Advertisement
E-Paper

ঘরের মাঠে গম্ভীরের সংসারে আছে পিচ বিভ্রান্তি, নেই ঔদ্ধত্য

আন্দ্রে রাসেলের আঠাশতম জন্মদিনটা পুরো নিষ্প্রাণ গেল! কোথায় রাতভর পার্টি চলবে, কোথায় ডিজে মুহুর্মুহু বাজাবে ‘চ্যাম্পিওয়ন’, তা নয়। বরাদ্দ শুধু কিনা স্রেফ কেক কাটা! আর সেটাও নাকি টিম কেকেআরের সদলবল উপস্থিতিতে নয়।

রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০১৬ ০৪:৫৬

আন্দ্রে রাসেলের আঠাশতম জন্মদিনটা পুরো নিষ্প্রাণ গেল! কোথায় রাতভর পার্টি চলবে, কোথায় ডিজে মুহুর্মুহু বাজাবে ‘চ্যাম্পিওয়ন’, তা নয়। বরাদ্দ শুধু কিনা স্রেফ কেক কাটা! আর সেটাও নাকি টিম কেকেআরের সদলবল উপস্থিতিতে নয়। শুক্রবার রাত বারোটায় মেরিন ড্রাইভের টিম হোটেলে একটা সারপ্রাইজ কেক রাখা ছিল। রাসেল সেটা কেটে বান্ধবীর সঙ্গে গোটা কয়েক সেলফি তুলেছেন, ব্যাস, এই পর্যন্ত!

কেকেআরের সবচেয়ে দুঃখী ক্রিকেট-চরিত্র এখন কে? মস্তিষ্ক প্রয়োগের প্রয়োজন নেই। ওয়াংখেড়ে স্কোরকার্ড খুললেই বোঝা যাবে। ঠিকই ধরেছেন— ইনি জয়দেব উনাদকট। পোলার্ড-প্রহারে এতটাই বিষণ্ণ, এতটাই চুরচুর হয়ে পড়েছেন কেকেআর পেসার যে, স্বয়ং ওয়াসিম আক্রমকে নাকি নামতে হয়েছে মনোবিদের ভূমিকায়। শোনা গেল, মুম্বই ম্যাচ শেষ হওয়ার পরপরই নাকি উনাদকটকে গিয়ে জড়িয়ে ধরেন ওয়াসিম। পুত্রসম স্নেহে বলতে থাকেন, দ্যাখো এতে তোমার কোনও দোষ নেই। কেউ দোষ দেবেও না তোমাকে। টি-টোয়েন্টিতে বোলাররা টাকা পায় মার খাওয়ার জন্য। মনে রেখো, আগামীকাল নতুন সূর্য তোমার জন্য অপেক্ষা করবে।

সূর্যকুমার যাদবের বিস্ময় এখনও যেন কাটছে না। মুম্বইকরের কখনও মনে হচ্ছে, হারের গ্রহে বন্দি হয়ে থেকে লাভ নেই। তাতে এগোনো যাবে না। কিন্তু পরমূহূর্তেই হাত চলে যাচ্ছে টুইটার হ্যান্ডলে, পোলার্ডকে লিখে ফেলতে হচ্ছে, ‘হে বিগ ম্যান, কাল তুমি কী খেয়ে নেমেছিলে বলবে?’

ওয়াংখেড়ে-পরাজয়ের পরের সকাল থেকে দুপুর। দুপুর থেকে সন্ধে। সন্ধে থেকে রাত। মুম্বই থেকে দিল্লি। দেশের বাণিজ্যনগরী থেকে রাজধানী। যেখানে নাইটরা ঢুকলেন, থাকলেন। কিন্তু এত দিনের সেই পরিচিত নাইট ঔদ্ধত্য কোথাও যেন অপূর্ণ থেকে গেল।

সন্ধেয় সর্দার পটেল মার্গের টিম হোটেলের লবিতে দাঁড়িয়ে কেকেআর ম্যানেজমেন্টের একজন অনুযোগ করছিলেন, মিডিয়া যে ভাবে একটা ম্যাচে কেকেআরকে হারতে দেখে সমালোচনার দাঁতনখ বার করে ঝাঁপিয়ে পড়েছে, তা অর্থহীন। বিশেষ করে মর্নি মর্কেলকে বসানো নিয়ে। দাবি করা হল, ওয়াংখেড়ের উইকেট যে ব্যাটিং-স্বর্গ ছিল সেটা মাঠে থেকেও যদি কেউ না বোঝে, কী করা যাবে? চার বিদেশির মধ্যে নারিনকে বসানো সম্ভব নয়। রাসেলকে নয়। সাকিবকেও নয়। তা হলে একজন বাড়তি ব্যাটসম্যান হিসেবে ক্রিস লিনকে টিমে আনতে গেলে মর্কেল ছাড়া আর কোনও নাম পড়ে থাকে কি? আর কেকেআর ছাড়া কি অন্য কোনও ফ্র্যাঞ্চাইজি হারেনি এখনও পর্যন্ত?

অভিমান যুক্তিযু্ক্ত। এত লম্বা, প্রায় দু’মাস ধরে চলা একটা টুর্নামেন্টে একটা কেন, পাঁচটাও হারতে পারে টিম। ভুল— সেটাও এক-আধ দিন হতেই পারে। কিন্তু টিমই যদি মনোকষ্টে ভোগে, বিকেলে হোটেল পৌঁছে অধিকাংশ যদি থেকে যায় ঘরবন্দি, তা হলে মুম্বই হারে তারা প্রভাবহীন, সেটাও বা বলা যায় কী ভাবে?

মজার হল, শনিবাসরীয় কোটলায় যে দু’টো টিম নামবে দু’টো টিমই নিজেদের শেষ ম্যাচ হেরেছে। কিন্তু হারের ভঙ্গিমা পার্থক্যে যুযুধান দু’টো টিম যেন দু’টো বিভিন্ন কক্ষপথে ঘোরাফেরা করছে। এ দিন সকালে ডেয়ারডেভিলস ডেরায় গিয়ে দেখা গেল, গুজরাত লায়ন্সের বিরুদ্ধে ক্রিস মরিসের বীরগাথা নিয়ে চর্চা এখনও চলছে। বলা হচ্ছে, সুরেশ রায়নার টিমের বিরুদ্ধে অসম্ভবকে বাস্তব প্রায় করেই ফেলেছিলেন মরিস। শেষ দিকে হাঁফিয়ে গিয়েছিলেন বলে হয়নি। পবন নেগির জায়গায় একটা কার্লোস ব্রেথওয়েট থাকলে ম্যাচটা দু’ওভার আগে শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। কেকেআর— তারা সেখানে রাজধানীতে ঢুকে নবতম বিভ্রান্তির খোঁজ পেল। টিম না এলেও কেকেআর ব্যাটিং কোচ সাইমন কাটিচ এসেছিলেন পিচ দেখতে। হোটেলে ফেরার সময় কাটিচের সঙ্গে কথা বলে মনে হল, তিনি খুশি। ঘরের মাঠে গৌতম গম্ভীর এবং বৈমাত্রেয় পিচ সমেত কোটলা— এটা গত কয়েক বছরের চেনা টেমপ্লেট ছিল এখানে। পিচে ঘাস-টাস দেখেও কাটিচ বলতে বলতে গেলেন, ‘‘ঘাস থাকলেও লাভ নেই। যা গরম, সারফেস শুকোবে। স্পিনারদের সুবিধে দেখছি।’’ কিন্তু তার কিছুক্ষণে কোটলার কিউরেটর-গ্রুপ থেকে যা আভাস এল, তার মর্মার্থ— স্পিনটিন এখানে হবে না। নারিনকে সুবিধে দেওয়ার কোনও কাহিনি থাকছে না।

কী হবে, কী দাঁড়াবে, শনিবার বিকেল চারটের আগে নিশ্চিত করে বলার উপায় নেই। শুধু একটা কথা বোধহয় বলে রাখা যায়। দল নির্বাচনে ভুল যদি না হয়, ব্যাটিং অর্ডার যদি ঠিক থাকে, টিমের মনন যদি অটুট রাখা যায়, কেকেআর এখনও কেকেআর। উইকেট ঘূর্ণি হোক, ব্যাটিং-বন্ধু হোক বা যা কিছু। একটা ক্রিস মরিসে কিছু আসবে যাবে না, তাহির-মিশ্র পার্টনারশিপও সামলে দেওয়া যাবে। আর কে না জানে, কোটলায় রাজেন্দ্রনগরের ছেলেটার রেকর্ড ভাল নয়, বেশ ভাল।

দু’বছর আগে খাদের কিনার থেকে রূপকথার ট্রফি-জয় অভিযান এখান থেকেই শুরু হয়েছিল না?

kkr delhi ipl 2016
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy