চিত ছিল না, নিজের সেরাটা এ বার দিতে পারবে কি না। তাই হয়তো জোকোভিচের বিরুদ্ধে নিজের উপরে কোনও প্রত্যাশা না রেখেই নেমেছিল। লক্ষ্য ছিল শুধু একটাই, হারার আগে হার না মানা। তা ছাড়া নাদালের আরও একটা বড় সুবিধে হল, দীর্ঘ একটা ম্যাচ খেলার ক্লান্তি ঝেড়ে ফেলে ও নিজেকে দ্রুত তরতাজা করে ফেলতে পারে।

অনেক দিন আগে আমায় একজন নামী প্রাক্তন খেলোয়াড় বলেছিল, নাদালের খেলার ধরন যে রকম শারীরিক ক্ষমতার উপর নির্ভরশীল, ও বেশিদিন টিকতে পারবে না টেনিস সার্কিটে। চোট-আঘাতে কেরিয়ার দ্রুতই শেষ হয়ে যাবে। এটা ঠিক যে, চোট-আঘাত নাদালের সঙ্গী কিন্তু দীর্ঘ দিন খেলে যাওয়ার ব্যাপারটায় ও কিন্তু সেই প্রাক্তন খেলোয়াড়ের ভবিষ্যদ্বাণীকে ভুল প্রমাণ করেছে।

প্রথম কোয়ার্টার ফাইনালে কার্লোস আলকারাজ় আর আলেকজান্ডার জ়েরেভের খেলা দেখে অনেকে হয়তো হতাশ হয়েছে। বিশেষ করে, স্পেনের নতুন তারা আলকারাজ় হেরে যাওয়ায়। তবে আমার মনে হয় স্রেফ অভিজ্ঞতার অভাবের জন্যই ছেলেটা এ বার হারল। তবে ও ভবিষ্যতের চ্যাম্পিয়ন। জ়েরেভ জিতেছে বটে তবে সেমিফাইনালে নিঃসন্দেহে ওর বিরুদ্ধে নাদালই এগিয়ে থাকবে। আমি তো নাদালের ১৪ নম্বর ফরাসি ওপেন আর ২২ নম্বর গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ের পথে আর কোনও বাধা দেখছি না।

Rafael Nadal Novak Djokovic Tennis
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy