Advertisement
E-Paper

কাপ জিতে কাপ-দুঃখ ভোলার যুদ্ধ

তোমরা যে ভাবে খেলো, আমার ভাল লাগে। যে মনোভাব নিয়ে নামো, দেখে ভাল লাগে। আমার সুন্দরী বান্ধবী লুসিলা সোলার সঙ্গে বসে তোমাদের ম্যাচ দেখতে দেখতে উত্তেজিত হয়ে পড়ি। এখন দেখো, তোমাদের সঙ্গে কথা বলছি তাতেই কেমন শিহরণ লাগছে।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০১৫ ০৩:৫৫

তোমরা যে ভাবে খেলো, আমার ভাল লাগে। যে মনোভাব নিয়ে নামো, দেখে ভাল লাগে।
আমার সুন্দরী বান্ধবী লুসিলা সোলার সঙ্গে বসে তোমাদের ম্যাচ দেখতে দেখতে উত্তেজিত হয়ে পড়ি। এখন দেখো, তোমাদের সঙ্গে কথা বলছি তাতেই কেমন শিহরণ লাগছে।
আমি জানি না তোমরা মানুষ কেমন। কিন্তু প্লেয়ার হিসেবে তোমাদের, তোমাদের ফুটবল আমরা অসম্ভব ভালবাসি।
পঁচাত্তর বছরের ভদ্রলোকের পেশা কী, বিশ্বজোড়া প্রখ্যাতি কী কারণে, নামটা শুনলে বিশদে যাওয়ার দরকার পড়বে না সম্ভবত। ‘গডফাদারের’ নায়ক মন দিয়ে এখন দীর্ঘ দিনের আর্জেন্তিনীয় বান্ধবীর সঙ্গে বসে কোপা আমেরিকা দেখছেন। লিওনেল মেসিদের একটা ম্যাচও বাদ রাখেননি। দেখতে দেখতে মেসি-কুহকে বন্দি হয়ে একটা বিশেষ ভিডিও-ও তৈরি করে ফেলেছেন মোহাচ্ছন্ন মহানায়ক। উপরের পঙতিগুচ্ছ ওই ভিডিওরই।
ভিডিওটা আজ জেরার্দো মার্টিনোর সংসারে ঢুকবে। চলবে ফাইনালের আগে। আর প্রেরকের নাম?

আল পাচিনো।

নাহ্, আর্জেন্তাইন পাচিনো!

নামটা তো তাই দিয়েছে আর্জেন্তিনীয় মিডিয়া। তাদের কাছে, পাচিনো মানে এখন আর্জেন্তিনা। পাচিনো মানে এখন শনিবাসরীয় কোপা ফাইনালে প্রার্থনারত কোটি কোটি সাদা-নীল সমর্থককুলের এক। আসলে ফুটবল বিশ্বের চিরাচরিত মহাশক্তি হয়েও বহু দিন কোনও ট্রফি পায়নি আর্জেন্তিনা। আর তাই জনতার উন্মাদনার অনুরনণ কোথাও গিয়ে যেন মিডিয়াতেও ছড়িয়ে পড়ছে। কোথাও চিলিকে তুলোধোনা। কোন ম্যাগাজিনে মেসিকে ভিনগ্রহের জীবের সঙ্গে তুলনা করে ব্যঙ্গ, ব্যস আর পায় কে? সেই ব্যঙ্গাত্মক ছবি তুলে শিরোনাম— ডার্টি! কেউ আবার মেসির ফুটবল-মস্তিষ্কের বিশ্লেষণে বসে পড়ছেন। তুলনা চলছে, বার্সার মেসির সঙ্গে দেশের মেসির। বলা হচ্ছে, বার্সার লিও প্রবল ঘূর্ণিঝড়। দেশের লিও টিমের প্রথম থেকে শেষ। কেউ মনে করিয়ে দিচ্ছেন, দশ বছর আগে এই জুলাইয়ে অনূর্ধ্ব কুড়ি বিশ্বকাপ দেশকে দিয়েছিলেন মেসি। আবার জুলাই, আবার এক কাতর ট্রফি-প্রার্থনা মহানায়কের কাছে। কেউ আবার প্যারাগুয়ে ম্যাচের সেরা মুহূর্ত পাগলের মতো খুঁজে বেড়াচ্ছেন এখনও। কোনটা বেশি আনন্দের? বিশ্বকাপের জার্মান-ঔদ্ধত্য মনে পড়িয়ে প্রতিপক্ষকে চূর্ণ করা? না কি মেসি-তেভেজের পুনর্মিলন? যা ঘুরিয়ে দিল সেমিফাইনালকে? মেসি আর তেভেজের সম্পর্কে নাকি হৃদ্যতার চেয়ে শৈত্যই বেশি ছিল। লোকে বলত, এটা মেসির টিম। এখানে তেভেজের জায়গা নেই। আজ আর কোথায় সে সব?

বাইশ বছর ট্রফি-ক্ষুধায় ছটফট করলে যা হয়!

বাইশ বছরে বিশ্বকাপ কেন, একটা কোপাও জিততে পারেনি আর্জেন্তিনা। ’৮৬-তে শেষ বিশ্বকাপ জয়, ’৯৩-এ শেষ কোপা। মাঝের সময়ে তারা পেয়েছে ফুটবলের বরপুত্রকে। কিন্তু বলার মতো পারফরম্যান্স শুধু ব্রাজিল বিশ্বকাপ। যেখানে তারা রানার্স আপ। এক বছরেরও কম সময়ে আবার একটা ফাইনাল। বিশ্বকাপের বদলে কোপা। পারবে আর্জেন্তিনা?

জেরার্দো মার্টিনো ভাবতেই চান না। আর্জেন্তিনা কোচ প্রবল খুশি এটা ভেবে যে, এক বছরের মধ্যে আরও একটা ফাইনাল খেলবে টিম। সেমিফাইনালে প্যারাগুয়ের বিরুদ্ধে দুর্ধর্ষ খেলা জেভিয়ার পাস্তোরে বিভোর কী ভাবে মেসি-দি’মারিয়ার কাজ সহজ করে যাবেন, সেটা নিয়ে। ‘‘আমার কাজটাই সেটা। আমি শুধু গোল করার পরিস্থিতি তৈরি করে যাই। আর তা থেকে যখন গোল হয়, আমার চেয়ে খুশি কেউ হয় না,’’ বলে ফেলেছেন পাস্তোরে। যিনি ঠিক করে ফেলেছেন, কোপা ফাইনাল বলে রাতের ঘুম নষ্ট করবেন না। বরং ঝরঝরে মনে ম্যাচে নামতে হবে। ‘‘আমাদের এই প্রজন্ম যদি দেশকে কিছু না দিতে পারে, তার চেয়ে লজ্জার আর কিছু হবে না। আমরা ওয়ার্ল্ড কাপ জিততে পারিনি। খুব ভেঙে পড়েছিলাম। আশা করি তার প্রতিশোধ এখানে কিছুটা তুলব। ট্রফিটা জিতে!’’

কে বলবে, টুর্নামেন্টে কয়েক দিন আগেও এই একই টিম খোঁড়াচ্ছিল। কিন্তু ছ’টা গোল, একটা মেসি সব পাল্টে দিয়ে গিয়েছে। বেটিং-বাজার থেকে বিশ্ব— কোপা আমেরিকা মেসি আর আর্জেন্তিনার বাইরে ভাবতে পারছে না। ছ’গোল খাওয়া প্যারাগুয়ে কোচ রামোন দিয়াজ যেমন বলে রেখেছেন, ‘‘আমাদের বিরুদ্ধে যে ভাবে খেলল আর্জেন্তিনা, সেটা খেললে চিলি শেষ। কোনও চান্স নেই।’’ অ্যাঞ্জেল দি’মারিয়া হুঙ্কার দিচ্ছেন, শনিবারের রাত তাঁদের কিংবদন্তি হওয়ার রাত! গোলকিপার সের্জিও রোমেরো শুনিয়ে রাখছেন, ব্রাজিলে বিশ্বকাপ-কোয়ার্টার ফাইনালের এত দিনের গেরো কাটিয়ে ওঠা গিয়েছে। ঈশ্বর সঙ্গে থাকলে শনিবার টিম দেখিয়ে দেবে তারা কী করতে পারে না পারে! আর্জেন্তিনা কোচ মার্টিনোও বলে ফেলছেন, ‘‘এটা বিশ্বকাপ নয় জানি। কিন্তু এই ট্রফিটা জেতা সমান গুরুত্বপূর্ণ।’’

আসলে এটা শুধু যুদ্ধ জয় নয়, একাধিক অভিশাপ কাটানোরও ম্যাচ। টিম আর্জেন্তিনাকে বাইশ বছরের ট্রফির শোকগাথা শেষ করতে হবে। মার্টিনোকে প্রমাণ করে দিতে হবে, বার্সায় তাঁর কোচিং কেরিয়ারের প্রথম মরসুমের ‘গুড রানার্স আপ’ ট্যাগটা তিনি ন্যু কাম্পেই ফেলে এসেছেন। ওটা বুয়েনস আইরেসে আর পিছু পিছু আসেনি। লিওনেল মেসিকে দেখাতে হবে, বার্সার মতো নীল-সাদাতেও তিনি ধারাবাহিক ভয়ঙ্কর। জয়ের একই ক্ষুধা নিয়ে তিনি দেশকে ট্রফি দিতে নামেন। বিশ্বকাপে পারেননি, কিন্তু শনিবার পারলে পূর্বসূরিকে কোথাও হারিয়ে দেবেন নতুন প্রজন্মের ফুটবল-সম্রাট। দিয়েগো আর্মান্দো মারাদোনা তো কোপা পাননি কখনও। তাই শনিবার ভারতীয় সময় রাত দেড়টা থেকে টিভিতে যেটা চলবে, কনমেবল আয়োজিত লাতিনের সেরা ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল শুধু। পারিপার্শ্বিকের অদৃশ্য যুদ্ধকে তা তুলে ধরবে না।

সম্ভবও নয়। টিভি ক্যামেরার লেন্সে জীবনকে ধরা আর কতটুকু সম্ভব?

Chile Argentina La Roja Copa title
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy