Advertisement
E-Paper

আকাল বিশ্বরেকর্ডের, ‘দায়ী’ পুল! অলিম্পিক্সের অসন্তোষ নিয়ে ভাবার বোধই নেই বাংলার সাঁতারের

প্যারিস অলিম্পিক্সের সাঁতারের পুল নিয়ে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। অগভীর পুল প্রভাবিত করছে সাঁতারুদের পারফরম্যান্স। তাতে অবশ্য বাংলার সাঁতারের জল তরঙ্গায়িত হচ্ছে না।

অভিরূপ দত্ত

শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০২৪ ১১:৪৫
Picture of Swimming

প্যারিস অলিম্পিক্সে সাঁতারের পুল নিয়ে অসন্তোষ। ছবি: এক্স (টুইটার)।

বাংলার সাঁতারে অন্ধকার। অলিম্পিক্সে বিভিন্ন দেশের সাঁতারুদের গলায় পদক ঝলমল করছে। সাঁতার, ওয়াটার পোলো বা ডাইভিংয়ের ঝকঝকে পৃথিবীর সঙ্গে বাংলার ছবি মেলানো অর্থহীন। সাঁতারের নূন্যতম সুযোগ-সুবিধা নেই বাংলায়। গোটা বিশ্বের সাঁতার যখন দ্রুত এগোচ্ছে, দেশের একাধিক রাজ্য যখন উন্নতির চেষ্টা করছে, সেই সময় বাংলার ছবি বেশ মলিন। রংহীন। দিশাহীন। ভবিষ্যৎও ঘোলাটে।

অলিম্পিক্সের সাঁতারও এ বার কিছুটা রংহীন। এর সঙ্গে বাংলার কোনও মিল নেই। তবু যাঁরা সাঁতার ভালবাসেন, তাঁদের মন ভরছে না। কারণ, বিভিন্ন খেলায় নতুন বিশ্বরেকর্ড তৈরি হলেও প্যারিস অলিম্পিক্সে ব্যতিক্রম সাঁতার। বিশ্বের সেরা সাঁতারুরা আছেন। ১৭টি নতুন অলিম্পিক্স রেকর্ড হয়েছে। তার মধ্যে বিশ্বরেকর্ড হয়েছে মাত্র চারটি। ব্যক্তিগত ইভেন্টে মাত্র দু’টি। একটি ছেলেদের ১০০ মিটার ফ্রিস্টাইলে, অন্যটি ১৫০০ মিটার ফ্রিস্টাইলে। বাকি দু’টি দলগত ইভেন্ট। পুরুষ এবং মহিলাদের ৪x১০০ মিটার মেডলি রিলে। আগের অলিম্পিক্সগুলির থেকে এ বার সাঁতারে বিশ্বরেকর্ডের সংখ্যা কিছুটা কম। ২০১৬ সালের রিয়ো অলিম্পিক্সে আটটি এবং গত টোকিয়ো অলিম্পিক্সে ছ’টি বিশ্বরেকর্ড হয়েছিল।

কেন পিছিয়ে প্যারিস অলিম্পিক্স। তবে কি বিশ্ব জুড়েই সাঁতারের উন্নতি আটকে রয়েছে এক জায়গায়? না, তেমন একেবারেই নয়। অলিম্পিক্সের যোগ্যতা অর্জন পর্বে একাধিক বিশ্বরেকর্ড হয়েছে। সেই সাঁতারুরাই এসেছেন প্যারিসে। তা হলে সমস্যা কোথায়? বিশেষজ্ঞেরা দুষছেন প্যারিসের সুইমিং পুলকে।

Picture of Swimming Pool

প্যারিসের এই সুইমিং পুল নিয়েই অসন্তোষ। ছবি: এক্স (টুইটার)।

পুরুষদের ১০০ মিটার ফ্রিস্টাইল, ৪০০ মিটার ব্যক্তিগত মেডলি, মহিলাদের ১০০ মিটার বাটারফ্লাই এবং ৪x১০০ মিটার ফ্রিস্টাইল রিলেতে নতুন অলিম্পিক্স রেকর্ড হয়েছে প্যারিসে। কেন বিশ্বরেকর্ড নেই একটিও? প্যারিস অলিম্পিক্সের সাঁতার যে পুলে হচ্ছে, তার গভীরতা ২.২ মিটার বা ৭ ফুট ২ ইঞ্চি। ফ্রান্সের বাস্কেটবল খেলোয়াড় ভিক্টর ওয়েম্বানায়ামা দাঁড়িয়ে থাকলেও তাঁর মাথা ডুববে না। তাঁর উচ্চতা ৭ ফুট ৪ ইঞ্চি। গত কয়েকটি অলিম্পিক্সে সুইমিং পুলের গভীরতা ছিল ৩ মিটার। বিশেষজ্ঞদের মতে, সাঁতারে রেকর্ডের সংখ্যা কমে যাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ অগভীর সুইমিং পুল। এই পুলে ভাল ভাবে ওয়াটার পোলো খেলা কঠিন।

দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থে সমস্যা না থাকলেও গভীরতা কম হওয়ায় সুইমিং পুলের মোট জায়গা কম। জলের পরিমাণও অনেকটা কম। সাঁতারের ইভেন্টগুলিতে ফলাফল হয় সেকেন্ডের ভগ্নাংশে। সুইমিং পুলের আয়তন বা জলের পরিমাণ প্রভাব ফেলে ফলাফলে। কম জায়গায় থাকা জলের ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ কম হওয়ায় তা ভারী হয়। তাতে সাঁতারুদের শরীরের বিভিন্ন প্রত্যঙ্গ সঞ্চালনে তুলনায় বেশি সময় লাগে। স্বভাবতই সাঁতার শেষ করতেও সময় বেশি লাগে। সাঁতারুদের শক্তিক্ষয় হয় বেশি। বেশি ক্লান্ত হয় হাত এবং পায়ের পেশি।

আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সাঁতারুরা অনুশীলন করেন নির্দিষ্ট মাপের সুইমিং পুলে। দীর্ঘ অনুশীলনে জলের সঙ্গে তাঁদের একটা সখ্য তৈরি হয়। প্যারিসের পুলের গভীরতা কম হওয়ায় জলের চাপ অন্য রকম। সাঁতারুরা পরিচিত স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করছেন না। ফ্রান্সের লিয়োন মার্চ্যান্ড বা অস্ট্রেলিয়ার আরিয়ান টিটমাসের মতো বিশ্বের প্রথম সারির সাঁতারুরাও প্যারিস লা ডিফেন্স এরিনার পুলে সুবিধা করতে পারছেন না। পাচ্ছেন না প্রত্যাশিত ফল। সব সাঁতারুর দক্ষতা অলিম্পিক্সে এসে হঠাৎ কমে যায়নি। তাঁদের পারফরম্যান্সে প্রভাব ফেলছে পুল। তাই বিশ্বরেকর্ডগুলিও অক্ষত থেকে যাচ্ছে। অলিম্পিক্সে সাতটি সোনাজয়ী কেটি লেডেকি বলেছেন, ‘‘দেওয়ালে হাত স্পর্শ করলে সাঁতার শেষ হয়। প্যারিসে সকলেরই দেওয়ালে হাত ছোঁয়াতে স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি সময় লাগছে। অর্থাৎ, রেস শেষ করতে দেরি হচ্ছে। এটাই প্রধান সমস্যা।’’

দু’টি বিশ্বরেকর্ডই হয়েছে পুরুষদের ফ্রিস্টাইল ইভেন্টে।

দু’টি বিশ্বরেকর্ডই হয়েছে পুরুষদের ফ্রিস্টাইল ইভেন্টে। ছবি: এক্স (টুইটার)।

গোটা পশ্চিমবঙ্গে আন্তর্জাতিক মানের কোনও সুইমিং পুল নেই। আধুনিক সুইমিং পুলও নেই। এ রাজ্যের সাঁতারুরা ঠিক মতো পুলই পান না প্রশিক্ষণ বা অনুশীলনের জন্য। সেখানে পুলের সুবিধা-অসুবিধার প্রসঙ্গ অপ্রাসঙ্গিক। জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতায় বহু পদক জেতা বাংলার এক প্রাক্তন সাঁতারুর কাছে প্যারিসের পুলের অগভীরতার ব্যাপারে মতামত জানতে চাওয়া হয়েছিল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেই প্রাক্তন সাঁতারু বললেন, ‘‘গোটা রাজ্যে একটা ভাল সুইমিং পুল নেই। তার আবার গভীরতা! আমাদের সময়ের সঙ্গে এখন কিছুই বদলায়নি। এখানকার সাঁতারুরা ফিনিশিং পয়েন্টই দেখতে পায় না। জলে ডুব দিলেই সব অন্ধকার।’’

সুইমিং পুলের সমস্যা নিয়ে কথা বলছেন না প্যারিস অলিম্পিক্সের আয়োজকেরাও। তাঁরা বেশি আগ্রহী লা ডিফেন্স এরিনার অন্য সুযোগ-সুবিধা নিয়ে কথা বলতে। ৪০ হাজার দর্শকাসনের ইন্ডোর স্টেডিয়ামের সব কিছুই অত্যাধুনিক। প্যারিস অলিম্পিক্সের কর্তারা সেগুলি তুলে ধরছেন। সাঁতারুদের পারফর্ম করার জায়গায় আসল সমস্যা লুকিয়ে থাকার বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। শেষ পাঁচটি অলিম্পিক্সের সুইমিং পুল তৈরি করেছে ইতালির সংস্থা মির্থা পুলস্‌। সংস্থার মুখ্য কারিগরী আধিকারিক জন আয়ারল্যান্ড বলেছেন, ‘‘প্যারিসের পুলের কাঠামোগত কিছু সমস্যা রয়েছে। আরও গভীরতা প্রয়োজন ছিল।’’

পুলের আয়তন বা কাঠামো কেন এত গুরুত্বপূর্ণ সাঁতারের জন্য? সাঁতার শুধু গতিযুক্ত ব্যায়াম নয়। যুক্ত থাকে তরল পদার্থের (জল) গতিও। সাঁতারুদের হাত-পা সঞ্চালনের সময় জলে ছোট ছোট তরঙ্গ সৃষ্টি হয়। তরঙ্গগুলি যেমন পুলের চারপাশে দেওয়ালে ধাক্কা মেরে ফিরে আসে, তেমনই পুলের তলদেশেও ধাক্কা মেরে ফিরে আসে। আবার সাঁতারুরা যখন ডাইভ দেন, তখন সবচেয়ে বেশি তরঙ্গ তৈরি হয়। ডাইভ দেওয়ার পরের কয়েক সেকেন্ড সাঁতারুরা জলের একদম উপরের স্তরে থাকেন না। উপরের স্তর থেকে কিছুটা নীচে থাকে তাঁদের শরীর। পুলের তলদেশে ধাক্কা খেয়ে ফিরে আসা তরঙ্গগুলি তাঁদের ধাক্কা মারে। পুল যত অগভীর হয়, ফিরে আসা তরঙ্গের গতি তত বেশি হয়। এর ফলে তৈরি হওয়া জলের অশান্ত পরিবেশ সেই সময় এক জন সাঁতারুর সর্বোচ্চ গতি তোলার পক্ষে অনূকুল থাকে না। এই কারণে প্যারিসের পুলে সাঁতার শুরুর করার ক্ষেত্রেও সামান্য বেশি সময় লাগছে।

এত সব বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ বাংলার সাঁতারে নেই। বেঙ্গল সুইমিং অ্যাসোসিয়েশনের কর্তা রামানুজ মুখোপাধ্যায় আক্ষেপের সুরে বললেন, ‘‘আমাদের ছেলেমেয়েরা ঘোলা জলে সাঁতার কাটে। জলের তলায় কী আছে ওরা জানে না। কলকাতার কলেজ স্কোয়্যার এবং হেদুয়া আর মেদিনীপুরে কিছুটা সাঁতার হয়। গত কয়েক বছর সিনিয়র ন্যাশনালে আমরা আর তেমন পদক পাই না। জুনিয়র, সাব জুনিয়র স্তরে এখনও কয়েকটা সোনা আসে। জানি না আর ক’দিন আসবে। বাংলার সাঁতার নিয়ে সত্যিই বলার মতো কিছু নেই। আমরা ক্রমশ পিছিয়ে চলেছি।’’ অদূর ভবিষ্যতে পরিস্থিতি উন্নতি হতে পারে এমন আশাও দেখছেন না তিনি।

বাংলার সাঁতার ঘোলা জলে হাবুডুবু খাচ্ছে। ফ্রান্সের অবস্থা তো এতটা করুণ নয়। প্যারিস অলিম্পিক্সের সুইমিং পুলের গভীরতা নিয়ে বিতর্ক তোলার অবকাশ কতটা? আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতাগুলির জন্য সাঁতারের পুলের নির্দিষ্ট আকার এবং গভীরতা রয়েছে। সেই মতো তৈরি করতে হয় পুল। ওয়ার্ল্ড অ্যাকোয়াটিক্স (সাঁতার, ডাইভিং, ওয়াটার পোলোর বিশ্ব নিয়ামক সংস্থা) ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সাঁতার এবং ওয়াটার পোলোর জন্য পুলের গভীরতা হতে হবে কমপক্ষে ২.৫ মিটার। ২০১৭ সালে ফ্রান্স অলিম্পিক্স আয়োজনের দায়িত্ব পাওয়ার সময় নিয়ম ছিল, পুলের গভীরতা হবে অন্তত ২.২ মিটার। সেই নিয়ম নেমেই অলিম্পিক্সের জন্য নতুন সুইমিং পুল তৈরি করেছেন প্যারিসের আয়োজকেরা। তাই সরাসরি তাঁদের দোষারোপ করার সুযোগ নেই। যে পুলে অলিম্পিক্সের আর্টিস্টিক সাঁতার হবে, তার গভীরতা ৩ মিটার। সেটিও তৈরি করা হয়েছে ওয়ার্ল্ড অ্যাকোয়াটিক্সের নিয়ম নেমে। স্বভাবতই অলিম্পিক্সের জন্য তৈরি সুইমিং পুলগুলির ছাড়পত্র পেতেও সমস্যা হয়নি। সমস্যা দেখছেন না ওয়ার্ল্ড অ্যাকোয়াটিক্সের কর্তারা।

Picture of Katie Ledecky

টানা চার অলিম্পিক্সে সোনা জিতেছেন আমেরিকার কেটি লেডেকি। ছবি: এক্স (টুইটার)।

জর্জিয়ার প্রযুক্তি বিজ্ঞানের অধ্যাপক জুড রেডিও সাঁতারুদের গতি কমার জন্য পুলের গভীরতাকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘সাঁতারুরা পুলের এক প্রান্ত ছুঁয়ে ফিরে আসার সময় জলে বড় ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়, যা গতিকে বাধা দেয়। গভীরতা যত কম হয়, বাধা তত শক্তিশালী হয়।’’ পুলের গভীরতার সঙ্গে জড়িয়ে থাকে সাঁতারুদের মনস্তত্ত্বও। তাঁরা সাধারণ ভাবে তিন মিটার দূরে পুলের তলদেশ দেখতে অভ্যস্ত। কিন্তু প্যারিসে তাঁরা তলদেশ দেখছেন দু’মিটার দূরে। বিষয়টি সাঁতারুদের মানসিক চাপ তৈরি করে। প্যারিসের ব্যবস্থায় অসন্তোষ গোপন করেনি আয়ারল্যান্ড-সহ একাধিক দেশ। প্রত্যাশিত পারফরম্যান্স না হওয়ার জন্য তাদের কাছে ‘ভিলেন’ অলিম্পিক্সের পুল।

বাংলার সাঁতারে এত যুক্তি, বিজ্ঞান নেই। ভাবনাতেও নেই। সাঁতারুরা দ্রুত পুলের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন। তাঁদের পিছনে টেনে ধরছে প্রায় মান্ধাতার আমলের পরিকাঠামো। এখানকার সাঁতারুরা ভাবেন ঠিক মতো অনুশীলনের সুযোগ। একটু পরিষ্কার জল। যাতে গোটা পুলটা দেখতে পান। তার দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, গভীরতা নিয়ে ভাবা বিলাসিতার মতো। এক কর্তার কথায়, ‘‘যেখানে জাতীয় স্তরের সাঁতার প্রতিযোগিতা আয়োজন করা যায় না, সেখানে এ সব প্রশ্ন অবান্তর। একটা আধুনিক সুইমিং পুল কেমন হয়, আমাদের ছেলেমেয়েরা সেটাই জানে না। পুলের গভীরতার প্রভাব নিয়ে ভাবার মতো জায়গায় আমরা নেই। জাতীয় স্তরের কয়েক জন ছাড়া এ সব নিয়ে আমাদের কোনও ধারণাই নেই।’’

জলের তরঙ্গের শক্তি, সাঁতারে তার প্রভাব এমন বিজ্ঞানচর্চার যুগ বাংলার সাঁতারে শুরু হয়নি। কর্তাদের তেমন অভিযোগও নেই। তাঁরাই যেন আগ্রহ হারিয়েছেন। রয়েছে শুধু হতাশা, আক্ষেপ, অভিমান, সোনালি অতীত আর ঘোলাটে ভবিষ্যৎ। প্যারিস অলিম্পিক্সে বিশ্বরেকর্ড হওয়া না হওয়ার সঙ্গে বাংলার সাঁতারের তরঙ্গের কোনও সম্পর্ক নেই। আধুনিক সাঁতার থেকে হাজার হাজার নটিক্যাল মাইল দূরে বাংলা।

Paris Olympics 2024 swimming pool Bengal Swimming Swimming world records
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy