যতি চিহ্ন পড়ল বাঙালির দেহচর্চার ইতিহাসের এক অধ্যায়ে। চলে গেলেন ‘পকেট হারকিউলিস’ মনোহর আইচ। বয়স হয়েছিল ১০৪ বছর। পরিবার সূত্রে খবর, রবিবার দুপুর ২টো নাগাদ মারা যান তিনি। বার্ধক্যজনিত কারণে অসুস্থ ছিলেন তিনি। শতবর্ষের কোঠা পার করেছিলেন বছর চারেক আগেই। কিন্তু, থেমে থাকেনি তাঁর রোজকার জীবন। শতায়ু হওয়ার জন্মদিনেও নিজের হাতে একের পর এক ফোন ধরে শুভেচ্ছার জবাব দিয়েছেন। শতবর্ষেও তাঁর কণ্ঠস্বর ছিল সমান সতেজ, স্মরণশক্তি ছিল তাক লাগানো।
অবিভক্ত ভারতের কুমিল্লায় (অধুনা বাংলাদেশ) ১৯১২ সালের ১৭ মার্চ জন্ম। দেহের উচ্চতা মাত্র ৪ ফুট ১১ ইঞ্চির হলেও বাঙালিকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন মনোহর আইচ। ১৯৫২-তে প্রথম বাঙালি বডিবিল্ডার হিসেবে ‘মিস্টার ইউনিভার্স’ খেতাব জেতেন তিনি। তাঁর গুরু ছিলেন প্রবাদপ্রতিম বিষ্ণু ঘোষ। বিষ্ণু ঘোষের আখড়াতেই বডি বিল্ডিংয়ের হাতেখড়ি। ধীরে ধীরে দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে দেহচর্চাকে টানে ছুটে গিয়েছেন বিদেশ মাটিতে। ১৯৫০-এ ৩৮ বছর বয়সে মিস্টার হারকিউলিস প্রতিযোগিতা জেতেন। ’৫১-তে মিস্টার ইউনিভার্স-এ দ্বিতীয় হন। পরের বছর একেবারে সেরার শিরোপা। নয়াদিল্লি (’৫১), ম্যানিলা (’৫৪) ও টোকিও (’৫৮) এশিয়ান গেমসে তিনটি করে সোনা জেতেন তিনি। এর পর আর থেমে থাকেননি তিনি। একের পর এক প্রতিযোগিতায় দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছেন মনোহরবাবু। আশি পেরিয়েও সমান ভাবে শরীরচর্চা করে গিয়েছেন তিনি। তাঁর শেষ শো ছিল ৮৯ বছর বয়সে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন মনোহর আইচের মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন। তাঁর শোকবার্তায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “বিশ্বশ্রী মনোহর আইচের প্রয়াণে আমি গভীর ভাবে শোকপ্রকাশ করছি। আজ দুপুরে ১০৪ বছর বয়সে তিনি পরলোক গমন করেন। বিশ্বখ্যাত এই ব়়ডিবিল্ডারের প্রয়াণ এক চলমান ইতিহাসের অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি। মনোহরবাবুর সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ২০১৫ সালে তাঁকে বঙ্গবিভূষণ সম্মানে সম্মানিত করা হয়। এই শোকের মুহূর্তে তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারকে আমি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।”
আরও পড়ুন
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy